অমাবস্যা

জ্যোতির্বিদ্যা অনুসারে, অমাবস্যা হচ্ছে চন্দ্রকলার প্রথম ধাপ। এটি মূলত সেই সময় যখন চাঁদ ও সূর্য একই বরাবর থাকে। ফলে, পৃথিবী থেকে চাঁদকে তার কক্ষপথে দেখা যায় না। যদিও এই সময়টায় চাঁদকে খালি চোখে দেখা যায় না। তবুও এই দশাটিতে চাঁদ খুব চিকন ক্রিসেন্টরূপে বিরাজমান থাকে। কারণ, সূর্যগ্রহণ ছাড়া বাকী সময় চাঁদ সূর্যকে সরাসরি সম্পূর্ণরূপে অতিক্রম করে না। বিস্তারিত জানতে দেখুন চন্দ্রকলা।

অমাবস্যা
একটি নতুন চন্দ্রকলার রৈখিক চিত্ররূপ

২০১৩ সালের ৮ই জুলাই, ফরাসি জ্যোতির্বিদ থিয়েরী লিগ্যাল সর্বপ্রথম অমাবস্যার ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই সময় চাঁদের ক্রিসেন্টটি খালি চোখে দৃশ্যমান ছিল না।

চন্দ্রমাস বলতে এক অমাবস্যা থেকে আর এক অমাবস্যা পর্যন্ত সময়কালকে বুঝায়। চন্দ্রমাসের গড় সময়কাল ২৯ দিন, ১২ ঘণ্টা, ৪৪ মিনিট ৩ সেকেন্ড। যদিও যেকোনো চন্দ্রমাস ২৯.২৬ দিন থেকে ২৯.৮০ দিন সময়কালের মধ্যে যেকোনোটাই হতে পারে। এর পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে চাঁদের ওপর সূর্যের আকর্ষণ। চন্দ্র পঞ্জিকা অনুসারে, প্রত্যেক মাস একটি নির্দিষ্ট চন্দ্রমাসকে নির্দেশ করে এবং প্রতিটি চন্দ্রচক্র একটি অনন্য চান্দ্রমাস সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত হয়।

অমাবস্যা নিরূপণ: আনুমানিক সূত্র অনুযায়ী

চন্দ্রমাস ২৯.৫৩ দিন দীর্ঘ হতে পারে। এই বর্ণিত সময়কালটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। যেমন: জোয়ার-ভাটায় জলের উথান-পতনের পার্থক্য। অমাবস্যার ঠিক মূহুর্তটি একটি আনুমানিক সূত্র দ্বারা নির্ণয় করা যায়। এই আনুমানিক সূত্রটি চাঁদ ও সূর্যের সংযোগ অনুযায়ী ধারাবাহিক মাসসমূহ হচ্ছে:

    অমাবস্যা 

যেখানে N হচ্ছে একটি পূর্ণসংখ্যা, এখানে, 2000 সালের প্রথম অমাবস্যাকে 0 ধরা হয়। এটি প্রতি চন্দ্রমাসে ১ করে বৃদ্ধি পায়। ফলাফল d হচ্ছে দিন সংখ্যা। 2000-01-01 এর 00:00:00 থেকে সময় স্কেল স্থলজ সময় নামে পরিচিত। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় Terrestrial Time এবং সংক্ষেপে (TT)। এটি এফিমেরিসে ব্যবহৃত হয়।

উপর্যুক্ত ফলাফল এর সাথে নিম্নোক্ত d এর মান যোগ করে একে সার্বজনীন সময় স্কেলে প্রকাশ করা হয়।

