তিলোত্তমা: হিন্দু পুরাণে বর্ণিত অপ্সরা।

তিলোত্তমা (সংস্কৃত: तिलोत्तमा, Tilottamā) হিন্দু পুরাণে বর্ণিত অপ্সরা (স্বর্গীয় জলপরী)। সংস্কৃত তিল শব্দের অর্থ তিল বীজ এবং উত্তমা অর্থ ভালো বা উচ্চতর। অর্থাৎ, তিলোত্তমা মানে শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষুদ্রতম কণা বা যার শ্রেষ্ঠত্ব সর্বোচ্চ গুণাবলী স্থিরীকৃত হতে পারে।

তিলোত্তমা
তিলোত্তমা, রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত ১৮৯৬ সালের ক্রোমোলিথোগ্রাফি
তিলোত্তমা, রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত ১৮৯৬ সালের ক্রোমোলিথোগ্রাফি
দেবনাগরীतिलोत्तमा
সংস্কৃত লিপ্যন্তরTilottamā
তামিল লিপ্যন্তরதிலோத்தமை
আবাসস্বর্গ
লিঙ্গস্ত্রী
অঞ্চলভারত উপমহাদেশ

ব্যাস রচিত হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতে বর্ণিত রয়েছে, ব্রহ্মার অনুরোধে ঐশ্বরিক স্থপতি বিশ্বকর্মা কর্তৃক তিলোত্তমা সৃষ্ট হয়েছে যাবতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ উপাদানসমূহের সমন্বয়ে। তিনি অসুর (দানব), সুন্দ ও উপাসুন্দ, এই তিন দেবতার পারস্পরিক ধ্বংসের জন্য দায়ী। এমনকি শিবইন্দ্রের মতো দেবতারা নিজেদের তিলোত্তমার প্রেমমুগ্ধ বর্ণনা করে।

কিছু কিংবদন্তি রচনায় তিলোত্তমাকে প্রাক-জন্মে কুশ্রী বিধবা হিসেবে ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি, অন্য বর্ণনাকারী রলেছেন যে কীভাবে তিনি ঋষি দুর্বাসা দ্বারা অসুর রাজকন্যা উষা হিসাবে পুনর্জন্মলাভ করতে অভিশপ্ত হয়েছিল।

সুন্দ ও উপাসুন্দের জন্ম ও বিনাশ

তিলোত্তমা: সুন্দ ও উপাসুন্দের জন্ম ও বিনাশ, দেবতাদের জাদুকরী, অভিশপ্ত রাজা সহস্রণিক 
অপ্সরা তিলোত্তমাকে নিয়ে যুদ্ধরত সুন্দ ও উপাসুন্দ ভাতৃদ্বয়

মহাকাব্য মহাভারতের আদিপর্বে (প্রথম অধ্যায়), দেবর্ষি নারদ পাণ্ডব ভাইদের অপ্সরা তিলোত্তমের কারণে সুন্দ ও উপাসুন্দ ভাতৃদ্বয়ের ধ্বংসের কাহিনি বর্ণনা করেন; এবং পাণ্ডবদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে তাদের যৌথস্ত্রী দ্রৌপদী ও তাদের মধ্যেকার বিবাদের কারণ হতে পারে। কাহিনিতে বলা হয়েছে সুন্দ ও উপাসুন্দ ছিল অসুর (রাক্ষস) নিকুম্ভের পুত্রদ্বয়। এই ভাতৃদ্বয়, যারা নিজেদের সমস্ত কিছু ভাগ করেছিল: রাজ্য, আসন, ঘর এমনকি বিছানা, খাবার। একদা, ভাতৃদ্বয় বিন্ধ্য পর্বতে তীব্র কৌতূহল অনুশীলন করে সৃষ্টির দেবতা ব্রহ্মাকে তাদের বরদান করতে বাধ্য করেছিলেন। ব্রহ্মার কাছে তারা মহান শক্তি ও অমরত্ব চেয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তা অস্বীকার করা হয়েছিল, পরিবর্তে ব্রহ্মা তাদেরকে এমন বর দিয়েছেন যাতে তারা নিজেরাই একে অপরকে আর আঘাত করতে না পারে। শীঘ্রই, দানবরা স্বর্গে আক্রমণ চালায় এবং দেবতাদের তাড়িয়ে দেয়। পুরো মহাবিশ্বকে জয় করে দানবেরা ঋষিদের হয়রানি ও মহাবিশ্বে সর্বনাশ সৃষ্টি করতে শুরু করে।

