হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম

হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম হল এমন এক ধরনের সৃষ্টিকর্ম যা হাস্যরসের উদ্রেক করে থাকে। সাধারণত হাস্যরসাত্মক মঞ্চনাটক, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র ও জনসমক্ষে কৌতুক পরিবেশন (স্ট্যান্ড-আপ কমেডি) এই ধরনের সৃষ্টিকর্মের কিছু উদাহরণ। পাশ্চাত্যে হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্মের ইতিহাস প্রাচীন গ্রিস পর্যন্ত প্রসারিত। আথেনীয় গণতন্ত্রে ভোটদাতাদের জনমতে মঞ্চ নাটকে প্রদর্শিত রাজনৈতিক ব্যঙ্গকবিতার প্রভাব বিদ্যমান ছিল। গ্রিক হাস্যরসাত্মক মঞ্চ নাটকের ধরনকে দুই দল বা সমাজের মানুষদের একে অপরের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও সংঘাতের নাট্যধর্মী উপস্থাপন হিসেবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। নর্থ্রপ ফ্রাই এই দুই দলকে যুবসমাজ ও বৃদ্ধসমাজ বলে অভিহিত করেন।

ব্যঙ্গকাব্য ও রাজনৈতিক ব্যঙ্গধর্মী রচনায় হাস্যরসের সহায়তায় কোনও ব্যক্তি বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে উপহাসস্পদ ও দুর্নীতিবাজ হিসেবে উপস্থাপন করতে ব্যবহৃত হয়। ফলে দর্শকদের হাস্যরসের বিষয় থেকে সত্য সম্পর্কে ভাবায়। লালিকা হল জনপ্রিয় ধরন এবং ব্যঙ্গকাব্যের বিপরীত রূপ, যেখানে কাউকে দোষী সাব্যস্ত না করে সমালোচনা করা হয়।

হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্মের আরও কয়েকটি উপপ্রকার হল স্ক্রুবল কমেডি, যা উদ্ভট চরিত্রের ভিত্তিতে হাস্যরস সৃষ্টি করে; এবং যন্ত্রণাক্ত হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম, যেখানে মানুষের আচরণ ও স্বভাবের খারাপ দিকসমূহ তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি অশ্লীল হাস্যরস ও যৌন হাস্যরস কৌতুকের ছলে সামাজিক রীতিনীতি ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ ভঙ্গ করে হাস্যরসের সঞ্চার করে। প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম (রোমান্টিক কমেডি) আরেকটি জনপ্রিয় উপপ্রকার যেখানে হাস্যরসের সাথে প্রেম বা প্রণয় উপস্থাপন করা হয় এবং হাস্যরসের মাধ্যমে প্রেমিকদের দুর্বলতা তুলে ধরা হয়।

ইতিহাস

উৎপত্তি, এরিস্টোফানিস ও এরিস্টটল

খ্রিস্টপূর্ব ৪২৫ অব্দ থেকে গ্রিক রম্য নাট্যকার ও ব্যঙ্গ সাহিত্যিক এরিস্টোফানিস ৪০টি কমেডি নাটক লেখেন, যার মাত্র ১১টি এখন পর্যন্ত বিদ্যমান। এরিস্টোফানিস ব্যঙ্গ নাটকসমূহ থেকে কৌতুকাভিনয়ের তার নিজস্ব ধারার সৃষ্টি করেন, যা প্রায়ই খুব অশ্লীল ছিল। ব্যঙ্গ নাটকের বিদ্যমান উদাহরণ হল ইউরিপিডিস'র নাটকসমূহ। তবে তা আরও পরে পাওয়া গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয় এবং কৌতুকাভিনয়ের ধারাকে প্রতিনিধিত্ব করে না। প্রাচীন গ্রিসে কৌতুকাভিনয়ের উৎপত্তি হয় চিৎকার চেঁচামেচিধর্মী গান বা ফালিকার মানানসই আবৃতি এবং বিভিন্ন উৎসব ও জনকোলাহল থেকে।

