অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু

অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু বা সংক্ষেপে অউব (ইংরেজি: Unidentified Flying Object or, UFO), এমন একটি উড়ন্ত বস্তু যা সেটির প্রত্যক্ষদর্শী দ্বারা এবং তদন্ত করার পরেও শনাক্ত করা যায় না। সহজ ভাষায়, আকাশে দৃশ্যমান যে কোনো অচেনা-অজানা বস্তু বা আলোকেই ইউএফও বলা হয়। এই সংজ্ঞা অনুসারে, এটিকে একটি ইউএফও বিমান হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা যায়, যে এটি এর পরিচয় দেওয়ার পূর্বেই বিমান নিয়ন্ত্রণকারী রাডার গুলোতে হঠাৎ আবির্ভূত হতে দেখতে পাওয়া যায়। যাইহোক, সাধারণ ভাষায় ও কল্পনায় অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু বলতে বুঝায় ভিনগ্রহ হতে আগত বুদ্ধিমান জীব। উড়ন্ত পিরিচ বা প্লেট হিসেবেও ১৯৪০-১৯৯০ এর দশকগুলোতে এই বিষয়টি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠে ছিল। কারণ যে সব অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু আকাশে দেখতে পাওয়া যেত তার বেশির ভাগ উড়ন্ত বস্তুগুলো পিরিচ বা প্লেটের আকৃতির হয়ে থাকতো। অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তুর বিষয় নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে ইউফোবিদ্যা এবং যারা এসব নিয়ে গবেষণা করেন তাদের ইউফোলজিস্ট বলা হয়।

অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু
নিউ জার্সির প্যাসাইকে ১৯৫২ সালের ৩১ জুলাই তোলা কথিত অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তুর ছবি।

কতিপয় ইউফোলোজিস্টদের মতে, ইউএফও বলতে আকাশ বা মহাশূন্যের পর্যবেক্ষকরা যেসব অপ্রাকৃতিক বা অজানা বস্তু দেখা পায় সেগুলোই হলো ইউএফও। এগুলোকে কোনো কর্তৃপক্ষ বা বিশ্লেষক কৃত্রিম বস্তু (উদাহরণস্বরূপ, কৃত্রিম উপগ্রহ, যানবাহন, বেলুন) অথবা প্রাকৃতিক বস্তু (যেমন: উল্কা, গ্রহ, উল্কা বৃষ্টি, প্রাকৃতিক কারণ ইত্যাদি) হিসাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিল। আর যে অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু বা ইউএফওগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর দেখতে পাওয়া যায় তাকে অশনাক্ত ভাসমান বস্তু বা ইউএসও (Unidentified Submerged Objects or, USO) বলা হয়। যদিও পূর্বে এমন বস্তু দেখা গেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরেই ১৯৪৭ সালের ২৪ জুন ইউএফও জন্ম ধরা হয়। সাধারণত এটিকে বৈজ্ঞানিক বিশ্বে একটি ছদ্মবিজ্ঞানের দ্বারা গণ্য করা হয়। সাম্প্রতিক বছরে, ইউএফও–এর দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকৃত জাদুঘর বানানো হয়েছে। একটি হলো নিউ মেক্সিকোর রজওয়েলের আন্তর্জাতিক ইউএফও জাদুঘর এবং অপরটি হলো এর শাখা ইস্তাম্বুলে

