জাপান

জাপান (জাপানি: 日本, ঞ়িপ্পোঙ়্ বা ঞ়িহোঙ়্; পুরো নাম 日本国 ⓘ বা ঞ়িহোঙ়্-কোকু, জাপান রাষ্ট্র) হল পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জাপান সাগর, পূর্ব চীন সাগর, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পূর্ব দিকে উত্তরে ওখোৎস্ক সাগর থেকে দক্ষিণ পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ান পর্যন্ত প্রসারিত। যে কাঞ্জি অনুসারে জাপানের নামটি এসেছে, সেটির অর্থ সূর্য উৎস। জাপানকে প্রায়শই উদীয়মান সূর্যের দেশ বলে অভিহিত করা হয়।

জাপান

日本国
নিহোন-কোকু বা নিহোন-কোকু
Golden circle subdivided by golden wedges with rounded outer edges and thin black outlines.
সম্রাটের সিলমোহর
জাতীয় সঙ্গীত: 
জাপানের সরকারি সিলমোহর
  • প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জাপান সরকারের সিলমোহর
  • গো-শিচি-নো কিরি (五七桐)
জাপানের অবস্থান
রাজধানী
ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি
টোকিও
সরকারি ভাষানেই
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা
  • আইনু ভাষা
  • ওকিনাওয়া ভাষা
  • পূর্ব জাপানি
  • পশ্চিম জাপানি
  • অন্যান্য বিভিন্ন জাপানি উপভাষাসমূহ
জাতীয় ভাষাজাপানি
নৃগোষ্ঠী
(২০১১0.4em)
  • ৯৮.৫% জাপানি
  • ০.৫% কোরীয়
  • ০.৪% চীনা
  • ০.৬% অন্যান্য
জাতীয়তাসূচক বিশেষণজাপানি
সরকারএককেন্দ্রিক সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
নারুহিতো
ফুমিও কিশিদা
আইন-সভাকোক্কাই
• উচ্চকক্ষ
লোকসভা পারিষদদ
• নিম্নকক্ষ
প্রতিনিধি পরিষদ
প্রতিষ্ঠা
• জাতীয় প্রতিষ্ঠা দিবস
১১ ফেব্রুয়ারি, খ্রিস্টপূর্ব ৬৬০ অব্দ
• মেইজি সংবিধান
২৯ নভেম্বর, ১৮৯০
• বর্তমান সংবিধান
৩ মে, ১৯৪৭
• সান ফ্রান্সিস্কো
শান্তি চুক্তি
২৮ এপ্রিল, ১৯৫২
আয়তন
• মোট
৩,৭৭,৯৪৪ কিমি (১,৪৫,৯২৫ মা) (৬২তম)
• পানি (%)
০.৮
জনসংখ্যা
• ২০১৫ আনুমানিক
১২৬,৯১৯,৬৫৯ (১০ম)
• ২০১০ আদমশুমারি
১২৮,০৫৬,০২৬
• ঘনত্ব
৩৩৭.১/কিমি (৮৭৩.১/বর্গমাইল) (৩৬তম)
জিডিপি (পিপিপি)২০১৫ আনুমানিক
• মোট
৪.৮৪৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪র্থ)
• মাথাপিছু
৩৮,২১৬ মার্কিন ডলার (২৯তম)
জিডিপি (মনোনীত)২০১৫ আনুমানিক
• মোট
৪.২১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩য়)
• মাথাপিছু
৩৩,২২৩ মার্কিন ডলার (২৫তম)
জিনি (২০০৮)37.6
মাধ্যম · ৭৬তম
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৪)বৃদ্ধি 0.890
অতি উচ্চ · ১৭তম
মুদ্রাইয়েন (¥) / এন্ (JPY)
সময় অঞ্চলইউটিসি+৯ (জাপান মান সময়)
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি)
ইউটিসি+৯ (পালিত হয় না)
তারিখ বিন্যাস
গাড়ী চালনার দিকবাম
কলিং কোড+৮১
ইন্টারনেট টিএলডি.jp

জাপান একটি যৌগিক আগ্নেয়গিরীয় দ্বীপমালা। এই দ্বীপমালাটি ৬,৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। জাপানের বৃহত্তম চারটি দ্বীপ হল হোনশু, হোক্কাইদো, ক্যুশুশিকোকু। এই চারটি দ্বীপ জাপানের মোট ভূখণ্ডের ৯৭% এলাকা নিয়ে গঠিত। জাপানের জনসংখ্যা ১২৬ মিলিয়ন। জনসংখ্যার হিসেবে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯.১ মিলিয়ন। এই শহরটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার ২য় বৃহত্তম মূল শহর। টোকিও ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্য নিয়ে গঠিত বৃহত্তর টোকিও অঞ্চলের জনসংখ্যা ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মহানগরীয় অর্থনীতি

পুরাতাত্ত্বিক গবেষণার ফলে জানা গিয়েছে যে উচ্চ প্যালিওলিথিক যুগেও জাপানে জনবসতির অস্তিত্ব ছিল। জাপানের প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীতে রচিত চীনা ইতিহাস গ্রন্থগুলিতে। জাপানের ইতিহাসে অন্যান্য বিভিন্ন অঞ্চলের প্রভাব দেখা যায়। এই দেশের ইতিহাসে প্রথমে চীনা সাম্রাজ্যের প্রভাব পড়েছিল। তারপর একটি বিচ্ছিন্নতার যুগ কাটিয়ে এই দেশের ইতিহাসে পড়ে পশ্চিম ইউরোপের প্রভাব। ১২শ শতাব্দী থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত শোগুন নামের সামরিক সামন্ত-শাসকরা সম্রাট উপাধিতে জাপান শাসন করেছিলেন। ১৭শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাপান এক দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার পর্যায়ে প্রবেশ করে। ১৮৫৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী পাশ্চাত্যের সামনে জাপানকে খুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিলে সেই বিচ্ছিন্নতার যুগের অবসান ঘটে। প্রায় দুই দশক আভ্যন্তরিণ বিবাদ ও বিদ্রোহ চলার পর ১৮৬৮ সালে মেইজি সম্রাট রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হন এবং জাপান সাম্রাজ্য ঘোষিত হয়। এই সাম্রাজ্যে সম্রাট জাতির দিব্য প্রতীকের সম্মান পান। ১৯শ শতাব্দীর শেষভাগে এবং ২০শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাপান প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ, রুশ-জাপান যুদ্ধপ্রথম বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করে। এই ক্রমবর্ধমান সামরিক যুগে জাপান নিজ সাম্রাজ্যের পরিধি বিস্তৃত করে। ১৯৩৭ সালের দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ ১৯৪১ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি বর্ধিত অংশে পরিণত হয়। ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। ১৯৪৭ সালে সংশোধিত সংবিধান গ্রহণের পর জাপান একটি এককেন্দ্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত হয়। এই ব্যবস্থায় সম্রাটের পাশাপাশি কোক্কাই নামে একটি নির্বাচিত আইনসভাও গঠিত হয়।

জাপান জাতিসংঘ, জি-৭, জি৮জি২০ গোষ্ঠীগুলির সদস্য। এই রাষ্ট্রটি একটি মহাশক্তিধর রাষ্ট্র। নামমাত্র মোট আভ্যন্তরিণ উৎপাদন অনুযায়ী জাপান বিশ্বের ৩য়-বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ক্রয়ক্ষমতার সাম্য অনুযায়ী ৪র্থ-বৃহত্তম অর্থনীতি। এছাড়া জাপান বিশ্বের ৫ম-বৃহত্তম রফতানিকারক এবং ৫ম বৃহত্তম আমদানিকারক রাষ্ট্র। সরকারিভাবে জাপান যুদ্ধ ঘোষনার অধিকার বর্জন করলেও এই দেশটি একটি আধুনিক সামরিক বাহিনী রেখেছে। এদেশের সামরিক বাজেট বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম সামরিক বাজেট। অবশ্য জাপানের সামরিক বাহিনীর কাজ হল আত্মরক্ষা ও শান্তিরক্ষা। জাপান একটি উন্নত দেশ। এখানে জীবনযাত্রার মান ও মানব উন্নয়ন সূচক উচ্চ। সারা বিশ্বের মধ্যে এই দেশে গড় আয়ু সর্বাধিক এবং শিশু মৃত্যুর হার তৃতীয় সর্বনিম্ন। দেশীয় তরবার সূচকে জাপানের স্থান প্রথম। বিশ্বশান্তি সূচকে এই রাষ্ট্রের স্থান সর্বোচ্চ।

নাম-ব্যুৎপত্তি

ইংরেজি শব্দ জাপান শব্দটি সম্ভবত এসেছে জাপানি নাম নিহন-এর (日本) আদি মান্ডারিন চীনা বা উ চীনা উচ্চারণ থেকে। জাপানি ভাষায় এই শব্দটির উচ্চারণ নিপ্পন () বা নিহন ()। জাপানি জাতি নিজেদের বলে নিহনজিন (日本人) এবং নিজেদের ভাষাকে বলে নিহঙ্গ (日本語)

মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত জাপানের পোষাকি নাম ছিল দাই নিপ্পন তেইকোকু (大日本帝國) বা মহান জাপান সাম্রাজ্য। বর্তমানে নিপ্পন-কোকু বা নিহন-কোকু (日本国) নামদুটি রাষ্ট্রের পোষাকি নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জাপানের মতো যেসব দেশগুলির পোষাকি নামে কোনো বর্ণনাত্মক অভিধা যুক্ত নেই, সেগুলিকেই কোকু ()(অর্থাৎ, দেশ, জাতি বা রাষ্ট্র) শব্দ দ্বারা অভিহিত করা হয়।