এরিস্টটল খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৫ অব্দের দিকে রচিত তার পোয়েটিক্স বইতে বলেন ফালিকা থেকে কৌতুকাভিনয়ের উৎপত্তি। তিনি আরও বলেন কৌতুকাভিনয়ের উৎপত্তি অস্পষ্ট কারণ তা শুরুর সময় থেকে ভালভাবে গ্রহণ করা হয় নি। যাই হোক, কৌতুকাভিনয়ের নিজস্ব অধিষ্ঠাত্রী দেবী মিউজ হলেন থালিয়া

এরিস্টটলের মতে সমাজে কৌতুকাভিনয়ের ইতিবাচক দিক রয়েছে। কৌতুকাভিনয় আনন্দ নিয়ে আসে, যেকারণে এরিস্টটল এই আদর্শিক অবস্থানে ছিলেন এবং আনন্দ সকল কাজের মূল লক্ষ্য। তিনি মনে করেন কৌতুকাভিনয়ে সবসময় যৌন উত্তেজক হাস্যরস থাকতে হবে এমন নয় কৌতুকাভিনয়ের ফলে সহানুভূতিসম্পন্ন কিছু চরিত্র উঠে আসবে। তিনি কৌতুকাভিনয়কে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন: প্রহসন, রোমান্টিক কমেডি ও ব্যঙ্গকাব্য। অন্যদিকে প্লেটো বলেন কৌতুকাভিনয় হল আত্ম-অবক্ষয়। তিনি মনে করেন যে কৌতুকাভিনয় এমন অনুভূতির সঞ্চার করে যা নৈতিক আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষাকে অগ্রাহ্য করে। তার রিপাবলিক বইতে তিনি বলেন যে রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিদের হাস্যরস বর্জন করতে হবে, "সাধারণভাবে কেউ যখন উচ্চ হাস্যরস থেকে নিজেকে বিরত রাখে, তার অবস্থা প্রতিক্রিয়াশীল হতে বাধ্য করে।" প্লাতো বলেন আদর্শিক অবস্থান অর্জন করতে চাইলে কৌতুকাভিনয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

পোয়েটিক্স বইতে এরিস্টটল কৌতুকাভিনয়কে সাহিত্যের মূল চারটি ধারার একটি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাকি তিনটি ধারা হল বিয়োগাত্মক, মহাকাব্যগীতি কাব্য। এরিস্টটল সাহিত্যকে জীবনের প্রতিচ্ছবি বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন। কৌতুকাভিনয় সাহিত্যের তৃতীয় ধারা এবং জীবনের সত্যিকারের প্রতিচ্ছবি থেকে অনেকটা বিচ্যুত। বিয়োগাত্মক ধারাকে সবচেয়ে বাস্তব চিত্র, যথাক্রমে পরে মহাকাব্য, কৌতুকাভিনয়, ও সবশেষে গীতি কাব্য। এরিস্টটলের সংজ্ঞা অনুযায়ী কৌতুকাভিনয়ের ধারার একটি নির্দিষ্ট ধাঁচ রয়েছে। কৌতুকাভিনয় নিম্ন বা ভিত্তিমূলক চরিত্র দিয়ে শুরু হয় যার লক্ষ্যবস্তু তুচ্ছ এবং এই লক্ষ্য কিছুটা সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে তা শেষ হয়, যা প্রারম্ভিক ভিত্তিকে কিছুটা বুঝাতে সক্ষম হয় বা লক্ষ্যের তুচ্ছতা প্রকাশ করে।

