ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকট ২০২১ হলো ২০২১ সালের মে মাসে সংঘটিত একটি সংঘাত। ২১ মে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ফলে এর সমাপ্তি ঘটে। এই সংঘাতকে বিক্ষোভ, পুলিশের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ, হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদ কর্তৃক ইসরায়েলে রকেট হামলা এবং গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বিমান হামলা দ্বারা সূচিত করা হয়। ৬ মে শেখ জাররাহতে ছয়টি ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের বিষয়ে ইসরায়েলের সুপ্রিমকোর্টের প্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের কারণে ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুসালেমে বিক্ষোভ শুরু করে। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, ইসরায়েলের সাথে সংযুক্ত এই এলাকাটি ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর একটি অংশ যা বর্তমানে ইসরায়েলের দখলে রয়েছে। বিক্ষোভ দ্রুত ইহুদি ও ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সহিংস সংঘাতে পরিণত হয়। ৭ মে ইসরায়েলি পুলিশ ইহুদি ধর্মের পবিত্রতম স্থান টেম্পল মাউন্টে অবস্থিত ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে হামলা চালায়। পুলিশ পাথর নিক্ষেপকারী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট এবং স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে।
ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকট ২০২১ | |||
---|---|---|---|
ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত-এর অংশ | |||
তারিখ | ৬–২১ মে ২০২১ (২ সপ্তাহ ও ১ দিন) | ||
অবস্থান | |||
কারণ |
| ||
অবস্থা | যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়; উভয় পক্ষই জয় দাবি করে
| ||
নাগরিক সংঘাতের দলসমূহ | |||
| |||
নেতৃত্ব দানকারীগণ | |||
| |||
ক্ষয়ক্ষতি | |||
| |||
৭২,০০০+ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত |
ইসলামের পবিত্র রাত লাইলাতুল কদর ও জেরুসালেম দিবসের ছুটির দিনে ডানপন্থী ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের পরিকল্পিত মিছিলের আগে (মিছিল পরে বাতিল করা হয়) এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ৩০০ জনেরও বেশি লোক আহত হন, যাদের বেশিরভাগই ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক। ফলে ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাভিচাই ম্যান্ডেলব্লিট উত্তেজনা কমাতে চাওয়ায় সুপ্রিমকোর্টের রায় ৩০ দিন বিলম্বিত হয়।
১০ মে হামাস ইসরায়েলকে টেম্পল মাউন্ট কমপ্লেক্স ও শেখ জাররাহ থেকে নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দেয়। একই দিনে হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদ গাজা ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলে রকেট নিক্ষেপ শুরু করে, যেগুলো একাধিক বাসভবন ও একটি স্কুলে আঘাত হানে। পরবর্তীতে ইসরায়েল গাজার অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালায়। ফলে ১৬ মে নাগাদ প্রায় ৯৫০টি হামলায় চারটি উঁচু টাওয়ারসহ ১৮টি ভবন, ৪০টি বিদ্যালয় ও চারটি হাসপাতাল সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। আল-শাতি শরণার্থী শিবিরেও হামলা চালানো হয়। এছাড়াও ইসরায়েলি বোমা হামলায় কমপক্ষে ১৯টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়।
