ফাতিমা: মুহাম্মাদ (সঃ) ও খাদিজার কন্যা

ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ (আরবি: فاطمة; fāṭimah; উচ্চারণ /ˈfɑːtˤɪma/; আনু.

৬০৫ বা ৬১৫ –৬৩২) ছিলেন ইসলামের মহানবী মুহাম্মাদ এবং তার প্রথম স্ত্রী খাদিজার কন্যা। তিনি মুসলিম নর-নারীর কাছে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে সম্মানিত। মক্কায় কুরাইশদের দ্বারা তার পিতার উপর নিযার্তন ও দুর্দশার সময় ফাতিমা সবসময় তার পাশে ছিলেন। মদিনায় হিজরতের পর তিনি মুহাম্মাদের এর চাচাত ভাই আলি ইবন আবি তালিব এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের চারটি সন্তান হয়। তার পিতা হযরত মুহাম্মাদের এর পরলোকগমনের কয়েক মাস পরেই তিনি পরলোকগমন করেন এবং মদিনার জান্নাতুল বাকিতে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তবে তার কবরের প্রকৃত অচিহ্নিত রয়েছে।

ফাতিমা: জন্ম, ইসলাম গ্রহণ, শৈশবকাল
সৈয়দা ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ
আরবি: فاطمة
কুনিয়াত
  • উম্মে আবিহা
  • উম্মে আল-হাসানাহ
  • উম্মে আল-হাসান
  • উম্মে আল-হুসেন
উপাধি
  • আল-সিদ্দিকাহ
  • আল-মুবারাকাহ
  • আল-তাহিরাহ
  • আল-জাকিয়াহ
  • আল-রাদিয়াহ
  • আল-মুহাদ্দাথাহ
  • আল-বাতুল
  • আল-জহরা
  • সৈয়দাতুন নিসা আল-আলামিন
মর্যাদাক্রমনবী মুহাম্মদ এর কন্যা
সময় কাটিয়েছেন৫ BH – ১১ হিজরী
তার পিতার সময় পরে৯০ দিন ১১ হি.
জন্ম২০ জামাদ-আল-আখর ৫ বিএইচ
জন্ম স্থানমক্কা, হেজাজ
জাতিতত্ত্বহেজাজ আরব
পিতামুহাম্মদ
মাতাখাদিজা
ভাইতইয়াব এবং ,কাসিম
বোনজয়নব, কুলসুম ও, রুকাইয়াহ,
স্বামী/দাম্পত্যসঙ্গীআলি ইবনে আবি তালিব
মৃত্যু১৩ জমাদিউল আউয়াল ১১ হি. (বুধবার আগস্ট ৫ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ)
কবর স্থানঅজানা কিন্তু হেজাজ, মদিনা
ধর্মইসলাম
ফাতিমা: জন্ম, ইসলাম গ্রহণ, শৈশবকাল
আরবি লিপিতে লেখা ফাতিমা আজ-জারাহ্‌

জন্ম

ফাতিমা ৬০৫ সালে মক্কায় খাদিজার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মদিন সম্পর্কে নানা মতভেদ আছে, তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতে, তিনি প্রথম কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পাঁচ বছর পর কাবাঘর সংস্কারের সময় ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। জয়নব, রুকাইয়াহ এবং উম্মে কুলসুমের পর ফাতিমা মুহাম্মদের চতুর্থ কন্যা। খাদিজা তার অন্য সন্তানদের জন্য ধাত্রী রাখলেও ফাতিমাকে ধাত্রীর হাতে ছেড়ে না দিয়ে নিজের কাছে রেখে স্বীয় তত্ত্বাবধানে লালন-পালন করেন।

ইসলাম গ্রহণ

মুহাম্মাদের নবুয়ত লাভের পরপরই ফাতিমা তার মা খাদিজার ও অন্যান্য বোনদের সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। এবং ইসলামের প্রথম ভাগের নারীদের সাথে বাইয়াত লাভ করেন। আয়িশা, ইমাম আয যুরকানি তার শারহুল মাওয়াহিবত গ্রন্থে এই মতকে গ্রহণ করেছেন এবং বলেছেন, ফাতিমার চারিত্রিক গুণাবলী পরিস্ফুটনের ক্ষেত্রে খাদিজার স্পষ্ট অবদান রয়েছে।

শৈশবকাল

শৈশব থেকেই ফাতিমা তার পিতা মুহাম্মাদের ধর্ম সম্পর্কে বুঝতে পারতেন,তার পিতার কষ্ট দেখে তিনিও কষ্ট অনুভব করতেন। একদিন মসজিদে নববীতে সিজদা থাকা অবস্থায় কুরাইশ নেতাদের আদেশে উকবা ইবনে আবু মুয়াত মুহাম্মাদের পিঠে উটের পচা-গলা নাড়ী-ভুঁড়ি উঠিয়ে দিয়েছিলো, ফাতিমা এই ঘটনা শুনতে পেয়ে দ্রুত এসে তার পিতার পিঠ থেকে এসব পচা নাড়িভুরি নামিয়ে দেন ও পরিষ্কার করে দেন। এরপর ফাতিমা কুরাইশ নেতাদের সাথে ঝগড়া করেন। এই ঘটনা মুহাম্মাদের জন্য অনেক পীড়াদায়ক ছিল। কষ্টের ছিলো, তিনি কাফিরদের অভিশাপ দিয়েছিলেন। তৎপরতার ভূমিকার জন্য ফাতিমার প্রশংসা করেছিলেন।

কিশোর বয়সে ফাতিমা পিতার হাত ধরে কাবার প্রাঙ্গণে গিয়েছিলেন। এ সময় মুহাম্মাদকে একা পেয়ে হাজরে আসওয়াদের নিকটে তাকে ঘিরে ফেলে, এবং বিভিন্ন কটু কথা বলে মুহাম্মাদকে উত্তেজিত করতে থাকে। হেনস্থার এক পর্যায়ে আক্রমণ করে মুহামাদের দাড়ি ধরে টানাটানি করে করতে থাকে ও চাদর গলায় পেঁচিয়ে ফাঁস লাগাতে শুরু করে। এমনকি এক পর্যায়ে মুহাম্মাদের মাথায় আঘাত করে, যার ফলে মাথা কেটে রক্তস্নাত হয়ে যায়। এই ঘটনা দেখে ফাতিমা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাযন। সেইদিন আবু বকরের সাহায্যে মুহাম্মাদ ও তার মেয়ে ফাতিমা শত্রুদের হাত থেকে মুক্তি পায়, এবং তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এইসব ঘটনা ছোট থেকেই ফাতিমার উপর ধর্মীয় প্রভাব ফেলে, যার ফলে ফাতিমা ছোটবেলা থেকেই পিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আনুগত হয়ে বড় হয়েছিলেন।

শি‘বে আবি তালিবে ফাতিমা

৬১৬ খ্রিষ্টাব্দে যখন মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মাদের উপর নির্যাতনের নতুন পথ হিসাবে তার সম্প্রদায়কে আদেশ করলো, মুহাম্মাদকে তাদের হাতে হত্যার জন্য তুলে দেওয়া হোক, তুলে না দেওয়া পর্যন্ত বনু হাশিম ও বনু আবদুল মুত্তালিব সম্প্রদায়কে বয়কট করা হবে। মক্কার সমস্ত গোত্র এক হয়ে ঘোষণা দিলো, মুহাম্মাদকে হত্যার জন্য তুলে না দেওয়া পর্যন্ত এই দুই সম্প্রদায়ের সাথে সমস্ত ব্যবসাবাণিজ্য করবেনা। এই কঠিন সময়ে ফাতিমা সহ আহলে বাইতের সবাই দুঃখ কষ্টে দিনানিপাত করেছে,সবাই খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেছে, এই অবরোধ প্রায় তিন বছর চলছিলো।