দেবতা ও ঋষিরা ব্রহ্মার কাছে আশ্রয় চান। ব্রহ্মা তখন ঐশ্বরিক স্থপতি বিশ্বকর্মাকে একটি সুন্দরী মহিলা তৈরির নির্দেশ দেন। বিশ্বকর্মা ত্রিভুবন (স্বর্গ, পৃথিবী, পাতাল) এবং বিশ্বের সমস্ত রত্ন থেকে যা কিছু সুন্দর ছিল তা সংগ্রহ করেন এবং অলৌকিক সৌন্দর্যে এক মনোরম মহিলা সৃষ্টি করেন। রত্ন থেকে বিন্দু বিন্দু করে তৈরি করেছিলেন বলে, ব্রহ্মা তার নাম রেখেছিলেন তিলোত্তমা এবং তাকে রাক্ষস ভাইদের এমনভাবে প্রলুব্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছেন যে তিনি তাদের মধ্যে বিরোধের কারণ হয়ে উঠবেন।

সুন্দ ও উপাসুন্দ যখন মহিলাদের সাথে আমোদপ্রমোদ উপভোগ করছিলেন এবং বিন্ধ্য পর্বতমালায় নদীর তীরে মদ্যপানে মগ্ন ছিলেন, তিলোত্তমা সেখানে হাজির হয়। তার ইন্দিয়পরায়ণতাপূর্ণ দেহায়বে বিস্মিত এবং ক্ষমতা ও মদ্যপানে মাতাল হয়ে সুন্দ ও উপাসুন্দ যথাক্রমে তিলোত্তমার ডান এবং বাম হাত স্পর্শ করছিলেন। যেহেতু উভয় ভাই যুক্তি দিয়েছিল যে তিলোত্তমা তার নিজের স্ত্রী হওয়া উচিত, তাই তারা একে অপরকে আক্রমণ করে এবং শেষ পর্যন্ত নিজেদের হত্যা করে। দেবতারা তিলোত্তমাকে অভিনন্দন জানালেন এবং ব্রহ্মা তাকে একটি আশীর্বাদ হিসাবে মহাবিশ্বে অবাধে বিচরণের অধিকার দেন। ব্রহ্মা আরও আদেশ করেছিলেন যে তিলোত্তমার দীপ্তির কারণে কেউ তার দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকাতে পারবে না।

দেবতাদের জাদুকরী

মহাভারতে (প্রথম অধ্যায়: আদিপর্ব) বর্ণিত রয়েছে: ব্রহ্মা তিলোত্তামার সৌন্দর্যে প্রভাবিত না হলেও, অন্যান্য দেবতারা তার সৌন্দর্যে জাদুমগ্ধ ছিলেন। প্রথমদিকে, শিব এবং ইন্দ্র অকাতর ছিলেন, তবে, তাকে দেখার ইচ্ছায় মহান দেবতা শিব নিজের একটি মাথা তার সামনে এবং আরেকটি তার মাথার পিছনে বিকশিত করেছিল তাকে পরিক্রমার জন্য। অন্যদিকে স্বর্গের আরেক ঈশ্বর ইন্দ্র অবশ্য তিলোত্তমাকে দেখার জন্য নিজের দেহে হাজার লাল চোখ বিকাশ করেছিল। আরেক কিংবদন্তি বর্ণনা করেছেন যে, গৌতম মহর্ষি তার স্ত্রী অহল্যাকে প্ররোচিত করার জন্য ইন্দ্রকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। গৌতম আদেশ দিয়েছিলেন যে ইন্দ্র তার শরীরে হাজার যোনির বিকাশ ঘটবে, তবে ইন্দ্র তিলোত্তামার দিকে দৃষ্টি দিলে এগুলি হাজার চোখে পরিণত হবে।

