আকাশগঙ্গা একটি ছায়াপথ। আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র সূর্য এই ছায়াপথের অংশ। অর্থাৎ আমরা থাকি এই ছায়াপথে। সূর্য এবং তার সৌরজগতের অবস্থান এই ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৭০০০ আলোকবর্ষ দূরে আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কালপুরুষ বাহুতে। এটি একটি দন্ডযুক্ত সর্পিলাকার ছায়াপথ, যা স্থানীয় ছায়াপথ সমষ্টির একটি সদস্য। আকাশগঙ্গার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক উপগ্রহ ছায়াপথ এবং নিকটস্থ ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডাও এই সমষ্টির সদস্য। স্থানীয় সমষ্টি আবার কন্যা মহাছায়াপথস্তবকের অংশ । কন্যা ছায়াপথস্তবক আবার ল্যানিয়াকেয়া মহাস্তবকের মধ্যস্থ অনেকগুলি মহাছায়াপথস্তবকের একটি। আকাশগঙ্গার কেন্দ্র রেডিও তরঙ্গের একটি প্রবল উৎস এবং একটি অতিভারবিশিষ্ট কৃষ্ণগহ্বর, যার নাম ধনু এ*।
পর্যবেক্ষণ তথ্য | |
---|---|
ধরন | Sb, Sbc, বা SB(rs)bc (দন্ডযুক্ত সর্পিল ছায়াপথ) |
ব্যাস | ১০০–১৮০ kly (৩১–৫৫ kpc) |
সরু নাক্ষত্রিক ডিস্কের ঘনত্ব | ≈২ kly (০.৬ kpc) |
তারার সংখ্যা | ২০০–৪০০ বিলিয়ন (৩×১০১১ ±১×১০১১) |
প্রাচীনতম তারকা | ≥১৩.৭ Gyr |
ভর | ০.৮–১.৫×১০১২ M☉ |
কৌণিক ভরবেগ | ১ ×১০৬৭ J s |
ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে সূর্যের দূরত্ব | ২৭.২ ± ১.১ kly (৮.৩৪ ± ০.৩৪ kpc) |
সূর্যের ছায়াপথের আবর্তনের সময়কাল | ২৪০ Myr |
সর্পিল প্যাটার্ন আবর্তন কাল | ২২০–৩৬০ Myr |
বার প্যাটার্ন আবর্তন কাল | ১০০–১২০ Myr |
সিএমবি বাকি গঠন থেকে আপেক্ষিক গতি | ৫৫২ ± ৬ কিমি./সে. |
সূর্যের অবস্থান থেকে অব্যাহতি বেগ | ৫৫০ কিমি./সে. |
সূর্যের অবস্থান থেকে গুপ্ত পদার্থের ঘনত্ব | ০.০০৮৮+০.০০২৪ -০.০০১৮ M☉pc-৩ বা ০.৩৫+০.০৮ -০.০৭ GeV cm-৩ |
আরও দেখুন: ছায়াপথ, ছায়াপথসমূহের তালিকা |
পৃথিবী আকাশগঙ্গা ছায়াপথের একটি অংশে অবস্থিত। এই ছায়াপথটি রাতের বেলা পরিষ্কার আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বিস্তৃত হালকা সাদা মেঘের মত দেখায়। খুব হালকা দেখায় বলে, শহর থেকে বা খুব বেশি উজ্জ্বল আলো আছে এমন স্থান থেকে আকাশগঙ্গা দেখা যায় না।
আকাশগঙ্গার ব্যাস আনুমানিকভাবে ১,০০,০০০ আলোকবর্ষ বা ৯×১০১৭ কিলোমিটার (৩০ কিলোপারসেক) এবং এর পুরুত্ব প্রায় ১,০০০ আলোকবর্ষ (০.৩ কিলোপারসেক)। ধারণা করা হয় এই ছায়াপথে কমপক্ষে ২০০ বিলিয়ন থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ বিলিয়ন পর্যন্ত নক্ষত্র রয়েছে। এটি স্থানীয় ছায়াপথ সমষ্টির মধ্যে ভরের সাপক্ষে দ্বিতীয়। সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, আগের ধারণা থেকে আকাশগঙ্গার ভর অনেক বেশি, এর ভর আমাদের নিকটবর্তী সবচেয়ে বড় ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা এর কাছাকাছি। আগে ধারণা করা হত এর ঘূর্ণন গতি প্রায় ২২০ কিমি/সেকেন্ড, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী তা প্রায় ২৫৪ কিমি/সেকেন্ড। ২০১৯ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আকাশগঙ্গার সর্বমোট ভর হিসাব করেছেন প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন সৌর ভর, যা ১,২৯,০০০ আলোকবর্ষের ব্যাসার্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই মান আগের ধারণার প্রায় দ্বিগুণ। আকাশগঙ্গার সকল তারার সর্বমোট আনুমানিক ভর ৪.৬×১০১০ সৌরভর। এছাড়াও রয়েছে আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস, যা ভরের দিক দিয়ে ৯০% হাইড্রোজেন এবং ১০% হিলিয়াম। মোট হাইড্রোজেনের দুই-তৃতীয়াংশ পারমাণাবিক এবং এক-তৃতীয়াংশ আণবিক। আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাসের ভরের ১% আন্তঃনাক্ষত্রিক ধুলিকণার কারণে। আকাশগঙ্গার ভরের ৯০% তমোপদার্থের কারণে। তমোপদার্থ এক পদার্থের এক অজানা ও অদৃশ্য রূপ যা সাধারণ পদার্থের সঙ্গে শুধুমাত্র মহাকর্ষের মাধ্যমেই আন্তক্রিয়া করে থাকে।