ইতিহাস

অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু বা ইউএফও পর্যবেক্ষণ নিয়ে ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন গবেষণা ও প্রতিবেদন করা হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু ছিল নিঃসন্দেহে প্রাকৃতিক জ্যোর্তিবিদ্যা সংক্রান্ত, যেমন: ধূমকেতু, উজ্জ্বল উল্কা, একটি বা পাঁচটি গ্রহ যা খালি চোখে দেখা যায়, যুক্ত গ্রহীক, অথবা বায়ুমন্ডলীয় দৃষ্টিবিভ্রন্ত আলোমালা যেমন: প্রতিসূর্য বা পারহেলিয়া এবং লেন্স আকৃতির মেঘমালা। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় হ্যালির ধূমকেতুর কথা, যেটি চীনের জ্যোর্তির্বিজ্ঞানীরা সম্ভবত খ্রীষ্ট্পূর্ব ২৪০ বছর অথবা ৪৬৭ বছর আগে প্রথম রেকর্ড করে ছিল। যাইহোক, তাদের প্রকৃত কারণ ইতিহাস জুড়ে অপ্রাকৃতিক, স্বর্গদূত অথবা অন্যান্য ধর্মীয় পূর্বাভাস বলে মনে করেছে। মধ্যযুগে কিছু বস্তু চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে যা দেখলে অনুরূপ ইউএফও মনে হতে পারে। মধ্যযুগে এবং আধুনিক যুগের অভ্যুদয়ের সময় এমন অন্যান্য চিত্রাঙ্কনগুলোকে ইতিহাসবিদরা প্রায়ই ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেন। শেন কুও (১০৩১–১০৯৫), যিনি মধ্যযুগীয় চীন সরকারের একজন পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন, বহুবিদ্যাজ্ঞ, আবিস্কারক, তিনি অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তুর সম্বন্ধে তার লেখা Dream Pool Essays(১০৮৮) বইতে একটি জীবন্ত অনুচ্ছেদ লিখে ছিলেন। ১১তম শতাব্দীতে চীনের ইয়াংচৌ শহরে আনহুইজিয়াংসু নামের দুই জন ইউএফও প্রত্যক্ষদর্শীর প্রমাণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। তাঁরা রাতে এক দরজা-বিশিষ্ট উড়ন্ত চাকী দেখেছিল বলে দাবি করেন। যেটির দরজার ভেতর থেকে থেকে আগতো উজ্জল আলোক গাছগুলো (আপাতদৃষ্টিতে ভিনগ্রহী প্রাণী) থেকে আগত আলো প্রায় দশ মাইল ব্যাসার্ধ জায়গা জুরে আলোকিত করেছিল এবং তাদের ভাষ্যমতে, চাকীটি প্রচণ্ড গতিতে তার নিজ স্থান থেকে উড্ডয়ন করতে সক্ষম হয়।