এই সহিংসতার ফলে গাজায় ৬৬ জন শিশুসহ কমপক্ষে ২৪৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। এবং ফিলিস্তিনি রকেট হামলায় ইসরায়েলে একজন শিশুসহ মোট ১২ জন নিহত হন। ১১ মে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায় ফিলিস্তিনি হতাহতের মধ্যে অন্তত ১৫ জন হামাসের সদস্য এবং গাজা ভূখণ্ডে ভুল রকেট উৎক্ষেপণের ফলে কিছু ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ২০২১ সালের ২০ মে ফিলিস্তিন জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমপক্ষে ১,৯০০ ফিলিস্তিনি নাগরিক আহত হন। অন্যদিকে, ১২ মে ইসরায়েলের প্রতিবেদন অনুযায়ী কমপক্ষে ২০০ জন ইজরায়েলি আহত হন। ২০২১ সালের ১৯ মে অনুযায়ী, এই সংঘাতে কমপক্ষে ৭২,০০০ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়। ১৩ মে হামাস প্রথম যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৮ মে মিশর, জর্ডান ও ফ্রান্স যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব দাখিলের ঘোষণা দেয়। ২০ মে অনুযায়ী, ২১ মে রাত ২টা (জিএমটি ২০ মে রাত ১১টা) থেকে ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
২০২১ সালে মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাসের শুরুতে জেরুসালেম ইসলামি ওয়াকফ কর্মকর্তারা বলেন, ১৩ এপ্রিল রাতে ইসরায়েলি পুলিশ আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং আযান সম্প্রচারের জন্য ব্যবহৃত লাউডস্পিকারের তারগুলো কেটে দেয়, যাতে পশ্চিম প্রাচীরে ইসরায়েলের স্মরণীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি রুভেন রিভলিনের দেওয়া ভাষণ বিঘ্নিত না হয়। ইসরায়েলি পুলিশ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। জর্ডান এই ঘটনার নিন্দা জানায় এবং ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস এই ঘটনাকে "বর্ণবাদী ঘৃণামূলক অপরাধ" বলে অভিহিত করেন, কিন্তু এটি অন্য কোনো আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। একই মাসে ইসরায়েলি পুলিশ পুরনো শহরের দামেস্ক গেটের বাইরের প্লাজাটি বন্ধ করে দেয়, যা ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী ছুটির দিনের সমাবেশস্থল। ফলে রাতে সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয়, বেশ কয়েকদিন পরে ব্যারিকেডগুলো সরিয়ে দেয়া হয়। ১৫ এপ্রিল, এক ফিলিস্তিনি কিশোর একজন ইহুদি ব্যক্তিকে চড় মারার একটি টিকটক ভিডিও প্রকাশিত হয়। পরদিন অর্থাৎ রমজানের প্রথম শুক্রবার ইসরায়েল সরকার মসজিদে নামাজের ক্ষেত্রে ১০,০০০ ব্যক্তির সীমা আরোপ করায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি মসল্লিকে আল-আকসা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। একই দিনে জাফায় একজন ইহুদি ধর্মীয় শিক্ষককে মারধর করা হয়, যার ফলে দুই দিন ধরে বিক্ষোভ হয়।
৬ মে শেখ জাররাহতে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ শুরু হয়, কিন্তু শীঘ্রই আল-আকসা মসজিদ, লোদ, ইসরায়েলের অন্যান্য আরব এলাকা এবং পশ্চিম তীরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ১০ থেকে ১৪ মে-র মধ্যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে পূর্ব জেরুসালেমে প্রায় ১,০০০ জন ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী আহত হন।
শেখ জাররাহতে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে ৬ মে প্রথম সংঘর্ষ হয়, যেখানে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো উচ্ছেদ হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল। ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা সন্ধ্যায় ঘরের বাইরের ইফতার করছিলো। ৬ মে, ওতজমা ইহুদিত ও ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনিদের রাস্তা জুড়ে একটি টেবিল স্থাপন করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিওগুলোতে দেখা যায় উভয় পক্ষই একে অপরের দিকে পাথর ও চেয়ার ছুঁড়ে মারছে। এই ঘটনায় ইসরায়েলি পুলিশ হস্তক্ষেপ করে কমপক্ষে ৭ জনকে আটক করে।
১৩ এপ্রিল ইসরায়েলি পুলিশ আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ করে এবং মিনারের স্পিকারের তার কেটে দেয়। ঐ দিনটি ছিল ইসলামের পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন। জর্ডান এই ঘটনার নিন্দা জানায় এবং ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ একে ঘৃণিত অপরাধ বলে অভিহিত করে।