মহাভারতের আরো একটি কাহিনিতে (ত্রয়োদশ অধ্যায়: অনুশাসনপর্ব) বর্ণিত রয়েছে যে, তিলোত্তমা শিবকে প্রলুব্ধ করতে আসে। তিনি তিলোত্তমাকে প্রদক্ষিণ করতেই আগ্রহী হওয়ায় শিবের চারটি দৃশ্যমান মুখের বিকাশ ঘটল, আরেকটি ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, শিব নিজেকে পাঁচ ব্রহ্মন্ হিসাবে তিলোত্তামার কাছে উপস্থাপন করেছিলেন, তার পাঁচটি মুখ (৪টি দৃশ্যমান, ১ অদৃশ্য) ছিল। পূর্ব দিকের মুখ বিশ্বজুড়ে তার সার্বভৌমত্বের ইঙ্গিত দেয়, উত্তর মুখ পার্বতীর সাথে মুখোমুখি, পশ্চিম মুখ প্রাণীদের সুখ নিশ্চিত করে; দক্ষিণ মুখ মহাবিশ্বকে ধ্বংস করতে এবং পঞ্চম মুখটি অদৃশ্য ছিল কারণ এটি তিলোত্তামার বোধগম্যতার বাইরে ছিল। পুরাণের অন্য কিংবদন্তি বলছে, ব্রহ্মা তিলোত্তমাকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং নিজেকে উত্সাহিত করতে। ব্রহ্মা তার নিজের মেয়ে তিলোত্তমার প্রতি আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন এবং তাকে দেখার জন্য পাঁচটি মাথা তৈরি করেছিলেন। তখন ব্রহ্মা তিলোত্তমাকে শিবের আবাস কৈলাস পর্বতে তার সম্মুখে শ্রদ্ধা জানাতে প্রেরণ করেন। শিব তার দিকে তাকাচ্ছেন, কিন্তু তার স্ত্রী পার্বতী তার পাশে বসে ছিলেন বলে তাকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছিল। তিলোত্তমা শিবকে প্রদক্ষিণ করার সাথে সাথে তিনি তাকে দেখতে তার প্রতিটি দিকেই নিজের মাথা বাড়িয়ে দেন। ঐশ্বরিক ঋষি নারদ পার্বতীকে কটূক্তি করেছিলেন, "আপনি ভাবতে পারেন যে জ্ঞানী পুরুষদের দ্বারা তিরস্কৃত এই পতিতা সম্পর্কে শিব কী ভাবছেন"। উত্তেজিত হয়ে পার্বতী নিজের হাতে শিবের চোখ ঢেকে দিয়ে বিশ্বে অন্ধকারে নিমজ্জিত করলেন। শিব তখন মহাবিশ্বে পুনরায় আলো আনার জন্য তার তৃতীয় চোখের বিকাশ ঘটায়।

অভিশপ্ত রাজা সহস্রণিক

কথাসরিৎসাগর, প্রথম-দ্বিতীয় শতাব্দীর পৈশাচী গ্রন্থ বৃহতকথার একাদশ শতাব্দীর সংস্কৃত অনুবাদে বলা হয়েছে যে, কীভাবে রাজা সহস্রণিককে তিলোত্তমা দ্বারা অভিশাপ দেওয়া হয়েছিল। রাজা যখন ইন্দ্রলোক থেকে তার রাজ্যে ফিরে যাচ্ছিলেন, তিলোওমা তাকে অপেক্ষা করতে বললেন যাতে তিনি একটি আকর্ষণীয় ঘটনা বলতে পারেন, তবে রাজা তার প্রণয়ী - অপ্সরা আলাম্বুসার চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন, তাই তিনি তিলোত্তমা যা বলেছিলেন তা উপেক্ষা করেছিলেন। এই আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে তিলোত্তমা রাজাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, তিনি যাকে ভাবছিলেন তার থেকে পৃথক হয়ে পড়বেন - চৌদ্দ বছর ধরে।