প্রতক্ষ্যদর্শী দ্বারা বর্ণনা

অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু 
মধ্যযুগীয় জার্মানির নুরেমবার্গ শহর যখন যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলো তখন একটি রিপোর্ট করা হয়েছিল যে, অনেকটা নলাকার বস্তসহু গোলক আকৃতির একটি বস্তু দেখা গেছ। ১৫৬৬ সালে হান্স গ্ল্যাসার এই ঘটনাটি চিত্র এঁকে বিবরণ দেন।
  • ২৪শে সেপ্টেম্বর, ১২৩৫ সালের রাতে মধ্যযুগীয় জাপানে জেনারেল ইয়োরিতসুমে এবং তাঁর সেনাবাহিনী কিয়োতো শহরের কাছে অস্থির প্রকৃতির আলো দেখতে পান। তার পরামর্শদাতা তাকে পরামর্শ দেন "চিন্তা না করার জন্য। কারণ এটি বায়ু ছিল মাত্র যা তারকাকে কাপাচ্ছে।"
  • ১৪ই এপ্রিল ১৫৬১, জার্মানির নুরেমবার্গ শহর যখন যুদ্ধে ব্যস্ত ছিল, তখন শহরের মানুষ একটি রিপোর্ট করেছিল যে, তারা গোলক আকৃতির একটি বস্তু এবং গোলকের বাইরে অনেক নলাকার বস্তু পেয়েছে।
  • ১৮৬৮ সালের জুলাই মাসে চিলিতে যে প্রথম ইউএফও দেখার রিপোর্ট করা হয়, গবেষকদের মতে এটিই আধুনিক সভ্যতার ইউএফও প্রত্যক্ষ করার প্রমাণ পত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি কপিয়াপো শহরের এল কোনস্তিত্যুয়েন্ত সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছিল এবং ইউএফওটিকে অন্যগুলোর মতই দেখা গিয়েছিল (একটি অজানা উদ্বায়ী) এবং কয়েক মাস পর একই বছর, একদল "তারকা সারি" অথবা "রেসের গাড়ির" মতো বস্তু আকাশ অতিক্রম করতে দেখা যাওয়ার রিপোর্ট করা হয়েছিল। তার পর হতে চিলির ইউএফও গবেষকরা এই ধরনের বিষয় গুলোকে লিপিবদ্ধ করা শুরু করেন।
  • ২৫শে জানুয়ারি ১৮৭৮ তে, দৈনিক ডেনসন সংবাদ লিখেছিল যে, স্থানীয় এক কৃষক জন মার্টিন বলেছিল সে একটি বড়, কালো, বৃত্তাকার বেলুন আকৃতির বস্তু উড়তে দেখেছে, সেটাও "চমৎকার গতিতে"। মার্টিন আরও বলে, "যে মনে হচ্ছিল সেটা প্লেট আকৃতির।" এই প্রথম বারের মতো ইউএফওকে "প্লেট" সঙ্গে তুলনা করা হয়।
  • ১২ই আগস্ট, ১৮৮৩ তারিখে মেক্সিকান অধ্যাপক ও জ্যোতিবিদ জোসেফ ওয়াই. বোনিল্লা বর্ণনা করেছিলেন যে, সে দূরবীক্ষণ দ্বারা পর্যবেক্ষণ করার সময় তাঁর দূরবীক্ষণ এবং সূর্য মাঝে "জাপাতেকাস"-এর কাছে দীর্ঘ এবং কিছু সংখ্যক রঙিন মণিরমত বস্তু দেখতে পেয়েছেন। বোনিল্লার দেখা উড়ন্ত বস্তু অস্তিত্বের কথা তাঁর দ্বারা তোলা একটি ছবি প্রমাণ করেছিল, যেমন অতীতের ছবিগুলোতে উড়ন্ত বস্তুর অস্তিত্বের কথা প্রমাণ করেছিল।
  • ২৮শে ফেব্রুয়ারি, ১৯০৪ তারিখে সান ফ্রান্সিসকো হতে ৩০০ মাইল পশ্চিমে তিন মার্কিন নাবিক ইউএফও দেখেছে, এমন কথা এল. ফ্রানক স্কলফিল্ড দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে তিনি মার্কিন নৌবাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চিফ কমান্ডার হয়েছেন। সেসময় স্কলফিল্ড লিখেছেন, "গোলাক আকৃতির তিনটি উজ্জল বস্তু মেঘের নিচ দিয়ে যাচ্ছিল, পরে গোলাকটি তার পথ পরিবর্তন করে মেঘের উপর ওঠে, দুই-তিন মিনিট পর পৃথিবী ত্যাগ করে। বড় গোলাকটি প্রায় ছয়টা সূর্যের আকারের ছিল।"
  • ৩১শে জানুয়ারি, ১৯১৬ তারিখে একজন ব্রিটিশ বিমানচালক রিপোর্ট করেছিল যে, রোচফোর্ডের কাছে এক সারি আলো দেখতে পেয়েছেন তিনি, যেন একটি জানালা রেলপথকে আলোকিত করেছে, পরে আলোটি আরো উজ্জল হয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যে উধাও হয়ে যায়।
  • জানুয়ারি ১৯২৬ সালে, একজন বিমানচালক প্রতিবেদন করেছিল যে, সে ছয়টি "ম্যানহোলের ঢাকনা"-কে উইচিতা, কানসাস সিটিকলোরাডো স্প্রিংস শহরের মাঝে উড়তে দেখছে। একই বছর সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে, নেভাডাতে একটি বড় ও উড়ন্ত পাখাহীন নলাওলা মত বস্তুর উপস্থিতি লক্ষ্য করার পর একজন বিমানবাহিত ডাক পাইলট অবতরণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
