হোলিকা দহন: একটি হিন্দু উৎসব

হোলিকা দহন উৎসব বা ন্যাড়াপোড়া অসুরা হোলিকাকে পোড়ানোর মাধ্যমে উদ্‌যাপন করা হয়। হিন্দুধর্মের অনেক ঐতিহ্যেই হোলি উৎসবে প্রহ্লাদকে বাঁচাতে বিষ্ণুর দ্বারা হোলিকা বধকে উদ্‌যাপন করা হয়।

হোলিকা দহন
হোলিকা দহন: তাৎপর্য, ইতিহাস, অনুষ্ঠান
২০১০ সালে রাজস্থানের উদয়পুরে হোলিকা দহন উৎসব
ধরনহিন্দু
উদযাপনহোলিকা দহনের পরের দিনে, অর্থাৎ হোলির দিনে, একে অপরের উপর রঙ ছিটায়, এবং উৎসবের খাবারগুলো খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
শুরুফাল্গুন পূর্ণিমা
তারিখফেব্রুয়ারি-মার্চ
সম্পর্কিতদোলযাত্রা
২০১২ সালে দিল্লীর একটি স্থানে হোলিকা দহন উপলক্ষে অগ্ন্যুৎসব

তাৎপর্য

হোলিকা দহন: তাৎপর্য, ইতিহাস, অনুষ্ঠান 
নেপালের কাঠমুণ্ডুতে নারীদের হোলিকা দহনের জন্য প্রস্তুতি

হোলির আগের রাতে উত্তর ভারত, নেপাল এবং দক্ষিণ ভারত এর কিছু স্থানে ঐতিহ্যগত ভাবে আগুন জ্বালানো হয়। বাচ্চারা সেদিন বিভিন্ন ধরনের জিনিস চুরি করে এবং হোলিকার আগুনে সেগুলোকে পোড়ায়।

এটাও উল্লেখ করা দরকার যে, ভারতের অনেক স্থানেই এই দিনকে হোলির বদলে হোলিকা দহন বলা হয়। প্রহ্লাদের গল্পের সাথে সম্পর্কিত আরও কিছু কাজও করা হয়, কিন্তু হোলিকার আগুনে পোড়ানোর ব্যাপারটাই এখানে মুখ্য। এর দ্বারা রাজা হিরণ্যকশিপুর অশুভ শক্তির চেয়ে ভক্তির শক্তি বেশি - এই ব্যাপারটা প্রকাশ করা হয়, প্রহ্লাদ অনেক অত্যাচারের পরও তার বিশ্বাস হারায় নি।

ইতিহাস

এই দোল বা হোলি যেমন প্রেমের উৎসব, তেমনই অশুভকে নাশ করে শুভ শক্তির জয় উদযাপনের দিন এটি। সেই জন্যে আগের দিন পালন করা হয় হোলিকা দহন বা বাঙালির বুড়ি পোড়ানো । দোল বা হোলির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা কাহিনি। রঙের উৎসবের সঙ্গে রাধা কৃষ্ণের কাহিনি জড়িয়ে আছে।

হোলির সঙ্গে যুক্ত নৃসিংহ অবতারের পৌরাণিক গল্প আছে ।রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন পরম বিষ্ণুভক্ত। সেই কারণে প্রহ্লাদকে হত্যা করার জন্য হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে আগুনে নিক্ষেপ করার পরিকল্পনা করেন। বিষ্ণুর কৃপায় আগুন প্রহ্লাদকে স্পর্শ করতে না পারলেও সেই আগুনে পুড়ে মারা যান হোলিকা। তার হোলি হল অশুভ শক্তির পরাজয় ও শুভ শক্তির জয়ের প্রতীক। তাই হোলির আগের দিন হোলিকা দহন পালন করা হয়।

অনুষ্ঠান

হোলিকা দহন: তাৎপর্য, ইতিহাস, অনুষ্ঠান 
২০১৫ সালে মুন্দ্রাতে হোলিকা দহন উৎসব
    অগ্ন্যুৎসবের জন্য আগুনের ব্যবস্থা করা

উৎসব শুরুর আগের দিনে কোন খোলা মাঠ, মিলনায়তন বা মন্দিরের পাশে খোলা স্থানে কাঠ ও জ্বালানি মজুদ করা হয়। চিতার উপর একটি পুত্তলি রাখা হয় যার দ্বারা হোলিকাকে বোঝানো হয়। এই হোলিকা প্রহ্লাদকে ছলনার দ্বারা আগুনে পোড়াতে চেয়েছিল। লোকজন রঙ দিয়ে তাদের ঘরের ভেতরটা সাজায়, ঘরে খাদ্য, পানীয় এসবের ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন ঋতুগত খাদ্য যেমন গুজিয়া, মাথরি, মালপোয়া এসবের ব্যবস্থা করে।