নিচি () অক্ষরটির অর্থ "সূর্য" বা "দিন" এবং হন () অক্ষরটির অর্থ "ভিত্তি" বা "উৎস"। অক্ষরযুগলের অর্থ "সূর্যের উৎস" বা "সূর্যোদয়" (একটি চীনা দৃষ্টিকোণ থেকে, সূর্য জাপান থেকে ওঠে)। এই অক্ষরযুগলের অর্থ থেকেই জাপানের জনপ্রিয় পাশ্চাত্য বর্ণনা "সূর্যোদয়ের দেশ" ধারণাটি এসেছে। "নিহন" শব্দটির আনুষ্ঠানিক ব্যবহার শুরু হওয়ার আগে জাপান ওয়া () বা ওয়াকোকু (倭国) নামে পরিচিত ছিল।

জাপানের ইংরেজি নামটি প্রাচীন বাণিজ্যপথ ধরে পাশ্চাত্যে পৌঁছেছিল। প্রাচীন মান্ডারিন বা সম্ভবত আদি ওয়ু চীনা ভাষায় জাপান শব্দের যে উচ্চারণটি (吳語) মার্কো পোলো নথিভুক্ত করেছিলেন, সেটি হল সিপ্যাঙ্গু (Cipangu)। ওয়ু ভাষার একটি উপভাষা আধুনিক শাংহাইনিজে জাপান নামের অক্ষরগুলির (日本) উচ্চারণ যেপ্পেন টেমপ্লেট:IPA-wuu। প্রাচীন মালয় ভাষায় জাপান শব্দটি হয়েছে জেপ্যাং। এই শব্দটি একটি দক্ষিণ উপকূলীয় চীনা উপভাষা থেকে গৃহীত হয়েছে। উক্ত উপভাষাটি হল সম্ভবত ফুকিয়েনীয় বা নিংপো। ১৬শ শতাব্দীতে মালাক্কায় মালয় শব্দটির সঙ্গে প্রথমে পর্তুগিজ বণিকরা পরিচিত হন। তারাই এই শব্দটি প্রথম ইউরোপে নিয়ে আসেন। ইংরেজি ভাষায় এই শব্দটির একটি পুরনো উল্লেখ পাওয়া যায় ১৫৬৫ সালে লেখা একটি চিঠিতে। সেই চিঠিতে এই শব্দটির বানান ছিল জিয়াপান (Giapan)।

ইতিহাস

প্রাগৈতিহাসিক যুগ ও প্রাচীন যুগ

জাপান 
গোল্ডেন হল ও হোর্যুা-জি-র পাঁচ-তলা প্যাগোডা। এই দুটি বিশ্বের প্রাচীনতম কাঠের তৈরি ভবনগুলির অন্যতম, জাতীয় সম্পদ এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।।

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০,০০০ অব্দের একটি পুরনো প্রস্তরযুগীয় সংস্কৃতি জাপানি দ্বীপমালায় প্রথম মানব জনবসতি গড়ে তুলেছিল বলে জানা গিয়েছে। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ১৪,০০০ অব্দ নাগাদ (জামোন যুগের শুরুতে) মধ্য প্রস্তরযুগ থেকে নব্য প্রস্তরযুগের মধ্যবর্তী সময়ে একটি সেমি-সেড্যানটারি শিকারী-সংগ্রাহক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে সমসাময়িক কালের আইনু জাতি ও ইয়ামাতো জাতির পূর্বপুরুষেরাও ছিলেন। এই মানুষেরা গুহায় বাস করত এবং এদের জীবিকা ছিল মৌলিক কৃষিকাজ। এই যুগে নির্মিত চিত্রিত মাটির পাত্রগুলি বিশ্বের প্রাচীনতম অধুনা-বর্তমান মৃৎশিল্পের কয়েকটি নিদর্শন। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ নাগাদ ইয়ায়োই জাতি জাপানি দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশ করে জোমনদের সঙ্গে মিশে যেতে শুরু করে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দ নাগাদ শুরু হওয়া ইয়ায়োই যুগে ভিজে-চাল উৎপাদন, মৃৎশিল্পের একটি নতুন ধারার বিকাশ, এবং কোরিয়া ও চীনের অনুসরণে ধাতুবিদ্যার চর্চা শুরু হয়।

চীনা বুক অফ হান-এ প্রথম জাপানের লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায়। তিন রাজ্যের নথি অনুযায়ী, খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দীর জাপান দ্বীপমালার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্যটির নাম ছিল ইয়ামাতাই-কোকু। কোরিয়ার বায়েকজে থেজে জাপানে প্রথম বৌদ্ধধর্মের আগমন ঘটেছিল। তবে জাপানি বৌদ্ধধর্মের পরবর্তীকালীন বিকাশ ঘটেছিল প্রধানত চীনা প্রভাবে। প্রথম দিকে জাপানে বৌদ্ধধর্ম বাধাপ্রাপ্ত হলেও, পরে এই ধর্ম জাপানের শাসকশ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে এবং অসুকা যুগে (৫৯২-৭১০ খ্রিষ্টাব্দ) সর্বত্র মান্যতা পায়।

৮ম শতাব্দীর নারা যুগে (৭১০-৭৮৪) জাপানে শক্তিশালী রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। এই সময় রাষ্ট্রশক্তির কেন্দ্র ছিল হেইজো-ক্যো-র রাজসভা (আধুনিক নারা)। নারা পর্যায়ে জাপানি সাহিত্যের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। এই যুগেই বৌদ্ধধর্ম-অনুপ্রাণিত শিল্পকলা ও স্থাপত্যেরও বিকাশ ঘটতে শুরু করেছিল। ৭৩৫-৭৩৭ খ্রিষ্টাব্দের বসন্তরোগ মহামারীতে সম্ভবত জাপানের এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসীর মৃত্যু ঘটে। ৭৮৪ সালে [[সম্রাট কাম্মু নারা থেকে নাগাওকা-ক্যো-তে রাজধানী সরিয়ে আনেন। এরপর ৭৯৪ সালে হেইয়ান-ক্যো-তে (আধুনিক ক্যোটো) রাজধানী অপসারিত হয়।

জাপান 
জাপানে মোঙ্গল অনুপ্রবেশের সময় সামুরাই যোদ্ধারা মোঙ্গলদের সম্মুখীন হচ্ছে। কথিত আছে, কামিকাজে নামে দুটি ঝড় জাপানকে মোঙ্গলদের হাত থেকে রক্ষা করেছিল।

এই সময় হেইয়ান যুগ (৭৯৪-১১৮৫) শুরু হয়। এই যুগেই জাপানের স্বতন্ত্র সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। এই যুগ শিল্পকলা, কবিতা ও গদ্য সাহিত্যের জন্য খ্যাত। মুরাসাকি শিকিবুর দ্য টেল অফ গেনজি ও জাপানের জাতীয় সংগীত কিমিগায়ো-এর কথা এই যুগেই রচিত হয়।

হেইয়ান যুগ থেকেই প্রধানত দুটি প্রধান সম্প্রদায়ের (সাইচোর টেন্ডাই ও কুকাইয়ের শিংগন) মাধ্যমে বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১১শ শতাব্দীর শেষার্ধ্বে পিওর ল্যান্ড বৌদ্ধধর্ম (জোদ-শু, জোদ-শিংশু) খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।

সামন্ত যুগ

জাপানের সামন্ত যুগে যোদ্ধা সামুরাইদের উত্থান ঘটেছিল শাসকশ্রেণি হিসেবে। ১১৮৫ খ্রিস্টাব্দে গেনপাইয়ের যুদ্ধে তাইরা গোষ্ঠীর পরাজয়ের পরে (হেইকে উপাখ্যান নামক মহাকাব্যে যে যুদ্ধের কথা উল্লিখিত হয়েছে) সামুরাই মিনামোতো নো ইয়োরিতোমো শোগুন নিযুক্ত হন এবং কামাকুরায় শাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর শোগুন পদে অন্তর্বর্তীকালীন রাজশক্তি হিসেবে হোজো গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসে। কামাকুরা যুগে (১১৮৫-১৩৩৩) চীন থেকে বৌদ্ধধর্মের জেন শাখা জাপানে পরিচিতি লাভ করে। সামুরাই শ্রেণির মধ্যে এই ধর্মমত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।.১২৭৪ ও ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে কামাকুরা শোগুনতন্ত্র জাপানে মোঙ্গল আক্রমণকে প্রতিহত করেছিল। কিন্তু পরে এই শোগুনতন্ত্রের অবসান ঘটে সম্রাট গো-দাউগোর হাতে। খ্রিস্টাব্দে আশিকাগা তাকাউজির হাতে দাইগো নিজে পরাজিত হন।

জাপান 
সামান্য অপমানিত হলেও সামুরাইরা কোনো সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। জাপানি জনসাধারণ এঁদের খুবই ভয় পান। এদো যুগ, ১৭৯৮