প্রাচীন সংস্কৃত নাটক

খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দের পরে প্রাচীন সংস্কৃত নাটকে ভরত মুনির নাট্য শাস্ত্র বইতে হাস্যরসকে নভরস বা প্রধান রসের একটি বলে উল্লেখ করেছেন। এই রস দর্শকদের ভাব থেকে অনুপ্রাণিত। ভাব হল অভিনয়শিল্পীদের আবেগের অনুকরণ। প্রতিটি রসে একটি নির্দিষ্ট ভাব জড়িত থাকে। হাস্যরসের ক্ষেত্রে তা আমোদ-প্রমোদের সাথে জড়িত।

শেকসপিয়রীয় ও এলিজাবেথীয় কৌতুকাভিনয়

হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম 
কমেডি নাট্য লেখক উইলিয়াম শেকসপিয়র

এলিজাবেথীয় সময়ের কৌতুকাভিনয় বর্তমান সময়ের চেয়ে অনেক ভিন্ন ছিল। এসময়ে ইংরেজ নাট্যকার উইলিয়াম শেকসপিয়র বেশ কিছু কমেডি নাটক রচনা করেন। তিনি একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, নাট্যকার, ও গ্লোব থিয়েটারের অংশীদার ছিলেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য কমেডিসমূহ হল দ্য কমেডি অফ এররস, লস্ট লাভ, দ্য টু জেন্টলমেন ফ্রম ভেরোনা, আ সামার্‌স নাইটমেয়ারদ্য টেমিং অফ দ্য শ্রু। শেকসপিয়রীয় কৌতুকাভিনয়ে সমাপ্তি ছিল আনন্দদায়ক। এতে আবিবাহিত চরিত্রসমূহের বিয়ের মাধ্যমে গল্প সমাপ্ত হত এবং গল্পের ধরন শেকসপিয়রের অন্যান্য নাটকের তুলনায় হাসিখুশি ছিল।

১৬শ শতাব্দীর ইতালীয় কমেদিয়া দেলার্তের গোড়াপত্তন হয় পুঞ্চ অ্যান্ড জুডি শো দিয়ে। পুঞ্চ চরিত্রটি নেপোলিটান স্টক চরিত্র পুঞ্চিনেল্লা থেকে নেওয়া হয়। এই চরিত্র পরে ১৬৬২ সালে ইংল্যান্ডে মিঃ পুঞ্চ হিসেবে প্রথম রেকর্ড করা হয়। পুঞ্চ অ্যান্ড জুডি ভয়ানক কৌতুকাভিনয় হিসেবে প্রদর্শিত হত। মিঃ পুঞ্চের অরাজক সঙ প্রায়ই বিস্ময়কর হাসির উদ্রেক করত। ব্রিটিশ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ যুগের আলোচিত এই চরিত্র সম্পর্কে অধ্যাপক গ্লিন এডওয়ার্ডস বলেন, "পুঞ্চিনেল্লা পিউরিটানীয় সময়ের পরে পুনর্জীবিত ও হাস্যরস-বঞ্চিত ব্রিটিশ দর্শকদের সাথে সাথে চলে আসে। আমরা এর পরপরই পুঞ্চের নাম পরিবর্তন করি, তাকে হস্ত-পুতুলে রূপান্তর করি, এবং সে সত্যিই ব্রিটেনের অপার্থিব সম্পদ হয়ে ওঠে।

১৯শ থেকে ২০শ শতাব্দীর প্রথমাংশ

হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম 
ব্রিটিশ কৌতুকাভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন

১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পুতুলনাচ এর বর্তমান রূপ ধারণ করে। এই ধরনের স্ল্যাপস্টিক কমেডির প্রথম মূলধারার সঙ ছিলেন জোসেফ গ্রিমাল্‌দি। ১৮৫০-এর দশকে ব্রিটিশ সঙ্গীত থিয়েটারসমূহে কৌতুকাভিনয় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সঙ্গীত হলের সম্মানিত ব্রিটিশ কৌতুকাভিনেতাগণ ছিলেন চার্লি চ্যাপলিন, স্ট্যান লরেল, ও ড্যান লিনো। ইংরেজ সঙ্গীত হলের কৌতুকাভিনেতা ও থিয়েটারে জলসার পরিচালক ফ্রেড কার্নো ১৮৯০-এর দশকে সংলাপহীন এক ধরনের স্কেচ কমেডির সৃষ্টি করেন এবং চ্যাপলিন ও লরেন তার পরিচালনায় অভিনয় করতেন। মার্কিন চলচ্চিত্র প্রযোজক হাল রোচ বলেন, "ফ্রেড কার্নো শুধুমাত্র একজন প্রতিভাবান ছিলেন তা নয়, তিনি স্ল্যাপস্টিক কমেডিও উদ্ভাবন করেন। আমরা যারা হলিউডে আছি তারা তাঁর কাছে ঋণী।" মার্কিন বিচিত্রানুষ্ঠান ১৮৮০-এর দশকে শুরু হয় এবং ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। এসব অনুষ্ঠানে ডব্লিউ. সি. ফিল্ডস, বাস্টার কিটন ও মার্ক্স ভাতৃদ্বয় অভিনয় করতেন।

১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে ওস্কার ওয়াইল্ড তার কমেডি অ্যান আইডিয়াল হাসবেন্ড দিয়ে ইংল্যান্ডের মঞ্চে ও পরে ইউরোপের বিভিন্ন মঞ্চে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন। রুশ লেখক নিকোলাই গোগল রচিত দ্য অডিটরদ্য ম্যারিজ ও সেসময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়া ইভান তুর্গেনেভও গুরুত্বপূর্ণ কমেডি লেখক এবং আলেক্সান্দ্র নিকলায়েভিচ অস্ত্রোভ্‌‌স্কি তার দ্য ফরেস্ট কমেডির জন্য প্রসিদ্ধ।

২০শ শতাব্দীর চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন

হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম 
মিস্টার বিনখ্যাত রোয়ান অ্যাটকিনসন

১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে চলচ্চিত্রের আবির্ভাব এবং পরে ২০শ শতাব্দীতে বেতার ও টেলিভিশন আবিস্কৃত হলে সাধারণ জনগণের কাছে কৌতুকাভিনেতাগণ পৌঁছাতে সক্ষম হয়। চার্লি চ্যাপলিন তার নির্বাক চলচ্চিত্র দিয়ে সারা বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠেন। নির্বাক রীতি আরও বেশি প্রসার লাভ করে ২০শ শতাব্দীতে মার্সেল মার্সিউর মত মুখাভিনেতা ও মিস্টার বিনখ্যাত রোয়ান অ্যাটকিনসনদের মত অভিনয়শিল্পীদের কল্যাণে। সার্কাসে সঙয়ের রীতিও চলতে থাকে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে বোজো দ্য ক্লাউন ও রাশিয়ায় ওলেগ পপভ। বেতারও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গুন শো দিয়ে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে। মার্কিন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ কৌতুক অভিনয়শিল্পী লরেল ও হার্ডি, থ্রি স্টুজেস, অ্যাবট ও কস্টেলো, ডিন মার্টিন, জেরি লুই এবং বব হোপরা আসেন। এছাড়া জর্জ কার্লিন, রবিন উইলিয়ামসএডি মার্ফিদের মত অভিনয়শিল্পীরা আসেন এই শতাব্দীর শেষের দিকে। হলিউডে অনেক আন্তর্জাতিক মানের প্রতিভাবানরা আকৃষ্ট হন, যেমন ব্রিটিশ অভিনেতা পিটার সেলারস, ডুডলি মুর, ও সাচা ব্যারন কোহেন, কানাডীয় অভিনেতা ড্যান আইকরয়েড, জিম ক্যারি ও মাইক মেয়ারস এবং মার্কিন কৌতুকাভিনেতা পল হোগান, যিনি ক্রকোডাইল ডান্ডি চলচ্চিত্রের জন্য প্রসিদ্ধ। সৃজনশীল কৌতুকাভিনয়ের অন্যান্য স্থান হল হংকংয়ের চলচ্চিত্র, বলিউড, ফ্রান্সের প্রহসন