তখন ফাতিমা বয়সে ছোট হলেও অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ়তার সাথে পিতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সেইজন্য পিতার আদর ও স্নেহ বেশি মাত্রায় পেতে থাকেন। মদিনায় হিজরতের আগ পর্যন্ত মক্কায় পিতার দা’ওয়াতী কার্যক্রমের সাহায্য করেন। পিতার বিরুদ্ধে কেউ কটূক্তি করলে ফাতিমাও তার জবাব দিতেন। আর এ কারণেই তার ডাকনাম হয়ে যায়- “উম্মে আবিহা ( অর্থঃ পিতাম মা অর্থাৎ মুহাম্মাদের মা)। এবং এই সময়ে তার মা খাদিজা মারা গেলে তিনি পরিবারের অন্যতম কর্তা হিসাবে সুদৃঢ় হাতে দায়িত্ব পালন করেন।

হিজরাত ও ফাতিমা

যে রাতে মুহাম্মাদ আলীকে নিজ গৃহে রেখে আবু বকরকে সঙ্গে নিয়ে মদিনায় হিজরত করলেন, সেই রাতে ফাতিমা তার বোনদের সাথে মক্কায় নিজ গৃহে ছিলেন। তারপর আলী তিন দিন মক্কায় থেকে মুহাম্মাদের নিকট কুরাইশদের গচ্ছিত অর্থ-সম্পদ মালিকদের নিকট প্রত্যার্পণ করে মদিনায় পাড়ি জমালেন। ফাতিমা ও তার বোন উম্মে কুলসুম মক্কায় থেকে গেলেন। মুহাম্মাদ মদিনায় পৌঁছে একটু স্থির হওয়ার পর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে পরিবারের লোকদের নেয়ার জন্য একজন সাহাবীকে পাঠালেন। সেই সময় ফাতিমা মদিনায গমন করেন।

ফাতিমা-আলীর বিয়ে

বিবাহের প্রস্তাব

সর্বপ্রথম আবু আবু বকর ও উমর ফাতিমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু মুহাম্মাদ অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেন। ইমাম হাকিম নিশাপুরি তার মুসতাদরিক আল হাকিম গ্রন্থে ও সুনানে নাসায় গ্রন্থে এসেছে যে, উমর মুহাম্মাদের নিকট প্রস্তাব নিয়ে আসলে, তিনি বলেন, সে এখনো ছোট এবং আবু বকর প্রস্তাব নিয়ে আসলে, মুহাম্মাদ তাকে বলে, আবু বকর! আল্লাহর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা কর। অন্য বর্ণনায় এসেছে, উমরকেও মুহাম্মাদ একই কথা বলেন, তুমিও আল্লাহ্‌র সিদ্ধান্তের অপেক্ষা কর।

বিবাহের তারিখ ও ফাতিমা-আলীর বয়স

২য় হিজরিতে বদরের যুদ্ধের পরে আলীর সাথে ফাতিমার বিয়ে হয়। বিয়ের সঠিক তারিখ ও ফাতিমা ও আলীর বয়স নিয়ে জীবনী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কেও বলেছেন, উহুদ যুদ্ধের আলী-ফাতিমার পর বিয়ে হয়। আবার এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, মুহাম্মাদ আয়িশাকে ঘরে নেয়ার ৪ মাস পরে আলী-ফাতিমার বিয়ে হয় এবং বিয়ের ৯ মাস পরে তাদের বাসর হয়। সেই হিসাবে বিয়ের সময় ফাতিমার বয়স ১৫ বছর ৫ মাস এবং আলীর বয়স ২১ বছর ৫ মাস ছিলো। ইবনে আবদুল বার তার আল-ইসতিয়াব” গ্রন্থে এবং ইবনে সাদ তার তাবাকাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, আলী-ফাতিমার বিয়ে হয় মুহাম্মাদ মদিনায় আসার ৫ মাস পরে রজব মাসে এবং বদর যুদ্ধ থেকে ফেরার পর তাদের বাসর হয়, সেই হিসাবে ফাতিমার বয়স তখন ছিলো ১৮ বছর। আবার আল তাবারির তারীখ গ্রন্থে বলা হয়েছে, হিজরতের ২২ মাসের মাথায় জিলহজ্জ মাসে আলী-ফাতিমার বাসর হয়, বিয়ের সময় আলী ফাতিমার থেকে ৪ বছরের বড় ছিলেন।

আলীর সাথে বিবাহ

উসুদুল গাবা গ্রন্থে ও তাবাকাত গ্রন্থে ইবনে সাদের বর্ণনা মতে আলী উমারের পরামর্শ পেয়ে, মুহাম্মাদের নিকট ফাতিমার বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে যান। এরপর মুহাম্মাদ সন্তুষ্টচিত্তে ফাতিমা আর আলীর বিবাহ সম্পন্ন করেন। তবে ভিন্ন একটি বর্ণনা মতে আলী আনসারী সাহাবা বা তার এক দাসীর পরামর্শ পেয়ে মুহাম্মাদের নিকট গিয়েছিলো।

মুহাম্মাদ আলীর সাথে ফাতিমাকে বিবাহ দিতে রাজী হলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তুমি দেনমোহর কি দিবে? আলী উত্তর দিলেন, আমার ঘরে কিছুই নেই আপনার দেওয়া একখানা বর্ম ছাড়া, যার মূল্য ৪ দিরহামও হবেনা।

এই বিবাহ সম্পন্ন করার সুবিধার্থে উসমান ইবনে আফফান বর্মটি ৪৭০ দিরহাম দিয়ে কিনে নেন। এই অর্থ মুহাম্মাদের হাতে দেয়া হয়, মুহাম্মাদ ৭০ দিরহাম বিবাহের আয়োজনে ব্যয় করেন ও ৪০০ দিরহাম ফাতিমা-আলীর বিবাহের দেনমোহর নির্ধারণ করেন। ফাতিমা অবশ্য আলীর দারিদ্র্য সম্পর্কে তার পিতার নিকট আপত্তি তুলেছিলেন। তখন মুহাম্মাদ তাকে বলেছিলেন, আলী দুনিয়াতে একজন নেতা এবং আখিরাতেও সে সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিদের একজন হবে। সাহাবীদের মধ্যে তার জ্ঞান বেশি, সে একজন বিচক্ষণ ব্যাক্তি। তাছাড়া সবার আগে সে ইসলাম গ্রহণ করেছে। এরপর আরবের প্রথা অনুযায়ী কনের পক্ষ থেকে মুহাম্মাদ ও বর পক্ষ থেকে আলী নিজে খুতবা দান করেন। তারপর উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে খোরমা বিতরণ করা হয়।

বিবাহের খুতবা

বিবাহের সময় মুহাম্মাদ ও আলী উভয় পক্ষ থেকে দু’জনই খুতবা পাঠ করেছিলেন। মুহাম্মাদের খুতবা

এরপর আলীও একটি খুতবা পাঠ করেন।

মুহাম্মাদ (সাঃ) আলী ও ফাতিমার দাম্পত্য সুখের জন্য দোয়া করেন। এভাবে অতি সাধারণ ও সাদাসিধে ভাবে আলী-ফাতিমার বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের শেষে মুহাম্মাদ আবেগ ভরা কান্না জড়িত কণ্ঠে ফাতিমাকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,

