ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (জন্ম: ৭ নভেম্বর ১৯৭০) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী। ১৯৮৯ সাল থেকে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত ঋতুপর্ণা অভিনয় করেছেন একাধিক বাংলাদেশী ও হিন্দি চলচ্চিত্রেও। বাণিজ্যিক ও শৈল্পিক – উভয় ধারার সিনেমাতে তাঁর সুদক্ষ অভিনয় তাঁকে এনে দিয়েছে একাধিক পুরস্কার। অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ ও লেখালিখির সঙ্গেও জড়িত ঋতুপর্ণা।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত | |
---|---|
জন্ম | ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ৭ নভেম্বর ১৯৭০ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
পেশা | চলচ্চিত্র অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯৮৯–বর্তমান |
উচ্চতা | ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি (১.৬৫ মিটার) |
দাম্পত্য সঙ্গী | সঞ্জয় চক্রবর্তী (১৯৯৯–বর্তমান) |
সন্তান | অঙ্কন (পুত্র) রিসোনা নিয়া (মেয়ে) |
পিতা-মাতা | প্রবির সেনগুপ্ত (পিতা) এবং নন্দিতা সেনগুপ্ত (মাতা) |
ওয়েবসাইট | ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত |
কুশল চক্রবর্তীর বিপরীতে বাংলা ধারাবাহিক শ্বেত কপোত (১৯৮৯) দিয়ে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর অভিনয় জীবনের শুরু। তাঁর অভিনীত প্রথম ছায়াছবি বিজয় ভাস্কর পরিচালিত ওড়িয়া ছবি কোতিয়া মনিষ গতিয়ে জাগা (১৯৯১)। নব্বইয়ের দশকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী ও অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের সাথে একের পর এক বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে জুটি বেঁধে তিনি সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যান। তার অভিনীত প্রথম বাংলাদেশী ছবি স্বামী কেন আসামী (১৯৯৭)।
ঋতুপর্ণার জন্ম কলকাতায়। খুব অল্পবয়সেই চিত্রাংশু নামে একটি শিল্পবিদ্যালয় থেকে অঙ্কন, নৃত্য ও হাতের কাজে দক্ষতা অর্জন করেন। মাউন্ট কারমেল স্কুলে তার পড়াশোনা। পরে লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাবিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হন। তবে অভিনয় পেশায় মনোযোগ দেবার জন্য পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়।
অভিনেতা কুশল চক্রবর্তীর বোন অনিন্দিতা পাল ছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সহপাঠী যার সুবাদেই শ্বেত কপোত (১৯৮৯) বাংলা ধারাবাহিকে কুশল চক্রবর্তীর বিপরীতে প্রথমবার অভিনয়ের সুযোগ পান ঋতুপর্ণা। এরপরে তিনি সীমানা ছাড়িয়ে (১৯৮৯), কালপুরুষ (১৯৯০), হরতনের গোলাম (১৯৯০) প্রমুখ ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। কালপুরুষ ধারাবাহিকটি রাজা দাশগুপ্ত পরিচালনা করেন। এই ধারাবাহিকে ঋতুপর্ণা কৌশিক সেনের বিপরীতে অভিনয় করেন। এটি সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত উপন্যাস কালপুরুষ অবলম্বনে নির্মিত।