৭ মে, প্রায় ৭০,০০০ মুসল্লি আল-আকসায় রমজানের শেষ শুক্রবার জুমার নামাজে অংশ নেওয়ায় টেম্পল মাউন্টে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মাগরিবের নামাজের পর কিছু ফিলিস্তিনি মুসল্লি ইসরায়েলি পুলিশ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে পূর্বে মজুত করা পাথর ও অন্যান্য বস্তু নিক্ষেপ করতে শুরু করে। পুলিশ কর্মকর্তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে ও একটি ফিল্ড ক্লিনিকে স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। মসজিদের একজন মুখপাত্র জানান, ইসরায়েলি পুলিশ কম্পাউন্ডটি (যেখানে অনেক ফিলিস্তিনি রমজানে ঘুমান) খালি করার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলিদের প্রবেশাধিকার দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই চেষ্টা করা হয়। ইসরায়েলি পুলিশ মসজিদ প্রাঙ্গণে হামলা চালানোর সময় ৩০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হন। ফিলিস্তিনিরা পাথর, আতশবাজি ও ভারী বস্তু নিক্ষেপ করে এবং অন্যদিকে ইসরায়েলি পুলিশ মুসল্লিদের লক্ষ্য করে স্টান গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছোঁড়ে। জেরুসালেমের পুরনো শহর দিয়ে ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের জেরুসালেম দিবসের পতাকা মিছিলের আগে এই সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় মোট ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হন, যাদের মধ্যে ৪০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন রাতে হামাস ইসরায়েলে রকেট নিক্ষেপ করে।
৮ মে, ইসলামের পবিত্র রাত লাইলাতুল-কাদরের দিন আরও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ফিলিস্তিনিরা পাথর নিক্ষেপ করে এবং ইসরায়েল পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে স্টান গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। ফলে কমপক্ষে ৮০ জন আহত হন।
১০ মে, ইসরায়েলি পুলিশ দ্বিতীয়বার আল-আকসায় আক্রমণ করে। এতে ৩০০ জন ফিলিস্তিনি ও ২১ জন ইসরায়েলি পুলিশ আহত হন। রেড ক্রিসেন্টের তথ্য অনুযায়ী, এই ঘটনায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনি আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি এবং সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল।
১৪ মে জুমার নামাজের পর, ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীরের ২০০টিরও বেশি স্থানে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারীরা পাথর নিক্ষেপ করলে ইসরায়েলি সেনারা আগুন ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ফলে এই সংঘর্ষে ১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ১০০ জন আহত হন। ১৬ মে অনুযায়ী, ১৪ মে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের সাথে সংঘর্ষে মোট ১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। ১৭ মে, আরও ৩ জন ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী নিহত হন।
ফাতাহ পূর্ব জেরুসালেমসহ পশ্চিম তীরে ১৮ মে সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান জানালে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনিরা এতে অংশ নেয়। গাজা, পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরের গ্রাম ও শহরগুলোতে দোকান-পাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। রামাল্লাহর কাছে সংঘর্ষে, একজন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৭০ জনেরও বেশি আহত হন এবং গুলিবর্ষণে দুই ইসরায়েলি সেনা আহত হন। নাবলুস, বেথলেহেম ও হেবরনেও প্রচুর জনসমাগম হয় এবং ইসরায়েলি পুলিশ শেখ জাররাহতে জলকামান মোতায়েন করে।
১০ মে সন্ধ্যা ও রাতে, লোদের আরব বিক্ষোভকারীরা ইহুদিদের বাড়ি, একটি স্কুল ও একটি সিনাগগ লক্ষ্য করে পাথর ও আগুনের বোমা নিক্ষেপ করে এবং পরে একটি হাসপাতালে হামলা চালায়। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়, ফলে একজন নিহত এবং দুজন আহত হন।