আকাশগঙ্গার বয়স নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। এই ছায়াপথের সবচেয়ে প্রাচীন নক্ষত্র হল HE 1523-0901, যার বয়স প্রায় ১৩.২ বিলিয়ন বছর, প্রায় মহাবিশ্বের বয়সের সমান। ধারণা করা হয়, আকাশগঙ্গার সুচনা হয়েছে প্রায় ৬.৫ থেকে ১০.১ বিলিয়ন বছর আগে।
আকাশগঙ্গার কেন্দ্র একটি দণ্ডাকার অংশ যা গ্যাস, ধুলি এবং তারা দ্বারা গঠিত একটি চাকতির ন্যায় অংশের দ্বারা বেষ্টিত । আকাশগঙ্গার বিভিন্ন স্থানে ভরের বণ্টন হাবল শ্রেণিবিন্যাসের Sbc শ্রেণীর সঙ্গে তুলনীয় । শিথিলভাবে বেষ্টিত সর্পিলাকার বাহুবিশিষ্ট সর্পিল ছায়াপথেরা এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত । জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথম আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ দণ্ডাকার গঠনের কথা বলেন ১৯৬০-এর দশকে, এবং পরবর্তীকালে ২০০৫-এ স্পিৎজার মহাকাশ দূরবীক্ষণের পর্যবেক্ষণ তাঁদের এই ধারণাকে সমর্থন করে ।
আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ অঞ্চলের অন্তর্বর্তী অংশ তুলনামূলকভাবে অধিক ঘন এবং এই অংশে মূলত প্রাচীন তারা রয়েছে । কেন্দ্র থেকে প্রায় কয়েক কিলোপারসেক (প্রায় ১০,০০০ আলোকবর্ষ) ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত এই প্রায় গোলাকার অংশকে স্ফীতাংশ বলা হয়ে থাকে । বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে আকাশগঙ্গার কেন্দ্র প্রকৃতপক্ষে পূর্বে দুই ছায়াপথের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে সৃষ্টি হওয়া প্রকৃত স্ফীতাংশ নয় । বরং এর কেন্দ্রস্থ দন্ডাকার গঠন একটি ছদ্ম-স্ফীতাংশ তৈরী করেছে । আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ অঞ্চল রেডিও তরঙ্গের একটি প্রবল উৎস, যাকে বিজ্ঞানীরা ধনু এ* নামে চিহ্নিত করেছেন । এই কেন্দ্রস্থ অঞ্চলের নিকটস্থ পদার্থের গতি বিবেচনা করে দেখা গিয়েছে যে আকাশগঙ্গার কেন্দ্রে একটি অত্যধিক ভারবিশিষ্ট বস্তু রয়েছে । ভরের এরূপ বণ্টনের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব যদি ধরে নেওয়া হয় যে এই বস্তুটি একটি অতিভারবিশিষ্ট কৃষ্ণগহ্বর । এটির প্রস্তাবিত ভর সূর্যের ভরের ৪.১ থেকে ৪.৫ মিলিয়ন গুণ ।
আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ দণ্ডাকার অঞ্চলের প্রকৃতি বিতর্কের মধ্যে রয়েছে, যদিও এই অংশের অনুমেয় অর্ধ-দৈর্ঘ্য ১ থেকে ৫ kpc এবং পৃথিবী থেকে ছায়াপথের কেন্দ্রের দিকে তাকালে এটি দৃষ্টিপথের সঙ্গে ১০-৫০ কোণ করে রয়েছে । এই দণ্ডাকার অঞ্চলটিকে ঘিরে একটি বলয়াকার গঠন রয়েছে যা "৫ kpc বলয়" নামে পরিচিত । এই বলয়ের মধ্যে ছায়াপথের অধিকাংশ আণবিক হাইড্রোজেন রয়েছে এবং আকাশগঙ্গার অধিকতর তারা এই অঞ্চলেই উৎপন্ন হয়ে থাকে । অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ থেকে দেখলে এই অঞ্চলটিকে উজ্জ্বলতম দেখাবে ।
২০১০ -এ ফার্মি গামা-রশ্মি মহাকাশ দূরবীক্ষণের থেকে নেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে আকাশগঙ্গার কেন্দ্র থেকে উত্তর ও দক্ষিণে দুটি বৃহদাকার উচ্চ শক্তি বিকিরণের বুদবুদ ন্যায় গঠন লক্ষ করা গিয়েছে । এগুলির প্রত্যেকের ব্যাস প্রায় ৭.৭ কিলোপারসেক । দক্ষিণ গোলার্ধে রাত্রির আকাশে এগুলি সারস তারামণ্ডলী থেকে কন্যা তারামণ্ডলী পর্যন্ত বিস্তৃত । পরবর্তীকালে পার্কেস দূরবীক্ষণের মাধ্যমে এই গঠনগুলিতে সমাবর্তিত বিকিরণ দেখা গিয়েছে । তারার জন্মের কারণে উৎপন্ন চৌম্বকীয় বহিঃপ্রবাহ হিসেবে এগুলিকে ব্যাখ্যা করা হয় ।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article আকাশগঙ্গা ছায়াপথ, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.