পেন্টোজ একটি জৈব যৌগ যার রাসায়নিক সংকেত C5H10O5। এটি পাঁচ কার্বন পরমাণুবিশিষ্ট একটি মনোস্যাকারাইড বা একক শর্করা।। এটি একটি সরল কার্বোহাইড্রেট। এর আণবিক ওজন হলো ১৫০.১৩ গ্রাম/মোল।
মনোস্যাকারাইডকে দু-ভাবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়: প্রথমটি হলো কার্বন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে, যেমন—ট্রায়োজ (3-কার্বন), টেট্রোজ (4-কার্বন), পেন্টোজ (5-কার্বন), হেক্সোজ (6-কার্বন) ইত্যাদি।আর দ্বিতীয়টি হলো বিজারিত গ্রুপের প্রকৃতি অনুসারে, যেমন— অ্যালডোজ ও কিটোজ। অ্যালডোজের ক্ষেত্রে বিজারিত গ্রুপ অ্যালডিহাইড (-CHO) মূলক আর কিটোজের ক্ষেত্রে বিজারিত গ্রুপ হলো কিটোন (-C=O) মূলক।
প্রাণরসায়ন বা জীবরসায়নে পেন্টোজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিচিত পেন্টোজগুলি হলো রাইবোজ, অ্যারাবিনোজ, জাইলোজ, জাইলিউলোজ, রাইবিউলোজ প্রভৃতি। রাইবোজ হলো রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড সংক্ষেপে আরএনএ (RNA)-এর একটি উপাদান এবং এর সম্পর্কিত অণু হলো ডিঅক্সিরাইবোজ। এই ডিঅক্সিরাইবোজ আবার ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড সংক্ষেপে ডিএনএ (DNA)- এর একটি উপাদান। মানব শরীরে গ্লুকোজ জারণের বিকল্প পথ হিসাবে পেন্টোজ ফসফেট পথ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়াপথ। রাইবোজ ৫-ফসফেট (R5P) রাসায়নিকটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিউক্লিওটাইড এবং নিউক্লিক অ্যাসিডের সংশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে এরিথ্রোজ ৪-ফসফেট (E4P) অ্যারোমেটিক অ্যামিনো অ্যাসিডের সংশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য কিছু মনোস্যাকারাইডের মতো পেন্টোজ দুটি রূপে পাওয়া যায়। একটি হলো খোলা-শৃঙ্খল বা রৈখিক রূপ আর অন্যটি হলো বদ্ধ-শৃঙ্খল বা চক্রীয় রূপ। তবে এই দুটি রূপ জলীয় দ্রবণে সহজেই একে অপরে রূপান্তরিত হয়। পেন্টোজের রৈখিক রূপটি সাধারণত শুধুমাত্র দ্রবণে দেখা যায়। এক্ষেত্রে এটি পাঁচটি কার্বনের একটি খোলা-শৃঙ্খল অবস্থায় থাকে। এই পাঁচটি কার্বনের মধ্যে চারটিতে একটি করে হাইড্রোক্সিল কার্যকরী মূলক (–OH) রয়েছে এবং এটি একটি একক সমযোজী বন্ধন দ্বারা সংযুক্ত। অবশিষ্ট কার্বনের একটিতে একটি অক্সিজেন পরমাণু দ্বিবন্ধন (=O) দ্বারা সংযুক্ত হয়ে একটি কার্বনিল মূলক (C=O) গঠন করে। কার্বন পরমাণুগুলির অবশিষ্ট বন্ধন ছয়টি হাইড্রোজেন পরমাণু দিয়ে যুক্ত থাকে। পেন্টোজের রৈখিক রূপের গঠনটিকে H–(CHOH) x –C(=O)-(CHOH) 4- x –H এইভাবে লেখা হয়, যেখানে x হল 0, 1, বা 2।
"পেন্টোজ" পরিবারে কখনও কখনও ডিঅক্সিপেন্টোজ যৌগগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয় যেমন ডিঅক্সিরাইবোজ। ডিঅক্সিপেন্টোজ যৌগগুলির সাধারণ রাসায়নিক সংকেত হলো C
5H
10O
5-y । এক্ষেত্রে হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে এক বা একাধিক হাইড্রক্সিল মূলকের প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এগুলি পেন্টোজ থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়।
অ্যালডোপেন্টোজ হল পেন্টোজের একটি উপশ্রেণী যার রৈখিক গঠনের প্রথম কার্বন পরমাণু অর্থাৎ C1-এ একটি কার্বনিল মূলক যুক্ত থাকে। যার গঠন H–C(=O)-(CHOH) 4–H অর্থাৎ এতে একটি অ্যালডিহাইড মূলক যুক্ত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো রাইবোজ। অন্য দিকে কিটোপেন্টোজের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কার্বন পরমাণু C2 বা তৃতীয় কার্বন পরমাণু C3 অবস্থানে কিটো মূলক (–C(=O)-) থাকে। যেমন, H–CHOH–C(=O)–(CHOH)3–H (২-কিটোপেন্টোজ) বা H–(CHOH)2–C(=O)–(CHOH)2–H (৩-কিটোপেন্টোজ)। ৩-কিটোপেন্টোজ প্রকৃতিতে পাওয়া যায় বলে এখনো জানা যায় নি। এটি সংশ্লেষ করাও কঠিন।