গতজন্ম এবং পুনর্জন্ম

তিলোত্তমা: সুন্দ ও উপাসুন্দের জন্ম ও বিনাশ, দেবতাদের জাদুকরী, অভিশপ্ত রাজা সহস্রণিক 
ঊষার সঙ্গে অনিরুদ্ধ, তিলোত্তমার পুনর্জন্ম

পদ্মপুরাণে বর্ণিত রয়েছে যে, তিলোত্তমা তার গত জন্মে কুবজা নামে এক কুৎসিত বিধবা ছিলেন। কুবজা আট বছর ধরে সুপ্রসন্ন সমারোহ অনুষ্ঠান করতেন এবং অবশেষে মাঘ পূজা করতেন। এটি নিশ্চিত করে যে, তিনি তিলোত্তমা হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং অপ্সরারূপে স্বর্গে আবির্ভূত হয়েছেন।

কুব্জিকা নামে ভৃগুবংশীয়া এক কল্যাণী ব্রাহ্মণী বালবৈধব্য দুঃখে পীড়িত হয়ে কঠোর তপস্যা করেন। বিন্ধ্যপর্বতের পাদদেশস্থ মহাক্ষেত্র রেবা-কপিলাসঙ্গমে তাঁর তপস্যার স্থান। কুব্জিকা ব্রত অবলম্বন করে নারায়ণপরায়ণ হয়েছিলেন। তিনি নিত্য সদাচারশীলা, নিত্য সঙ্গবর্জিতা,জিতেন্দ্রিয়া, জিতক্ৰোধা,সত্যবাদিনী,মিতভাষিণী, সুশীলা এবং দেহশোধনতৎপরা ছিলেন। কু্ব্জিকা পিতৃ, দেব ও ব্রাহ্মণগণকে দান করে অগ্নিতে হোম করে ষষ্ঠকালে উঞ্ছবৃত্তি অবলম্বনে আহার করতেন। তিনি নর্মদার তীরে বাস করে কৃচ্ছ্র অতিকৃচ্ছ্রাদি পারাক ও তপ্তকৃচ্ছ্রাদি ব্রত দ্বারা পুণ্য অর্জনপূর্বক মাস সকল অতিবাহিত করতেন। তিনি তপস্বিনী, বল্কলধারিণী, সুশীলা, সুমহাসংশালিনী ও সন্তোষবতী হয়ে রেবা-কপিলা সঙ্গমে ষষ্টিমাঘস্নান করেন। কালক্রমে তপস্যার ক্ষীণদেহ হয়ে কুব্জা মৃত্যুগ্রস্ত হলেন এবং মাঘস্নানজনিত পুণ্যবলে বিষ্ণুলোকে নীত হয়ে চতুর্যুগসহস্ৰ ( ১ কল্প) কাল সহর্ষে বাস করলেন। অতঃপর সুন্দ-উপসুন্দ নাশের জন্য তিনি ব্রহ্মলোকে ব্রহ্মা থেকে তিলোত্তমা নামে প্রাদুর্ভূত হলেন। পূৰ্বপূণ্যের অবশিষ্ট ভাগ দ্বারা তার রূপরাশি যেন একাধারগত হল। সেই অযোনিজা রমণীরত্ন দেবতাগণেরও মোহ উৎপাদন করতে লাগল। অপ্সরাশ্রেষ্ঠা,তন্বী তিলোত্তমা লাবণ্য হ্রদরূপে প্রতিভাত হয়ে নিপুণ সৃষ্টিকর্তা বিধাতারও আশ্চর্যকারিণী হল। বিধাতা তাকে সৃষ্টি করে সন্তুষ্ট চিত্তে আদেশ দিলেন, তুমি দৈত্যনাশার্থ শীঘ্রই গমন কর। তখন ভামিনী তিলোত্তমা হস্তে বীণা নিয়ে যেখানে সেই দেববৈরিদ্বয় অবস্থান করছিল, সেই স্থানে ব্রহ্মলোক হতে পুষ্কর পথে গমন করল। সেখানে গিয়ে রেবার পবিত্র নির্মল জলে স্নান করে বন্ধুক কুসুমনিভ রক্তবস্ত্র পরিধান করল।তিলোত্তমার করবলয় ও নুপুরমেখলার সুন্দর শিঞ্জন হতে লাগল।তার কণ্ঠে মুক্তাবলী শোভা পেল। সে দোদুল্যমান কর্ণকুণ্ডলে শোভিত হল, এবং বীণা বাজিয়ে সুস্বরে গান করে স্নিগ্ধ কৌমল মধুর নিষাদ-ঋষভাদি ছয় সুরের মূর্ছনা ব্যক্ত করতে লাগল। মাধবীকুসুম তার মস্তকের ভূষণ হল। সে এই ভাবে এক অশোকবিটপে অবস্থান করল। এইরূপে নারী তিলোত্তমা অশোককাননে অবস্থান করলে, দৈত্যানুচরগণ সুখদানকারী ইন্দুকলার ন্যায় তাকে দেখতে পেল। তিলোত্তমাকে দেখে বিস্মিত দৈত্য সৈনিকগণ সত্বর সুন্দোপসুন্দ সমীপে গমনপূর্বক সসম্ভ্রমে পুনঃপুনঃ বর্ণনাপূৰ্বক বলল,---আমরা যে এক নারী দেখেছি, ঐ নারী দেবী বা দানবী,নাগাঙ্গনা বা যক্ষী, তা জানি না। তবে স্ত্রীসমাজে ঐ নারী যে রত্নস্বরূপ, একথা নিশ্চিতই। এ জগতে আপনারাই একমাত্র রত্নভুক্ ; আর সেই বালাও শোকহারিণীরূপে অনতিদূরে বিরাজমানা।আপনারা সেই স্থানে গিয়ে সত্বর সেই মন্মথমোহিনীকে অবলোকন করুন।