সাংসারিক জীবন

সংসার জীবন

২য় হিজরির বদর যুদ্ধের পর আলী তার স্ত্রীকে নেওয়ার জন্য একটি ঘর ভাড়া করেন। আলীর সেই ঘরে ছিল শুধুমাত্র একটি ভেড়ার চামড়ার বিছানা, সেটি বিছিয়ে তিনি রাতে ঘুমাতেন আবার দিনে সেটি দিয়ে মশকের কাজ করতেন। কোন চাকর-বাকরও ছিল না আসমা বিনতে উমাইস আলীর বাসর ঘর প্রত্যক্ষ করে বলেছিলেন, খেজুর গাছের ছাল ভর্তি বালিশ-বিছানা ছাড়া তাদের ঘরে আর কিছু ছিল না। তাদের আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ ছিলো, আলী তার একটি বর্ম এক ইহুদীর নিকট বন্ধক রেখে কিছু যব ও খাদ্য আনেন। তবে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র এই বিয়ে উপলক্ষে একটি বিশাল জাঁকজমকপূর্ণ ভোজ অনুষ্ঠান করেছিল। আল-ইসাবার বর্ণনা মতে, হামযা দুটো বুড়ো উট যবাই করে আত্মীয়দের খাইয়েছিলেন।

দারিদ্র্য

ফাতিমার পরিবার ছিলো দারিদ্রতায় ভরাডুবি। কিন্তু ফাতিমার অনন্য বোনদের অবস্থা বেশ সচ্ছল ছিলো। জয়নবের বিয়ে হয়েছিলো আবুল আসের সঙ্গে, রুকাইয়া আর উম্মে কুলসুমকে বিয়ে করে ছিলো আবু লাহাবের পুত্রদ্বয়, পরবর্তীতে উসমান একে একে দুইবোনকেই বিয়ে করেন, এরা প্রত্যকে আরবের ধনী ব্যক্তি ছিল। কিন্তু অপরদিকে আলী ছিলেন আর্থিক দিক থেকে জরাজীর্ণ যুবক, সেও উচ্চ বংশের জ্ঞানী ব্যক্তি হয়ে থাকলেও অনেক ছোট বয়সে (১০ বছর বয়সে) ইসলাম গ্রহণ করার করে নিজেকে ইসলামে নিবেদিত করেন, এইজন্য ব্যক্তি জীবনে বেশি অর্থোপার্জন করতে পারেননি। এজন্য তার আর্থিক দুরাবস্থার কথা চিন্তা করে আলীর পুত্র হাসান ও হোসাইনের লালন-পালনের ভার গ্রহণ করেন মুহাম্মাদ ও তার চাচা আব্বাস। এভাবে আলী মুহাম্মাদের পরিবারের সাথে যুক্ত হোন।

ফাতিমা ১৮ বছরে স্বামী গৃহে গিয়ে দেখেন সেখানে খেজুর গাছের ছাল ভর্তি চামড়ার বালিশ ও বিছানা, এক জোড়া যাতাকল, দু‘টো মশক(পানি সংগ্রহের পাত্র), দু‘টো পানির ঘড় আর কিছু আতর-সুগন্ধি ছাড়া আর কিছুই নেই। আলীর গৃহে কোন দাস-দাসী না থাকার কারণে ফাতিমা সব ধরনের কাজ একাই করতেন। ইতিহাসবিদগণ বলেছেন, যাতাকল ঘুরাতে ঘুরাতে তার হাতে কড়া পড়ে যায়, মশক ভর্তি পানি টানতে টানতে তার কোমরে দাগ হয়ে যায়। আলী তার মা ফাতিমা বিনতে আসাদ সবসময় ঘরের কাজে ফাতিমাকে সাহায্য করতেন।

এই সময় ফাতিমার পিতা মুহাম্মাদ এক যুদ্ধ থেকে বিজয়ী বেশে প্রচুর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ও যুদ্ধবন্দীসহ মদিনায় ফিরেন। তাই, আলী ও ফাতিমা মুহাম্মাদের নিকট গিয়ে ফাতিমাকে ঘরের কাজে সাহায্য করার জন্য একজন দাস চাইলেন। কিন্তু মুহাম্মাদ সাথে সাথে দাস দিতে অস্বীকৃতি দিয়ে জানালেন,

এরপর ঐদিন সন্ধ্যায় মুহাম্মাদ আলী বাড়ি গিয়ে একটি দোয়া শিখিয়ে দিয়ে আসেন, যেই দোয়া একটি দাসের থেকেও উত্তম। দোয়াটি হলঃ প্রতি নামাজের পর ১০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০ বার আলহামদুলিল্লাহ্‌, ১০ আল্লাহু আকবর এবং রাতে ঘুমানোর পূর্বে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্‌, ৩৩ আল্লাহু আকবর। আলী বলেছেন, এই দোয়া জানার পরে আমি জীবনে কোনদিন বাদ দিইনি, এমনকি সিফফিনের রাতেও না। এরপরে আরো একদিন অভাবে পরে ফাতিমা মুহাম্মাদের দ্বারস্থ হয়েছিলো কিছু চাইবার জন্য, সেইদিনও মুহাম্মাদ ফাতিমাকে ৫টি উত্তম দোয়া শিখিয়ে দিয়েছিলো।

ছোটখাট দাম্পত্য কলহ

দাম্পত্য জীবন মানেই সেখানে স্বামী-স্ত্রীতে ছোট-খাটো দাম্পত্য কলহ থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক, আর ফাতিমা আর আলীর উভয় জীবনই ছোটবেলা থেকেই কঠোর সংগ্রাম করে কেটেছে, মুহাম্মাদের সহযোদ্ধা হয়ে ইসলামের দাওয়াতে নিজেদের জীবন নিবেদিত করেছে। এরই মধ্যে আলী-ফাতিমার সংসার ছিলো অভাবের সংসার। ফলে তাদের সম্পর্ক মাঝে মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠতো, মুহাম্মাদের নিকটও সে বিচার চলে যেত, মুহাম্মাদ তখন দু‘জনের মধ্যে আপোষ করে দিতেন। একবার আলী তার সাথে রুষ্ট ব্যবহার করেন, এই বিচার ফাতিমা তার পিতা মুহাম্মাদের নিকট দিলে আলী ফাতিমার প্রতি অনুতপ্ত হোন, এবং পুনরায় খারাপ ব্যবহার না করার শপথ নেন।

আলীর দ্বিতীয় বিয়ের ইচ্ছা

আলী একবার ফাতিমার বর্তমানেই আরেকটি বিবাহের ইচ্ছা পোষণ করেন। ফাতিমা এই কথা শোনার সাথে সাথেই বিচলিত হয়ে পরেন ও কঠোর বিরোধিতা করেন। ফাতিমা এই অভিযোগ তার পিতার নিকট নিয়ে যান। মুহাম্মাদ এই কথা শোনার সাথে সাথে রাগান্বিত হলেন। আলী আবু জেহেলের মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠাবে, ফাতিমা এই কথা শোনার পরে আরো ক্ষেপে গিয়ে তার পিতাকে গিয়ে বললেন, আলী তো এখন আবু জেহেলের মেয়েকে বিয়ে করছে। মুহাম্মাদ এই কথা শুনে আরো রেগে গেলেন। কেননা আবু জাহেল ছিলো ইসলামের চরম শত্রু, ইসলামের ব্যপারে আবু জাহেল ও পুত্র খুবই বিরোধিতা করেছিলো। তারা সারা জীবন মুহাম্মাদ ও তার পরিবারের বিরোধিতা করে এসেছে এবং কষ্ট দিয়ে এসেছে।। তাদের ব্যপারে আল্লাহ্‌ ও তার রাসুল অসন্তুষ্ট ছিলো। আবু জাহলের এই কন্যার নাম নিয়ে মতপার্থক্য আছে, সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মতে “জুওয়ায়বিয়া”। তাছাড়া আল আওরা’, আল-হানকা’, জাহদাম ও জামিলাও বলা হয়েছে। ইসলাম গ্রহণ করে তিনি মুহাম্মাদের নিকট বায়য়াত হন এবং মুহাম্মাদের থেকে কিছু হাদিসও বর্ণনা করেন।

