দুগ্ধজাত পণ্য

গবাদি পশু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এবং উটের মতো সহজলভ্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর দুধ থেকে উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী অথবা এই প্রাণিগুলির দুধ সহযোগে বানানো হয়েছে এমন খাদ্য সামগ্রীই দুগ্ধজাত পণ্য বা ডেইরি প্রোডাক্ট। দই, পনির, চিজ এবং মাখনের মতো খাদ্য সামগ্রী দুগ্ধজাত পণ্যের অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্তন্যপায়ী প্রাণীজাত দুধ এবং তা থেকে দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করা হয় তাকে ডেইরি বা ডেইরি কারখানা বলে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ছয়শ কোটি মানুষ দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণ করে থাকে যাদের সিংহভাগেরই বসবাস উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

দুগ্ধজাত পণ্য
দুগ্ধজাত দ্রব্য দুধ থেকে উৎপন্ন হয়
দুগ্ধজাত পণ্য
দুগ্ধজাত পণ্য এবং এসব উৎপাদনেন বিভিন্ন ধাপ

ভারতীয় উপমহাদেশে দুগ্ধ উৎপাদনের আট হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরম্পরা রয়েছে যা জেবু নামক গবাদি পশুকে গৃহপালিত করার সময় থেকে শুরু হয়। অন্ততপক্ষে বৈদিক যুগ থেকে এই উপমহাদেশে দুগ্ধজাত পণ্য বিশেষ করে দুধ খাওয়া হত। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত, অপারেশন ফ্লাড ভারতীয় দুগ্ধশিল্পকে বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পে রূপান্তরিত করে। এর পূর্বে ভারতে দুধের উৎপাদন প্রধানত গৃহস্থালী খামারেই হয়েছিল।

ভারতীয় রন্ধনপ্রণালিতে বিশেষ করে উত্তর ভারতীয় খাবারে, পনিরের মতো দুগ্ধজাত দ্রব্য ব্যবহারের একটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, যখন কিনা দক্ষিণ ভারতীয় খাবারে বেশি করে দই ব্যবহার করা হয় এবং প্রতিদিন তাজা উৎপাদিত পণ্যের বাজারে ও ই-কমার্স দোকানে দুধের বেচা-কেনা চলে। হিন্দু ধর্মীয় রীতি ও প্রথায় দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

দুগ্ধজাত পণ্যের প্রকারভেদ

দুধ

ক্রিম, মাখন, পনির, শিশুদের দুধ এবং দই সহ উৎপাদিত পণ্যের ধরনের উপর ভিত্তি করে দুধকে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে।

দই

দই মূলত স্ট্রেপ্টোকক্কাস স্যালিভারিয়াস এসএসপি. থার্মোফিলাস এবং ল্যাকটোব্যাসিলাস ডেলব্রুয়েকি এসএসপি. বুলগারিকাস এর মত থার্মোফিলিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দুধের গাঁজনকৃত পণ্য বিশেষ। কখনও কখনও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া যেমন ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস দ্বারাও গাঁজন করা হয়। ব্যবহৃত ব্যকটেরিয়া, প্রক্রিয়া এবং অঞ্চলভেদে বিভিন্ন রকমের দই পাওয়া যায়। এদের কয়েকটি হল: অ্যাসিডোফিলাস, মাতজুন যা আর্মেনিয়া-জর্জিয়া অঞ্চলে প্রচলিত, স্কার, নিষ্কাশিত দই যেটা থেকে ঘোল আলাদা করে ফেলা হয়, কাটিক, রায়াঝেঙ্কা, ভারনেতস, আইরান, দোঘ, লস্যি বা লাচ্ছি, ল্যাবেন যা মধ্য প্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় পাওয়া য়ায়।

মাখন

মাখন মূলত দুধের চর্বি, সরকে মন্থন করে উৎপাদন করা হয়।

পনির

পনির, দুধকে জমাট বাঁধিয়ে দ্বারা উৎপাদিত হয়, ঘোল থেকে পৃথক করে সাধারণত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এটিকে শক্ত হতে রেখে দেওয়া হয় এবং কখনও কখনও নির্দিষ্ট ছাঁচে।

বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের নমুনা

দুগ্ধ সেবনের হার বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। উচ্চ-ব্যবহারের দেশগুলি প্রতি বছর মাথাপিছু ১৫০ কেজিরও বেশি ভোগ করে। এই দেশগুলি হল: আর্জেন্টিনা, আর্মেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কোস্টা রিকা, বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ, ইজরায়েল, কিরগিজস্তান, উত্তর আমেরিকা এবং পাকিস্তান। মাঝারি ব্যবহারের দেশগুলি প্রতি বছর মাথাপিছু ৩০ থেকে ১৫০ কেজি ভোগ করে। এই দেশগুলি হল: ভারত, ইরান, জাপান, কেনিয়া, মেক্সিকো, মঙ্গোলিয়া, নিউজিল্যান্ড, উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ এবং বেশিরভাগ ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলি। নিম্ন-ব্যবহারের দেশগুলি প্রতি বছর মাথাপিছু ৩০ কেজির কম খরচ করে। এই দেশগুলি হল: সেনেগাল, মধ্য আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ এবং পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশগুলি।

নীতিগতভাবে পরিহার

ভেগানবাদ (সম্পূর্ণ নিরামিষ ভোজনের ধারণা) হলো দুগ্ধজাত পণ্য সহ সমস্ত পশুপণ্যের পরিহার, বেশিরভাগই দুগ্ধজাত পণ্যগুলি কীভাবে উৎপাদিত হয় সে সম্পর্কে নৈতিক নিয়মগুলির কারণে। মাংস এবং দুগ্ধজাত পণ্য এড়ানোর নৈতিক কারণগুলির মধ্যে রয়েছে কীভাবে দুগ্ধ উৎপাদন করা হয়, কীভাবে প্রাণীগুলির সাথে ব্যবহার করা হয় এবং দুগ্ধ উৎপাদনের পরিবেশগত প্রভাব। ২০১০ সালে রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৪ শতাংশ ছিল দুগ্ধ উৎপাদন খাত থেকে।

তথ্যসূত্র

Tags:

দুগ্ধজাত পণ্য ের প্রকারভেদদুগ্ধজাত পণ্য দুধদুগ্ধজাত পণ্য দইদুগ্ধজাত পণ্য মাখনদুগ্ধজাত পণ্য পনিরদুগ্ধজাত পণ্য বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের নমুনাদুগ্ধজাত পণ্য নীতিগতভাবে পরিহারদুগ্ধজাত পণ্য তথ্যসূত্রদুগ্ধজাত পণ্যউন্নয়নশীল দেশখাদ্যগবাদি পশুচিজছাগলদইপনিরভেড়ামহিষমাখনস্তন্যপায়ী প্রাণী

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

সরকারি বাঙলা কলেজকৃষ্ণহুনাইন ইবনে ইসহাকযক্ষ্মাজাতীয় স্মৃতিসৌধসাদ্দাম হুসাইননীল বিদ্রোহইব্রাহিম (নবী)নরেন্দ্র মোদীসুনামগঞ্জ জেলাঅভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সঊষা (পৌরাণিক চরিত্র)বাংলাদেশের উপজেলার তালিকাজ্ঞানইতিহাসক্রিকেটবাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরদের তালিকাইউসুফবাবরনকশীকাঁথা এক্সপ্রেসদারুল উলুম দেওবন্দমৃণালিনী দেবীআসমানী কিতাবপানিপথের যুদ্ধগোপালগঞ্জ জেলাগাঁজা (মাদক)মহাস্থানগড়কিশোর কুমারবাংলাদেশের সংবিধানআল-মামুনগাঁজাবাংলাদেশী অভিনেত্রীদের তালিকাপশ্চিমবঙ্গপথের পাঁচালীজাযাকাল্লাহবাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্রহজ্জকলাদৈনিক ইনকিলাবলোকসভাসৌদি রিয়ালবিরাট কোহলিকৃষ্ণচূড়াবাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারকবৃন্দরক্তের গ্রুপমূত্রনালীর সংক্রমণওয়ালটন গ্রুপঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানসহীহ বুখারী২৫ এপ্রিলটুইটারমঙ্গল গ্রহইসরায়েলবাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিনূর জাহানসিন্ধু সভ্যতাগঙ্গা নদীআলিফ লায়লাবাঙালি হিন্দুদের পদবিসমূহমহাত্মা গান্ধীমুসাজাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দাঅকাল বীর্যপাতপায়ুসঙ্গমলিওনেল মেসিনাহরাওয়ানের যুদ্ধপাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০সেলজুক রাজবংশদেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীবঙ্গবন্ধু-২বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকাহিন্দুধর্মের ইতিহাসজব্বারের বলীখেলাবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাচেন্নাই সুপার কিংস🡆 More