আশিকাগা তাকাউজি ক্যোটোর মুরোমাচিতে শোগুনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সময় থেকে মুরোমাচি যুগ (১৩৩৬-১৫৭৩) শুরু হয়। আশিকাগা শোগুনতন্ত্র আশিকাগা ইয়োশিমিৎসুর যুগে গৌরব অর্জন করে। এই সময় জেন বৌদ্ধধর্ম-ভিত্তিক সংস্কৃতি (মিয়াবি শিল্পকলা) বিকাশ লাভ করে। এরপরই হিগাশিয়ামা সংস্কৃতির বিবর্তন শুরু হয় এবং ১৬শ শতাব্দী পর্যন্ত সেই সংস্কৃতির গৌরবময় যুগ অব্যাহত থাকে। অন্যদিকে পরবর্তীকালের আশিকাগা শোগুনতন্ত্র সামন্ত্রতান্ত্রিক যোদ্ধা-সেনাপতিদের (দাইম্যো) নিয়ন্ত্রণ করতে অসমর্থ হয়। এর ফলে ১৪৬৭ খ্রিস্টাব্দে একটি গৃহযুদ্ধ (ওনিন যুদ্ধ) বেধে যায়। এর যুদ্ধের ফলে শতাব্দী-দীর্ঘ সেনগোকু যুগের ("যুযুধান রাষ্ট্রসমূহ") সূত্রপাত ঘটে।

১৬শ শতাব্দীতে পর্তুগাল থেকে বণিক ও জেসুইট মিশনারিরা প্রথম জাপানে এসে উপস্থিত হয়। এরাই প্রথম জাপানের সঙ্গে পাশ্চাত্যের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান গড়ে তোলে। এর ফলে ওদা নোবুনাগা ইউরোপীয় প্রযুক্তি ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পান এবং তার সাহায্যে তিনি অন্যান্য অনেক দাইম্যো জয় করেন। এই শতাব্দীর শেষভাগে ক্ষমতার যে পুনর্বিন্যাস ঘটে তা আজুচি-মোমোইয়ামা যুগ (১৫৭৩-১৬০৩) নামে পরিচিত। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে ওদা নোবুনাগা নিহত হওয়ার পর তাঁর উত্তরসূরি তোয়োতোমি হিদেয়োশি ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং ১৫৯২ ও ১৫৯৭ খ্রিস্টাব্দে দুবার কোরিয়া আক্রমণ করেও উক্ত দেশটি জয় করতে ব্যর্থ হন।

জাপান 
জাপানের পুনঃখোদিত মানচিত্র

তোকুগাওয়া ইয়েয়াসু হিদেয়োশির পুত্রের অন্তর্বর্তীকালীন রাজশক্তি হিসেবে দেশ শাসন করেন। তিনি তাঁর পদ ব্যবহার করে রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন যোগাড় করেন। যুদ্ধ ঘোষিত হলে তিনি ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে সেকিগাহারার যুদ্ধে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীগুলিকে পরাজিত করেন। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে ইয়েয়াসু শোগুন নির্বাচিত হন এবং এদোতে (বর্তমান টোকিও) তোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্র যে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হল বুকে শোহাত্তো। এটি ছিল স্বশাসিত দাইম্যো নিয়ন্ত্রণের একটি বিধিব্যবস্থা। এবং ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে বিচ্ছিন্নতাবাদী সাকোকু ("বদ্ধ দেশ") নীতিও এই সময় গৃহীত হয়। এই নীতির ফলে আড়াই শতাব্দীকাল দেশ রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিল। এই ঐক্যবদ্ধ যুগের নাম ছিল এদো যুগ (১৬০৩-১৮৬৮)। রানগাকু নামে পরিচিত পাশ্চাত্য বিজ্ঞান চর্চা নাগাসাকির দেজিমার ডাচ একালাগুলির সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে চলতে থাকে। এছাড়া এদো যুগে কোকুগাকু ("জাতীয় বিদ্যা") নামে জাপানি-কর্তৃক জাপানচর্চার সূত্রপাত ঘটেছিল।

আধুনিক যুগ

১৮৫৪ সালের ৩১ মার্চ কমোডোর ম্যাথিউ পেরি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর "ব্ল্যাক শিপস" কানাগাওয়া সম্মেলনে জাপানকে বহির্বিশ্বের কাছে দ্বার উন্মুক্ত করতে বাধ্য করে। বাকুমাৎসু যুগের পাশ্চাত্য দেশগুলির সঙ্গে পরবর্তী অনুরূপ চুক্তিগুলির ফলে দেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়। শোগুনের পদত্যাগের ফলে বোশিন যুদ্ধ শুরু হয় এবং সম্রাটের অধীনে নামমাত্র ঐক্যবদ্ধ (মেইজি পুনর্গঠন) কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র গঠিত হয়।

জাপান 
সম্রাট মেইজি (১৮৬৮–১৯১২)। তোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের অবসানের পর এঁর নামেই সম্রাটের শাসন পুনঃস্থাপিত হয়।

পাশ্চাত্য রাজনৈতিক, বিচারবিভাগীয় ও সামরিক ধারণাগুলিকে গ্রহণ করে ক্যাবিনেট প্রিভি কাউন্সিল গঠন করে, মেইজি সংবিধান প্রবর্তিত হয় এবং সাম্রাজ্যের ডায়েট সংগঠিত হয়। মেইজি পুনঃস্থাপনা জাপান সাম্রাজ্যকে একটি শিল্পায়িত বিশ্বশক্তিতে পরিণত করে। অঞ্চল ও প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে এর পর থেকে জাপান সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ (১৮৯৪-১৮৯৫) ও রাশিয়া-জাপান যুদ্ধে (১৯০৪-১৯০৫) জয়লাভের পর জাপান তাইওয়ান, কোরিয়া ও শাখালিনের দক্ষিণাঞ্চল নিজ অধিকারভুক্ত করে। ১৮৭৩ সালে জাপানের জনসংখ্যা ছিল ৩৫ মিলিয়ন। এই জনসংখ্যা ১৯৩৫ সালে বেড়ে হয় ৭০ মিলিয়ন।

জাপান 
১৮৯৪-১৮৯৫ সালের চীন-জাপান যুদ্ধের পর চীনা সেনা-আধিকারিকেরা জাপানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করছেন।

২০শ শতাব্দীর প্রথম দিকটি ছিল সংক্ষিপ্ত তাইশো গণতন্ত্রের যুগ। এই সময় জাপানের ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণবাদ ও সমরমনস্কতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বিজয়ী মিত্রশক্তি হিসেবে জাপান নিজের প্রভাব ও আঞ্চলিক কর্তৃত্ব বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। ১৯৩১ সালে জাপান সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করে মাঞ্চুরিয়া দখল করে। জাপান-কর্তৃক মাঞ্চুরিয়া অধিকার আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দিত হলে দুই বছর পর জাপান লিগ অফ নেশনস থেকে পদত্যাগ করে। ১৯৩৬ সালে জাপান নাৎসি জার্মানির সঙ্গে অ্যান্টি-কমিনটার্ন চুক্তি সাক্ষরিত করে। ১৯৪০ সালে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির ফলে জাপান অক্ষশক্তির অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪১ সালে জাপান সোভিয়েত-জাপান নিরপেক্ষতা চুক্তি সাক্ষর করে।

জাপান 
১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর জাপানি আধিকারিকেরা মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করছে। এই ঘটনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়।

১৯৩৭ সালে জাপান সাম্রাজ্য চীনের অন্যান্য অঞ্চলে আক্রমণ চালায়। এই ঘটনা চীন-জাপান যুদ্ধ (১৯৩৭-১৯৪৫) নামে পরিচিত। জাপান সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনী সহজেই রাজধানী নানজিং দখল করে নেয় এবং নানকিং গণহত্যা চালায়। এরপর ১৯৪০ সালে জাপান সাম্রাজ্য ফরাসি ইন্দোচীন আক্রমণ করে। এই ঘটনার পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের উপর একটি তেল নিষেধাজ্ঞা স্থাপন করে। ১৯৪১ সালের ৭ ও ৮ ডিসেম্বর জাপানি বাহিনী অতর্কিতে পার্ল হারবার আক্রমণ করে, মালয়, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে ব্রিটিশ বাহিনীকে আক্রমণ করে এবং যুদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য প্রশান্ত মহাসাগরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাঙ্গনে প্রবেশ করে। ১৯৪৫ সালে মাঞ্চুরিয়ায় সোভিয়েত আক্রমণ ও হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর ১৫ অগস্ট জাপান নিঃশর্ত আত্মসমর্পণে রাজি হয়। এই যুদ্ধের ফলে জাপান ও বৃহত্তর পূর্ব এশীয় ভূ-সম্পদ ক্ষেত্রের লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং জাপানের অধিকাংশ শিল্প ও পরিকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। মিত্রশক্তি (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে) লক্ষ লক্ষ জাপানি বংশোদ্ভুতকে উপনিবেশ ও এশিয়ার বিভিন্ন সামরিক ক্যাম্প থেকে স্বদেশে পাঠিয়ে দেয়। এর ফলে জাপান সাম্রাজ্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং জাপানি উপনিবেশগুলি স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৪৬ সালের ৩ মে কয়েক জন যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জাপানি সেনা আধিকারিকের বিচারের জন্য মিত্রশক্তি দূরপ্রাচ্য আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালের আয়োজন করে। ব্যাক্টেরিওলজিক্যাল রিসার্চ ইউনিট ও সম্রাটের পরিবার যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত হলেও, মিত্রশক্তির সুপ্রিম কম্যান্ডার কর্তৃক তাঁরা বিচার থেকে অব্যাহতি পান।