কিন্তু বিষয়টি ছিল বেশ জটিল, কারণ, আলী ইসলামের বিধি অনুসারে ফাতিমাকে রেখেও আরো একাধিক বিয়ে করতে পারে, সে অধিকার আল্লাহ তাকে দিয়েছে। অন্যদিকে কলিজার টুকরো মেয়েকে সতীনের ঘর করতে হবে এটা ভেবে পাচ্ছেন। আবার তার মেয়েকে আবু জাহেলের কন্যার সাথে সতীনের ঘর করতে হবে। মুহাম্মাদ রাগান্বিত হয়ে মসজিদে সকলের উদ্দেশ্যে ভাষণটি দেনঃ

মুহাম্মাদের বাণী বনু হিশাম ইবনে আল মুগিরা আলীর সাথে তাদের মেয়ে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আমার অনুমতি চায়। আমি তাদেরকে সে অনুমতি দিব না (৩ বার)। তবে আলী ইচ্ছা করলে আমার মেয়েকে তালাক দিয়ে তাদের মেয়েকে বিয়ে করতে পারে। কারণ, আমার মেয়ে আমার দেহেরই একটি অংশের মত, তাকে যা কিছু অস্থির করে তা আমাকেও তা অস্থির করে, আর যা তাকে কষ্ট দেয়, তা আমাকেও কষ্ট দেয়। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর রাসুলের মেয়ে ও আল্লাহর দুশমনের মেয়ের কখনো সহাবস্থান হতে পারে না।

আলী তখন মসজিদে উপস্থিত ছিলেন, চুপচাপ সবকিছু শুনে বাসায় গিয়ে, ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে ফাতিমার নিকট ক্ষমা চাইলেন। এবংএই ঘটনার পর ফাতিমা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আলীর একক স্ত্রী হিসেবে অতিবাহিত করেন। এইসময়ে ফাতিমা হাসান, হোসাইন, উম্মে কুলসুম ও যায়নাব এ চার সন্তানের মা হন।

ইতিহাসবিদগণ তাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও ধারণা উপর বলেছেন, এই ঘটনা আলী-ফাতিমা বিবাহিত জীবনের প্রথম দিকের ঘটনা, ২য় হিজরিতে প্রথম সন্তান হাসান জন্মগ্রহণের পূর্বেই। সবকিছু বিবেচনা করে আলী আবু জাহেল কন্যাকে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন এবং তাকে আত্তাব ইবনে আসিদ বিয়ে করেন।

হাসান-হোসাইনের জন্ম

৩য় হিজরিতে আলীর প্রথম সন্তান হাসান জন্মগ্রহণ করলো। সংবাদ পেয়ে মুহাম্মাদ ছুটে এসে সদ্যপ্রসূত সন্তানকে দু‘হাতে তুলে তার কানে আযান দিলেন, এবং দৌহিত্র হাসানের মাথা মুড়িয়ে তার চুলের সমপরিমাণ ওজনের রূপা গরীব-মিসকীনদের মধ্যে দান করে দিলেন। হাসানের বয়স এক বছরের কিছু বেশি হতে না হতেই ৪র্থ হিজরির শা‘বান মাসে ফাতিমা হোসাইনের জন্ম দিলেন।

মুহাম্মাদের আদর ও স্নেহ

মুহাম্মাদ এই দুই দৌহিত্রকে খুব ভালোবাসতেন। কেননা খাদিজার পরে তার আর কোন স্ত্রী সন্তান জন্ম দেননি। আর বংশ রক্ষার জন্য কোন পুত্র সন্তান ছিলোও না। তাই মুহাম্মাদ এদেরকে নাতী ও পুত্রের উভয় আদর-সোহাগ একসাথে দিয়ে বড় করেছেন। মুহাম্মাদ হাসান-হোসাইনের প্রতি বিশেষ ভালোবাসায় ভরপুর ছিলেন। তার নমুনা কিছু ঘটনা থেকে বুঝা যায়। তারা দুইজন মুহাম্মাদের কাছে গেলে, মুহাম্মাদের তাদের জড়িয়ে ধরতেন, তাদের গায়ের গন্ধ শুকতেন। মুহাম্মাদ তাদের চাদরে জড়িয়ে রাখতেন। এবং হাসান-হোসাইনকে নিজের ছেলের সমতুল্য বলে অভিহিত করেছেন। এসব কারণে ব্যস্ততার মাঝে সুযোগ পেলেই মুহাম্মাদ হাসান-হোসাইনকে দেখতে যেতেন, এমনকি ফাতিমার বাড়িতে গিয়ে ছাগীর দুধ দুইয়ে হাসানকে পান করিয়েছেন, এবং হাসান-হোসাইনের কান্নার আওয়াজ পেয়ে ফাতিমা তিরস্কার করেছেন।

একদিন মুহাম্মাদ তাদের একজনকে কাধে করে মদিনার বাজার করছিলেন, নামাযের সময় হলে তিনি হাসান অথবা হোসাইনকে পাশে রেখে মসজিদে ইমামতি করতে দাড়িয়ে গেলেন। কিন্তু এত দীর্ঘ সময় সিজদায় কাটালেন যে পিছনের মুক্তাদিরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল, নামায শেষে কেউ একজন জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহ্‌র রাসুল, আপনি এত লম্বা সিজদা করেছেন যে, আমরা ধারণা করেছিলাম কিছু একটা ঘটেছে অথবা ওহী নাযিল হচ্ছে। জবাবে তিনি বললেন, না, তেমন কিছু ঘটেনি। আসল ঘটনা হলো, আমার পিতৃসম হাসান/ হোসাইন আমার পিঠে চড়ে বসেছিল।

এছাড়া মুহাম্মাদ মসজিদের মিম্বরের উপর বসে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ বন্ধ করে, হাসান ও হোসাইনকে নিয়ে তার পাশে মিম্বারে বসান। মুহাম্মাদ তার নাতীদের বিভিন্ন ধরনের খেলা করতেন, দৌড়াদৌড়ি খেলা খেলতেন, ছোয়াছুয়ি খেলা খেলতেন, জড়িয়ে ধরে চুমো খেতেন। এমনকি হোসাইন মুহাম্মাদের বুকের উপর পা দিয়েও খেলা করতেন। মুহাম্মাদ হোসাইনের ব্যপারে বলেছে, হে আল্লাহ! আমি তাকে ভালোবাসি এবং সেও আমাকে ভালবাসে। তাকে যারা ভালোবাসে আপনি তাদের ভালোবাসুন। হোসাইন আমার অংশ এবং আমি হোসাইনের অংশ।