    অমাবস্যা  দিন

পর্যাবৃত্ত গতি এর সঠিক সময়টিকে বদলে দেয়। 1601 থেকে 2001 পর্যন্ত সকল অমাবস্যার চাঁদের সর্ব্বোচ ব্যবধান ছিল ০.৫৯২ দিন = ১৪ ঘণ্টা ১৩ মিনিট। সাধারণত এক অমাবস্যা থেকে আর এক অমাবস্যা পর্যন্ত সময়কাল ২৯.২৭২ দিন থেকে ২৯.৮৩৩ দিন পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ গড় সময়কাল থেকে সর্বনিম্ন -০.২৫৯ দিন = ৬ ঘণ্টা ১২ মিনিট হ্রাস পায় অথবা সর্ব্বোচ +০.৩০২ দিন = ৭ঘণ্টা ১৫ মিনিট বৃদ্ধি পায়। এই পরিসরটি তার আসল এবং আনুমানিক সময়কালের ব্যবধান থেকে কিছুটা ক্ষুদ্রতর। কারণ, এক চান্দ্রমাসে সকল পর্যাবৃত্ত আবর্তন তাদের সর্বোচ্চ বিপরিত মানে পৌছায় না।

বিস্তারিত জানতে দেখুন পূর্ণিমা চক্র। সেখানে সহজ ও সুন্দরভাবে অমাবস্যার সঠিক সময় নিরূপণ প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে।

এই দীর্ঘ মেয়াদী ত্রুটির আনুমানিক হার হচ্ছে: TT তে 1 cy2 সেকেন্ড এবং UT তে 11 cy2 সেকেন্ড। এখানে cy বলতে ২০০০ সাল থেকে প্রতি শতাব্দীকে বোঝানো হয়েছে। বিস্তারিত এর জন্য দেখুন সূত্রের ব্যাখ্যা

সূত্রের ব্যাখ্যা

চাঁদের গড় সংযোগ মুহূর্তটি একটি রাশি দ্বারা খুব সহজেই পরিমাণ করা যায়। এর জন্য চাঁদের গ্রহণকাল থেকে সূর্যের গ্রহণকাল বিয়োগ করতে হবে। একে ডিলনি স্থিতিমাপক যন্ত্রে D দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। জিয়ান মিউস (ইংরেজিতে Jean Meeus) তার জনপ্রিয় গ্রন্থ এ্যসট্রোনমি্কল ফর্মুলা ফর ক্যালকুলেটরসে (ইংরেজিতে: Astronomical Formulae for Calculators) এই সময়কাল পরিমাপের একটি সূত্র প্রদান করেন। এই গ্রন্থটি ১৯০০ সালের প্রনীত ব্রাউন এবং নিউকম্বের বছরব্যপী মহাজাগতিক বস্তুর আপাত অবস্থানের তালিকা থেকে লিখিত হয়েছে। এর প্রথম সংস্করণটির এ্যসট্রোনমি্কল অ্যালগরিদম এর ভিত্তি ছিল ELP2000-85। কিন্তু দ্বিতীয় সংস্করণের ভিত্তি ছিল ELP2000-82 যা অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে চ্যপরন্ট দ্বারা ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয়। এইগুলো বর্তমানে বাতিল হয়ে গিয়েছে। কারণ, ২০০২ সালে অধিকতর উপযুক্ত স্থিতিমাপক যন্ত্র প্রকাশিত হয়। মিউসের সূত্র একটি ফ্রাকশনাল চলক ব্যবহার করে যা চাঁদের প্রধান চারটি দশা গণনাতেই ব্যবহারযোগ্য। এছাড়াও তিনি দ্বিতীয় একটি চলক ব্যবহার করেন যা পুরানো গণনা পদ্বতিতে ব্যবহারযোগ্য। পাঠকের সুবিধার্থে বলে রাখা দরকার উপর্যুক্ত সূত্রটি চ্যপরন্ট এর সর্বশেষ স্থিতিমাপক যন্ত্র অনুসারে লিখিত হয়েছে। যেখানে একটিমাত্র পূর্ণসংখ্যাকে চলক হিসেবে ধরা হয়েছে। এছাড়াও নিম্নোক্ত শর্তাবলী যোগ করা হয়েছে;

ধ্রুব রাশি:

