আরবি ভাষার নাম ঐতিহাসিকভাবে একটি দীর্ঘ নামকরণ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে করা হয়। আরবি- ভাষী এবং মুসলিম দেশগুলির অনেকেই নামের শেষে পূর্ব বংশীয় নামগুলির একটি লম্বা চেইন জুড়ে দেয়। এই পদ্ধতিটি আরব এবং মুসলিম বিশ্ব জুড়ে প্রচলিত রয়েছে।
ইসম (اسم ) হল প্রদত্ত নাম। অর্থাৎ জন্মের পর প্রথম যে নাম রাখা হয়। যেমন : আহমদ বা ফাতিমা। বেশিরভাগ আরবি নামের অর্থ সাধারণ বিশেষণ এবং বিশেষ্য হিসাবে থাকে এবং প্রায়শই চরিত্রের উচ্চাকাঙ্খী হয়। উদাহরণস্বরূপ মুহাম্মদ মানে 'প্রশংসনীয়' এবং আলী মানে 'উন্নত' বা 'উচ্চ'।
আফ্রিকা, আরব, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অংশ জুড়ে মুহাম্মদ নামের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এটি প্রায়শ সংক্ষেপে 'Md'., 'Mohd' এবং বাংলায় 'মো'. লেখা হয়। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনে মুহাম্মাদ প্রথম নাম হিসাবে প্রায় সর্বব্যাপী ব্যবহারের কারণে একজন ব্যক্তিকে প্রায়শই তাদের দ্বিতীয় নাম দ্বারা উল্লেখ করা হয়। এসব অঞ্চলে প্রতিজন মানুষের নামের শুরুতে মুহাম্মাদ লেখা হয়। যেমন : মো. উসমান, মো. উমায়ের, মো.তানভীর ইত্যাদি।
নসব হল বংশ পরস্পরার বর্ণনা। এটি আসল নাম না ইসমের পূর্বে ছেলে হলে ইবনে (ابن) এবং কন্যা হলে বিন্ত (بنت) শব্দ দ্বারা নির্দেশ করা হয়। এর অর্থ হয় "এর ছেলে (Sun of) বা এর মেয়ে (Doughter of)। যেমন: ইবনে খালদুন (ابن خلدون ) অর্থ "খালদুনের ছেলে"। এখানে খালদুন তার পিতার ব্যক্তিগত নাম। তবে কখনো একটি দূরবর্তী পূর্বপুরুষের নামও হতে পারে।
লাকাব এর অর্থ ডাকনাম, পদবি, উপাধি বা পারিবারিক নাম করা যেতে পারে। লাকাব সাধারণত ব্যক্তির বর্ণনামূলক নাম হয়। লাকাব বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন: আব্বাসীয় খলিফা হারুন আল-রশিদ। হারুন হল তার প্রথম বা আসল নাম এবং আল রশিদ হল তাঁর লাকাব। লাকাব কখনো যৌগ রূপেও ব্যবহৃত হয়। যেমন: সালাহ আল-দীন, শামস আল-দীন, নূর আল-দীন, নাসির আল- দাওলা, নিজাম আল মুলক, সাইফ আল-ইসলাম। এই শব্দগুলি বাংলায় সালাহুদ্দীন/সালাহ উদ্দীন, শামসুদ্দীন/শামস উদ্দীন, নিজামুল মুলক এভাবে লেখা হয়। প্রাচীন আরব সমাজে লাকাবের ব্যবহার সাধারণ ছিল, কিন্তু বর্তমানে জন্মগত উপাধি বা পারিবারিক নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
আরবি নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল নিসবাহ। নিসবাহ অর্থ কাউকে তার জন্মস্থান বা অন্য কোনো জায়গার প্রতি সম্পৃক্ত করা। এতে নামের সাথে ব্যক্তিটি কোন জায়গায় বাসিন্দা তা সহজে জানা যায়। যেমন: হাসান আল বসরি। হাসান তাঁর জন্ম নাম। তিনি বসরার বাসিন্দা ছিলেন বিধায় সেদিকে সম্পৃক্ত করে তাকে বসরি/আল বসরি বলা হয়।
কুনিয়াৎ অর্থ উপনাম করা যেতে পারে। কাউকে তার সন্তানের নামের দিকে সম্পৃক্ত করে যে নামে ডাকা হয় তাই কুনিয়াৎ। যেমন: আবু বকর; এখানে বকর তার ছেলে অর্থাৎ সে বকরের পিতা। এটা ছাড়া ভিন্ন পদ্ধতিতেও কুনিয়াৎ বা উপনাম রাখা যেতে পারে। যেমন: আবু হুরায়রা, আবুল মাল, আবু নাওম প্রভৃতি। নাম লেখার সময় কুনিয়াৎ সবার আগে লিখতে হয়। তবে বর্তমান আরব সমাজে এর তেমন প্রচলন নেই।