কন্যা যায়নাব ও উম্মে কুলসুমের জন্ম

এরপর ৫ম হিজরিতে ফাতিমা প্রথম কন্যা সন্তানের মা হন। মুহাম্মাদ তার নাম রাখেন যায়নাব। ফাতিমার বড় বোনের নাম ছিলো যায়নব, তার বোনের নামেই নিজের মেয়ের নাম রাখেন যায়নব। এর দু‘বছর পর ফাতিমা দ্বিতীয় কন্যা উম্মে কুলসুমের আম্মা হন। তার নামও মুহাম্মাদ তার অপর মৃতকন্যা উম্মে কুলসুমের নামে রাখেন। এভাবে ফাতিমা তার কন্যার মাধ্যমে নিজের মৃত দু‘বোনের স্মৃতিকে ধরে রাখেন। বাচিয়ে রাখেন।

মুহাম্মাদের পরিবারের খোঁজ খবর

বিয়ের পরেও ফাতিমা পিতার সংসারের সকল বিষয়ের খোঁজ-খবর রাখতেন। এমনকি অনেক সময় তাঁর সৎ মা‘দের ছোটখাট রাগ-অভিমানের ব্যাপারেও মীমাংসা করতেন। মুহাম্মাদ সকল সন্তানদের মধ্যে ফাতিমা একটু বেশি ভালোবাসতেন। আবার স্ত্রীদের মধ্যে আয়িশাকে বেশি ভালোবাসতেন, এটা সবাই বুঝতে পারতো। এইজন্য মুহাম্মাদ যেদিন আয়িশার ঘরে থাকতেন ঐদিন বেশি বেশি হাদিয়া পাঠাতেন, এইজন্য অনন্য স্ত্রীরা মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। এবং ফাতিমা মাধ্যম বানিয়ে মুহাম্মাদের নিকট পাঠালেন, যেন সাহাবারা সকল ঘরেই হাদিয়া পাঠায়, যা তারা পাঠাতে চায়। কিন্তু ফাতিমা এই কাজটি মীমাংসা করতে ব্যর্থ হোন।

ফাতিমার দরজায় আবু সুফিয়ান

যখন মুহাম্মাদ মক্কা বিজয়ের কথা চিন্তা করতে লাগলেন, মক্কাবাসী নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে হয়রান হয়ে গেলো। তারা আবু সুফিয়ান মদিনায় পাঠালো মুহাম্মাদের সাথে এই ব্যপারে একটা আপোস করার জন্য। আবু সুফিয়ান সর্বপ্রথম তার কন্যা, মুহাম্মাদের উম্মে হাবিবা রামালার নিকট গেলেন মুহাম্মাদের নিকট সুপারিশের জন্য, সে সুপারিশের কথা অস্বীকার করলো, এমনকি মুহাম্মাদের বিছানায় বসার অনুমতি দিলেন না। এরপর আবু সুফিয়ান আবু বকর ও উমরের নিকট গেলেন মুহাম্মাদের নিকট মক্কাবাসীর জন্য সুপারিশ করতে। এরা প্রত্যকে অস্বীকার করলো।

সবশেষে আবু সুফিয়ান ফাতিমার ঘরে গিয়ে আলীর নিকট অনুরোধ করলেন, মক্কাবাসীর জন্য সুপারিশ করতে। ফাতিমার নিকট পরামর্শ চাইলো এই ব্যপারে, এমনকি ছোট্ট বালক হাসানের কাছেও অনুরোধ করলো, মুহাম্মাদের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। এরা প্রত্যেকে আবু সুফিয়ানের সুপারিশ অস্বীকার করেছিল।

মক্কা বিজয় অভিযানে ফাতিমা

১০ হাজার মুসলমান সঙ্গীসহ মুহাম্মাদ ফাতিমা সহ ৮ম হিজরিতে মদিনা থেকে মক্কার দিকে যাত্রা করলেন। ৮ বছর পূর্বে তিনি একদিন বড় বোন উম্মে কুলসুমের সঙ্গে মক্কা ছেড়েছিলেন, আজ আবার মক্কায় ফিরছেন। তাদের কাফেলা মক্কা পথে "মাররুজ জাহরান" নামক স্থানে শিবির স্থাপন করলো। সন্ধ্যা নামতেই মক্কার পৌত্তলিক বাহিনীর নেতা আবু ‍সুফিয়ান ইবন হারব এসে উপস্থিত হলেন। মক্কাবাসীদের ব্যাপারে মুহাম্মাদের সিদ্ধান্ত জানার জন্য সারা রাত অপেক্ষা করে ভোরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। তারপর মক্কায় গিয়ে সবাইকে ইসলাম কবুল করতে বললেন।

মুহাম্মাদ যিতুওয়া নামক বাহনের পিঠে চড়ে সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে সাদ ইবনে উবাদা কে পতাকাবাহী নিযুক্ত করলেন। এরপর মক্কা বিজয়ের দিন মুহাম্মাদ আযাখির পথ ধরে মক্কায় প্রবেশ করে উম্মুল মু‘মিনীন খাদিজার কবরের নিকটে তাঁবু স্থাপন করলেন, সঙ্গে কন্যা ফাতিমাও ছিলেন। ফাতিমা যেদিন মদিনায় হিজরত করছিলেন, সেইদিন আল হুওয়ায়রিস ইবনে মুনকিয নামক এক ব্যক্তি তার বাহনের পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে জীবন বিপন্ন করে ফেলেছিল। মুহাম্মাদ মক্কায় প্রবেশ করে আলীকে নির্দেশ দেন এই ব্যক্তিকে হত্যার হত্যা করার জন্য।

ফাতিমা ও তার পিতা মুহাম্মাদ এইদিন মক্কার সমস্ত পুরাতন স্মৃতি স্মরণ করে আবেগ প্রবণ হয়ে পরে। মুহাম্মাদ ও তার কন্যা ফাতিমা সহ গোটা পরিবার মক্কাতে ১৯ দিন মতান্তরে ২ মাস অবস্থান করেন। এই সময়ে ফাতিমা তার আম্মা খাদিজার কবরও যিয়ারাত করেন। ৮ম হিজরির পরে হিজরিতে সনে মুহাম্মাদের তৃতীয় কন্যা উম্মে কুলসুম ইনতিকাল করেন, ১০ম হিজরিতে মুহাম্মাদের স্ত্রী মারিয়া আল কিবতিয়ার গর্ভজাত সন্তান ইবরাহিমও মৃত্যুবরণ করেন। এখন সন্তানদের মধ্যে একমাত্র ফাতিমা ছাড়া আর কেউ জীবিত থাকলোনা।

পিতা অন্তিম রোগশয্যায়

অসুস্থকালীন ঘটনা

১১ হিজরির সফর মাসে মুহাম্মাদ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মুহাম্মাদ তার সকল স্ত্রীদের সামনে তার কন্যা ফাতিমাকে কাছে ডেকে কানে কানে বললেন,

হে আমার কন্যা! আমার মৃত্যু সময় নিকটবর্তী। এ কথা শুনে ফাতিমা কেঁদে ফেলেন। মুহাম্মাদ আবারো বললেন, আমার পরিবারের মধ্যে তুমি সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে, এই কথা শুনে ফাতিমা খুশি হয়ে গেলেন।

