খ্রিস্টধর্মের প্রতিবাদপন্থী সংস্কার আন্দোলন

খ্রিস্টধর্মের প্রতিবাদপন্থী সংস্কার আন্দোলন (ইংরেজি: Reformation), যাকে প্রোটেস্টান্ট সংস্কার-আন্দোলন (Protestant Reformation) নামেও ডাকা হয়, পশ্চিমা বিশ্বের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যকার একটি বিভাজনমূলক (Schism) আন্দোলনকে বোঝায়। ১৬শ শতকে ইউরোপ মহাদেশে জার্মান ধর্মযাজক মার্টিন লুথার (Martin Luther) আন্দোলনটির সূচনা করেন এবং পরবর্তীতে সুইস যাজক জন কালভাঁ (John Calvin), হুলড্রিখ জুইংলি (Huldrych Zwingli) এবং অন্যান্য অগ্রবর্তী প্রোটেস্টান্ট সংস্কার-আন্দোলনকারীরা এটি অব্যাহত রাখেন। ধারণা করা হয় যে ১৫১৭ সালে লুথারের রচিত পঁচানব্বইটি বিবৃতি-র প্রকাশনার মাধ্যমে এই আন্দোলনের সূচনা। ত্রিশ বছরের যুদ্ধের শেষে ওয়েস্টফ্যালিয়া শান্তিচুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ১৬৪৮ সালে এর সমাপ্তি ঘটে।

খ্রিস্টধর্মের প্রতিবাদপন্থী সংস্কার আন্দোলন
খ্রিস্টধর্মের প্রতিবাদপন্থী সংস্কার আন্দোলন
জার্মান ধর্মযাজক মার্টিন লুথার ক্যাথলিক মণ্ডলীর বিরুদ্ধে তাঁর ৯৫টি বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে খ্রিস্টধর্ম সংস্কার-আন্দোলনের সূচনা করেন।

মার্টিন লুথারের আগেও অনেকে ক্যাথলিক মণ্ডলীর কর্মকাণ্ড সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ইয়ান হুস, পেটার ভালডো এবং জন ওয়াইক্লিফ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু বেশিরভাগের মতে মার্টিন লুথারই তাঁর প্রকাশনার মাধ্যমে এই আন্দোলনটির অবতারণা করেন। মার্টিন লুথার তাঁর গ্রন্থে প্রশ্রয়ের (indulgence) বিক্রির সমালোচনা করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে মৃত্যু-পরবর্তী প্রায়শ্চিত্তমূলক অবস্থার (purgatory) উপরে পোপের কোনই কর্তৃত্ব নেই। তিনি আরও বলেন যে ভবিষ্যতে ব্যবহার্য পূণ্যের ভাণ্ডারের (Treasury of Merit) যে মতবাদ (doctrine) ক্যাথলিক মণ্ডলী প্রচার করে, খ্রিস্টানদের মূল ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে তার কোনো ভিত্তি নেই।

একাধিক পোপের মধ্যে দ্বন্দ্ব (Western Schism), রোমের ক্যাথলিক মণ্ডলী ব্যবস্থার দুর্নীতি, জাতীয়তাবাদ ও মানবতাবাদের উত্থান এবং রেনেসাঁস পর্বে লব্ধ নতুন নতুন জ্ঞান, ইত্যাদি এই সংস্কার-আন্দোলনের চালিকাশক্তি হলেও মূল কারণ ছিল খ্রিস্টীয় ধর্মতাত্ত্বিক।

প্রথমে জার্মানিতে শুরু হলেও গুটেনবের্গের ছাপাখানার বদৌলতে সারা ইউরোপে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এদের মধ্যে লুথারবাদী এবং কালভাঁবাদীরা ছিল সবচেয়ে বড় দুইটি দল। লুথারীয় মণ্ডলীগুলি মূলত জার্মানি, বাল্টিক অঞ্চল ও স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে কালভাঁবাদী মণ্ডলীগুলি সুইজারল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও স্কটল্যান্ডে প্রতিষ্ঠালাভ করে। ১৫৪৭ সালে আন্দোলনটি ইংল্যান্ডের মণ্ডলীকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

ক্যাথলিক মণ্ডলী এই আন্দোলনের প্রত্যুত্তরে খ্রিস্টধর্মের প্রতি-সংস্কার-আন্দোলন শুরু করে। জেসুইট সম্প্রদায় প্রতিবাদী মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেক কাজ করে।

আন্দোলনের শেষে আয়ারল্যান্ড বাদে গোটা উত্তর ইউরোপ প্রতিবাদী মতবাদের অধীনে চলে আসে। দক্ষিণ ইউরোপ ক্যাথলিক থেকে যায়। মধ্য ইউরোপে প্রচন্ড যুদ্ধ হয় এবং ত্রিশ বছরের যুদ্ধ শেষে অঞ্চলটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে।

Tags:

ইংরেজি ভাষাত্রিশ বছরের যুদ্ধমার্টিন লুথার

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

অনাভেদী যৌনক্রিয়ামোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীচীনইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনইসলামবাংলা স্বরবর্ণপিরামিডআল পাচিনোভৌগোলিক আয়তন অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকারেনেসাঁনামাজের নিয়মাবলীআংকর বাটবাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের তালিকাখ্রিস্টধর্মরাম নবমীভরিআবদুল হামিদ খান ভাসানীমহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রনারী ক্ষমতায়নসূরা আর-রাহমানসেন্ট মার্টিন দ্বীপভারতনীল তিমিতিমিআর্-রাহীকুল মাখতূমমাদার টেরিজাপরীমনিমাইটোসিসফোরাতনরেন্দ্র মোদীরোমানিয়াহজ্জভূগোলগেরিনা ফ্রি ফায়ারকুরআনের ইতিহাসবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাপাখিথাইরয়েড হরমোনদুর্গাপূজাপ্রথম উসমানজরায়ুমাতৃভাষীর সংখ্যা অনুসারে ভাষাসমূহের তালিকাকাতারবীর শ্রেষ্ঠইরানঅ্যান মারিচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ফরাসি বিপ্লবের কারণমেটা প্ল্যাটফর্মসকোষ নিউক্লিয়াসবাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোররক্তসূরা ইখলাসএইচআইভি/এইডসসূরা মাউনবাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রইসলামের নবি ও রাসুলআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসবাংলার প্ৰাচীন জনপদসমূহচ্যাটজিপিটিকার্বন ডাই অক্সাইডভারতের ইতিহাসতাজবিদবাংলা উইকিপিডিয়ামাশাআল্লাহবিবাহবাঘরাবণমৌলিক সংখ্যাজীবনঢাকা বিভাগমহাবিস্ফোরণ তত্ত্বইশার নামাজউসমানীয় সাম্রাজ্যগীতাঞ্জলিআল্লাহমাইটোকন্ড্রিয়া🡆 More