১৯৪৭ সালে জাপান একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। এই সংবিধানে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হয়। ১৯৫২সালের সান ফ্রান্সিসকোর চুক্তি বলে জাপানে মিত্রশক্তির অধিকার সমাপ্ত হয়। ১৯৫৬ সালে জাপান রাষ্ট্রসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এরপর জাপানে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতে থাকে। জাপানে বিশ্বের দ্বিতীয়-বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। ১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাগে জাপান কিছুকালের জন্য অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু ২১শ শতাব্দীর প্রথম ভাগেই আবার জাপানে স্বাভাবিক আর্থিক বিকাশ ঘটতে শুরু করে। ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানে নথিবদ্ধ ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঘটনাটি ঘটে। এর ফলে ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনা পারমাণবিক শক্তির ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ দুর্ঘটনাগুলির অন্যতম।

সরকার ও রাজনীতি

জাপান  জাপান 
নারুহিতো
সম্রাট (২০১৯ থেকে)
শিনজো আবে
প্রধানমন্ত্রী (২০১২ থেকে ২০২০)

জাপান একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। এখানে সম্রাটের ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সংবিধান তাকে "রাষ্ট্র ও জনগণের ঐক্যের প্রতীক" হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রকৃত ক্ষমতা প্রধানত প্রধানমন্ত্রী ও ডায়েটের অন্যান্য নির্বাচিত সদস্যদের হাতে ন্যস্ত থাকে। দেশের সার্বভৌমত্ব জাপানি জাতির হাতে ন্যস্ত। জাপানের বর্তমান সম্রাট হলেন নারুহিতো। যুবরাজ ফুমিহিতো তার পরে চ্র্যিসানথেমাম সিংহাসনের দাবিদার।

জাপানের আইনবিভাগ হল ন্যাশনাল ডায়েট বা জাতীয় আইনসভা (জাপান) । এটি টোকিওর চিয়োদায় অবস্থিত। ডায়েট একটি দ্বিকক্ষীয় আইনসভা। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস কক্ষটি ৪৮০ সদস্যবিশিষ্ট। এই কক্ষের সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। এই কক্ষের মেয়াদ চার বছর বা ভেঙে না দেওয়া পর্যন্ত। অপর কক্ষ হাউস অফ কাউন্সিলরসের সদস্য সংখ্যা ২৪২। এই কক্ষের সদস্যরা জনগণের ভোটে ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন। দেশের ২০ বছর বা তার বেশি বয়স্ক নাগরিকদের সার্বজনীন ভোটাধিকার স্বীকৃত। সকল নির্বাচন গোপন ব্যালটে হয়। সামাজিক উদারনৈতিক ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ জাপান ও রক্ষণশীল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ডায়েটের প্রধান দুই দল। ১৯৫৫ সাল থেকে এলডিপি নিরবচ্ছিন্ন নির্বাচনী সাফল্য অর্জন করে আসছে (১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ১১ মাস এবং ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল ব্যতিরেকে)। নিম্নকক্ষে এই দলের সদস্য সংখ্যা ২৯৪ এবং উচ্চ কক্ষে এর সদস্য সংখ্যা ৮৩।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। সদস্যদের মধ্যে থেকে ডায়েট কর্তৃক মনোনীত হওয়ার পর তাকে সম্রাট প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীই ক্যাবিনেটের প্রধান। তিনি রাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিযুক্ত বা পদচ্যুত করতে পারেন। ২০১২ সালের সাধারণ নির্বাচনে এলডিপির বিপুল জয়ের পর ওই বছর ২৬ ডিসেম্বর ইয়োশিহিকো নোদাকে অপসৃত করে শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি দেশের ৬ষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ছয় বছরের জন্য শপথ নেন। ২০২০ সালে শারীরিক অসুস্থতার জন্য শিনজো আবে পদত্যাগ করলে ইয়োশিহিদে সুগা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে সম্রাট নিযুক্ত করলেও দেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, যাঁকে ডায়েট মনোনীত করবে, সম্রাট কেবল তাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে পারবেন।

অতীতে চীনা আইন দ্বারা প্রভাবিত হলেও এদো যুগে কুজিকাতা ওসাদামেগাকি প্রভৃতি গ্রন্থের মাধ্যমে জাপানি আইন ব্যবস্থা স্বতন্ত্রভাবে বিকশিত হয়ে ওঠে। যদিও ১৯শ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে জাপানের বিচার ব্যবস্থা ইউরোপের (প্রধানত জার্মানির) ফৌজদারি আইনের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। উদাহরণ স্বরূপ, ১৮৯৬ সালে জাপান সরকার জার্মান বুরগারলিকস গেসেজবাচ-এর ভিত্তিতে ফৌজদারি বিধি প্রবর্তন করেন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সংস্কার পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। সাংবিধানিক আইনের উৎস আইনসভা। এই আইনে সম্রাটের রাবার স্ট্যাম্প থাকে। সাংবিধানিক বিধি অনুসারে, ডায়েটে পাস হওয়া আইনকে সম্রাটের অনুমোদন পেতেই হবে। তবে পাস হওয়া আইনের বিরোধিতা করার ক্ষমতা সম্রাটকে দেওয়া হয়নি। জাপানের বিচার ব্যবস্থার চারটি মৌলিক স্তরে বিভক্ত: সুপ্রিম কোর্ট ও তিন স্তরের নিম্নবর্তী আদালত। জাপানের সাংবিধানিক আইনের মূল অংশটিকে বলা হয় সিক্স কোডস।

বৈদেশিক সম্পর্ক ও সামরিক বাহিনী

জাপান 
নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারক জেডিএস কঙ্গো (ডিডিজি-১৭৩) একটি স্যান্ডার্ড মিশাইল ৩ অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করছে, ২০০৭।

জাপান জি-৮, অ্যাপেক, ও আসেয়ান প্লাস থ্রির সদস্য। জাপান পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনেও অংশগ্রহণ করে থাকে। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের সঙ্গে জাপান নিরাপত্তা চুক্তি সাক্ষর করেছে। জাপান অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্সের পঞ্চম বৃহত্তম দাতা। ২০১৪ সালে জাপান এতে ৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করেছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপানের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-জাপান নিরাপত্তা জোট দেশের বিদেশনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ১৯৫৬ সাল থেকে রাষ্ট্রসংঘের সদস্য হিসেবে জাপান মোট ২০ বছরের মেয়াদে রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য। জি-৪ গোষ্ঠীর সদস্য জাপান এই পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের দাবিদার।

প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে বিশেষ বিশেষ অঞ্চলের অধিকার নিয়ে জাপানের বিবাদ রয়েছে। দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের দখল নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে, লিয়ানকোর্ট রকসের দখল নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের দখল নিয়ে চীনতাইওয়ানের সঙ্গে এবং ওকিনোতোরিশিমার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের দখল নিয়ে চীনের সঙ্গে জাপানের বিবাদ রয়েছে। এছাড়া জাপানকে উত্তর কোরিয়ার জাপানি নাগরিক অপহরণ ও পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণস্ত্র কর্মসূচির সম্মুখীন হতে হয় (সিক্স-পার্টি টকস দেখুন)।

জাপানের সামরিক বাজেট বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম। ইরাক যুদ্ধের সময় জাপান অ-প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনী পাঠিয়েছিল। কিন্তু পরে তা প্রত্যাহারও করে নেয়। জাপানের সামুদ্রিক আত্মরক্ষী বাহিনী (জেএমএসডিএফ) হল আরআইএমপিএসি মেরিটাইম এক্সারসাইজে নিয়মিত অংশগ্রহণকারী একটি বাহিনী।

জাপানের সংবিধানের ৯ নং ধারা জাপানের সামরিক বাহিনীকে (জাপান আত্মরক্ষী বাহিনী) যুদ্ধ ঘোষণা বা আন্তর্জাতিক বিবাদে সামরিক বাহিনীর ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। জাপান আত্মরক্ষী বাহিনী এমন একটি বাহিনী যা জাপানের বাইরে কখনও গুলি চালায়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই বাহিনী পরিচালনা করে। জাপান ভূমি আত্মরক্ষী বাহিনী (জেজিএসডিএফ), জাপান সামুদ্রিক আত্মরক্ষী বাহিনী (জেএমএসডিএফ) ও জাপান বায়ু আত্মরক্ষী বাহিনী (জেএএসডিএফ) নিয়ে এই সামরিক বাহিনী গঠিত। সাম্প্রতিককালে এই বাহিনীকে শান্তিরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ইরাকে বাহিনী প্রেরণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের প্রথম বিদেশে বাহিনী পাঠানোর ঘটনা। জাপান বিজনেস ফেডারেশন সরকারের কাছে অস্ত্র রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে, যাতে জাপান জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটারের মতো বহুজাতিক প্রকল্পগুলিতে কাজ করতে পারে।

২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শিনযো আবে বলেছেন, জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে চলতে থাকা নেতিবাচক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে চায় এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আরও দায়িত্ব গ্রহণ করতে চায়। তিনি বলেছেন যে, জাপান প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করতে চায়। তিনি প্রতিবেশী দেশগুলির দিকে জাপানের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

দেশটির সঙ্গে অন্যান্য দেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই দেশের পাসপোর্টে ১২২টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়, যা পাসপোর্ট শক্তি সূচকে ৪র্থ স্থানে রয়েছে।