  • ৫ই আগস্ট, ১৯২৬ সালে তিব্বতের কোকোনর অঞ্চলের হুম্বলড পর্বতমালা ভ্রমণের সময়, নিকোলাস রয়রিচ প্রতিবেদন করেছিলেন যে, তাঁর ভ্রমণসাথীরা দেখেছে, "কিছু একটা বড়, স্বচ্ছ ও সূর্যের আলো প্রতিফলন করে, একটা বড় ডিম্বাকারের মত যা নড়াচরা করছে প্রচণ্ড গতিতে। আমাদের শিবির অতিক্রম করে জিনিসটা দিক পরিবর্তন করছিল দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং আমারা দেখেছিলাম সেটাকে গাঢ় নীল আকাশে হারিয়ে যেতে। এমনকি আমাদের সময়ও ছিল আমাদের চশমা পড়ে দেখার মতোও সময় ছিল এবং আমি দেখেছিলাম, যথেষ্ট দূরে, উপরিভাগ উজ্জল ডিম্বাকার আকৃতি, তার একপাশে সূর্যের মতো উজ্জল।" নিকোলাসের অন্য একটি বর্ণনায় ছিল, ".......... একটি দেহ উজ্জল দক্ষিণ থেকে উত্তরে উড়ছিলো। এইটি একটি বিশাল আকৃতির। একপাশ সূর্যের নিচে উজ্জল হয় এবং ডিম্বাকার আকৃতির। তারপর এইটি দিক পরিবর্তন করে এবং দক্ষিণপশ্চিমে হারিয়ে যায়।"
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং ইউরোপীয় রণাঙ্গনগুলোতে, "ফো-ফাইটারস"-এর (ধাতব গোলক, আলোর বল এবং অন্যান্য আকৃতির জিনিস যা যুদ্ধা বিমানকে প্রায়শই অনুসরণ করতো) প্রতিবেদন করা হয়েছিল এবং বিমানচালক ও তাদের অনুসারীদের দ্বারা এগুলোর বিভিন্ন ছবি তোলা হয়েছিল।
  • ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২ সালে আমেরিকার সৈন্যবাহিনী পর্যবেক্ষণের প্রতিবেদন করেছিল, লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের উপর "অশনাক্ত বিমান" দৃশ্যমান হয়েছে এবং রাডারে ধরা পড়েছে। রাজকীয় জাপানি যুদ্ধ বিমান মনে করে তারা এন্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল নিক্ষেপণ করে। পরিষ্কার ব্যাখ্যা না দেওয়ায় কিছু কর্মকর্তা বিমানের রিপোর্টটিকে নাকোচ দিয়েছিল। তারা ওই সময় ক্যালিফোর্নিয়াতে জাপানি বিমান আক্রমণের বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল। যাইহোক, সৈন্যবাহিনী প্রধান জেনারেল জর্জ সি. মার্শাল ও যুদ্ধের সচিব হেনরি স্টিমসন মনে করেন যে, জাপান এই অশনাক্ত বিমানের ব্যাপারের সাথে জরিত। এই ঘটনার পরবর্তীকালে এটি "লস অ্যাঞ্জেলিসের যুদ্ধ" ও "প্রাচ্য দেশের উপকূলীয় বিমান আক্রমণ" হিসেবে পরিচিত হয়েছিল।
বিমানবাহিনী বলছে টেক্সাসের ইউএফওগুলো প্রকৃতপক্ষে জেট বিমান ছিল। ২৪-০১-২০০৮
  • ১৯৪৬ সাল জুড়ে ইউএফও নিয়ে ২০০০ এরও বেশি রিপোর্ট করা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই সুইডীয় সৈন্যবাহিনীর নিকট থেকে সংগ্রহ করা হয়। স্ক্যাডিনেভিয়াতে অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু দেখা গিয়েছে, কেবল ফ্রান্স, পর্তুগাল, গ্রিস এবং ইতালির রিপোর্ট আলাদা করে রাখা হয়েছে। এগুলোকে তারা প্রথমে "রুশ হেল" এবং পরবর্তী কালে "ভূত রকেট" হিসেবে উল্লেখ করেছিল। কারণ তারা চিন্তা করেছিল যে, এগুলো সম্ভবত সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে যাওয়া জার্মানির V1 অথবা V2 রকেট রহস্যময় টেষ্টের বস্তু। যদিও অনেকেই ভেবেছিল এটা হবে উল্কার মত প্রাকৃতিক ঘটনা। রাডারের মাধ্যমে ২০০ টির ওপর ধরা পড়েছে এবং সুইডীয় সৈন্যবাহিনী দ্বারা "প্রকৃত ভৌত বস্তু" হিসাবে গণ্য করেছিল। ১৯৪৮ সালে, একটি টপ সিক্রেট ফাইলে সুইডীয় সৈন্যবাহিনী ইউরোপের আমেরিকান সৈন্যবাহিনীকে বলেছে যে, "তাদের তদন্তকারী ভিন্ন গ্রহের জীব বলে বিশ্বাস করেছিল।"

