অস্ত্র

অস্ত্র বা হাতিয়ার হচ্ছে কোন জীব, কাঠামো অথবা অবস্থানের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত যেকোন বস্তু। অস্ত্রশস্ত্র প্রাণী শিকার, অপরাধ, অপরাধ দমন, আত্মরক্ষা এবং যুদ্ধ বিগ্রহকে আরও সহজ করেছে। বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে, শত্রুপক্ষের বিপক্ষে কৌশলগত, বস্তুগত ও মানসিক সুবিধা অর্জনের জন্য ব্যবহৃত যেকোন কিছুই অস্ত্র হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।

অস্ত্র
কিছু প্রাচীন অস্ত্র

যেকোন সাধারণ বস্তু যেমন লাঠি, পাথর, মোটরগাড়ি এবং পেনসিল ইত্যাদি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আবার বেশকিছু অস্ত্র ক্ষতিসাধনের জন্যই বানানো হয় - সাধারণ পরিবর্ধন যুক্ত অস্ত্র যেমন বেত, তলোয়ার এবং পিস্তল; এবং কিছু অস্ত্র আরও জটিল কারিগরি যুক্ত, যেমন আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, জৈব অস্ত্র এবং সাইবার অস্ত্র। বেসামরিক কোনকিছুকে সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য পুনরায় ব্যবহার, পরিমার্জন বা আধুনিকায়ন করলে তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা বলে। যেমন: অস্ত্র হিসেবে ভাইরাস ব্যবহার বা লেজার রশ্মির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার।

ইতিহাস

মানবসভ্যতার আবির্ভাবের পুর্বে

অস্ত্র 
প্রস্তরযুগের বিভিন্নপ্রকার অস্ত্র

কোন বস্তুকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে লক্ষ করা যায়, যা হতে ধারণা করা হয় যে ৫০ লক্ষ বছর পুর্বে আদি মানবসদৃশ জীবেরা প্রথম অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে। তবে এটি নিশ্চিত হবার সুযোগ নেই কারণ কাঠের লাঠি, বর্শা এবং সাধারণ পাথর দীর্ঘদিন পর মাটিতে কোন নিশ্চিত প্রমাণ রাখে না। প্রাচীনতম অস্ত্রের নিশ্চিত প্রমাণ হিসেবে ৩০০০০০ বছর আগে তৈরি স্কোনিঙ্গারের বর্শা নামে পরিচিত ৮ টি কাঠের বর্শাকে বিবেচনা করা হয়। কেনিয়ার তুরকানা অঞ্চলের নাটারুক নামক স্থানে ১০০০০ বছর পুর্বের অসংখ্য মানব কঙ্কাল পাওয়া গেছে যাতে মাথা, ঘাড়, বক্ষপিঞ্জর, হাঁটু এবং হাতে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাড়ে অস্ত্রের টুকরো পাওয়া গেছে যা থেকে ধারণা করা হয় এসব আঘাত খুব সম্ভবত দুটি শিকারী-মজুতকারী দলের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে তীর এবং লাঠির মাধ্যমে করা হয়েছে। তবে নাটারুকের যুদ্ধের প্রমাণের এই মতামতের বিরোধীতা লক্ষণীয়।

প্রাচীন যুগ

অস্ত্র 
রোমান ঘোড়ায় টানা চার চাকার রথ

মানবসভ্যতার আবির্ভাবের পর প্রাচীন যুগের অস্ত্রসমুহ প্রধানত নব্যপ্রস্তরযুগের অস্ত্রের উন্নত সংস্করণ ছিলো, তবে উপাদান ও প্রস্তুতকরণ পদ্ধতির উন্নতি পরবর্তীতে সামরিক প্রযুক্তিতে বিপ্লব আনে।

ধাতুর সরঞ্জামের উন্নয়ন, যেমন তামার যুগে (প্রায় ৩৩০০ খ্রীষ্টপুর্বে) তামার ব্যবহার এবং ব্রোঞ্জ যুগে ব্রোঞ্জের ব্যবহার ব্রোঞ্জের তলোয়ার এবং সমগোত্রীয় অস্ত্রের জন্ম দেয়।