ফাতিমা এই কথা কারো নিকট প্রকাশ না করেই নিজের বাড়িতে চলে গেলেন। এদিকে মুহাম্মাদের অসুস্থকালীন সেবা মুহাম্মাদের স্ত্রীগণ পর্যায়ক্রমে করতে থাকলেন। যেদিন তিনি স্ত্রী মায়মুনা বিনতে আল হারিস ঘরে অবস্থান করছিলেন, সেইদিন অসুস্থতা আরো বেড়ে গেলো। মুহাম্মাদ সকল স্ত্রীদের অনুমতি নিয়ে আয়িশার গৃহে অবস্থান করতে লাগলেন। এদিকে নবী কন্যা ফাতিমা আলী গৃহ থেকে এসে রাত জেগে ধৈয্য সহকারে অসুস্থ পিতার সেবা-শুশ্রূষা করতে লাগলেন। এর কিছু পরেই উত্তরোত্তর রোগের প্রকোপ বেড়ে যেতে লাগলো এবং কষ্টের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে চললো।

পিতার এ কষ্ট দেখে ফাতিমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আব্বা! আপনার কষ্ট তো আমি সহ্য করতে পারছিনা। পিতা তার দিকে স্নেহমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন, আজকের পর থেকে তোমার আব্বার আর কোন কষ্ট নেই।

মুহাম্মাদের মৃত্যুর দু‘দিনের মধ্যেই আবু বকর খলিফা হিসেবে নিযুক্ত হন। পিতাকে হারিয়ে ফাতিমা গভীরভাবে শোকাতুর হন, এমনকি তিনি পিতার কবরের নিকট গিয়ে কবরের মাটি মুখে মেখে ঘ্রান নিতে শুরু করেছিলেন। সাহাবারা মুহাম্মাদের দাফন-কাফন শেষ করে ফাতিমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

পিতার বিয়োগে কবিতা রচনা

ফাতিমা তার পিতার বিয়োগে ব্যথাতুর হয়ে নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি শুরু করেন।

আকাশের দিগন্ত ধুলিমলিন হয়ে গেছে,

মধ্যাহ্ন-সূর্য ঢাকা পড়ে গেছে এবং যুগ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে।

নবীর পরে ভূমি কেবল বিষণ্ণ হয়নি, বরং দুঃখের তীব্রতায় বিদীর্ণ হয়ে গেছে।

তার জন্য কাঁদছে পূর্ব-পশ্চিম, মাতম করছে সমগ্র মুদার ও ইয়ামান গোত্র।

তার জন্য কাঁদছে বড় বড় পাহাড়-পর্বত ও বিশালকায় অট্টালিকাসমূহ্

হে খাতামুন নাবিয়্যীন,

আল্লাহর জ্যোতি আপনার প্রতি বর্ষিত হোক্

আল-কুর‘আনের নাযিলকারী আপনার প্রতি করুণা বর্ষণ করুন।’

ফাতিমা পিতার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আরো কিছু কবিতা আবৃত্তি করেন, মূলত আরবদের কবিতা চর্চা ছিলো তাদের আবেগ ও ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। এসমস্ত কবিতায় পিতার প্রতি ফাতিমার গভীর ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। এবং কবিতা সাহিত্যে তার দখল ও মেধা রয়েছে, বিষয়টি প্রমাণ করছে।কবিতাটি হলোঃ

ভূমি ও উট হারানোর মত আমরা হারিয়েছি আপনাকে

আপনার অদৃশ্য হওয়ার পর ওহী ও কিতাব আমাদের থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে

হায় !আপনার পূর্বে যদি আমার মৃত্যু হতো !

আপনার মৃত্যু সংবাদ শুনতাতে হতো না

এবং মাটির ঢিবিও আপনার মাঝে অন্তরায় হতো না।

জিহাদের ময়দানে

জিহাদের ময়দানে ফাতিমা উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন। উহুদ যুদ্ধে তার পিতা মুহাম্মাদের দেহে ও মুখে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে রক্ত ঝরছিলো, তখন ফাতিমা খেজুরের চাটাই আগুনে পুড়িয়ে তার ছাই ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিয়েছিলো। সাহাবা সাহল ইবন সা‘দ বর্ণনা করেছেন,

উহুদের যুদ্ধে ফাতিমার দাদা হামযা শহীদ হন, ফাতিমা সবসময় তার দাদার জন্য দোয়া করতেন। ফাতিমা খন্দক ও খায়বার অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। খায়বার বিজয়ের পর সেখান থেকে উৎপাদিত গম থেকে ফাতিমার জন্য জন্য ৮৫ ওয়াসক নির্ধারণ করে দেন। মক্কা বিজয়েও তিনি মুহাম্মাদের সফরসঙ্গী হন। মুতা অভিযানে তার চাচা জাফর ইবনে আবি তালিব শহীদ হোন।

ইসলামে ফাতিমার মর্যাদা

ফাতিমার প্রতি মুহাম্মাদের বাণী

ফাতিমার মর্যাদা মুহাম্মাদের কন্যা হবার দরুন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু ফাতিমা চরিত্র,ত্যাগ, আনুগত্য ও ইবাদত তাকে আরো বিশেষ মর্যাদার অধিকারী করেছে। সুরা আল আহযাবের আয়াতে পবিত্রদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মুহাম্মাদ আলী পরিবারকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘তোমাদের সঙ্গে যে যুদ্ধ করে, আমি তাদের নিকট যুদ্ধের মত। তোমাদের সাথে যে শান্তি ও সন্ধি স্থাপন করে, আমি তাদের নিকট শান্তির মত। মুহাম্মাদ বহুবার আলী পরিবারকে আহল আল বাইত বলেছেন ও আলী পরিবারের পবিত্রকরণের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট দোয়া করেছেন।

মুহাম্মাদের বাণী
এছাড়াও ফাতিমার ব্যপারে মুহাম্মাদ একদিন বলেছিলেন, " হে ফাতিমা, আল্লাহ তোমার খুশীতে খুশী হন এবং তোমার অসন্তুষ্টিতে অসন্তুষ্ট হন।"

ফাতিমা সম্পর্কে হাদিস বর্ণনা

এছাড়া মুহাম্মাদ ফাতিমাকে জান্নাতে নারীদের সর্দার ঘোষণা করেছেন,

  • আনাস ইবনে মালিক বর্ণনা করেছেন, মুহাম্মাদ বলেছেন, মরিয়াম বিনতে ইমরান, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, আসিয়া বিনতে মুজাহিম হচ্ছে যুগ অনুসারে জান্নাতের নারীদের নেত্রী। এই ৪ নারীকে পৃথিবীর সকল নারীদের মধ্যে অনুকরণীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
  • মুহাম্মাদ বলেছেন, ফাতিমা আমার দেহের একটি অংশ, কেউ তাকে অসন্তুষ্ট করলে, সে আমাকে অসন্তুষ্ট করবে। ইমাম আস-সুহাইলি এই হাদীসের ভিত্তি করে বলেছেন, কেউ ফাতিমাকে গালিগালাজ করলে কাফির হয়ে যাবে।
  • ইবনুল জাওজি বলেছেন, মুহাম্মাদের অন্য সকল কন্যাকে ফাতিমা এবং অন্য সকল স্ত্রীকে আয়িশা সম্মান ও মর্যাদায় অতিক্রম করে গেছেন।
  • আবু হুরায়রা বর্ণনা করেছেন, মুহাম্মাদ বলেছেন যে, ফেরেশতা আমাকে এ সুসংবাদ দেন যে, ফাতিমা হবে আমার উম্মাতের সকল নারীর নেত্রী এবং হাসান-হোসাইন হবে জান্নাতের অধিবাসীদের নেতা।
  • উম্মুল মু‘মিনীন আয়িশা বলেন, মুহাম্মাদ আলী, ফাতিমা, হাসান ও হোসাইনকে কাছে ডেকে বললেন, হে আল্লাহ! এরা আমার পরিবারের সদস্য। তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দিন এবং তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করুন। এছাড়াও মুহাম্মাদ বহু জায়গায় আলী পরিবারবর্গকে নিজের পরিবার আহল আল বাইত অভিহিত করেছেন।