প্রথম আধুনিক প্রতিবেদন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর্যন্ত নিয়মিত ইউএফও দেখা শুরু হয়েছিল, এর মধ্যে ২৪শে জুন, ১৯৪৭ সালে একজন বিখ্যাত মার্কিন ব্যবসায়ী ক্যানেথ আর্নল্ড যখন তার ব্যক্তিগত প্লেন ওয়াশিংটন এর রাইনার পর্বতমালা কাছে দিয়ে উড়ছিল, তখন তিনি উড়ন্ত চাকী দেখার দাবি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, নয়টা অতি উজ্জ্বল বস্তু রাইনারের দিকে মুখ করে উল্ট পাশে উড়ছিল। অনুরুপ বস্তু ১৯৪৭ সালে আমেরিকাতে আরও দেখা গিয়েছিল।

আর্নল্ডের এই বিষয়টিতে প্রথম মিডিয়া প্রচার করেছিল এবং জনগণের দৃষ্টিও আর্কষণ করেছিল। আর্নল্ড বর্ণনা করেছিলেন যা তিনি দেখেছিলেন, "একটি পিঠার মত চ্যাপ্টা, পিরিচের মতো অকৃতির এবং এতো পাতলা ছিল যে ঠিকমত দেখা যাচ্ছিল না, অর্ধেক চাঁদ অকৃতি, পিছের দিক চ্যাপ্টা ডিম্বাকার এবং সামনের দিক উত্তল। ..... মনে হচ্ছিল একটা বড় চ্যাপ্টা চাকী এবং এমনভাবে উড়ছে, যেন একটা চারা পানির উপর লাফাচ্ছে।" অল্প দিনের মধ্যে আর্নল্ডের "উড়ন্ত বস্তু" বা "উড়ন্ত পিরিচ"-এর বিষয়টি অনেক দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। আর্নল্ডের দেখাকে অনুসরণ করে অন্যানরাও একই ধরনের বস্তু দেখেছে বলে কয়েক সপ্তাহে শত শত রিপোর্ট করেছিল। এর বেশিরভাগই আমেরিকাতে। কিন্তু একই সময়ে অন্যান্য দেশসমূহেতেও এরকম জিনিস দেখেছিল বলে রিপোর্ট কর হয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে এ ধরনের অন্যান্য বিষয়ের রিপোর্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। যেমন: ৪ঠা জুলাই, সন্ধ্যাবেলা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমান দল ইডাহোর উপর নয়টারও বেশি একই রকম চাকী দেখেছিল।