ব্রোঞ্জ যুগে প্রথম আত্মরক্ষামুলক কাঠামো এবং দুর্গের আবির্ভাব নিরাপত্তার চাহিদার কথা জানান দেয়। প্রতিরক্ষা ভেদ করার অস্ত্রও দ্রুত পরিচিতি পায়, যেমন দরজা ভাঙ্গার জন্য খ্রীষ্টপুর্ব ২৫০০ শতকে কাঠের গুড়ির প্রচলন হয়।

যদিও প্রাথমিক লৌহনির্মিত তলোয়ার তাদের ব্রোঞ্জ নির্মিত পুর্বসুরি অপেক্ষা উন্নত ছিলোনা, তবে দ্রুত লৌহ শিল্প প্রসার লাভ করে এবং খ্রীষ্টপুর্ব ১২০০ শতক নাগাদ সাব-সাহারান আফ্রিকায় লৌহ ব্যাপক হারে অস্ত্র নির্মাণে ব্যবহার হতে শুরু করে।

খ্রীষ্টপুর্ব ২০০০ শতক নাগাদ ঘোড়ার গৃহপালনের প্রসার এবং স্পোক-যুক্ত চাকার বহুল ব্যবহার স্বল্প ওজনের ঘোড়ার রথের প্রচলন ঘটায়। রথের পরিবহন ক্ষমতা এই যুগে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। স্পোক-যুক্ত চাকার রথের ব্যবহার খ্রীষ্টপুর্ব ১৩০০ শতকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায় এবং এরপর কমে যেতে শুরু করে, এবং খ্রীষ্টপুর্ব ৪০০ শতক নাগাদ ঘোড়ার রথের সামরিক উপযোগিতা বিলুপ্ত হয়।

ঘোড়ার প্রজননের মাধ্যমে মানুষের ওজন বহনে সক্ষম ঘোড়ার আগমনের মাধ্যমে ঘোড়সওয়ার বাহিনির আবির্ভাব ঘটে। এই ঘোড়াগুলো আক্রমণের সীমানা এবং গতি উভয়ই বৃদ্ধি করে।

অস্ত্র হিসেবে জাহাজ নির্মাণ বা যুদ্ধজাহাজের (যেমন: ট্রিরেমের) প্রচলন খ্রীষ্টপুর্ব ৭ম শতাব্দীতে ঘটে। এই জাহাজগুলো পরবর্তীতে খ্রীষ্টপুর্ব ৪র্থ শতাব্দী নাগাদ আরও বড় জাহাজ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে শুরু করে।

মধ্যযুগ

অস্ত্র 
মুঘল সাম্রাজ্যের বিভিন্নপ্রকার অস্ত্র
অস্ত্র 
টাওয়ার অব লন্ডনে প্রদর্শিত প্রাচীন চীনা কামান

মধ্যযুগে ইউরোপের রণক্ষেত্রে উচ্চশ্রেণীর নাইটদের আধিপত্য লক্ষণীয় এবং তাদের সাহায্য করার জন্য বিপুল সংখ্যক পদাতিক সৈন্য দেখা যেত। তারা প্রধানত গেরিলা যুদ্ধ করতো এবং বিভিন্ন স্থান দখল করতো যার জন্য তাদের বিশেষায়িত অস্ত্র এবং কৌশল ছিলো। ঘোড়সওয়ার নাইটদের কৌশল ছিলো ঘোড়ার সাহায্যে শত্রুপক্ষের অবস্থানে সরাসরি আক্রমণ করা এবং শত্রুপক্ষ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে তলোয়ারের মত ছোট অস্ত্র বের করা। অপরদিকে পদাতিক বাহিনীরা অবস্থাগত যুদ্ধের পুর্বে ভারী অস্ত্র, যেমন বর্শা এবং বল্লমের সাহায্যে সম্মুখ যুদ্ধ করতো এবং তীর ধনুকের সাহায্যে দূর হতে যুদ্ধে নিয়োজিত হতো। সেনাবিহিনীর ক্রমাগত উন্নয়নের সাথে সাথে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রসমুহও অভিন্ন হতে থাকে এবং পদাতিক সৈন্যরা ভারী বর্শার ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়। ভারী বর্শা সাধারণত সাত হতে আট ফিট লম্বা, এবং এদের সাথে ছোট আকৃতির তলোয়ার ব্যবহার হতো।

