ভারতের ওড়িশা রাজ্যের এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক ঐতিহ্য রয়েছে। অতীতে বিভিন্ন শাসকের রাজত্বের কারণে, ওড়িশায় শিল্প ও কারুশিল্পে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, যে জন্য আজ ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, চিত্রকলা এবং খোদাই, নৃত্য ও সঙ্গীত, পোশাক ইত্যাদির ক্ষেত্রে একটি শৈল্পিক বৈচিত্র্য এসেছে।
ওড়িশি নৃত্য ছাড়াও ওড়িশায় নৃত্য ও লোক পরিবেশনার আরও অনেক রূপ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বৌনসা রানী, চৈতি ঘোড়া, চাঙ্গু নট, ছৌ, দালখাই, দন্ড নট, পালা, দশকাঠিয়া, ধনু যাত্রা, ঘন্টা পটুয়া, ঘুমুর, কর্ম নাচ, কাঠিনাচ, কেদু, কেলা কেলুনি, লৌডি খেলা, গোপলীলা, মেধা নাচ, নাগা নৃত্য, পাইক নৃত্য, যাত্রা, পটুয়া যাত্রা, পুতুল নাচ, রানপ্পা এবং সম্প্রদা।
ষোড়শ শতকে সঙ্গীতের মধ্যে সাহিত্যের সংকলন প্রত্যক্ষ করা গেছে। সেই সময়ে রচিত চারটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল সঙ্গীতমাব চন্দ্রিকা, নাট্য মনোরমা, সঙ্গীত কললতা এবং গীতা প্রকাশ। ওড়িশি সঙ্গীত চারটি স্বতন্ত্র ধরনের সঙ্গীতের সংমিশ্রণ, যথা, চিত্রপদ, ধ্রুবপদ, পাঞ্চাল এবং চিত্রকলা। যখন সঙ্গীতে শিল্পকর্ম ব্যবহৃত হয়, তখন এটি চিত্রকলা নামে পরিচিত হয়। ওড়িয়া সঙ্গীতের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল পাড়ি, যেখানে দ্রুত লয়ে শব্দগুলি গাওয়া হয়।
ওড়িশি সঙ্গীত দুই হাজার পাঁচশ বছরেরও বেশি পুরানো এবং এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি মূল বিভাগ হল উপজাতি সঙ্গীত, লোকসঙ্গীত, হালকা সঙ্গীত, হালকা-শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। যিনিই ওড়িশার সংস্কৃতি বোঝার চেষ্টা করবেন তাঁকে অবশ্যই এখানকার সঙ্গীতকেও বিবেচনা করতে হবে, কারণ সেটি এই ঐতিহ্যেরই একটি অংশ গঠন করে আছে।
প্রাচীনকালে, এমন সাধক-কবি ছিলেন যাঁরা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত করার জন্য কবিতা ও গানের কথা রচনা করতেন। একাদশ শতকের মধ্যেই ওড়িশার ত্রিস্বরী, চতুস্বরী এবং পঞ্চস্বরী সঙ্গীতের রূপান্তর হয় এবং সেগুলি শাস্ত্রীয় শৈলীতে রূপান্তরিত হয়।
ওড়িশার প্রধান হস্তশিল্পের মধ্যে রয়েছে অ্যাপ্লিকের কাজ, পিতল এবং বেল মেটালের কাজ, রৌপ্য ফিলিগ্রি এবং পাথর খোদাই। অন্যান্য প্রকারের মধ্যে রয়েছে বার্ণিশ, কাগজের মণ্ড, এবং উপজাতীয় চিরুনি, তাঁত, কাঠ ও ঐতিহ্যবাহী পাথর খোদাই।
ওড়িশায় চিত্রকলার ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকেই শুরু হয়েছে, যার মধ্যে আছে শৈলাশ্রয় চিত্রাঙ্কন। এগুলির মধ্যে কিছু প্রারম্ভিক ঐতিহাসিক সময়কালের (৩০০ খ্রিস্টপূর্ব - ১০০ খ্রিস্টাব্দ)। শিলায় অঙ্কনের অঞ্চলগুলি ছাড়াও, গঞ্জাম জেলার দিগাপাহান্দি ও বেরহামপুরে এবং অন্যান্য স্থানে পাথরের পৃষ্ঠে বেশ কিছু অঙ্কন এবং খোদাই রয়েছে। গুহাচিত্রের অনেকগুলোই আদিবাসী নির্মিত এবং শৈলাশ্রয় চিত্রাঙ্কন একটি ওড়িয়া ঐতিহ্য হিসাবে বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। এগুলি সাধারণত আচার অনুষ্ঠানের সাথে সম্বন্ধিত আলংকারিক প্রকৃতির হয় এবং এতে বেশ কয়েকটি মোটিফ থাকতে পারে। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের এবং ওড়িশার ম্যুরাল অঙ্কনগুলির একটি প্রাচীন ঐতিহ্য ছিল। খণ্ডগিরি ও উদয়গিরির গুহায় খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে রাজত্ব করা সম্রাট খারবেলের শাসনকালের সময়কার ম্যুরাল রঞ্জকের আবরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কেন্দুঝর জেলার সীতাভিঞ্জি শৈলাশ্রয় সমূহতে রাবণছায়া পাথরের উপর গুপ্ত যুগের শেষের দিকের একটি ম্যুরাল পাওয়া গেছে। এখানকার চিত্রাঙ্কনের সাথে অজন্তা গুহার শৈলীর সাদৃশ্য দেখা গেছে। ১৬০০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ওড়িশার অসংখ্য টেমপ্লেটে ম্যুরাল আঁকা হয়েছে এখানে। এগুলি চিত্রিত করেছে পবিত্র মূর্তি, যার মধ্যে আছে বুদ্ধ বিজয়ের চিত্র। এগুলি আছে লক্ষ্মী মন্দিরের জগমোহনে এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরে, গঞ্জাম জেলার বুগুদায় বিরঞ্চিনারায়ণ মন্দিরে ইত্যাদি।
পট চিত্রকলাকে ওড়িয়া চিত্রকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয় যেটি ১২শতকে পুরীর জগন্নাথের মন্দির থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। এই শৈলীটি গঙ্গা এবং ভোই রাজবংশের রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিকশিত হয়েছিল। পট চিত্রের উদ্দেশ্য ছিল পুরীতে আসা লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীদের কাছে জগন্নাথকে ঘিরে ধর্মানুষ্ঠানকে জনপ্রিয় করা। পট চিত্রের অবশ্য অনেকগুলি রূপ হতে পারে এবং মুখোশ থেকে খেলনা এবং মডেল পর্যন্তও হতে পারে।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরটি পিপলির অ্যাপ্লিক শিল্পকর্ম, কটক থেকে রৌপ্য ফিলিগ্রির অলংকারিক কাজ, পটচিত্র (তাল পাতার ছবি), নীলগিরির (বালাসোর) বিখ্যাত পাথরের পাত্র এবং বিভিন্ন উপজাতি প্রভাবিত সংস্কৃতির জন্যও পরিচিত। কোণার্কের সূর্য মন্দিরটি তার স্থাপত্য বৈভবের জন্য বিখ্যাত, অন্যদিকে "সম্বলপুরি বস্ত্র শিল্প", বিশেষ করে সম্বলপুরি শাড়ি শৈল্পিক মহিমায় এর সমান। ওড়িশার শাড়ির বিভিন্ন রঙ এবং বৈচিত্র্যের কারণে এগুলি সেই রাজ্যের মহিলাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। ওড়িশায় পাওয়া তাঁতের শাড়ি চারটি প্রধান ধরনের হতে পারে; এগুলো হল ইক্কত, বান্ধা, বোমকাই এবং পাসাপল্লী। ওড়িশার শাড়িগুলি ঘিয়া, মেরুন, বাদামী এবং মরিচার মত অন্যান্য রঙেও পাওয়া যায়। এই শাড়িতে মোটিফ তৈরি করতে ওড়িশার তাঁতিরা যে টাই-এন্ড-ডাই কৌশল ব্যবহার করে তা এই অঞ্চলের জন্য অনন্য। এই কৌশলটি ওড়িশার শাড়িগুলিকে তাদের নিজস্ব একটি পরিচয় দেয়।
ওড়িশার বালু শিল্প হল পুরীতে বিকশিত একটি অনন্য ধরনের শিল্প।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ওড়িশার শিল্পকলা, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.