ইসরায়েল জুড়ে বিশেষ করে আরব জনসংখ্যার শহরগুলোতে বিক্ষোভ তীব্রতর হয়। লোদে, ইহুদিদের বাড়িগুলোতে পাথর নিক্ষেপ করা হয় এবং কিছু ইহুদি বাসিন্দাকে পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে নেয়। সিনাগগ ও একটি মুসলিম কবরস্থান ভাংচুর করা হয়। একজন ইহুদি ব্যক্তি মাথায় ইটের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন এবং ছয় দিন পর মারা যান। নিকটবর্তী রামলা শহরে, ইহুদি বিক্ষোভকারীরা যানবাহন লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে। ১১ মে, লোদের মেয়র ইয়াইর রিভাইভিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে শহরে ইসরায়েল সীমান্ত পুলিশ মোতায়েনের পরামর্শ দেন। নেতানিয়াহু ১১ মে লোদ-এ জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। শহরে সীমান্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। রাত্রিকালীন কারফিউ ঘোষণা করা হয় এবং অনাবাসী বেসামরিক নাগরিকদের জন্য শহরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। জননিরাপত্তা মন্ত্রী আমির ওহানা জরুরী আদেশ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন।
১২ মে অস্থিরতা অব্যাহত ছিল। একরে, এক ইহুদি ব্যক্তি তার গাড়ি চালানোর সময় আরব বিক্ষোভকারীদের লাঠি ও পাথর দ্বারা মারাত্মকভাবে আহত হন। বাত ইয়ামে, ইহুদি বিক্ষোভকারীরা আরব দোকানগুলোতে হামলা চালায় এবং পথচারীদের মারধর করে। একজন আরব গাড়ি চালককে তার গাড়ি থেকে টেনে নিয়ে রাস্তায় মারাত্মকভাবে মারধর করা হয়। ঘটনাটি ইসরায়েলি সংবাদ কর্মীদের দ্বারা সরাসরি ধরা পড়ে।
১৩ মে অনুযায়ী বিরশেবা, রাহাত, রামলা, লোদ, নাসিরিয়া, তিবেরিয়াস, জেরুসালেম, হাইফা ও একরে ছুরিকাঘাত, অগ্নিসংযোগ, বাড়িতে হামলা ও গুলি চালনার চেষ্টাসহ বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। জাফফায় এক ইসরায়েলি সেনাকে মারাত্মকভাবে মারধর করা হলে মাথার খুলি ভেঙ্গে যাওয়ায় ও সেরিব্রাল হেমারেজের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লোদে আরেকটি পৃথক ঘটনায় একজন ইহুদি প্যারামেডিক ও আরেকজন ইহুদিকে গুলি করা হয়। রামলায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হন এবং তেল আবিবে ইসরায়েলি সাংবাদিকদের উপর ডানপন্থী বিক্ষোভকারীরা হামলা চালায়। একটি ইহুদি পরিবার ভুলক্রমে উম্ম আল-ফাহমে প্রবেশ করলে আরব বিক্ষোভকারীরা তাদের আক্রমণ করে। পরে অন্যান্য স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। অস্থিরতা নিরসনে সারাদেশে ইসরায়েল সীমান্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং ১০টি সীমান্ত পুলিশ রিজার্ভ কোম্পানিকে ডাকা হয়।
১৮ মে, পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের সাথে ইসরায়েলি-আরবরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি নীতির প্রতিবাদে সাধারণ ধর্মঘট পালন করে। অসংখ্য নিয়োগকর্তা ধর্মঘটে অংশ নেওয়া আরব কর্মীদের বরখাস্ত করার হুমকি দেন। হাইফার রামবাম হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তাদের আরব কর্মচারীদের কাছে এই ধর্মঘটে অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করে চিঠি পাঠায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরব শহরগুলোর বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষদের কাছে এই ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের তালিকা চেয়ে অনুরোধ পাঠালে শিক্ষকদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। ইসরায়েলি আইনের অধীনে প্রয়োজনীয় পূর্ব শুনানি ছাড়াই ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী কিছু কর্মচারীদের অবৈধভাবে বরখাস্ত করা হয়। ইসরায়েলি টেলিযোগাযোগ সংস্থা সেলকম এই সহাবস্থানের সমর্থনে এক ঘন্টার জন্য কাজ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ইসরায়েলি ডানপন্থীরা সেলকম বয়কটের আহ্বান জানায় এবং বেশ কয়েকটি ইহুদি বসতি পরিষদ ও দক্ষিণপন্থী সংগঠনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। সেলকমের তহবিল পরবর্তীতে ২% হ্রাস পায়।