পুবদেশীয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের রণাঙ্গনেও ইউরোপীয়ানদের হস্তক্ষেপ ব্যাতিরেকেই একই ধরনের রণকৌশলের আবির্ভাব হয়।

দুরপ্রাচ্যের রণাঙ্গনে গানপাউডারের আগমন যুদ্ধবিগ্রহের প্রকৃতিকে আমূলে পরিবর্তন করে। সম্মুখ যুদ্ধে বর্শা নিক্ষেপকারী যোদ্ধা দ্বারা পরিবেষ্টিত মাস্কেটিয়ারের দল আধিপত্য বিস্তার করে এবং দুরপাল্লার যুদ্ধে কামান ট্রেবুশেকে প্রতিস্থাপন করে।

প্রাক আধুনিক যুগ

ইউরোপে রেনেসাঁ যুগ পশ্চিমা রণাঙ্গনে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারের সুচনা করে। যুদ্ধক্ষেত্রে পিস্তল এবং রকটের আগমন ঘটে।

অস্ত্র 
বেয়োনেট ছুরি হিসেবে ব্যবহার করা যায় অথবা বন্ধুকের সম্মুখে যুক্ত করে পোলআর্ম হিসেবেও ব্যবহার করা যায়

আগ্নেয়াস্ত্র প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুর্বের সব অস্ত্র থেকে ভিন্ন, কারণ তারা দাহ্য বস্তু যেমন গানপাউডার থেকে শক্তি সঞ্চার করে, কোন ভারী বস্তু বা স্প্রিং হতে নয়। এই শক্তি খুব দ্রুত সঞ্চার হয় এবং পুনরায় একই প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সম্পাদন করা যায়। এর ফলে একদম প্রাথমিক আগ্নেয়াস্ত্রগুলোও (যেমন: আর্কিবাস বন্দুক) মানব-চালিত অস্ত্র হতে শক্তিশালী ছিলো। ষোড়শ শতাব্দী হতে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝে ইগনিশন প্রক্রিয়া, বন্দুকের গুলি নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া এবং গানপাউডারের আধুনিকায়নের ফলে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার দ্রুত বাড়তে থাকে। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময়কালে আবির্ভুত হওয়া বিভিন্ন অস্ত্র, যেমন মেশিন গান এবং লোহাবৃত যুদ্ধজাহাজ আজও বহুল প্রচলিত এবং বিশেষত খন্ড যুদ্ধে বহুল ব্যবহৃত। উনবিংশ শতাব্দীতেই যুদ্ধজাহাজের চালিকাশক্তি হিসেবে পালের ব্যবহার লোপ পায় এবং সেখানে জ্বীবাশ্ম জ্বালানী-চালিত বাষ্পীয় ইঞ্জিন স্থলাভিষিক্ত হয়।

আগ্নেয়াস্ত্রের আগমনের ফলে ধারালো অস্ত্রের যুগ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পুর্বেই শেষ হয়ে যায়। আধুনিক কামান দ্বারা দুর্গ এবং প্রতিরক্ষা বেষ্টিত জায়গায় ধ্বংস করা যেতো। এই একটি উদ্ভাবনাই রণাঙ্গনে বিপ্লব আনে এবং এর ফলে নতুন কৌশল এবং নীতিমালা প্রণিত হয় যা আজও ব্যবহার হচ্ছে।