সুন্দোপসুন্দ সেনাপতিগণের এই মনোরম বাক্য শ্রবণ করে মদ্যপাত্র, জলবিহার ও সহস্র সহস্র উত্তম স্ত্রী পরিহারপূর্বক জলাশর হতে উত্থিত হল এবং উভয়ে দুইটি পৃথক্ পৃথক্ শতভারায়সী কাল দণ্ডোপমন গদা নিয়ে যেখানে সেই শৃঙ্গারবেশা তিলোত্তমা অঙ্গুরবধোদ্যতা চণ্ডীর মত অবস্থিতা ছিল, সেই স্থানে গমন করিল। তিলোত্তমা যেন দৈত্যদ্বয়ের মন্মথানল উদ্দীপিত করে তুলল। তার রূপমোহিত মদমত্ত মূর্খ দুই দৈত্য তিলোত্তমার সম্মুখে গিয়ে পরস্পর পরস্পরকে বলিল,ভাই, তুমি বিরত হও, এই বরবর্ণিনী আমারই ভার্যা হোক। তুমি এই মদিরেক্ষণা ভার্যাকে পরিত্যাগ কর।এইরূপ আগ্রহের সাথে উভয় ভ্রাতাই উদ্দাম মাতঙ্গযুগলের ন্যায় পরস্পর ক্রুদ্ধ ও কালপ্রেরিত হয়ে পরস্পরকে প্রহার করল। তখন উভয়ের প্রহারে উভয়েই ভূপতিত হল। সৈনিকেরা তাদের উভয়কে মৃত দেখে মহাকোলাহল করে উঠল। বলিল, আহা কি হল ? কে এই কালরাত্রিসদৃশী ললনা ? সৈন্যগণ এইরূপ বলাবলি করতে থাকলে, হ্লাদিনী তিলোত্তমা সুন্দ ও উপসুন্দকে পাতিত করে দশদিক উদ্ভাসিত করে শীঘ্র আকাশপথে প্রস্থান করল এবং দেবকাৰ্য সাধন করে ব্রহ্মার অগ্রে উপস্থিত হল। অনন্তর বিধাতা তুষ্ট হয়ে তাকে বললেন,---তোমাকে আমি সূর্যরথে স্থান দান করলাম। যতদিন সূর্য অম্বরপথে অবস্থান করবেন, ততদিন তুমি বহু সুখ ভোগ উপভোগ করতে থাক। সেই ব্রাহ্মণী এইরূপে শ্রেষ্ঠ অপ্সরা হয়ে আজও সূর্যলোকে মাঘস্নানের ফল ভোগ করছেন।