পুরো বিক্ষোভ জুড়ে, আরব বিক্ষোভকারীরা ১০টি সিনাগগ, ১১২টি ইহুদি বাড়ি ও ৮৪৯টি ইহুদি গাড়িতে আগুন দেয়, ৩৮৬টি ইহুদি বাড়ি লুট করে এবং আরও ৬৭৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্যদিকে, ইহুদি বিক্ষোভকারীরা ১৩টি আরব গাড়িতে আগুন দেয় ও ১৩টি আরব বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়াও আরব বিক্ষোভকারীরা ভুল করে একটি আরব বাড়িতে আগুন দেয়। ২৪ মে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য একটি অভিযান শুরু করে এবং সন্দেহভাজন বিক্ষোভকারীদের গণহারে গ্রেপ্তারের জন্য হাজার হাজার পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করে। ২৫ মে অনুযায়ী, ১,৫৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে প্রায় ৭০% আরব।
১০ মে, হামাস আল-আকসা মসজিদ এলাকা ও শেখ জাররাহ উভয় স্থান থেকে সকল পুলিশ ও সামরিক কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিতে ইসরায়েলকে আল্টিমেটাম দেয় এবং ঘোষণা দেয়, যদি ইসরায়েল তা না করে তাহলে গাজা ভূখণ্ডের সম্মিলিত সামরিক বাহিনী ইসরায়েলে আক্রমণ করবে। নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কয়েক মিনিট পর হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলে ১৫০টিরও বেশি রকেট নিক্ষেপ করে। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায় জেরুসালেম ও বাইতু শিইমেশের দিকে সাতটি রকেট নিক্ষেপ করা হয় এবং একটিকে রুদ্ধ করা হয়। একটি ইসরায়েলি বেসামরিক গাড়ি লক্ষ্য করে একটি ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও নিক্ষেপ করা হয়, ফলে চালক আহত হন। ইসরায়েল একই দিনে গাজা ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। হামাস এই সংঘর্ষকে "জেরুজালেম যুদ্ধের তলোয়ার" বলে অভিহিত করে। পরদিন আইডিএফ আনুষ্ঠানিকভাবে গাজা ভূখণ্ডে এই অভিযানকে "অপারেশন গার্ডিয়ান অফ দ্য ওয়ালস" নামে অভিহিত করে।
১১ মে, হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদ আশদোদ ও আশকেলোনে শতাধিক রকেট নিক্ষেপ করে। এতে দুজন নিহত হন এবং ৯০ জনেরও বেশি আহত হন। রিশন লেজিওনের একজন ইসরায়েলি মহিলাও নিহত হন এবং দাহমাশের আরও ২ জন বেসামরিক নাগরিক রকেট হামলায় নিহত হন।
১১ মে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার ১৩ তলা আবাসিক হানাদি টাওয়ার ধ্বংস হয়। টাওয়ারে আবাসিক কামরা এবং বাণিজ্যিক অফিস ছিল। আইডিএফ জানায় ভবনটিতে হামাস কর্তৃক ব্যবহৃত অফিস ছিল। হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদ পাঁচ মিনিটে তেল আবিবে ১৩৭টি রকেট নিক্ষেপ করে। এছাড়াও, ইসরায়েলি মালিকানাধীন একটি তেলের পাইপলাইন রকেটের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১২ মে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী গাজা ভূখণ্ডে কয়েক ডজন স্থাপনা ধ্বংস করে। হামাস জানায় ধ্বংস হওয়া স্থাপনাগুলোর মধ্যে তাদের পুলিশ সদর দপ্তরও ছিল। ১২ মে গাজা থেকে ইসরায়েলে ৮৫০টিরও বেশি রকেট নিক্ষেপ করা হয়। আইডিএফ অনুযায়ী, হামাস কর্তৃক উৎক্ষেপিত কমপক্ষে ২০০টি রকেট ইসরায়েলে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় এবং গাজা ভূখণ্ডের ভিতরে পতিত হয়। হামাস গাজা সীমান্তের কাছে একটি ইসরায়েলি সামরিক জিপেও ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ফলে একজন ইসরায়েলি সেনা নিহত ও তিনজন আহত হন।
১৩ মে, হামাস ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে আত্মঘাতী ড্রোন মোতায়েনের চেষ্টা করে। আয়রন ডোম ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করা অনেকগুলো রকেট রুদ্ধ করে। হামাসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর সদর দপ্তর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারের বাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েল বেশ কয়েকবার হামলা চালায়। ১৪ মে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী স্থলে ও আকাশপথে তাদের সৈন্য রয়েছে বলে দাবি করে, যদিও পরে এই দাবি প্রত্যাহার করা হয় এবং সংবাদমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। এছাড়াও জানা যায়, ইসরায়েলি স্থলবাহিনী সীমান্তে অবস্থান করে গাজায় আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই দিনে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী হামাসের বিস্তৃত ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করে। সন্দেহ করা হয়, ইসরায়েলি স্থল আক্রমণের খবর হামাস যোদ্ধাদের সুড়ঙ্গে প্রলুব্ধ করার জন্য আইডিএফ ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করে যাতে বিমান হামলায় বিপুল সংখ্যক যোদ্ধা নিহত হয়। একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার মতে, এই বোমাবর্ষণে হামাসের শতাধিক সেনা ও ২০ জন কমান্ডার নিহত হন। কিন্তু আনুমানিক মৃতের সংখ্যা কয়েক ডজনে নেমে আসে যখন জানা যায়, হামাসের জ্যেষ্ঠ কমান্ডাররা আইডিএফ-এর এই কৌশল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং বোমা হামলার পূর্বে মাত্র কয়েক ডজন হামাস যোদ্ধা সুড়ঙ্গে অবস্থান নেয়। ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর মোট ১৬০টি বিমান ১৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে ৪৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এছাড়াও ১৪ মে, ইসরায়েল আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী হামাসের একটি ড্রোন ধ্বংস করে।
১৫ মে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজার আল-জালা ভবনে হামলা চালায়, যেখানে আল জাজিরা ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সাংবাদিকদের বাসস্থান ও আরও বেশ কয়েকটি অফিস ছিল। ইসরায়েলি বাহিনী ভবনটির মালিককে ফোন করে ভবন থেকে সকলকে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয় এবং এর প্রায় এক ঘণ্টা পর ভবনটি কমপক্ষে ৪টি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস এই হামলার নিন্দা জানায়। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক যুদ্ধাপরাধ তদন্তের আহ্বান জানায়।
১৭ মে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী হামাসের সুড়ঙ্গে আরেকটি বড় অভিযান চালায়; ১৫ কিলোমিটারেরও বেশি ভূগর্ভস্থ প্যাসেজে বোমাবর্ষণ করে, ৫৪টি ইসরায়েলি জেট বিমান ১১০টি বোমা ফেলে। হামাসের নয়জন কমান্ডারের বাড়ি ও হামাসের সামরিক গোয়েন্দা শাখা কর্তৃক ব্যবহৃত একটি বাড়িতেও বোমাবর্ষণ করা হয়।
সংঘাত চলাকালীন, ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রসহ হামাস যোদ্ধারা বারবার অ্যাপার্টমেন্ট ও টিলার পিছনে অবস্থান নেয়। আইডিএফ পর্যবেক্ষক ইউনিট এই দলগুলো শনাক্ত করে এবং পরবর্তীতে পিনপয়েন্ট আক্রমণে দলগুলো ধ্বংস করা হয়। ইসরায়েলি বিমান ও স্থলবাহিনীর গুলিতে এরকম কমপক্ষে ২০টি দল ধ্বংস হয়। ২০ মে, আইডিএফ-এর একটি বাসে হামাসের ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একজন সেনা হালকাভাবে আহত হন। ১০ জন সেনার একটি দল বাস থেকে নামার কয়েক মুহূর্ত পর এই হামলা হয়।
এছাড়াও, আইডিএফ হামাসের ছোট মনুষ্যবিহীন ডুবোজাহাজের বহর ডুবিয়ে দেয় যেটি ইসরায়েলি নৌ-জাহাজ বা তেল ও গ্যাস ড্রিলিং রিগের নিচে বা কাছাকাছি বিস্ফোরিত হওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিলো। হামাস বারবার ইসরায়েলের তামার গ্যাসক্ষেত্রে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। ইসরায়েলি নৌবাহিনীর একটি জাহাজ, হামাস কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত একটি ডুবোজাহাজ ধ্বংস করে যখন এটি তীরের কাছাকাছি ছিল। পরবর্তীতে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ডুবোজাহাজটি প্রেরণকারী দলকে আক্রমণ করে।
এই সংঘাত চলাকালীন, দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলে প্রতিদিন গড়ে ৪০০টি করে মোট ৪,৩৬০ টিরও বেশি রকেট ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হয়। প্রায় ৩,৪০০টি রকেট সফলভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে এবং ৬৮০টি গাজায় ও ২৮০টি সমুদ্রে পতিত হয়। আয়রন ডোম ১,৪২৮টি রকেট ধ্বংস করে যেগুলো জনবহুল এলাকার দিকে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলো। আয়রন ডোম প্রায় ৬০–৭০টি রকেট আটকাতে ব্যর্থ হওয়ায় এগুলো জনবহুল এলাকায় আঘাত হানে। ফলে ৬ জন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়, যাদের মধ্যে একজন ৫ বছর বয়সী ছেলে, ২ জন ইসরায়েলি-আরব, একজন ভারতীয় মহিলা এবং ২ জন থাই শ্রমিক। হামলার চলাকালীন আশ্রয়কেন্দ্রে দৌড়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়ে ৭৩ বছর বয়সী এক মহিলাসহ আরও ৩ জন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