কৌতুকাভিনয়ের বিকাশে মার্কিন টেলিভিশনেরও পিছনে প্রভাব রয়েছে। মার্কিন টেলিভিশন ধারাবাহিক ম্যাশ, সিনফিল্ড, ও দ্য সিম্পসন্‌স সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ব্রিটিশ টেলিভিশন কমেডিরও ফাউল্টি টাওয়ার্স, মন্টি পাইথন, ড্যাড্‌স আর্মি, ব্ল্যাকাডার, ও দ্য অফিস এর মত প্রতিভূ কাজ দিয়ে কৌতুকাভিনয়ে প্রভাব বিস্তার করে। অস্ট্রেলীয় ব্যঙ্গ অভিনেতা ব্যারি হামফ্রিস কমিক চরিত্র "গিগাস্টার" ডেম এডনা এভারেজ সৃষ্টি করেন। ২০১০ সালে জীবনীকার অ্যানি পেন্ডার তার অসংগত হাস্যরসের জন্য তাকে "আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ ব্যক্তিত্ব এবং চার্লি চ্যাপলিনের পর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ কৌতুকাভিনেতা" বলে অভিহিত করেন।

কৌতুকাভিনয় তত্ত্ব গবেষণা

হাস্যরসের সাথে জড়িত বিষয়াবলী ও যা হাসির উদ্রেক করে তা নিয়ে মনোবিজ্ঞানীগণ গবেষণা করেছেন। তারা এই বিষয়ে একমত যে হাস্যরসের প্রধান বৈশিষ্টসমূহ মূল বিষয় থেকে কিছুটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ বা বিপরীত এবং তা মনকে অবাক করে দেয়। এছাড়া আরো ধরা হয় হাস্যরস হল ভালো থাকার অন্যতম উপাদান। একারণে টমাস হব্‌স হাস্যরসকে "হঠাৎ গৌরব" বলে উল্লেখ করেছেন। আধুনিক গবেষকগণ হাস্যরস ও হাসির উৎস উভয়ের প্রতি এবং মনবৃত্তির উন্নয়ন ও মানসিক অভিব্যক্তির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

জর্জ মেরেডিথ বলেন, "একটি দেশের সভ্যতার পরীক্ষার ক্ষেত্রে ... আমি কমিক ধারণা ও কৌতুকাভিনয়ের বিকাশকে গ্রহণ করি; এবং সত্যিকারের কৌতুকাভিনয়ের পরীক্ষায় সবসময় হাসির উদ্রেক ঘটাতে হবে।" হাসিকে অসুস্থতার নিরামক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মানুষ বেশি হাসে তারা কম রোগে আক্রান্ত হয়।