প্রশাসনিক বিভাগসমূহ

জাপান ৪৭টি প্রিফেকচার নিয়ে গঠিত। প্রত্যেকটি প্রিফেকচারের দায়িত্বে রয়েছেন একজন নির্বাচিত গভর্নর, আইনসভা ও প্রশাসনিক আমলাতন্ত্র। প্রিফেকচারগুলি আবার মহানগর, শহর ও গ্রামে বিভক্ত। জাপানে বর্তমানে প্রশাসনিক সংযুক্তি ও পুনর্গঠন চলছে। এর মাধ্যমে অনেক মহানগর, শহর ও গ্রাম পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এই সংযুক্তির ফলে উপ-প্রিফেকচার প্রশাসনিক অঞ্চলগুলির সংখ্যা কমবে এবং সেইসঙ্গে প্রশাসনিক খরচও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।

টেমপ্লেট:জাপানের বিভিন্ন অঞ্চল ও প্রশাসনিক বিভাগের নামাঙ্কিত মানচিত্র

ভূগোল

জাপান 
জাপানি দ্বীপমালার টোপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র।

পূর্ব এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল বরাবর জাপানের মোট ৬,৮৫২টি দ্বীপ আছে। অধিকারভুক্ত দ্বীপগুলি সহ এই দেশটি ২৪° ও ৪৬° উত্তর অক্ষাংশ এবং ২২° ও ১৪৬° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তর থেকে দক্ষিণে জাপানের প্রধান দ্বীপগুলি হল হোক্কাইডো, হোনশু, শিকোকুক্যুশু। ওকিনাওয়া সহ র্যু ক্যু দ্বীপপুঞ্জ হল ক্যুশুর দক্ষিণে একটি দ্বীপমালা। এই সব দ্বীপগুলিকে একসঙ্গে জাপান দ্বীপমালা বলা হয়ে থাকে।

জাপান ভূখণ্ডের ৭৩ শতাংশই বনভূমি, পার্বত্য অঞ্চল এবং কৃষি, শিল্প বা গৃহনির্মাণের অনুপযোগী। এই কারণে জনবসতি অঞ্চলগুলি, যেগুলি মূলত উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত, সেগুলি অত্যন্ত ঘন বসতিপূর্ণ। জাপান বিশ্বের সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ দেশগুলির অন্যতম।

জাপানের দ্বীপগুলি প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলার আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে অবস্থিত। দক্ষিণে মহাদেশীয় আমুরিয়ান পাত ও ওকিনাওয়া পাতের তলায় ফিলিপিন সাগর পাতের অবনমন এবং উত্তরে ওখোটস্ক পাতের তলায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের অবনমনের ফলে কয়েক কোটি বছর ধরে মধ্য-সিলুরিয়ান থেকে প্লেইস্টোসিন যুগে সংঘটিত একটি প্রকাণ্ড মহাসাগরীয় চলন এর কারণ। জাপান প্রকৃতপক্ষে ইউরেশীয় মহাদেশের পূর্ব উপকূলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। নিমজ্জমান পাতগুলি জাপানকে পূর্ব দিকে টেনে আনে। এর ফলে ১৫ মিলিয়ন বছর আগে জাপান সাগরের উদ্ভব ঘটে।

জাপানে ১০৮টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে। ২০শ শতাব্দীতে আরও কয়েকটি নতুন আগ্নেয়গিরির উদ্ভব হয়। এর মধ্যে হোক্কাইডোয় শোওয়া-শিনজান ও প্রশান্ত মহাসাগরের বেয়ননাইস রকসের কাছে ম্যোজিন-শো উল্লেখযোগ্য। এই দেশে প্রতি শতাব্দীতেই বিধ্বংসী ভূমিকম্প এবং তার ফলে সুনামি ঘটে থাকে। ১৯২৩ সালের টোকিয়োর ভূমিকম্পে ১৪০,০০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। সাম্প্রতিক কালের ভূমিকম্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৯৫ সালের গ্রেট হানশিন ভূমিকম্প ও ২০১১ সালের ১১ মার্চ ৯.০ মাত্রার তোওহোকু ভূমিকম্প। শেষোক্ত ভূমিকম্পটির ফলে একটি প্রকাণ্ড সুনামি জাপানে আছড়ে পড়ে।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলায় অবস্থিত হওয়ার দরুন জাপানে প্রায়শই ভূমিকম্প ও সুনামির ঘটনা ঘটে। উন্নত বিশ্বের মধ্যে জাপানই সর্বোচ্চ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিপদসঙ্কুল দেশ।

জলবায়ু

ইয়োশিনো পর্বতের চেরি ব্লসম অনেক নাটক ও ওয়াকা কবিতার বিষয়বস্তু।
শরৎকালের ম্যাপল পাতা (মোমিজি), কোয়া পর্বতের কনগোবু-জি, একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।

জাপানের জলবায়ু প্রধানত নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। তবে উত্তর থেকে দক্ষিণে জলবায়ুর মধ্যে বিরাট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। জাপানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যগুলি ছয়টি প্রধান জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যে বিভাজিত হয়েছে। এগুলি হল: হোক্কাইডো, জাপান সাগর, কেন্দ্রীয় উচ্চভূমি, সেতো অন্তর্দেশীয় সাগর, প্রশান্ত মহাসাগর ও র্যু ক্যু দ্বীপপুঞ্জ। সর্ব উত্তরে অবস্থিত অঞ্চল হোক্কাইডোতে আর্দ্র মহাদেশীয় জলবায়ু দেখা যায়। এখানে শীতকাল দীর্ঘ ও শীতল এবং গ্রীষ্মকাল খুব উষ্ণ থেকে শীতল। এখানে ভারি বৃষ্টিপাত দেখা যায় না। তবে শীতকালে দ্বীপগুলি শীতকালে গভীর তুষারের চাদরে আচ্ছাদিত হয়ে যায়।

জাপান সাগর অঞ্চলটি হোনশুর পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। এখানে উত্তরপশ্চিম শীতকালীন বায়ুর প্রভাবে ভারি তুষারপাত ঘটে। গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার তুলনায় শীতলতর থাকে। যদিও কখনও কখনও ফন বায়ুর প্রভাবে এই অঞ্চলটি অত্যধিক উষ্ণ হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় উচ্চভূমি অঞ্চলে অন্তর্দেশীয় আর্দ্র মহাদেশীয় জলবায়ু লক্ষিত হয়। এখানে গ্রীষ্মে ও শীতে এবং দিনে ও রাতে তাপমাত্রার বিরাট পার্থক্য দেখা যায়। এই অঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাত হয়। যদিও শীতকালে সাধারণত তুষারপাত ঘটে। চুউগোকুশিকোকু অঞ্চলের পার্বত্য এলাকা সেতো অন্তর্দেশীয় সাগর অঞ্চলকে মৌসুমি বায়ুর হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে এই অঞ্চলে সারা বছরই আবহাওয়া মনোরম থাকে।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল অঞ্চলে আর্দ্র উপক্রান্তীয় জলবায়ু দেখা যায়। এখানে শীতকাল তীব্র নয়। মাঝে মাঝে এখানে তুষারপাত হয়। অন্যদিকে দক্ষিণপূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকাল উষ্ণ ও আর্দ্র। র্যু ক্যু দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু উপক্রান্তীয় প্রকৃতির। এখানে শীতকাল উষ্ণ এবং গ্রীষ্মকাল তীব্র উষ্ণ। এই অঞ্চলে প্রধানত বর্ষাকালে অত্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত হয়।

জাপানের গড় শীতকালীন তাপমাত্রা ৫.১ °সে (৪১.২ °ফা) এবং গড় গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা ২৫.২ °সে (৭৭.৪ °ফা)। জাপানের সর্বকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা—৪০.৯ °সে (১০৫.৬ °ফা)—নথিভুক্ত হয়েছিল ২০০৭ সালের ১৬ অগস্ট। ওকিনাওয়ায় প্রধান বর্ষা ঋতু শুরু হয় মে মাসের গোড়ার দিকে। বৃষ্টি রেখা ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরতে সরতে জুলাই মাসের শেষ দিকে হোক্কাইডোয় এসে উপস্থিত হয়। হোনশুর অধিকাংশ অঞ্চলে বর্ষাকাল শুরু হয় জুন মাসের মাঝামাঝি সময় এবং স্থায়ী হয় ছয় সপ্তাহের জন্য। গ্রীষ্মকালের শেষ দিকে এবং শরৎকালের গোড়ার দিকে টাইফুন ঝড় ভারি প্রায়শই ভারি বৃষ্টিপাত ঘটায়।

জৈববৈচিত্র্য

জাপান 
জাপানি ম্যাকাক, জিগোকুদানি উষ্ণ প্রস্রবন। শীতকালে এরা উষ্ণ প্রস্রবনে আসে।

জাপানে নয়টি বনাঞ্চলীয় পরিবেশ অঞ্চল রয়েছে। এগুলিতে দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু ও ভূগোল প্রতিফলিত হয়। র্যু ক্যু ও বোনিন দ্বীপপুঞ্জে দেখা যায় ক্রান্তীয় আর্দ্র দীর্ঘপত্রী বন। প্রধান দ্বীপপুঞ্জের মনোরম জলবায়ু অঞ্চলে দেখা যায় নাতিশীতোষ্ণ দীর্ঘপত্রী ও মিশ্র বন। উত্তরের দ্বীপপুঞ্জগুলিতে শীতল অঞ্চলগুলিতে দেখা যায় নাতিশীতোষ্ণ সরলবর্গীয় বন। জাপানে বন্যপ্রাণীর ৯০,০০০ প্রজাতি দেখা যায়। এগুলির মধ্যে বাদামি ভাল্লুক, জাপানি ম্যাকাক, জাপানি র্যােককুন কুকুর ও জাপানি জায়েন্ট স্যালাম্যান্ডার উল্লেখযোগ্য। জাপানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীগুলিকে রক্ষা করার জন্য জাপানে অনেকগুলি জাতীয় উদ্যান স্থাপিত হয়েছে। সেই সঙ্গে এই দেশে ৩৭টি রামসর জলাভূমিও রয়েছে। চারটি স্থান এগুলির অসাধারণ প্রাকৃতিক মূল্যের জন্য ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকাভুক্ত হয়েছে।