শিল্পের যুগের যুদ্ধবিগ্রহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। নতুন অস্ত্রের জন্য দ্রুতই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আবির্ভাব হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন যুদ্ধ প্রযুক্তির উন্নয়ন বিখ্যাত, যা যুদ্ধবিমান এবং ট্যাংকের জন্ম দেয়।

দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে শিল্পনির্ভর দেশগুলো অস্ত্রের উন্নয়ন বজায় রাখে। অনেক আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, বিশেষ করে ভুমিতে ব্যবহারের অস্ত্রসমুহ প্রকৃতপক্ষে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় আবির্ভূত অস্ত্রেরই পরিমার্জিত সংস্করন।

অস্ত্র 
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত কামান

আধুনিক যুগ

মধ্য অষ্টাদশ শতাব্দী থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে মানবচালিত অস্ত্র লোপ পেতে থাকে এবং আগ্নেয়াস্ত্রের প্রসার বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই সময়কালকে "আগ্নেয়াস্ত্রের যুগ" বলা হয়। এই সময়কালে পদাতিক সৈন্যের জন্য বন্ধুক, তাদের রক্ষার্থে কামানের ব্যবহার প্রচলিত হয়। এই যুগেই যান্ত্রিক অস্ত্র, যেমন মেশিন গান, ট্যাংক এবং যুদ্ধবিমানের ব্যাপক প্রচলন ঘটে। একই সাথে নৌযুদ্ধে বিমানবাহী রণতরীর আগমন ঘটে।

১ম বিশ্বযুদ্ধে পরিপূর্ণ যান্ত্রিক যুদ্ধের আগমন ঘটে। এই সময়ে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের প্রচলন হয়, যেমন রাসায়নিক বা জৈব অস্ত্র। বিভিন্ন অস্ত্র যুদ্ধকালীন প্রয়োজনে দ্রুত উন্নয়ন করা হয়। সর্বোপরি, এইসকল অস্ত্রের প্রসার যুদ্ধের হর্তাকর্তাদের আশ্বাস দেয় যে ঘোড়ার উপর নির্ভরশীলতা হতে তারা মুক্ত এবং মোটর গাড়ি ব্যবহার করে গেরিলা যুদ্ধের প্রচলন হয়। এই সময়ে আবির্ভুত অস্ত্রগুলোই যুদ্ধমধ্যবর্তী এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে স্বাভাবিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় এবং বাকি শতাব্দী জুড়েই প্রভাব রাখে।

২য় বিশ্বযুদ্ধকে হয়তো অস্ত্রের বিস্তারে সবথেকে দ্রুত ও অনিশ্চিত সময় বলে চিহ্নিত করা সম্ভব। ১৯৩৯ হতে ১৯৪৫ এর মাঝে বিপুল সংখ্যক নতুন অস্ত্র ও অস্ত্র প্রযুক্তি প্রত্যক্ষ সমরে অংশ নেয়, এবং সব গতানুগতিক অস্ত্রই আরও উন্নত হয়। এই সময়ের সবথেকে শক্তিশালী অস্ত্র নিঃসন্দেহে পারমাণবিক বোমা, যদিও আরও অনেক অস্ত্রই বিশ্বকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছে।

অস্ত্র 
আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন চৌকষ সদস্য

পারমাণবিক যুগ এবং যুগান্তর

দ্বিপাক্ষিক নিশ্চিত ধ্বংস নীতির বাস্তবায়নের ফলে সর্বাত্মক পারমাণবিক যুদ্ধ আর রেহাইযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয় না। ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী শীতল যুদ্ধকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ই পারমাণবিক অস্ত্রের মজুতের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। উভয় দেশ এবং তাদের বন্ধুরাস্ট্রসমুহ প্রতিনিয়তই একে অন্যকে অস্ত্রের উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় হারাতে চেষ্টা করে। তবে একসময় দুই পক্ষেরই প্রযুক্তিগত দক্ষতা এমন এক পর্যায়ে পৌছায় যে তারা গোটা পৃথিবী ধ্বংসের ক্ষমতা অর্জন করে। এপর্যায়ে তারা অস্ত্র উন্নয়নের তহবিল পুনরায় প্রথাগত অস্ত্রের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দিতে শুরু করে যা খন্ড যুদ্ধের জন্য উপযোগি কিন্তু পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য নয়।