-- পদ্ম পুরাণ, উত্তর খণ্ডম্

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বর্ণিত রয়েছে যে, বলির পৌত্র সাহসিক তিলোত্তমা সহকারে ঋষি দুর্বাসার তপস্যায় বিঘ্ন ঘটিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ, ঋষি সাহসিককে গাধায় পরিণত করেছিলেন এবং তিলোত্তমাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন, বাণাসুরের কন্যা ঊষা হিসাবে জন্ম নিতে। ঊষা পরে কৃষ্ণের প্রপৌত্র অনিরুদ্ধের স্ত্রী হন।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

মির্জাপুরের রাজা সাহেব ১৯৫১ সালে প্রথম তিলোত্তমা নামে তেলুগু লোককাহিনী চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন। একই নামে ১৯৫৪ সালে হিন্দি ভাষায় বাবুভাই মিস্ত্রি চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন। ১৯৬৬ সালে তিলোত্তমা নামে মালায়ালাম চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন কুনচিচকো। ১৯৭৮ সালে দিনেন গুপ্ত পরিচালনা করেন বাংলা ভাষায় তিলোত্তমা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

সূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

তিলোত্তমা সুন্দ ও উপাসুন্দের জন্ম ও বিনাশতিলোত্তমা দেবতাদের জাদুকরীতিলোত্তমা অভিশপ্ত রাজা সহস্রণিকতিলোত্তমা গতজন্ম এবং পুনর্জন্মতিলোত্তমা জনপ্রিয় সংস্কৃতিতেতিলোত্তমা আরও দেখুনতিলোত্তমা তথ্যসূত্রতিলোত্তমা সূত্রতিলোত্তমা বহিঃসংযোগতিলোত্তমাঅপ্সরাতিলপুরাণসংস্কৃতসংস্কৃত ভাষাহিন্দুধর্ম

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

সবচেয়ে বেশি গোলকারী ফুটবলারের তালিকামৌলিক পদার্থের তালিকাতামান্না ভাটিয়াস্বামী স্মরণানন্দআলাউদ্দিন খিলজিমুহাম্মাদের বংশধারাবাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীমুহাম্মাদ ফাতিহকুলম্বের সূত্রহাবীবুল্লাহ্‌ বাহার কলেজআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসবাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের তালিকামুহাম্মাদের স্ত্রীগণসৈয়দ মুজতবা আলীকোকা-কোলাভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪হায়দ্রাবাদ রাজ্যচ্যাটজিপিটিউইকিপিডিয়াশাহ জাহানশ্রীকৃষ্ণকীর্তনটিম ডেভিডমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রফিতরাভূমি পরিমাপলোকসভা কেন্দ্রের তালিকাঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরমানব দেহরাজশাহী বিভাগবিকাশবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকুমিল্লা জেলাপ্রধান পাতাঅরবিন্দ কেজরীওয়ালসিলেটবিরাট কোহলিইতিহাসহস্তমৈথুনস্বরধ্বনিধর্মফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংবর্তমান (দৈনিক পত্রিকা)মালদ্বীপকাফিরলাহোর প্রস্তাবপশ্চিমবঙ্গে ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪সেন্ট মার্টিন দ্বীপইউটিউবদৈনিক প্রথম আলোকারিনা কাপুররচিন রবীন্দ্রপলাশীর যুদ্ধফিলিস্তিনবীর্যবাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীআগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকম্পিউটার কিবোর্ডদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধবাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমজলাতংকবাংলার নবজাগরণমুজিবনগর সরকারমাতৃভাষীর সংখ্যা অনুসারে ভাষাসমূহের তালিকাকক্সবাজারতাজউদ্দীন আহমদসাঁওতাল বিদ্রোহনাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯সুফিয়া কামালহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকলকাতাইসলামের ইতিহাসপদার্থবিজ্ঞানবেল (ফল)সজনেমুখমৈথুনকুতুব মিনারবাঙালি জাতি২০২৩সর্বনাম🡆 More