পরিবেশ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির যুগে জাপানে সরকার ও শিল্প সংস্থাগুলি পরিবেশ নীতিগুলিকে অবহেলা করেছিল। এর ফলে ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে সেদেশে পরিবেশ দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এর সমস্যার সমাধান কল্পে ১৯৭০ সালে সরকার কয়েকটি পরিবেশ রক্ষা আইন পাস করে। ১৯৭৩ সালের তেল সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে জাপানে শক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহারে উৎসাহ দান শুরু হয়। উল্লেখ্য, এই দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব রয়েছে। জাপানের বর্তমান পরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়গুলি হল শহরাঞ্চলের বায়ুদূষণ (এনওএক্স, সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার ও টক্সিক্স), বর্জ্য ব্যবস্থাপন, জল ইউট্রোফিকেশন, প্রকৃতি সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, রাসায়নিক ব্যবস্থাপন ও সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

২০১৫ সালের জুন মাসের হিসেব অনুসারে, জাপানে চল্লিশটিরও বেশি কয়লা-চালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিকল্পিত অথবা নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। বেসরকারি সংস্থা ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক "জলবায়ু-সংক্রান্ত কাজে সর্বাধিক পদক্ষেপ গ্রহণের" জন্য জাপানকে "ফসিল অফ দ্য ডে" পুরস্কার দিয়েছে।

একটি জাতির পরিবেশ-রক্ষার কাজে দায়বদ্ধতা পরিমাপকারী এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্সের ২০১৪ সালের প্রতিবেদনে জাপানের স্থান ২৬তম। ক্যোটো প্রোটোকলে সাক্ষরকারী জাপান উক্ত প্রোটোকল সৃষ্টিকারী ১৯৯৭ সালের সম্মেলনের আয়োজক দেশ ছিল। বর্তমানে জাপান কার্বন ডাই-অক্সাইড ক্ষরণ কমানোর কাজ করছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে অন্যান্য পদক্ষেপও গ্রহণ করছে।

অর্থনীতি

জাপান 
টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ, এশিয়ার বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ।

অর্থনৈতিক ইতিহাস

আধুনিক জাপানের অর্থনৈতিক বিকাশ শুরু হয়েছিল এদো যুগে। এদো যুগের অধুনা বিদ্যলাম শিল্প উপাদানগুলির মধ্যে সড়ক ও জলপথ এবং ফিউচার্স কনট্র্যাক্টস, ব্যাংকিং ও ওসাকা রাইস ব্রোকারসের বিমাগুলির মতো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি উল্লেখযোগ্য। ১৮৬৮ সাল থেকে মেইজি যুগে জাপানের অর্থনীতি প্রসার লাভ করে। এই সময় জাপান বাজার অর্থনীতিকে গ্রহণ করেছিল। আজকের অনেক সংস্থা সেই যুগে স্থাপিত হয়েছিল। সেই সময় থেকেই জাপান এশিয়ার সর্বাধিক সর্মৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করে। ১৯৬০ থেকে ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত জাপানের সার্বিক অর্থনৈতিক বিকাশকে বলা হয় জাপানের যুদ্ধোত্তর অর্থনৈতিক বিস্ময়। এই বৃদ্ধির হার ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে ছিল ৭.৫ এবং ১৯৮০-এর দশক ও ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে ছিল ৩.২।

১৯৯০-এর দশকে জাপানিজ অ্যাসেট প্রাইস বাবল ও শেয়ার বাজার ও রিয়েল এস্টেট বাজার থেকে স্পেকুলেটিক এক্সেস আরোপ করার সরকারি নীতি ফলস্রুতিতে যে "লস্ট ডিকেডে"র ঘটনা ঘটে, তার ফলে আর্থিক বৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। বৃদ্ধির হার বাড়ানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ২০০০ সালের বিশ্বজনীন মন্দার প্রেক্ষিতে তা আরও হ্রাস পায়। ২০০৫ সালের পর অর্থনৈতিক বৃদ্ধি আবার শুরু হয়। সেই বছরের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ২.৮%, যা সেই বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ের বৃদ্ধির হারকে ছাপিয়ে যায়।

২০১২ সালের হিসেব অনুসারে, নামমাত্র জিডিপি অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর জাপানই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জাতীয় অর্থনীতি। এবং ক্রয়ক্ষমতা সাম্যের হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের পর চতুর্থ বৃহত্তম জাতীয় অর্থনীতি। ২০১৩ সালের হিসেব অনুসারে, জাপানের সরকারি ঋণের পরিমাণ দেশের বার্ষিক মোট আভ্যন্তরিণ উৎপাদনের ২০০ শতাংশেরও বেশি বলে অনুমান করা হয়েছে, যা বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে বৃহত্তম। ২০১১ সালে মুডি’জ রেটিং জাপানের দীর্ঘমেয়াদি সার্বভৌম ঋণ রেটিং এক নচকে এএ৩ থেকে কমিয়ে এএ২ করেছে দেশের ঘাটতি ও ধার করার মাত্রা অনুসারে। ২০০৯ সালে বিশ্বজনীন মন্দা এবং ২০১১ সালের মার্চে ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে যে বিশাল বাজেট ঘাটতি ও সরকারি ঋণ বৃদ্ধি পায় তা রেটিং-এর হারকে কমিয়ে দেয়।

রপ্তানি

জাপান 
টোকিওয় উৎপাদিত একটি প্লাগ-ইন সংকর যান। টোকিও বিশ্বের বৃহত্তম গাড়িবাজারগুলির অন্যতম। জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি উৎপাদক রাষ্ট্র।

জাপানের শিল্পক্ষমতা বৃহৎ। এই দেশ বিশ্বের বৃহত্তম ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অগ্রণী মোটরগাড়ি, ইলেকট্রনিকস, যন্ত্রাংশ, ইস্পাত ও অলৌহঘটিত ধাতু, জাহাক, রাসায়নিক দ্রব্য, বস্ত্র, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প কেন্দ্রগুলির অন্যতম। জাপানে কৃষি ব্যবসা দেশের জমির ১৩% ব্যবহার করে। এদেশের মৎস্যচাষ সারা বিশ্বের মৎস্যচাষের প্রায় ১৫শ, যা চীনের পরে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী। ২০১০ সালের হিসেব অনুসারে, জাপানে শ্রমিক সংখ্যা ৬৫.৯ মিলিয়ন। জাপানে বেকারত্বের হার বেশ কম – প্রায় ৪%। ২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, জাপানে প্রায় ২০ মিলিয়ন লোক (জনসংখ্যার প্রায় ১৭%) দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। শহরাঞ্চলে স্থানাভাব জাপানে গৃহনির্মাণ শিল্পে প্রভাব ফেলেছে।

২০০৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, জাপানের মাথাপিছু রফতানির আয় ৪,২১০ মার্কিন ডলার। ২০১২ সালের হিসেব অনুসারে, জাপানের রফতানি বাজারগুলি হল চীন (১৮.১%), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৭.৮%), দক্ষিণ কোরিয়া (৭.৭%), থাইল্যান্ড (৫.৫%) ও হংকং (৫.১%)। জাপান প্রধানত পরিবহন যন্ত্রাংশ, মোটরগাড়ি, লৌহ ও ইস্পাত সামগ্রী, সেমিকনডাক্টর ও গাড়ি যন্ত্রাংশ রফতানি করে। ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী, জাপানের প্রধান আমদানি বাজার হল চীন (২১.৩%), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৮.৮%), অস্ট্রেলিয়া (৬.৪%), সৌদি আরব (৬.২%), সংযুক্ত আরব আমিরাত (৫%), দক্ষিণ কোরিয়া (৪.৬%) ও কাতার (৪%)।

আমদানি

জাপানের প্রধান আমদানি দ্রব্যগুলি হল যন্ত্রপাতি, ফসিল জ্বালানি, খাদ্যদ্রব্য (প্রধানত গোমাংস), রাসায়নিক দ্রব্য, বস্ত্র ও জাপানের শিল্পগুলির কাঁচামাল। বাজার শেয়ার পরিমাপ অনুযায়ী, ওইসিডি দেশগুলির মধ্যে জাপানের আভ্যন্তরিণ বাজারই সর্বাপেক্ষা কম উন্মুক্ত। জুনিচিরো কোইজুমির প্রশাসন কিছু প্রতিযোগিতামুখী সংস্কার সাধন করেছিল এবং সেই সময় জাপানে বিদেশি বিনিয়োগ শুরু হয়েছিল।

২০১৪ ইস অফ ডুইং বিজনেস ইনডেক্স অনুসারে, ১৮৯টি দেশের মধ্যে জাপানের স্থান ২৭তম। এই দেশ উন্নত বিশ্বের ক্ষুদ্রতম আয়কর দাতা দেশগুলির একটি। জাপানের ধনতন্ত্রের অনেকগুলি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে: কেইরেৎসু সংস্থাগুলি প্রভাবশালী, জাপানের কার্য পরিবেশে স্থায়ী নিয়োগ ও অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক কর্মজীবনের প্রাধান্য গুরুত্ব পায়। জাপানি কোম্পানিগুলি "টোয়োটা ওয়ে" নামে পরিচিত ব্যবস্থাপন পদ্ধতির জন্য পরিচিত। এখানে শেয়ারহোল্ডার কার্যকারিতা খুব কমই দেখা যায়।