পেন্টোজের রৈখিক গঠনের আটটি অ্যালডোপেন্টোজ এবং চারটি ২-কিটোপেন্টোজ রয়েছে। অ্যালডোপেন্টোজ এবং কিটোপেন্টোজের স্টেরিও বা ত্রিমাত্রিক সমাণুতা রয়েছে। এগুলি আলোক সক্রিয় যৌগ।
অ্যালডোপেন্টোজে মোট তিনটি কাইরাল কেন্দ্র রয়েছে। একই কার্বন পরমাণুতে চারটি ভিন্ন পরমাণু বা মূলক যুক্ত থাকলে ঐ কার্বন পরমাণুর সাপেক্ষে অণুটি অপ্রতিসম হয়ে থাকে। তখন ঐ যৌগ অণুকে অপ্রতিসম যৌগ বলে এবং ঐ কার্বনকে বলা হয় অপ্রতিসম কার্বন। এই অপ্রতিসম কার্বনকেই কাইরাল কেন্দ্র বলা হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন অ্যালডোপেন্টোজে তিনটি কাইরাল কেন্দ্র থাকার জন্য এতে আটটি (২৩ ) ভিন্ন স্টেরিও বা ত্রিমাত্রিক সমাণুতা সম্ভব।
d-অ্যারাবিনোস | d-লাইক্সোজ | d-রাইবোজ | d-জাইলোজ |
l-অ্যারাবিনোস | l-লাইক্সোজ | l-রাইবোজ | l-জাইলোজ |
রাইবোজ হলো আরএনএ- এর একটি উপাদান এবং এর সম্পর্কিত অণু ডিঅক্সিরাইবোজ হলো ডিএনএ-এর একটি উপাদান। পেন্টোজ ফসফেট বিক্রিয়াপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফসফরিলেটেড পেন্টোজ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে রাইবোজ ৫-ফসফেট (R5P), যা নিউক্লিওটাইড এবং নিউক্লিক অ্যাসিডের সংশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে ইরিথ্রোজ ৪-ফসফেট (E4P) অ্যামিনো অ্যাসিড সংশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। .
২-কিটোপেন্টোজের দুটি কাইরাল কেন্দ্র রয়েছে অর্থাৎ চারটি (২ ২ ) ভিন্ন স্টেরিও বা ত্রিমাত্রিক সমাণুতা সম্ভব। তবে ৩-কিটোপেন্টোজ বিরল।
d-রাইবিউলোজ | d-জাইলুলোজ |
l-রাইবিউলোজ | l-জাইলুলোজ |
একটি পেন্টোজের বদ্ধ বা চক্রীয় রূপটি তৈরি হয় যখন কার্বনিল মূলক অন্য কার্বনের একটি হাইড্রক্সিল মূলকের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে দুটি কার্বনের মধ্যে একটি ইথার –O– বন্ধন তৈরি করে। এই আন্তঃআণবিক বিক্রিয়াটির ফলে একটি চক্রীয় অণু উৎপন্ন হয়। এই চক্রীয় অণু সাধারণত একটি অক্সিজেন পরমাণু এবং চারটি কার্বন পরমাণু নিয়ে গঠিত হয়। এই চক্রীয় যৌগগুলিকে বলা হয় ফিউরানোজ। এটি পঞ্চভূজাকার। কারণ টেট্রাহাইড্রোফুরানের মতো এদেরও চক্রীয় ইথার বলয় রয়েছে। এই চক্রীয় গঠন কার্বক্সিল কার্বনকে একটি কাইরাল কেন্দ্রে পরিণত করে। এক্ষেত্রে প্রতিটি রৈখিক গঠন দুটি স্বতন্ত্র বদ্ধ শৃঙ্খল তৈরি করতে পারে, যা "α" এবং "β" দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
একটি ডিঅক্সিপেন্টোজে মোট দুটি স্টেরিও বা ত্রিমাত্রিক সমাণুতা রয়েছে।
d-ডিঅক্সিরাইবোজ |
l-ডিঅক্সিরাইবোজ |
কোষের কাজে হেক্সোজের তুলনায় পেন্টোজের বিপাকীয় স্থিতিশীলতা বেশি থাকে। পেন্টোজ শর্করার সমন্বয়ে গঠিত পলিমারকে পেন্টোসান বলা হয়।
পেন্টোজের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলি পেন্টোজকে ফুরফুরাল নামক রাসায়নিক যৌগের রূপান্তরের উপর নির্ভর করে। জাইলোজ এবং অ্যারাবিনোজের মতো পাঁচ-কার্বনযুক্ত শর্করার জলবিযুক্ত করলে ফুরফুরাল তৈরি হয়। ফুরফুরাল আবার ক্রোমোফোরের সাথে বিক্রিয়া করে। জৈব যৌগের অণুস্থিত যেসবমূলক দৃশ্যমান আলোর পরিসরের শক্তি-তরঙ্গ শোষণ করে এবং যৌগকে বর্ণযুক্ত দেখায়, এদেরকে ক্রোমোফোর বলে। ফ্লোরোগ্লুসিনল জৈব রাসায়নিকটি একটি ক্রোমোফোর। পেন্টোজ থেকে উৎপন্ন ফুরফুরাল ফ্লোরোগ্লুসিনলের সাথে বিক্রিয়া করে একটি রঙিন যৌগ তৈরি করে। অ্যানিলিন অ্যাসিটেটের সাথে অ্যানিলিন অ্যাসিটেট পরীক্ষায় ; এবং বিয়ালের পরীক্ষায়, অরসিনোল সহ। এই ধরনের পরীক্ষায় হেক্সোজের চেয়ে পেন্টোজ চেয়ে অনেক দ্রুততার সাথে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article পেন্টোজ, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.