মার্কিন সাহিত্য তাত্ত্বিক কেনেথ বার্ক লিখেন অলঙ্কারশাস্ত্রে "কমিক ফ্রেম"-এ পুরোপুরি সরস ও মধুর বচনের ব্যবহার হয় না আবার পুরোপুরি মিথ্যা ধারণাও দেওয়া হয় না, বরং এতে দর্শকদের প্রতি উদার মনোভাব প্রকাশ করা হয় যাতে তারা বুঝতে পারে ও সহযোগিতা করতে পারে, কিন্তু একই সময়ে কূট চালও ধরে রাখা হয়। কমিক ফ্রেমের উদ্দেশ্য হল কোন নির্দিষ্ট অবস্থাকে ব্যঙ্গ করা এবং এর মাধ্যমে এই অবস্থার পরিবর্তনে কি কর্তব্য তা তুলে ধরা। কমিক ফ্রেম কোন অবস্থা বা ব্যক্তিবিশেষকে নিয়ে আনন্দ প্রদান করে, পাশাপাশি তা নিয়ে ভাবায়। কমিক ফ্রেমে কাউকে নিন্দা করার উদ্দেশ্য থাকে না, বরং কোন নির্দিষ্ট অবস্থার পিছনে বোকামিকে তিরস্কার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ দ্য ডেইলি শোতে জন স্টুয়ার্ট কমিক ফ্রেম ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদে তার অপরিণত হাস্যরস দিয়ে রাজনৈতিক যুক্তিতর্কে হস্তক্ষেপ করেন। একটি পর্বে চীনের সাথে দুর্বল সম্পর্ক থাকা সত্বেও রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার চীন সফরকে স্টুয়ার্ড চীনা সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ বলে উল্লেখ করেছেন। এই অপ্রসন্ন অবস্থার বর্ণনার পর স্টুয়ার্ড সরাসরি ওবামার সাথে কথা বলেন। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা গুরুতর ভাষ্যে বর্ণনা করা হত, স্টুয়ার্ট ও তার দর্শকদের জন্য এই পর্বে তা সাদাসিদে ভাষায় কৌতুকাভিনয়ের সাথে উপস্থাপন করা হয়। স্টুয়ার্টের উপস্থাপিত কমেডিক আলোচ্যসূচী অনুযায়ী গুরুতর স্বরে তা উপস্থাপন করা হয়।

রূপ

হাস্যরসের উৎস, পেশ করার উপায়, ও যে বিষয়ের উপর তা পেশ করা হবে তার ভিত্তিতে কৌতুকাভিনয় কয়েক ধরনের হতে পারে। কৌতুকাভিনয়ের এই বিভিন্ন ধরন একটি অপরটিতে ঢুকে যেতে পারে। বেশিরভাগ কৌতুকাভিনয় অন্য ধরনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কৌতুকাভিনয়ের কয়েকটি উপধরন হল প্রহসন, বিনয় কমেডি, ব্যঙ্গ অনুকরণ, এবং ব্যঙ্গকাব্য।

কিছু কৌতুকাভিনয় কিছু সাংস্কৃতিক রূপ গড়ে তুলে, যেমন লালিকা ও ব্যঙ্গকাব্য এমন ধরন গড়ে তুলেছে কেউ এমন করলে বলা হয় সে অনুকার বা ব্যঙ্গ করছে। উদাহরণস্বরূপ দ্য অনিয়ন ও দ্য কলবার্ট রিপোর্ট অনুকার সংবাদপত্র এবং ব্যঙ্গ টেলিভিশন শো দ্য ও'রেইলি ফ্যাক্টর।

কৌতুকাভিনয়ের আরেকটি রূপ হল আত্ম-অবজ্ঞা। অনেক কৌতুকাভিনেতাগণ তাদের ভাগ্যকে পরিহাস করে ও তাদের ভুলগুলো উপস্থাপন করে মানুষকে বিনোদন প্রদান করে।

প্রদর্শন কলা

ঐতিহাসিক ধরন

  • প্রাচীন গ্রিক কৌতুকাভিনয়
  • প্রাচীন রোমান কৌতুকাভিনয়
  • সঙ
  • প্রহসন
  • নাগরিক কৌতুকাভিনয়
  • শেকসপিয়রীয় কৌতুকাভিনয়