জাপানের কয়েকটি বড়ো সংস্থা হল টয়োটা, নিন্টেন্ডো, এনটিটি ডোকোমো, ক্যানন, হোন্ডা, টাকেডা ফার্মাকিউটিক্যাল, সনি, নিপ্পন ওয়েল ও সেভেন অ্যান্ড আই হোল্ডিংস কোম্পানি। বিশ্বের কয়েকটি বৃহত্তম ব্যাংক জাপানে অবস্থিত। টোকিও শেয়ার বাজার (নিক্কেই ২২৫ ও টিওপিআইএক্স ইন্ডিসেসের জন্য পরিচিত) মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন অনুসারে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ার বাজার। ২০০৬ সালের হিসেব অনুসারে, জাপান ফোর্বস গ্লোবাল ২০০০ থেকে ৩২৬টি কোম্পানির দেশ, যার শতাংশ হার ১৬.৩। ২০১৩ সালে ঘোষণা করা হয়, জাপান শেল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

জাপান 
জাপানিজ এক্সপেরিমেন্ট মডিউল (কিবো), আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন

বৈজ্ঞানিক গবেষণা, বিশেষত প্রযুক্তি, যন্ত্রবিদ্যা ও বায়োমেডিক্যাল গবেষণায় জাপান একটি অগ্রণী রাষ্ট্র। প্রায় ৭০০,০০০ গবেষক ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার গবেষণা ও উন্নয়ন বাজেটের সুবিধা পান এই দেশে। এই বাজেট বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম। মৌলিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও জাপান বিশ্বে অগ্রণী একটি রাষ্ট্র। এই দেশ থেকে একুশ জন বৈজ্ঞানিক পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বা চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তিন জন ফিল্ডস মেডেল এবং একজন কার্ল ফ্রেডরিক গাস প্রাইজ পেয়েছেন। জাপানের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত অবদানগুলি ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইলস, যন্ত্রবিদ্যা, ভূমিকম্প ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবোট, অপটিকস, কেমিক্যালস, সেমিকন্ডাক্টরস ও ধাতুবিদ্যার ক্ষেত্রে রয়েছে। বিশ্বে রোবোটিকস উৎপাদন ও ব্যবহারে জাপান অগ্রণী। ২০১৩ সালের হিসেব অনুসারে, বিশ্বের শিল্প রোবোটগুলির ২০% (১.৩ মিলিয়নের মধ্যে ৩০০,০০০টি) জাপানে নির্মিত। যদিও আগে এই হার আরও বেশি ছিল। ২০০০ সালে সারা বিশ্বে শিল্প রোবোটগুলির অর্ধ্বাংশ ছিল জাপানে নির্মিত।

জাপানের মহাকাশ সংস্থা হল জাপান এয়ারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জাক্সা)। এখান থেকে মহাকাশ, ভিন্ন গ্রহ ও বিমান গবেষণার কাজ চলে। রকেট ও উপগ্রহ নির্মাণেও এটি অগ্রণী সংস্থা। জাপান আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অংশগ্রহণকারী। ২০০৮ সালে স্পেস শাটল অ্যাসেম্বলি ফ্লাইটের সময় সেখানে জাপানিজ এক্সপেরিমেন্ট মডিউল যুক্ত হয়। জাপানের মহাকাশ অভিযানের পরিকল্পনাগুলি হল: শুক্র গ্রহে আকাৎসুকি নামে একটি মহাকাশ যান পাঠানো; ২০১৬ সালে মারকুরি ম্যাগনেটোস্ফেরিক অরবিটার উৎক্ষেপণ; এবং ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে একটি বেস গঠন।

২০০৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জাপান "সেলিনে" (সেলেনোলোজিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপ্লোরার) নামে একটি চন্দ্রযান একটি এইচ-আইআইএ (মডেল এইচ২এ২০২২) ক্যারিয়ার রকেটের মাধ্যমে তানেগাশিমা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করে। অ্যাপোলো কর্মসূচির পর থেকে বৃহত্তম চন্দ্র অভিযান ছিল কাগুয়া। এর উদ্দেশ্য ছিল চাঁদের উৎস ও বিবর্তন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ। ৪ অক্টোবর এটি চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে এবং প্রায় ১০০ কিমি (৬২ মা) উচ্চতায় উড়ে যায়। এই যানটির অভিযান শেষ হয় ২০০৯ সালের ১১ জুন। এই দিন জাক্সা ইচ্ছাকৃতভাবে চাঁদের সঙ্গে এই যানটির সংঘর্ষ ঘটিয়েছিল।

পরিকাঠামো

যানবাহন

জাপান 
টোকিও স্টেশনে শিনকানসেন, জাপানের দ্রুততম এবং বিশ্বের অন্যতম দ্রুত ট্রেন।

জাপানের পরিবহন ব্যবস্থা অত্যাধুনিক এবং পরিবহন অবকাঠামো ব্যয়বহুল। জাপানে সড়ক নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়। সমগ্র দেশব্যাপী বিস্তৃত ১.২ মিলিয়ন কিলোমিটারের পাকারাস্তা জাপানের প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা। জাপানে বামহাতি ট্রাফিক পদ্ধতি প্রচলিত। বড় শহরে যাতায়াতের জন্য নির্মিত সড়কসমূহ ব্যবহারের জন্য সাধারণত টোল নেয়া হয়।

জাপানে বেশ কয়েকটি রেলওয়ে কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। এসব রেল কোম্পানির মধ্যে জাপান রেলওয়েস গ্রুপ, কিনটেটসু কর্পোরেশন, সেইবু রেলওয়ে, কেইও কর্পোরেশন উল্লেখযোগ্য। এসব কোম্পানি রেল পরিবহনকে আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে; যেমন- রেল স্টেশনে খুচরা দোকান স্থাপন। প্রায় ২৫০ কিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত শিনকানসেন জাপানের প্রধান শহরগুলোকে সংযুক্ত করেছে। এছাড়া অন্যান্য রেল কোম্পানিও সময়ানুবর্তিতার জন্য সুপরিচিত।

জাপানে ১৭৩টি বিমানবন্দর রয়েছে। সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হল হানেদা বিমানবন্দর, এটি এশিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর। জাপানের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। অন্যান্য বড় বিমানবন্দরের মধ্যে রয়েছে কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শুবু সেন্ট্রেয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। জাপানের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর হল নাগোয়া বন্দর।

জনসংখ্যা

জাপান 
১৯৫০ সালের পর থেকে জাপানের জন্ম ও মৃত্যহার

২০০৮ সালে জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৭৭ লক্ষ, ফলে জাপান বিশ্বের ১০ম জনবহুল দেশ। ১৯শ শতকের শেষ দিকে এবং ২০শ শতকের শুরুর দিকে জাপানে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। তবে সম্প্রতি জন্মহারের পতন এবং বিদেশ থেকে নীট অভিবাসন মোটামুটি শূন্যের কোঠায় হওয়াতে অতি সম্প্রতি, ২০০৫ সাল থেকে, জাপানের জনসংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। জাপানের জনগণ জাতিগতভাবে একই রকম, এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি এবং গড় আয়ু ৮১ বছরের কিছু বেশি, যা পৃথিবীর সর্বোচ্চগুলির একটি। ২০২৫ সাল নাগাদ ৬৫ থেকে ৮৫ বছর বয়সবিশিষ্ট নাগরিকের অংশ ৬% থেকে ১৫%-এ উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জাপান মূলত একটি নগরভিত্তিক রাষ্ট্র। মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪% কৃষিকাজে নিয়োজিত। বহু কৃষক কৃষিকাজের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী শরহগুলিতে অতিরিক্ত কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শহুরে জনসংখ্যার প্রায় ৮ কোটি হনশু দ্বীপের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে এবং কিয়ুশু দ্বীপের উত্তরাংশে বসবাস করে। সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলির মধ্যে আছে টোকিও মহানগর এলাকা (জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ), ইয়োকোহামা (৩৬ লক্ষ), ওসাকা (২৬ লক্ষ), নাগয়া (২২ লক্ষ), সাপ্পোরো (১৮ লক্ষ), কিয়োতো (১৫ লক্ষ), কোবে (১৫ লক্ষ), কাওয়াসাকি (১৪ লক্ষ), ফুকুওকা (১৪ লক্ষ) এবং সাইতামা (১২ লক্ষ)। জাপানের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলিতে সরু ঘিঞ্জি রাস্তা, জনাকীর্ণতা, বায়ু দূষণ এবং কিশোর অপরাধ প্রধান সমস্যা। জাপানি ভাষা জাপানের সরকারি ভাষা। এই ভাষাতে জাপানের প্রায় ৯৮% লোক কথা বলেন। এছাড়াও জাপানে স্বল্পসংখ্যক লোক (প্রায় ৭ লক্ষ) কোরীয় ভাষাতে কথা বলেন। জাপানের অধীনস্থ রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জে রিউকিউয়ান ভাষাসমূহ প্রচলিত; এগুলিতে প্রায় ৯ লক্ষ লোক কথা বলেন।