প্রকারভেদ

ব্যবহারকারী ভিত্তিতে

    - কে অথবা কারা এই অস্ত্রটি ব্যবহার করে
  • ব্যক্তিগত অস্ত্র (বা ক্ষুদ্র অস্ত্র) – একজন মানুষের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতকৃত অস্ত্র।
  • হালকা অস্ত্র – স্বল্প ওজনের অস্ত্র যা "মানব পরিবহনযোগ্য" এবং পরিচালনার জন্য ছোট দলের প্রয়োজন হয়।
  • ভারী অস্ত্র – সাধারণত স্থির অথবা স্বচালিত বিস্ফোরক অস্ত্র যা হালকা অস্ত্র অপেক্ষা ভারী।
  • শিকারী অস্ত্র – শিকার করা এবং খাদ্য সংগ্রহের জন্য শিকারীদের ব্যবহৃত অস্ত্র।
  • পদাতিক সাহায্যকারী অস্ত্র – যা ব্যক্তিগত অস্ত্র হতে বড় এবং চালনার জন্য দুই বা তার অধিক মানুষ প্রয়োজন।
  • দুর্গকরন অস্ত্র – একস্থানে স্থায়ীভাবে স্থাপিত, দুর্গের ভিতর ব্যবহার হয়। সাধারণত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন।
  • পাহাড়ী অস্ত্র – পাহাড়ে মোতায়েন বা দুর্গম এলাকার সৈন্যদের ব্যবহারের জন্য।
  • সাজোয়াযানের অস্ত্র – যেকোন প্রকার সাজোয়া যানে স্থাপনের জন্য।
  • রেল অস্ত্র – রেলগাড়িতে স্থাপনের জন্য প্রস্তুতকৃত অস্ত্র।
  • বিমানের অস্ত্র – বিমানে, হেলিকপ্টারে অথবা যেকোন আকাশ যানে স্থাপিত অস্ত্র।
  • নৌ অস্ত্র – জাহাজ এবং ডুবোজাহাজে স্থাপিত অস্ত্র।
  • মহাকাশের অস্ত্র – মহাকাশে ব্যবহার অথবা মহাকাশ হতে নিক্ষেপনের অস্ত্র।
  • মানুষ্যবিহীন অস্ত্র – সীমিত অথবা কোন প্রকার নির্দেশনা ছাড়াই কর্তব্য পালনে সক্ষম অস্ত্র।