নাটক

  • কৌতুকধর্মী মঞ্চনাটক
    • সঙ্গীতধর্মী কৌতুকাভিনয়

অপেরা

  • কৌতুকধর্মী অপেরা

কৌতুক

  • এক-ছত্রের কৌতুক
  • ব্লন্ডি কৌতুক
  • পোলীয় কৌতুক

ঘটনাবলী ও পুরস্কার

  • কানাডীয় কৌতুকাভিনয় পুরস্কার
  • ক্যাট লাফ্‌স কৌতুকাভিনয় উৎসব
  • ব্রিটিশ কৌতুকাভিনয় পুরস্কার
  • মার্কিন কৌতুকাভিনয় পুরস্কার
  • এডিনবার্গ ফেস্টিভাল ফ্রিঞ্জ
  • এডিনবার্গ কৌতুকাভিনয় উৎসব
  • হালিফাক্স কৌতুকাভিনয় উৎসব
  • হ্যালোউইন হাউল্‌স কৌতুকাভিনয় উৎসব
  • জাস্ট ফর লাফ্‌স উৎসব, মন্ট্রিয়াল
  • লিস্টার কৌতুকাভিনয় উৎসব
  • মার্কিন হাস্যরসের জন্য মার্ক টোয়াইন পুরস্কার
  • মেলবোর্ন আন্তর্জাতিক কৌতুকাভিনয় উৎসব
  • নিউজিল্যান্ড আন্তর্জাতিক কৌতুকাভিনয় উৎসব
  • নিউ ইয়র্ক আন্ডারগ্রাউন্ড কৌতুকাভিনয় উৎসব
  • হংকং আন্তর্জাতিক কৌতুকাভিনয় উৎসব

গণমাধ্যম

সাহিত্য

  • কমিক উপন্যাস

চলচ্চিত্র

টেলিভিশন ও বেতার

  • টেলিভিশন কমেডি
  • বেতার কমেডি

আরও দেখুন

  • কৌতুকাভিনয়ে নারী

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:কৌতুকাভিনয় টেমপ্লেট:মঞ্চনাটক

Tags:

হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম ইতিহাসহাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম কৌতুকাভিনয় তত্ত্ব গবেষণাহাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম রূপহাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম প্রদর্শন কলাহাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম ঘটনাবলী ও পুরস্কারহাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম গণমাধ্যমহাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম আরও দেখুনহাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম তথ্যসূত্রহাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম বহিঃসংযোগহাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্মচলচ্চিত্রটেলিভিশনপ্রাচীন গ্রিসমঞ্চনাটক

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

তায়াম্মুমঢাকা মেট্রোরেলইসলামে আদমআরবি ভাষামানুষবাংলাদেশের উপজেলার তালিকাসালাতুত তাসবীহআবহাওয়াবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাচট্টগ্রামওজোন স্তরনামের ভিত্তিতে মৌলসমূহের তালিকাইউক্রেননিরাপদ যৌনতাচট্টগ্রাম জেলাসূরা বাকারাউসমানীয় সাম্রাজ্যধর্মসময়রেখাজাপানইংরেজি ভাষাপ্লাস্টিক দূষণফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংরফিকুন নবীহিন্দুধর্মের ইতিহাসরোমানিয়াওয়ালাইকুমুস-সালামইসলাম ও হস্তমৈথুনবাজিকম্পিউটার কিবোর্ডঈদুল ফিতরলোহাজনগণমন-অধিনায়ক জয় হেন্যাটোশশাঙ্কজয়তুনযোহরের নামাজভরিব্যঞ্জনবর্ণমাইটোকন্ড্রিয়াইউসুফবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০২৩বিশ্ব ব্যাংকগনোরিয়াশ্রীকান্ত (উপন্যাস)রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়জীববৈচিত্র্যখালিদ বিন ওয়ালিদজামালপুর জেলাকালীফাতিমাজনসংখ্যা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাপহেলা বৈশাখআসসালামু আলাইকুমসংস্কৃত ভাষাঋতুকম্পিউটারআল পাচিনোজ্বীন জাতিমদিনাব্রিটিশ রাজের ইতিহাসকাঠগোলাপকুরআনইহুদি ধর্মপ্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়পৃথিবীর ইতিহাসপানি দূষণকুলম্বের সূত্রঢাকা জেলাসৌদি আরবের ইতিহাসম্যানুয়েল ফেরারাবারো ভূঁইয়াবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানগাঁজা (মাদক)উহুদের যুদ্ধজার্মানিহনুমান (রামায়ণ)🡆 More