ফাতিমার শ্রেষ্ঠত্বের কারণ

সকল ঐতিহাসিকগণ গবেষণা করে ফাতিমার মর্যাদা শ্রেষ্ঠত্বের কিছু কারণ খুজে বের করেছে। এসমস্ত কারণে ফাতিমাকে নারীদের অনুকরণীয় ভাবা হয়, পৃথিবীর সমস্ত অগ্রগামী ৪ নারীদের মধ্যে অন্যতম ভাবা হয়।

আল্লাহর প্রিয় পাত্রী

ফাতিমা নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌র প্রিয় পাত্রী ছিলেন, আল্লাহ্‌ সবসময় তার খাবারে বরকত দিয়েছেন, মুহাম্মাদের একদিন দোয়ার পরে তিনি এরপরে তেমন ক্ষুধার্ত থাকেননি। একদিন এক প্রতিবেশিনীর অল্প পরিমাণ খাবার মুহাম্মাদ সহ পরিবারের সবাই খেয়ে শেষ করতে পারেননি। আল্লাহ্‌ ঐ খাবারে খুব বরকত দান করেছিলেন।

মুহাম্মাদকে অনুসরণ

ফাতিমা তার নিজের কথাবার্তা, চালচলন, উঠাবসা প্রতিটি ক্ষেত্রে তার পিতা মুহাম্মাদকে অনুসরণ করতেন। এইজন্য অনেকে বলেছে, ফাতিমা কথা-বার্তায় ও আচার আচরণে মুহাম্মাদের উত্তম প্রতিচ্ছবি। আয়িশা বলেনঃ ফাতিমা যখন হাঁটতেন, তার হাঁটা মুহাম্মাদের হাঁটা থেকে একটুও এদিক ওদিক হতো না। আয়িশা আরো বলেছেন, আমি ফাতিমার চেয়ে বেশি সত্যভাষী আর কাউকে দেখিনি, তবে যার কন্যা( মুহাম্মাদ ) তার কথা আলাদা। আয়িশা আরো একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেতা আবু দাউদ ও তিরমিজিতে উল্লেখিত হয়েছে।

ফাতিমা ও মুহাম্মাদের স্নেহমাখা সম্পর্ক

পিতার প্রতি ভালোবাসা

মুহাম্মাদ তার কন্যা ফাতিমা যেমন ভালোবাসতেন, ফাতিমাও তার পিতা মুহাম্মাদকে গভীরভাবে ভালোবাসতো। মুহাম্মাদ কোন সফর থেকে যখন ফিরতেন তখন তার কন্যা ফাতিমার সাথে দেখা করতেন এরপর ঘরে ফিরতেন। পিতাও কোন যুদ্ধে গেলে ফাতিমা উদ্বিগ্ন ও দুঃচিন্তায় ভুগতেন এবং পিতার জন্য অধীর আগ্রহে ঘরে বসে থাকতেন একবার মুহাম্মাদ সফর থেকে ফিরে ফাতিমার ঘরে যান,ফাতিমা তার পিতার জীর্ন অবস্থা দেখেই কাঁদতে লাগলেন, মুহাম্মাদ বললেন, কাঁদছো কেন? ফাতিমা প্রতিত্তর দিলেন, আব্বু! আপনার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেছে এবং আপনার পরিধেয় বস্ত্রও ময়লা ও নোংরা হয়েছে, এ দেখেই আমার কান্না পাচ্ছে।

ফাতিমা তার পিতার অল্প দুঃখ দেখেই কেঁদে ফেলতেন, এবং পিতার বিরুদ্ধে কেও লাগলে, ফাতিমা তার বিরুদ্ধে লাগতেন।

পিতার থেকে প্রাপ্ত ভালোবাসা

মুহাম্মাদের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন ফাতিমা, এবং একাধিক বর্ণনায় তার নাম ঘোষণা করেছেন। মুহাম্মাদ একদিন বলেছিলেন, নারীদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ফাতিমা এবং পুরুষদের মধ্যে আলী। এছাড়াও একদিন আলীর প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মাদ বলেছিলেন, ফাতিমা আমার নিকট তোমার চেয়ে আমার বেশি প্রিয়। আর তুমি আমার নিকট ফাতিমার থেকে বেশি সম্মানের পাত্র।

একদিন মুহাম্মাদ ফতিমার গৃহে গিয়ে দেখেন, উটের পশমে তৈরী নিম্নমানের কাপড় পরিধান করে ফাতিমা যাতায় গম পিষতেছেন। মেয়ের এ অবস্থা দেখে পিতা কেঁদে ফেলেন এবং বলেন,"ফাতিমা! আখিরাতের সুখ-শান্তির জন্য দুনিয়ার এ তিক্ততা মেনে নাও।" প্রচন্ড ক্ষুধায় ফাতিমার মুখমণ্ডল তখন রক্তশূন্য হয়ে পাণ্ডুবর্ণ হয়ে ছিলো। কন্যার এই কঠিন অবস্থা দেখে মুহাম্মাদ আল্লাহর নিকট তার ক্ষুধা ও সংকীর্ণতা দূর করার জন্য দোয়া করেছিলেন।

পিতা থেকে তিরস্কার ও সতর্কীকরণ

ফাতিমার পিতা মুহাম্মাদ দুনিয়ার সাজসজ্জা ও চাকচিক্য পছন্দ করতেন না। একবার আলী ফাতিমাকে একটি স্বর্ণের হার উপহার দেন। এটি দেখে মুহাম্মাদ রাগান্বিত হন, এবং ফাতিমাকে দুনিয়ার বিনোদন থেকে দূরে থাকতে বলেন। পরে ফাতিমা সেই হার বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে একটি দাস ক্রয় করে মুক্ত করে দেন। তখন মুহাম্মাদ বলেন, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি ফাতিমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়েছেন।

আবার মুহাম্মাদ কোন এক যুদ্ধ থেকে ফিরে অভ্যাস অনুযায়ী ফাতিমার গৃহে ঢুকবেন, ফাতিমা পিতাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ঘরের দরজায় দামী পর্দা ঝুলালেন এবং দুই ছেলে হাসান ও হোসাইনের হাতে রূপোর চুড়ি পরালেন। কিন্তু মুহাম্মাদ এতে খুশি না হয়ে বেজার হয়ে বাসায় ফিরে গেলেন। তখন ফাতিমা ভুল বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে পর্দা ছিড়ে ফেললেন এবং দুই ছেলের হাত থেকে চুড়ি খুলে ফেলেন। এবং তারা মুহাম্মাদের নিকট গিয়ে ক্ষমা চাইলেন। মুহাম্মাদ তখন বলেছিলেন, এরা আমার পরিবারের সদস্য। আমি চাইনা পার্থিব সাজ-শোভায় তারা শোভিত হোক।