কাজ অনুসারে

    - অস্ত্রের নির্মাণ এবং কর্মপন্থা অনুসারে
  • প্রতিবস্তু অস্ত্র (তাত্ত্বিক) বস্তু এবং প্রতিবস্তুকে সম্মিলিত করে শক্তিশালী বিস্ফোরন সৃষ্টি করবে।
  • তীরন্দাজী অস্ত্রসমুহ টানটান তার এবং চাপের ফলে বেকে যাওয়া বস্তুর সাহাযে পরিচালিত হয়।
  • আর্টলারি ভারী গোল দুরবর্তী স্থানে নিক্ষেপে সক্ষম।
  • জৈব অস্ত্র জৈবিক প্রভাবক বিস্তরন করে যার ফলে মানবদেহে বিভিন্ন রোগবালাই হয়
  • রাসায়নিক অস্ত্র বিষক্রিয়া ঘটায়
  • শক্তিনির্ভর অস্ত্র একিভুত শক্তির সাহায্যে আক্রমণ করে, যেমন লেজার অবস্থা সনিক অস্ত্র।
  • বিস্ফোরক অস্ত্র বিস্ফোরনের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়।
  • আগ্নেয়াস্ত্র গানপাউডারের সাহায্যে গোলা নিক্ষেপ করে।
  • অভিযোজিত অস্ত্র হলো সাধারণ বস্তু অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা।
  • আগ্নেয়াস্ত্র আগুনের সাহায্যে ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে।
  • প্রাণনাশে অসক্ষম অস্ত্র এর সাহায্যে হত্যা না করে আহত করা হয়।
  • চৌম্বকিয় অস্ত্রের সাহায্যে চৌম্বকক্ষেত্রের মাধ্যমে গোলা নিক্ষেপ করা যায়।
  • মেলি অস্ত্র কোন লক্ষ্যের শরীরে অবস্থান করে সরাসরি আক্রমণ করে।
  • ক্ষেপণাস্ত্র হলো দিকনির্দেশনা যুক্ত রকেট।
  • পারমাণবিক অস্ত্র তেজস্ক্রিয় মৌল ব্যবহার করে পারমাণবিক ফিশন এবং/অথবা ফিউশন ঘটায়ে শক্তি নির্গমন করে।
  • আদিম অস্ত্র কোন যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করেনা।
  • রকেট রাসায়নিক জ্বালানীর সাহায্যে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
  • আত্মঘাতি অস্ত্র তাদের পরিচালকের আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করে।

লক্ষ্য অনুসারে

    - যে লক্ষ্যের ধ্বংস সাধনের জন্য অস্ত্রটি প্রস্তুত করা হয়েছে
  • বিমান-বিধ্বংসী অস্ত্র আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমানকে লক্ষ্য করে।
  • দুর্গ-বিধ্বংসী অস্ত্র শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা বুহ্যকে লক্ষ্য করে।
  • মানব-বিধ্বংসী অস্ত্র মানুষকে এককভাবে অথবা দলগতভাবে আক্রমণের জন্য তৈরিকৃত।
  • তেজস্ক্রিয়তা-বিধ্বংসী অস্ত্র তেজস্ক্রিয়তার উৎস, যেমন রাডার নিঃসরণকে লক্ষ্য করে।
  • কৃত্রিম উপগ্রহ-বিধ্বংসী অস্ত্র কক্ষপথে আবর্তনরত কৃত্রিম উপগ্রহকে লক্ষ্য করে।
  • জাহাজ-বিধ্বংসী অস্ত্র জলপথে জাহাজকে লক্ষ্য করে।
  • ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী অস্ত্র ডুবোজাহাজ এবং অন্যান্য নিমজ্জিত লক্ষ্য করে আঘাত হানে।
  • ট্যাংক-বিধ্বংসী অস্ত্র ট্যাংককে ধ্বংস করতে ব্যবহার হয়।
  • এলাকা নামঞ্জুরকারী অস্ত্র একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে শত্রুপক্ষের অনিরাপদ করে দেয়।
  • শিকারী অস্ত্র শিকারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • পদাতিক প্রতিরক্ষা অস্ত্র পদাতিক সৈন্যদের নিরাপত্তায় ব্যবহৃত হয়।

প্রচলিত আইন

বিভিন্নপ্রকার অস্ত্রের প্রস্তুতি, মালিকানা, আদানপ্রদান এবং ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত। এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্থানীয় বা সরকার পর্যায়ে হতে পারে, আবার আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমেও হতে পারে।

নিয়ন্ত্রণের উদাহরণ নিম্নরুপ,

  • আত্মরক্ষার অধিকার
  • ছুরি আইন
  • এয়ার গান আইন
  • পিস্তল আইন
  • অস্ত্র চোরাচালান আইন
  • অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিসমূহ
  • মহাকাশ সংরক্ষণ চুক্তি