আরব মুসলমানদের মধ্যে একটি নাম-রূপের একটি হল উপসর্গ আব্দ্ (অর্থ: উপাসক; স্ত্রী: আমাত)। এটিকে আল্লাহ শব্দের প্রতি সম্পৃক্ত করে আব্দুল্লাহ (عبد الله : আল্লাহর উপাসক) নাম রাখা হয়। কখনো এটি আল্লাহর গুণগত নামসমূহের দিকে সম্পৃক্ত করেও নাম রাখা হয়। যেমন: আব্দুল মালেক,আব্দুল খালেক, আব্দুর রহিম ইত্যাদি। তবে আরব সমাজে আব্দুল্লাহ সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। নারীদের ক্ষেত্রে আমাতুল্লাহ। ইসলামে ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা প্রায়শ স্থানীয় অ-আরবী ও অ-ইসলামি নামগুলির ব্যবহার চালিয়ে যেতে পারেন। তবে সেসব নাম কোনো বহু-ঈশ্বরবাদী অর্থ গ্রহণ না করতে হবে।
কিছু স্পষ্ট ইসলামি নাম ছাড়া (যেমন: মুহাম্মদ) আরব খ্রিস্টানদের এমন কিছু নাম রয়েছে, যা মুসলিমদের থেকে আলাদা করা যায় না কিছু। কিছু সাধারণ খ্রিস্টান নাম হল:
কিছু মানুষ বিশেষ করে আরব উপদ্বীপে যখন একজন বিখ্যাত পূর্বপুরুষের বংশধর হয়, তখন তাদের শেষ নাম "آل" দিয়ে শুরু করে। যেমন: ﺁل سعود (আল সা'উদ) অর্থ সৌদের পরিবার বা বংশধর। এমন কয়েকটি নামের উদাহরণ হল : মুহাম্মাদ বিন সালমান আলে সাউদ,আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ আলে শাইখ প্রভৃতি।
অ-আরবি ভাষাভাষীরা প্রায় এই ভুলগুলি করে:
বিশ্বের অনেক জায়গার মত আরবি সংস্কৃতিতে একজন ব্যক্তির পূর্বপুরুষ এবং পরিবারের নাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি উদাহরণ নীচে ব্যাখ্যা করা হল:
ধরুন, একজন ব্যক্তিকে সালেহ ইবনে তারিক ইবনে খালিদ আল-ফুলান বলা হয় তাহলে:
তাই সালেহ ইবনে তারিক ইবনে খালিদ আল-ফুলানের অনুবাদ হয় "সালেহ, (সে)তারিকের ছেলে, (সে) খালিদের ছেলে; (সে) আল-ফুলানে পরিবারের।"
"কন্যা" এর আরবি হল বিনত/বিনতে। ফাতিমা বিনতে তারিক ইবনে খালিদ আল কাজিমি নামের একজন মহিলার নামের অনুবাদ হবে : "ফাতিমা, (সে) তারিকের মেয়ে, (সে) খালিদের ছেলে; (সে) আল কাজিমি পরিবারের।"
এসব ক্ষেত্রে ইবন এবং বিনত সরকারী নামকরণের অন্তর্ভুক্ত। তবে বেশিরভাগ আরব দেশ আজকাল তাদের নামকরণ পদ্ধতিতে 'ইবন' এবং 'বিন্ত' ব্যবহার করে না। সালেহ যদি একজন মিশরীয় হয়, তবে তাকে সালেহ তারিক খালিদ আল-ফুলান এবং ফাতিমা হলে ফাতিমা তারিক খালিদ আল-কাজিমি লেখা হবে।
যদি সালেহ একজন স্ত্রীকে বিয়ে করেন (তিনি নিজের প্রথম ও পারিবাবিক নাম এবং উপাধি বহাল রাখবেন) তাহলে তাদের সন্তানরা সালেহের পারিবারিক নাম গ্রহণ করবে। অতএব, তাদের পুত্র মোহাম্মদকে মোহাম্মদ ইবনে সালেহ ইবনে তারিক আল-ফুলান বলা হবে।
যাহোক, সকল আরব দেশ পূর্ণ দৈর্ঘ্যে নাম ব্যবহার করে না। তবে প্রচলিতভাবে দুই বা তিন শব্দের নাম এবং কখনো কখনো সরকারী বা আইনি বিষয়ে চার শব্দের নাম ব্যবহার করে। এভাবে প্রথম নামটি ব্যক্তিগত নাম, মধ্য নামটি পিতার নাম এবং শেষ নামটি পারিবারিক নাম।
ধরুন, কারো নাম সালমান,তার পিতার নাম দাউদ এবং তার দাদার নাম আলী। তার উপনাম হল আবুল মাল, তার লাকাব বা উপাধি হল আল বাজ্জার, সে চট্টগ্রামে বসবাস করে তাহলে তার পুরো নাম হবে: আবুল মাল সালমান বিন দাউদ বিন আলী আল-বাজ্জার আল চাটগামী।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article আরবি নামকরণ পদ্ধতি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.