আইডিএফ অনুমান করে, গাজা ভূখণ্ডে প্রায় তিন ডজন রকেট উৎপাদন কেন্দ্রে হামলার ফলে স্থানীয় রকেট উৎপাদন ক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। এছাড়াও, ইসরায়েলি বিমান হামলায় অসংখ্য হামাস ও ইসলামি জিহাদ কমান্ডার নিহত হয়। অভিযানের চলাকালীন আইডিএফ প্রায় ৩০ জন সিনিয়র হামাস কমান্ডারকে হত্যা করে।
হামাস সুড়ঙ্গগুলো ব্যবহার করে ইসরায়েলি সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা বা অপহরণের জন্য সীমান্তে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করে। এই আক্রমণগুলো ব্যর্থ হয়। আইডিএফ সুড়ঙ্গে অবস্থান নেয়া হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। মোট ১৮ জন হামাস যোদ্ধা নিহত হন। আইডিএফ আরও দাবি করে তারা ইসরায়েলের আকাশসীমায় প্রবেশকারী হামাসের সাতটি ড্রোন ধ্বংস করে, যেগুলোর মধ্যে অন্তত একটি আয়রন ডোম দ্বারা। একটি ইসরায়েলি ড্রোনও দুর্ঘটনাক্রমে আয়রন ডোম কর্তৃক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
জাতিসংঘ অনুযায়ী, ৭২,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়, যাদের অনেকে গাজার ৪৮টি ইউএনআরডাব্লিউএ স্কুলে আশ্রয় নেয়।
১৩ মে, ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত পেরিয়ে লেবাননের আল-রাশিদিয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবির থেকে ৩টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়, যেগুলো ভূমধ্যসাগরে পতিত হয়। হিজবুল্লাহ রকেট উৎক্ষেপণের দায় অস্বীকার করে। আল-রাশিদিয়া শরণার্থী শিবিরে লেবাননের সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে তারা বেশ কয়েকটি রকেট খুঁজে পায়।
১৪ মে, কয়েক ডজন লেবানিজ বিক্ষোভকারী ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের সাথে একাত্মতা প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকারীদের একটি ছোট দল সীমান্তের বেড়া কেটে ইসরায়েলে প্রবেশ করে, মেটুলার কাছে আগুন ধরিয়ে দেয়। আইডিএফ সেনারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে একজন নিহত হন যাকে পরে হিজবুল্লাহর সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আরেকজন আহত হন এবং পরে তার আঘাতের কারণে মারা যান। ঐ দিন সন্ধ্যায়, সিরিয়া থেকে ৩টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়, যেগুলোর মধ্যে ২টি রকেট ইসরায়েলের জনবসতিহীন স্থানে আঘাত হানে। পরদিন লেবাননের বিক্ষোভকারীরা ককটেল ও অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে সীমান্তের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত করে।
১৭ মে, ফিলিস্তিনি সেনারা ইসরায়েলের দিকে ছয়টি রকেট নিক্ষেপ করে কিন্তু রকেটগুলো লেবানন-ইসরায়েল সীমান্ত অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সীমান্তের ওপারে রকেট নিক্ষিপ্ত হওয়ার দিকে আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করে। এই ঘটনায় কেউ আহত হননি।
১৯ মে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অনুযায়ী, দক্ষিণ লেবাননের টায়ার জেলার সিদ্দিকিন গ্রামের কাছ থেকে হাইফার দিকে চারটি রকেট নিক্ষেপ করা হয়। একটি রকেট রুদ্ধ করা হয়, আরেকটি খোলা এলাকায় অবতরণ করে এবং বাকি দুটি ভূমধ্যসাগরে অবতরণ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করে।