  • যেমন মিউস, তার গ্রহণকালের দ্রাঘিমাংশের আপাত ব্যবধান নির্ণয়ে আলোর অপেরণের ধ্রুব রাশি হিসেবে সূর্যের গতি এবং চাঁদের আলো-সময় সংশোধনকে প্রয়োগ করেন।
    সূর্য: +২০.৪৯৬"
    চাঁদ: −০.৭০৪"
    সংযোগ সংশোধন: −০.০০০৪৫১ দিন
  • UT এর জন্য: ২০০০ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে, ΔT =(TT − UT)। যা পূর্বে ছিল +৬৩.৮৩সে:। বর্তমানে গ্রহণকালের সময় এর সংশোধন হচ্ছে UT = TT − ΔT :
    −০.০০০৭৩৯ দিন

দ্বিঘাত রাশি :

  • ELP2000–85 অনুসারে D হচ্ছে -৫.৮৬৮১"T2 এর দ্বিঘাত রাশি। যাকে চন্দ্রমাসে N দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যার সংশোধিত রূপে +৮৭.৪০৩×১০–১২N দিন যোগ করে গ্রহণকাল নির্ণয় করা হয়। এক্ষেত্রে জোয়ারের ত্বরণের অবদান হচ্ছে ০.৫×(-২৩.৮৯৪৬/cy2)। লুনার লেসার রেঞ্জিঙ্গ (ইংরেজিতে: Lunar Laser Ranging) এর সর্বাধুনিক হিসেবে এই ত্বরণের মান: (-২৫.৮৫৮±০.০০৩)/cy। তাই, D এর নতুন মান হচ্ছে: -৬.৮৪৯৮T2। প্রকৃতপক্ষে, ২০০২ সালে চ্যপরন্ট দ্বারা প্রকাশিত বহুপদীতেও একই মান দেখানো হয়েছে। যা টেবিল ৪ এর অন্তর্গত। এটি একটি সংশোধনীতে নিয়ে যায়; যা গ্রহণকালকে +১৪.৬২২×১০−১২N দ্বারা প্রকাশ করে। বর্তমানে এই দ্বিঘাত রাশিটির মান:
    +১০২.০২৬×১০−১২N দিন

তথ্যসূত্র

Tags:

চন্দ্রকলাজ্যোতির্বিজ্ঞান

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বাংলা ভাষা আন্দোলনপান (পাতা)নগরায়নহিসাববিজ্ঞানবাসুকীমুর্শিদাবাদ জেলাবাঙালি সাহিত্যিকদের তালিকা (কালানুক্রমিক)জসীম উদ্‌দীননারী খৎনাপর্তুগিজ সাম্রাজ্যপ্রথম ওরহানভৌগোলিক নির্দেশকআল-আকসা মসজিদবাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারকবৃন্দময়ূরী (অভিনেত্রী)রক্তযোহরের নামাজগর্ভধারণউসমানীয় খিলাফতভিটামিনসোমালিয়াপ্রথম মালিক শাহপর্তুগিজ ভারততানজিন তিশাজান্নাতুল ফেরদৌস পিয়াবইবাংলাদেশের জেলাসৌদি আরবনিজামিয়া মাদ্রাসাক্লিওপেট্রাবাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলইউটিউবযিনাজীববৈচিত্র্যবাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার তালিকামুঘল সাম্রাজ্যরঙের তালিকাসাহারা মরুভূমিচট্টগ্রামইতালিভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহবাংলাদেশ পুলিশহুনাইন ইবনে ইসহাকইউরোপ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপবাঙালি হিন্দু বিবাহখুলনাইসলামি সহযোগিতা সংস্থাদৈনিক ইনকিলাবএইচআইভিহার্নিয়াশুক্র গ্রহবাংলাদেশের মেডিকেল কলেজসমূহের তালিকাবাংলাদেশ ব্যাংকদক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাসুনামগঞ্জ জেলাচর্যাপদসন্ধিলোহিত রক্তকণিকাক্ষুদিরাম বসুচৈতন্য মহাপ্রভুদাজ্জালআনন্দবাজার পত্রিকাজাতীয় সংসদ ভবনকাবাপ্লাস্টিক দূষণবিসিএস পরীক্ষাযুক্তরাজ্যআলিফ লায়লাশেখ হাসিনাসানরাইজার্স হায়দ্রাবাদঅক্ষয় তৃতীয়াগজল০ (সংখ্যা)কক্সবাজারগোপাল ভাঁড়🡆 More