    হোলিকা দহন

হোলির প্রাক্কালে, সাধারণভাবে সূর্যাস্তের পর চিতা জ্বালানো হয়, যার দ্বারা হোলিকা দহনকে নির্দেশিত করা হয়। এই অনুষ্ঠানটির দ্বারা অশুভের দ্বারা শুভের জয় চিহ্নিত হয়। মানুষ জ্বলন্ত চিতার চারদিকে সংগীত ও নৃত্য করে। এছাড়া মানুষ চিতার চারদিকে প্ররিক্রমাও করে।

পরের দিন হোলি উৎসব পালিত হয়, যা রঙ এর একটি জনপ্রিয় উৎসব।

হোলিকা দহনের কারণ সমূহ

হোলিকার দহন হচ্ছে হোলি উৎসবের সবচেয়ে বেশি পরিচিত পৌরাণিক ব্যাখ্যা। ভারতের বিভিন্ন স্থানে হোলিকার মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ বলা হয়, কিন্তু সকল ক্ষেত্রেই এই বিষয়ে সম্মতি দেখা যায় যে, মুলাস্থান শহরে এই ঘটনাটি ঘটেছিল, যা বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান নামে পরিচিত। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • বিষ্ণু বাঁধা দেন বলে হোলিকা আগুনে পোড়ে
  • ব্রহ্মা হোলিকাকে হোলিকাকে এই শর্তে তার আগুনে না পুড়বার ক্ষমতাটি দান করেছিলেন যে, এই ক্ষমতাটিকে অন্য কারও ক্ষতির জন্য ব্যবহার করা হবে না।
  • হোলিকা ভাল নারী ছিলেন, এবং তার পোশাকের কারণে তাকে আগুনে পোড়ানো সম্ভব ছিল না। প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে এটা জেনে তিনি তার পোশাক প্রহ্লাদকে দিয়ে দেন এবং নিজে আগুনে পুড়ে আত্মত্যাগ করেন।
  • হোলিকা যখন আগুনের উপর বসেন, তিনি তার চাদর পরিধান করেন এবং প্রহ্লাদকে তার কোলের উপর বসান। প্রহ্লাদ বিষ্ণুর প্রতি প্রার্থনা শুরু করলে বিষ্ণ বাতাস পাঠিয়ে দেন, যা হোলিকার চাদরটিকে উড়িয়ে নিয়ে প্রহ্লাদকে তা দিয়ে আবৃত করে। এরফলে প্রহ্লাদ বেঁচে যায়, এবং হোলিকা আগুনে পুড়ে মারা যায়।

তথ্যসূত্র

Tags:

হোলিকা দহন তাৎপর্যহোলিকা দহন ইতিহাসহোলিকা দহন অনুষ্ঠানহোলিকা দহন ের কারণ সমূহহোলিকা দহন তথ্যসূত্রহোলিকা দহনপ্রহ্লাদহোলিকা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

দিল্লী সালতানাত২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়০ (সংখ্যা)হামচুম্বকযাকাতরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়পানিপথের যুদ্ধবইমহাত্মা গান্ধীবাগদাদকিরগিজস্তাননকশীকাঁথা এক্সপ্রেসশ্রীকৃষ্ণকীর্তনপল্লী সঞ্চয় ব্যাংকবাংলাদেশের সংবিধানখাদ্যডিপজলকারামান বেয়লিকযুক্তরাজ্যমিয়ানমারবিশেষ শাখা (বাংলাদেশ পুলিশ)কুরআনপাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০মিয়া খলিফাবীর শ্রেষ্ঠপাবনা জেলাঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকোকা-কোলামীর জাফর আলী খানসাইবার অপরাধসূরা ফালাকআদমধানলোহিত রক্তকণিকাআসমানী কিতাবসাতই মার্চের ভাষণসেলজুক সাম্রাজ্যমাতৃভাষীর সংখ্যা অনুসারে ভাষাসমূহের তালিকার‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নআমঋগ্বেদঅষ্টাঙ্গিক মার্গবাংলাদেশের ইউনিয়নের তালিকাআরবি বর্ণমালাচৈতন্য মহাপ্রভুবাইতুল হিকমাহউপজেলা পরিষদবাংলাদেশের একাডেমিক গ্রেডিং পদ্ধতিসম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিলগইনশিবলী সাদিকলিভারপুল ফুটবল ক্লাবটুইটারনোরা ফাতেহিফেসবুকনিউমোনিয়াএইচআইভিক্রিকেটসেলজুক রাজবংশমিঠুন চক্রবর্তীযতিচিহ্নস্ক্যাবিসবাংলাদেশ ছাত্রলীগকাজলরেখাঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনশাকিব খানপ্লাস্টিক দূষণজেরুসালেমসার্বজনীন পেনশনআব্বাসীয় স্থাপত্যমুজিবনগর সরকারবাংলাদেশী টাকাসাধু ভাষাকারাগারের রোজনামচারামমোহন রায়ময়মনসিংহহজ্জ🡆 More