যুদ্ধবিরতির পর, জাতিসংঘ ও গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুযায়ী, ৬৬ জন শিশু ও ৪০ জন নারীসহ মোট ২৫৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং ৬০০ জনেরও বেশি শিশু ও ৪০০ জন নারীসহ প্রায় ২,০০০ জন আহত হন। ইসরায়েল দাবি করে, নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ২২৫ জন যোদ্ধা ছিল। হামাস অনুযায়ী, ৮০ জন ফিলিস্তিনি যোদ্ধা নিহত হয়। নিহত শিশুদের মধ্যে একজনকে একটি যোদ্ধা দল তাদের আল-মুজাহিদীন ব্রিগেডের সদস্য বলে দাবি করে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের ১৩ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে দুইজন শিশু, একজন ভারতীয় মহিলা ও ইসরায়েলে কর্মরত দুইজন থাই পুরুষ।
ইসরায়েলের মতে, প্রায় ৬৪০টি ফিলিস্তিনি রকেট গাজা ভূখণ্ডে অবতরণ করে, যার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে। তাই ইসরায়েলি বিমান হামলা বা ভুল ফিলিস্তিনি রকেট হামলায় ১০ মে কয়েকজন নিহত হয়েছিলো কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে, ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, নিহত পরিবারের সংখ্যা ২০ এবং ঘোষণা দেয় তারা আন্তর্জাতিক আদালতে এ বিষয়ে "যুদ্ধাপরাধের" জন্য অভিযোগ দায়ের করবে। ১৯ মে, ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউসুফ আবু হুসেইন তার নিজ বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন। ২০ মে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় একজন প্রতিবন্ধী ফিলিস্তিনি ব্যক্তি, তার গর্ভবতী স্ত্রী ও তাদের তিন বছরের মেয়ে নিহত হন। পরবর্তীতে একটি তদন্তে জানা যায় হামাস যোদ্ধারা একটি ফিলিস্তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিতরে সামরিক কাঠামো তৈরি করেছে।
হামাসের একজন কমান্ডার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ফায়াদ ও ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদের তিনজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার নিহত হন। ১১ মে, হামাসের আরেকজন সদস্য নিহত হন। উভয় দলের সরকারি বিবৃতিতে পাঁচ কমান্ডারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। অন্যান্য সেনাদের মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা করা হয়, তবে নিশ্চিত করা হয়নি। হামাসের একজন শীর্ষ কমান্ডার বাসেম ইসা নিহত হন।
১২৩টি দেশের ২৯,০০০টি ঘটনা পর্যবেক্ষণকারী একটি গবেষণায়, গত এক দশকের গণনায় গাজা নবম স্থানে রয়েছে যেখানে সাধারণ নাগরিকরা বিস্ফোরক অস্ত্রশস্ত্রের কারণে নিহত বা আহত হন। সংখ্যার দিক থেকে গাজা নবম সর্বাধিক প্রভাবিত অঞ্চল ছিল। বিস্ফোরণের ৭৬৪টি ঘটনায় প্রায় ৫,৭০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হন, যা মোট সংখ্যার ৯০ শতাংশ। ফলস্বরূপ, নিহতের সংখ্যার অনুপাত ও বোমাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে গাজা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
১৮ মে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর গাজা পুনর্নির্মাণের জন্য মিশর ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কাতার একইভাবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ইসরায়েল অভিযোগ করে হামাস তাদের কার্যক্রম ঢাকার জন্য চিকিৎসা সুবিধা ব্যবহার করছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হামাস সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয় এবং আহত সৈন্যদের প্রায়ই বেসামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। জাতিসংঘের মানবসেবা বিষয়ক সমন্বয় দপ্তর জানায়, ১৭ মে পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিম্নলিখিত ক্ষয়ক্ষতি হয়:
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস অনুযায়ী, ১৮ মে পর্যন্ত গাজার ১৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রিমাল ক্লিনিকে ইসরায়েলি হামলায় গাজা ভূখণ্ডের একমাত্র কোভিড-১৯ পরীক্ষাগারও বন্ধ হয়ে যায়।
নিহত কর্মচারীবৃন্দ
যুদ্ধবিরতির পর ইউএনওসিএইচএ অনুযায়ী,
এই সংঘাতের ফলে ইসরায়েলিরা সম্পত্তির ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের ৩,৪২৪টি দাবি দায়ের করে, যার ১,৭২৪টি মোটর যানবাহনের ক্ষতি সম্পর্কিত।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকট ২০২১, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.