সংস্কৃতি

জাপান 
হোকুসাইয়ের আকাঁ উকিয়োয়ে চিত্র কানাগাওয়ার মহা ঢেউ

জাপানিরা অনবরত বিদেশি সংস্কৃতি গ্রহণ করে, সেই সংগে জন্মায় তাদের নিজেদের সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। খ্রিস্ট-পূর্ব চতুর্থ শতাব্দি থেকে খ্রিস্ট-পূর্ব নবম শতাব্দি পর্যন্ত খেয়ার মাধ্যমে ইউরোপ ও এশিয়ার সংস্কৃতি জাপানে প্রবেশ করে। পরে সুই রাজবংশ ও থাং রাজবংশের প্রভাবের ফলে চীনা সংস্কৃতি জাপানে প্রবেশ করে। এরপর দশম শতাব্দিতে জাপান ও অন্যান্য পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের সাথে যোগাযোগ কম হওয়ার কারণে জাপানে আসে তাদের নিজস্ব স্টাইলের সংস্কৃতি। ষোড়শ শতাব্দির মধ্যভাগে ইউরোপের সংস্কৃতি জাপানে প্রবেশ করে তাদের সংস্কৃতির বিরাট পতন ঘটিয়েছে। সপ্তদশ শতাব্দির পরে এডো যুগে পুনরায় আস্তে আস্তে জাপানের সংস্কৃতির উন্নয়ন হতে শুরু করে। মেইজি যুগে জাপানে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি প্রবেশ করে জাপানের সংস্কৃতির বিরাট পরিবর্তন আসে। যেমন: ক্রীড়া, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। কিন্তু ১৯২০ সালের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পাশ্চাত্য সংস্কৃতি বেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের পর মার্কিন সংস্কৃতির প্রভাবে জাপানিদের সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এতে করে জাপানিদের নিজস্ব প্রাচীন সংস্কৃতির মান ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিল। জাপানি অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে আর এর পিছনে জাপানি অ্যানিমে এবং ইলেকট্রনিক গেম্‌সের বিরাট অবদান রয়েছে কারণ জাপানি অ্যানিমে এবং ইলেকট্রনিক গেম্‌স বিদেশের বাজারে খুব ভালো চলেছে। বর্তমানে জাপানে রয়েছে ১৪টি বিশ্ব ঐতিহ্য, তারমধ্যে ১১টি হচ্ছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং অবশিষ্ট ৩টি হচ্ছে প্রাকৃতিক ঐতিহ্য।

ধর্ম

জাপান 
জাপানের তোশোদাইজির বৌদ্ধ মন্দির

জাপানের প্রধান দুইটি ধর্ম হলো শিন্তো ধর্মবৌদ্ধ ধর্ম। প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের প্রাচীন উপাসনার বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী শিন্তো ধর্মের ভিত্তি। শিন্তো ধর্মে মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে কিছু বলা নেই বলে বৌদ্ধ ধর্ম ও শিন্তো ধর্ম বহু যুগ ধরে জাপানে সহাবস্থান করেছে। অনেক ক্ষেত্রে শিন্তো উপাসনালয় এবং বৌদ্ধ মন্দিরগুলি প্রশাসনিকভাবে সংযুক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানেও বহু জাপানি দুই ধর্মই সমানভাবে অনুসরণ করে। শিন্তো ধর্ম ১৬শ থেকে ১৯শ শতকে বিস্তার লাভ করে।

মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার সময় জাপানি নেতারা শিন্তো ধর্ম গ্রহণ করেন এবং এটিকে সরকারীভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে জাপানিদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমী অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে ব্যবহার করেন। জাপানের সম্রাটকে ইশ্বরের অবতার মনে করা হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শিন্তো ধর্মের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষোকতা বন্ধ হয়ে যায় এবং সম্রাট দেবত্ব বিসর্জন দেন। বর্তমান জাপানিদের জীবনে শিন্তো ধর্মের কোন কেন্দ্রীয় ভূমিকা নেই। স্বল্প সংখ্যক অনুসারী বিভিন্ন শিন্তো উপাসনালয়গুলিতে যান। ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় উপাসনালয়গুলিতে অনেক পর্যটকেরাও বেড়াতে আসেন। এগুলিতে বহু বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় এবং জন্মের পর ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শিশুদের এখানে নিয়ে আসা হয়। প্রতি বছর এগুলিকে কেন্দ্র করে অনেক উৎসব হয়। জাপানের অনেক বাসাতে শিন্তো দেবদেবীদের পূজার উদ্দেশ্যে নির্মিত একটি তাক বা স্থান থাকে।

৬ষ্ঠ শতকে জাপানে প্রথম বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন হয় এবং এর পরের প্রায় ১০ শতক ধরে এটি জাপানের বুদ্ধিবৃত্তিক, শৈল্পিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। জাপানের বেশির ভাগ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দায়িত্বে থাকেন বৌদ্ধ পুরোহিতেরা। বহু জাপানি পূর্বপুরুষদের স্মরণে বৌদ্ধ মন্দিরে যায়।

৬ষ্ঠ ও ৯ম শতকের মাঝামাঝি সময়ে চীন থেকে কনফুসিয়াসবাদের আগমন ঘটে। কিন্তু বৌদ্ধধর্মের তুলনায় এর গুরুত্ব ছিল কম। ১৯শ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত এটি জাপানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিরাজমান ছিল এবং আজও জাপানি চিন্তাধারা ও মূল্যবোধে কনফুসিয়াসের দর্শনের বড় প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।

১৫৪৯ সালে জাপানে খ্রিস্টধর্মের আগমন ঘটে এবং এক শতাব্দী পরে এটিকে সরকার নিষিদ্ধ করে দেন। পরে ১৯শ শতকের শেষভাগে এসে এটি আবার জাপানে উপস্থাপিত হয় এবং খুব ধীরে বিস্তার লাভ করতে থাকে। বর্তমানে জাপানে প্রায় ৩০ লক্ষ খ্রিস্টান বাস করে।

বর্তমানে অনেক জাপানি বেশ কিছু নতুন নতুন ধর্মের বা বিশ্বাস ব্যবস্থার অনুসারী হওয়া শুরু করেছে, যেগুলি শিন্তো, বৌদ্ধধর্ম,থেকে ধারণা ধার নিয়েছে এবং স্থানীয় জনগণের সামাজিক চাহিদা মেটাতে গড়ে উঠেছে। এরকম নতুন ধর্মের সংখ্যা কয়েকশ'র মত। এগুলি সব মিলিয়ে কোটি কোটি জাপানি অনুসরণ করে থাকে।

ক্রীড়া

জাতীয় খেলা - সুমো এবং জুডো

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

    সরকার
    পর্যটন
    সাধারণ তথ্য

*

Tags:

জাপান নাম-ব্যুৎপত্তিজাপান ইতিহাসজাপান সরকার ও রাজনীতিজাপান বৈদেশিক সম্পর্ক ও সামরিক বাহিনীজাপান প্রশাসনিক বিভাগসমূহজাপান ভূগোলজাপান অর্থনীতিজাপান যানবাহনজাপান জনসংখ্যাজাপান সংস্কৃতিজাপান ধর্মজাপান ক্রীড়াজাপান আরও দেখুনজাপান তথ্যসূত্রজাপান আরও পড়ুনজাপান বহিঃসংযোগজাপানউত্তর কোরিয়াওখোৎস্ক সাগরকাঞ্জিচিত্র:Ja-nippon nihonkoku.oggচীনজাপান সাগরজাপানি ভাষাতাইওয়ানদক্ষিণ কোরিয়াদ্বীপ রাষ্ট্রপূর্ব এশিয়াপূর্ব চীন সাগরপ্রশান্ত মহাসাগররাশিয়া

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ইসলামি বর্ষপঞ্জিবাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্যদের তালিকাশাহ জাহানডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসিপলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমশেখ হাসিনাছিয়াত্তরের মন্বন্তরতাপ সঞ্চালনরূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরএপ্রিলময়মনসিংহ জেলাদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধএশিয়াজ্ঞানপশ্চিমবঙ্গে ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪বাংলাদেশের জনমিতিমৌর্য সাম্রাজ্যজাতীয় সংসদঢাকা মেট্রোরেলপেশাযাকাতইনডেমনিটি অধ্যাদেশমহাত্মা গান্ধীবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমহার্নিয়াপলল শাখাবিজয় দিবস (বাংলাদেশ)ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবঋগ্বেদনিপুণ আক্তারগৌতম বুদ্ধজীববৈচিত্র্যপথের পাঁচালী (চলচ্চিত্র)শিশ্ন বর্ধনগ্রামীণফোনবাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিপানিচক্রগাণিতিক প্রতীকের তালিকাবাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকাওয়েবসাইটইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগসচিব (বাংলাদেশ)স্মার্ট বাংলাদেশআবহাওয়ালখনউ সুপার জায়ান্টসইতালিগঙ্গা নদীবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাশনি (দেবতা)সংস্কৃতিরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্মনেপোলিয়ন বোনাপার্টঅর্থ মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)রঙের তালিকামুহাম্মাদধানকক্সবাজারআওরঙ্গজেবভারতবিকাশ১৮৫৭ সিপাহি বিদ্রোহসত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রশিলাবইবাংলাদেশের নদীর তালিকাসূরা নাসব্যবস্থাপনা হিসাববিজ্ঞানউদ্ভিদকোষ বিভাজনঅমর সিং চমকিলাপর্বতসামন্ততন্ত্রডেঙ্গু জ্বরহানিফ সংকেতঅ্যান্টিবায়োটিক তালিকাআন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসপ্রীতি জিনতা🡆 More