মার্কিন ইউএফওলজিস্ট টেড ব্লোচার তাঁর সংবাদপত্র প্রতিবেদনে আর্নল্ডের বর্ণনাসহ অন্যান্য রিপোর্টগুলো নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা করেন, তিনি ৬-৮ জুলাইয়ের সঙ্গে ৪ঠা জুলাইয়ের ঘটনার উপর হঠাৎ অপ্রত্যশিত মিল খুজে পান। ব্লোচার লক্ষ্য করেছিলেন যে, পরবর্তী কয়েক দিন সর্বাপেক্ষা মার্কিন সংবাদপত্রের প্রধান পাতায় "উড়ন্ত পিরিচ" বা "উড়ন্ত চাকীর" এর ঘটনায় ভরা ছিল। ৮ই জুলাইয়ের পর যখন বিমান কর্মকর্তারা রজওয়েলের বিখ্যাত উড়ন্ত চাকী বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করতে শুরু করেছিল, তারা তখন একে একটি পরীক্ষামূলক বস্তুর ধ্বংসাবশেষ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছিল।

মধ্যযূগ এবং নবযুগের অভ্যুদয়

মধ্যযুগে ও ক্যামেরা আবিষ্কারের পুর্বে যে সকল অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু দেখার দাবি করা হয়েছিল, তাদের বেশিরভাগেরই উৎস সীমিত, অনির্ভরযগ্য ও কল্পনাপ্রবণ, এর একটি সহজ ব্যাখ্যা ইতিহাসবিদরা দিয়েছেন। যেমন:

  • কসোভোর ডেটজানি সন্ন্যাসীদের মঠের প্রাচীন চিত্রের বহির্জাগতিক নভোচারীদের প্রতীক হিসাবে দেখানো হয়েছে সূর্যচাঁদকে, যেমন এই সময়ে বিজানতিনোর ধর্মীয় শিল্পে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। অতএব, এটি ভিনগ্রহী প্রাণীর আগমন নয়, ধর্মীয় প্রতীকমাত্র।
  • পাওলো উচেল্লোর সারণীর মধ্যে যে একটি গোল উড়ন্ত বস্তু দেখা যায়, সেটি মিশরের তেবেইদ এলাকার একটি টুপির প্রতীক।
  • ১৬৮০ সালে ফ্রান্সের এক চিত্রশিল্পী আকাশের ওপর দিয়ে একটি ইউএফও উড়ে যাওয়ার চিত্র অঙ্কন করে, আসলে এটি একটি খেলার প্রতীক, এটি ভাগ্যর চাকা উপর নকশা করা হয়েছে।

তদন্ত

অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু 
কলম্বিয়ার টেনজোতে একটি ইউএফও স্মৃতিস্তম্ভ

প্রাচীনকাল হতেই আকাশে অদ্ভুত অদ্ভুত সব বস্তু দেখার খবর শোনা গেলেও ১৯৪৭ সালে যখন আমেরিকাতে প্রথম UFO দেখা যাবার খবর ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়, তারপর থেকে এটিই হয়ে ওঠে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এর পর আরো কয়েক হাজার UFO দেখার খবর পাওয়া যায় এবং এর মধ্যে প্রায় শতকরা ৯০ ভাগই মিথ্যা। সাধারণ মানুষ প্রায়ই উজ্জ্বল কোন গ্রহ কিংবা তারা, বিমান, পাখি, বেলুন, ঘুড়ি, ডিম্বাকার আকৃতির মেঘ দেখে তা UFO ভেবে ভুল করেছে। তবে এর জন্য প্রয়োজন সময় সাপেক্ষ তদন্ত। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকী বিবেচনা করে মার্কিন বিমানবাহিনী ১৯৪৭ সালে UFO তদন্তে নামে। তদন্তের কাজ শেষ হয় ১৯৬৯ সালে। এ সময়ে প্রাপ্ত সর্বমোট ১২,৬১৮ টি ঘটনার মধ্যে ৭০১ টি ঘটনার কোন ব্যাখ্যা তারা দিতে পারে নি। মার্কিন বিমানবাহিনী তাদের তদন্ত শেষ করে এই বলে যে “বিমান বাহিনীর তদন্তে কোন UFO এর প্রতিবেদন করেনি এবং আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ভয়ের কোন ইঙ্গিত দেয়নি।” ১৯৬৯ সালের পর আর কোন মার্কিন সংস্থা UFO তদন্ত কাজে সরাসরি হাত দেয়নি। এরপর ১৯৯৭ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা মার্কিন সামরিক বাহিনীর উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন গোয়েন্দা বিমান ব্যবহারের কথা ফাঁস করে দেয়। ১৯৫০ হতে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত যতগুলো UFO দেখা গেছে তার মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ ঘটনার জন্য দায়ী Lockheed U-2A এবং Lockheed SR-71 নামের এই বিমান দুটি। যদিও কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, তারপরও অনেকেই এটিকে ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দাদের আকাশযান বলে মনে করেন। আর বিষয়টিকে উড়িয়ে দেবার উপায় নেই। অধিকাংশ বিজ্ঞানীই এই মহাশুন্যে কোথাও না কোথায় অতিমানবীয় বুদ্ধিমান প্রানীর অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।