অস্ত্রের ব্যবহারিক মেয়াদ শেষে বিপত্তি

যেকোন প্রকার অস্ত্রের ব্যবহারিক মেয়াদ পৃথক পৃথক সংস্কৃতিতে পৃথক রকম। একইভাবে সচল এবং অচল অস্ত্রের বিনাশ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বিভিন্ন প্রকার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ১৯১৯ হতে ১৯৭০ পর্যন্ত সমুদ্রে নিক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ বোমা, অবিস্ফোরিত বোমা, মাইন এবং রাসায়নিক অস্ত্রের বিনাশ করতো। মেক্সিকো উপসাগরে নিক্ষিপ্ত অস্ত্র পরবর্তিতে ফ্লোরিডা উপকূলে ভেসে আসতে শুরু করে। টেক্সাস-লুইজিয়ানা নিকটবর্তী সামুদ্র তলদেশে তেল উত্তোলন সংক্রান্ত কর্মকান্ডের ফলে এইধরনের ভেসে আসা অস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলেরা ম্যাসাচুসেটস উপসাগরে নিক্ষিপ্ত বিভিন্ন অস্ত্র সংগ্রহ করে ম্যাসাচুসেটসের বিভিন্ন শহরে এনেছে।

আরও দেখুন

  • পিস্তল
  • অস্ত্র ব্যবসা
  • ব্যবহারিক অস্ত্র
  • অস্ত্রের তালিকা
  • সামরিক প্রযুক্তি

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

  • অস্ত্র  উইকিঅভিধানে অস্ত্র-এর আভিধানিক সংজ্ঞা পড়ুন।
  • অস্ত্র  উইকিউক্তিতে অস্ত্র সম্পর্কিত উক্তি পড়ুন।
  • অস্ত্র  উইকিমিডিয়া কমন্সে অস্ত্র সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।


Tags:

অস্ত্র ইতিহাসঅস্ত্র প্রকারভেদঅস্ত্র প্রচলিত আইনঅস্ত্র ের ব্যবহারিক মেয়াদ শেষে বিপত্তিঅস্ত্র আরও দেখুনঅস্ত্র তথ্যসূত্রঅস্ত্র বহিঃসংযোগঅস্ত্রঅপরাধশিকার

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

পান (পাতা)বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধমুজিবনগর সরকারসেলজুক সাম্রাজ্যফজরের নামাজজওহরলাল নেহেরুবিশ্ব দিবস তালিকাবৈশাখী মেলাআরবি ভাষাঅলিউল হক রুমিরঙের তালিকাফিলিস্তিনবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপ্রাকৃতিক দুর্যোগস্নায়ুযুদ্ধজসীম উদ্‌দীনস্বাস্থ্যের উপর তামাকের প্রভাবইবনে সিনাতেভাগা আন্দোলনবঙ্গবন্ধু সেতুপাগলা মসজিদবিদায় হজ্জের ভাষণইউক্রেনঅভিস্রবণকোকা-কোলাকৃষ্ণচূড়াইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সদিনাজপুর জেলাবাংলাদেশের স্থল বন্দরসমূহের তালিকামৌলিক পদার্থের তালিকাপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণমাহরামবাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চলইসলামে বিবাহট্রাভিস হেডপাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার১৮৫৭ সিপাহি বিদ্রোহবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাপর্তুগিজ সাম্রাজ্যইসলামের ইতিহাসপর্যায় সারণিমুহাম্মাদের স্ত্রীগণউমর ইবনুল খাত্তাবশব্দ (ব্যাকরণ)কালেমাছোটগল্পটিকটকসৌদি রিয়ালগোলাপআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাবাঙালি হিন্দু বিবাহক্রিকেটমুর্শিদাবাদ জেলাউত্তম কুমারকনডমতুলসীকারাগারের রোজনামচাবীর্যমোবাইল ফোনতামান্না ভাটিয়াভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪প্রেমালুইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজিব্রাজিলকবিতাবায়ুদূষণঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগচুয়াডাঙ্গা জেলাহিন্দুধর্মের ইতিহাস২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপজনসংখ্যা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীপ্রাণ-আরএফএল গ্রুপসরকারি বাঙলা কলেজ🡆 More