মুহাম্মাদ তার কন্যা ফাতিমাকে সব সময় বলেছেন, নবীর কন্যা হওয়ার কারণে পরকালে মুক্তি পাওয়া যাবে না। সেখানে মুক্তির একমাত্র উপায় হবে আমল ও তাকওয়া। মুহাম্মাদ তার কন্যাকে বলতেন, তুমি আমার অরথ-সম্পদ থেকে যা কিছু চাওয়ার চেয়ে নাও, তবে আল্লাহ্‌র নিকটে ক্ষমার ব্যপারে আমি কিছুই করতে পারবোনা। আবার চুরির আইনের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য ঘটনাক্রমে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কসম! ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদও যদি চুরি করে তাহলে আমি তার হাত কেটে দেব।

মৃত্যু

মৃত্যুবরণ ও জানাজার নামাজ

মুহাম্মাদের ইন্তিকালের ৮ মাস, মতান্তরে ৭০ দিন পর ফাতিমার মৃত্যু হয়। অনেকে মুহাম্মাদের ইন্তিকালের ২ মাস অথবা ৪ মাস পরে ইন্তিকালের কথাও বলেছেন। মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর তার পরিবারের মাঝে ফাতিমাই সর্বপ্রথম ইন্তিকাল করেন, মুহাম্মাদের ভবিষৎবাণী সত্য হয়। ফাতিমার জন্ম যদি নবুয়তের ৫ বছর পূর্বে ধরা হয়, তাহলে মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ২৯ বছর। সুন্নি গবেষক ও অধিকাংশের এই মত সমর্থন করেছেন। মৃত্যুর পূর্বে ফাতিমা তেমন শয্যাশায়ী বা বড় কোন রোগাক্রান্ত হননি।

আল-ওয়াকিদী বলেছেন, ১১ হিজরির ৩ রমাদান ফাতিমা ইনতিকাল করেন। স্বামী আলী ও আসমা বিনত উমাইস তাকে গোসলের কাজ সম্পন্ন করেন কিন্তু বর্ণনায় আবু বকর ও আলীর নাম এসেছে। ফাতিমার দাদা আব্বাস তার জানাযার নামায পড়ান। তবে কেও কেও জানাজার নামাজ পড়ানোর ব্যপারে আবু বকর ও আলীর নাম উল্লেখ করেছেন। আলী, ফাদল ও আব্বাস কবরে নেমে দাফন কাজ সম্পন্ন করেন। তার জানাযায় খুব কম মানুষ অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, কারণ, রাতে ইনতিকাল হয় এবং ফাতিমার অসিয়ত অনুযায়ী রাতেই তাকে দাফন করেন। এবং মৃত্যুর পর ফাতিমার পর্দা রক্ষার জন্যআসমা বিনতে উমাইসের বুদ্ধিতে লাশের বাহনকে খেজুরের ডালের সাথে পর্দা লাগিয়ে নতুন একটি পদ্ধতি উদ্ভব করা হয়। এই পদ্ধতি মদিনায় সর্বপ্রথম দেখা যায়।

দাফনের স্থান

আল ওয়াকিদী বর্ণনা করেন, বলেন, বেশিরভাগ মানুষ ফাতিমার কবর জান্নাতুল বাকি গোরস্তানে বলে থাকলেও, তার কবরস্থান মূলত আকিলের বাড়ীর এক কোনে দাফন করা হয়েছে। তার কবর ও রাস্তার মধ্যে ব্যবধান ছিল প্রায় ৭ হাত।

হাদিস বর্ণনা

ফাতিমা সর্বমোট ১৮টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে ১টি মুত্তাফাকুন আলাইহি। এছাড়া ইমাম আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও তিরমিযী তাদের নিজ নিজ সংকলনে ফাতিমার বর্ণিত হাদিস সংকলন করেন। আর ফাতিমা থেকে যারা হাদিস বনর্ণা করেছেন তারা হলেন, হাসান, হুসাইন, আলী ইবনে আবি তালিব, আয়িশা, সালমা উম্মে রাফি, আনাস ইবন মালিক, উম্মে সালামা, ফাতিমা বিনতে হোসাইন সহ আরো অনেকে। ইবনুল জাওজি বলেন, ফাতিমা ছাড়া মুহাম্মাদের অন্য কোন মেয়ের হাদিস বর্ণনা পাওয়া যায়না।

টীকা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

সুন্নি সূত্র

শিয়া সূত্র

Tags:

ফাতিমা জন্মফাতিমা ইসলাম গ্রহণফাতিমা শৈশবকালফাতিমা শি‘বে আবি তালিবে ফাতিমা হিজরাত ও ফাতিমা -আলীর বিয়েফাতিমা সাংসারিক জীবনফাতিমা র দরজায় আবু সুফিয়ানফাতিমা মক্কা বিজয় অভিযানে ফাতিমা পিতা অন্তিম রোগশয্যায়ফাতিমা জিহাদের ময়দানেফাতিমা ইসলামে র মর্যাদাফাতিমা আল্লাহর প্রিয় পাত্রীফাতিমা ও মুহাম্মাদের স্নেহমাখা সম্পর্কফাতিমা মৃত্যুফাতিমা হাদিস বর্ণনাফাতিমা টীকাফাতিমা তথ্যসূত্রফাতিমা বহিঃসংযোগফাতিমাআরবি ভাষাআলি ইবন আবি তালিবখাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদজান্নাতুল বাকিমুহাম্মদমুহাম্মাদহিজরত

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

সার্বিয়াওজোন স্তরনয়নতারা (উদ্ভিদ)দারুল উলুম দেওবন্দদশাবতারআয়করকুয়াকাটাফোড়াবাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসবৈশাখী মেলাবাংলাদেশের পোস্ট কোডের তালিকানেপোলিয়ন বোনাপার্টমহাস্থানগড়লাঙ্গলবন্দবাংলাদেশে পেশাদার যৌনকর্মলালবাগের কেল্লাবাংলাদেশ ছাত্রলীগঠাকুর অনুকূলচন্দ্রযাকাতকারিনা কাপুরমোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনঅনাভেদী যৌনক্রিয়ামেলামহাত্মা গান্ধীরাজশাহীফাতিমাসতীদাহহালখাতাঢাকা বিভাগএলজিবিটিএক্সহ্যামস্টারঅস্ট্রেলিয়াসত্যজিৎ রায়অর্থ (টাকা)সালাহুদ্দিন আইয়ুবি১৩ এপ্রিলমাইকেল মধুসূদন দত্তনীল বিদ্রোহদৈনিক প্রথম আলোশ্রী স্বপনকুমারের বাদামী হায়নার কবলেসৈয়দ মুজতবা আলীতাসনিয়া ফারিণইলিশন্যাটোসংস্কৃত ভাষা২০২৪ কোপা আমেরিকাকরিম বেনজেমানোরা ফাতেহিপরমাণুবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহফুটবল ক্লাব বার্সেলোনাকলকাতা নাইট রাইডার্সকোয়েল মল্লিককমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনতমলুক লোকসভা কেন্দ্রদাইয়ুসকুরআন.বিএফঅথর্ব তাইদেবাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার তালিকাশনি (দেবতা)ভালভাবাংলা বাগধারার তালিকাঅপু বিশ্বাসবাংলাদেশের নদীর তালিকামিয়া মালকোভাএস এম শফিউদ্দিন আহমেদজাতিসংঘঅশোক (উদ্ভিদ)রক্তশূন্যতাহানিফ সংকেতভারতের সংবিধানমহানগর প্রভাতী/গোধূলী এক্সপ্রেসশ্রীকৃষ্ণকীর্তনসহীহ বুখারীবাংলা দিবসবড়ে মিয়াঁ ছোটে মিয়াঁ (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)পুরুষে পুরুষে যৌনতা🡆 More