আরও দেখুন

  • এরিয়া ৫১, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানঘাঁটি যেটি ভিনগ্রহী প্রাণী ও ইউএফও নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত
  • রজওয়েলের ঘটনা
  • ইউএফওবিদ্যা
  • কল্পবিজ্ঞানে অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু
  • অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু দৃষ্টিগোচর হওয়ার তালিকা
  • অশানাক্ত উড়ন্ত বস্তু বিধ্বস্ত হওয়ার তালিকা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু ইতিহাসঅশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু তদন্তঅশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু আরও দেখুনঅশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু তথ্যসূত্রঅশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু বহিঃসংযোগঅশনাক্ত উড়ন্ত বস্তুআকাশইংরেজি ভাষাইউফোবিদ্যাবহির্জাগতিক প্রাণরাডার

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাবাগদাদআশারায়ে মুবাশশারাবিভিন্ন দেশের মুদ্রাচট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রতামান্না ভাটিয়াজনসংখ্যা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকালোহিত রক্তকণিকাগুগলআওরঙ্গজেবমৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাস (উপাত্ত পাতা)বাংলাদেশের পৌরসভার তালিকারুমানা মঞ্জুরঐশ্বর্যা রাইহাদিসভালোবাসামৃণালিনী দেবীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)মাযহাববাংলা একাডেমিইসলামি সহযোগিতা সংস্থাদারাজবাংলা স্বরবর্ণজেরুসালেমপূর্ণিমা (অভিনেত্রী)গোলাপশেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কশ্যপঢাকা মেট্রোরেলনাদিয়া আহমেদবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সবাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসপাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারপ্রাকৃতিক সম্পদজাতিসংঘআলিরামইহুদি ধর্মবাংলাদেশের মন্ত্রিসভারামকৃষ্ণ পরমহংসইসলামে বিবাহঘূর্ণিঝড়ইউরোপীয় ইউনিয়নশব্দ (ব্যাকরণ)নেতৃত্বইসলামে যৌনতাজীববৈচিত্র্যবাংলার ইতিহাসকমনওয়েলথ অব নেশনসঝড়ঊষা (পৌরাণিক চরিত্র)মুঘল সাম্রাজ্যআলাউদ্দিন খিলজিভোটবাগদাদ অবরোধ (১২৫৮)সজনেরয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুরাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)জ্বীন জাতিফিলিস্তিনের ইতিহাসকৃষ্ণফাতিমাঅভিস্রবণজাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদফুসফুসজাহাঙ্গীরআর্দ্রতাওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবইবনে বতুতাবাবরবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাযোগাসনআলিফ লায়লাহুনাইন ইবনে ইসহাকসূরা ফাতিহাদক্ষিণবঙ্গ🡆 More