১৯৯১ সালে, বিজয় ভাস্করের ওড়িয়া চিত্র কোতিয়া মনিষ গতিয়ে জাগা ছবির মাধ্যমে ঋতুপর্ণার বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ। এই ছবিতে তিনি বিজয় মোহান্তির বিপরীতে অভিনয় করেন। এর পরে আসে প্রভাত রায়ের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্বেতপাথরের থালা (১৯৯২) ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব। তিনি তখন আধুনিক ইতিহাসে স্পেশালাইজেশনসহ এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এই ছবির বিপুল সাফল্যের পরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ১৯৯৪ সালে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে নাগপঞ্চমী ও চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর বিপরীতে লাল পান বিবি ছবিতে অভিনয় করেন ঋতুপর্ণা। সুজন সখী, নাগপঞ্চমী, মনের মানুষ ও সংসার সংগ্রাম প্রভৃতি তার প্রথম দিকের ছবিগুলি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মুম্বাইতে তিনি হেমা মালিনীর সঙ্গে মোহিনী নামে একটি টেলিফিল্মও করেন। এছাড়াও তিসরা কৌন (১৯৯৪) নামে অপর এক হিন্দি ছবিতেও তিনি নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন।
ঋতুপর্ণ ঘোষের দহন (১৯৯৭), উৎসব (২০০০), অপর্ণা সেনের পারমিতার একদিন (২০০০) ও বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মন্দ মেয়ের উপাখ্যান (২০০২) ছবিতে তার অভিনয় বিদগ্ধ মহলের প্রশংসা অর্জন করে। দহন ছবিতে ধর্ষণের শিকার এক নববিবাহিতা রোমিতা চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ১৯৯৮ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে অর্জন করেন জাতীয় পুরস্কার।
বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করে সেদেশেও সমান জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি লাভ করেছেন ঋতুপর্ণা। তবে সাগরিকা চলচিত্রর জন্য ব্যপক সমালোচনার মধ্য পরেন। এই চলচিত্রর জন্য সবাই তাকে অনেক খারাপ চোখে দেখে। তিনি ওড়িশি ও মণিপুরী নৃত্যে পারঙ্গমা। তার নিজের ভাবনা আজ ও কাল নামে একটি নাচের দলও আছে। এই দল রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, শ্যামা, মায়ার খেলা প্রভৃতি নৃত্যনাট্য ও অন্যান্য আধুনিক ভাবনার নৃত্যানুষ্ঠান মঞ্চস্থ করে খ্যাতিলাভ করেছে। এছাড়া তিনি স্থাপন করেছেন প্রিজম এন্টারটেইনমেন্ট নামে একটি প্রযোজনা সংস্থাও।
আনন্দলোক ও বাংলাদেশের হৃদয় পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলামও লিখেছেন।
২০১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রাক্তন চলচ্চিত্রে পুনরায় প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণা জুটি বাঁধতে দেখা যায়।
১৯৯৯ সালে বাল্যপ্রেমিক সঞ্জয় চক্রবর্তীকে বিবাহ করেন। সঞ্জয় মবিঅ্যাপস নামে কলকাতার একটি সিইও-এর প্রতিষ্ঠাতা। থ্যালাসেমিয়া রোগাক্রান্ত শিশুদের সাহায্যার্থেও ঋতুপর্ণা নিরলস সহযোগিতা করে থাকেন। ঋতুপর্ণা আউটডোর খেলাধূলার সঙ্গেও যুক্ত। অবসর সময়ে তিনি ব্যাডমিন্টন খেলেন। বরাবরই তার সাজপোশাকের জন্য তিনি দর্শকমহলে উপহাসের পাত্রী হয়েছেন। ২০২১ সালে সরস্বতী পুজোর দিন তিনি মুক্তধারা ছবি থেকে নিজের সরস্বতী বেশের একটি ছবি তার ফেসবুক পেজে প্রকাশ করার পরে তার এই ছবির দৌলতে তিনি মানুষের উপহাসের পাত্রী হয়ে যান।
বছর | চলচ্চিত্র | ভাষা | চরিত্র | পরিচালক | টীকা |
---|---|---|---|---|---|
১৯৮৯ | শ্বেত কপোত | বাংলা | কুশল চক্রবর্তী | ||
সীমানা ছাড়িয়ে | বাংলা | ||||
১৯৯০ | কালপুরুষ | বাংলা | রাজা দাশগুপ্ত | টেলিফ্রেম প্রযোজিত | |
হরতনের গোলাম | বাংলা | রমেন অধিকারী | |||
১৯৯৩ | সিনেমাওয়ালা | বাংলা | দুলাল লাহিড়ী | টেলিফ্রেম প্রযোজিত | |
১৯৯৫ | আন্দোলন | বাংলা | প্রভাত রায় |
বছর | চলচ্চিত্র | ভাষা | চরিত্র | পরিচালক | টীকা |
---|---|---|---|---|---|
১৯৯১ | কোতিয়া মনিষ গতিয়ে জাগা | ওড়িয়া | রাধা | বিজয় ভাস্কর | |
১৯৯২ | শ্বেত পাথরের থালা | বাংলা | তিতলী | প্রভাত রায় | |
১৯৯৩ | ভাগ্য হতে দরি | ওড়িয়া | |||
১৯৯৪ | নাগপঞ্চমী | ||||
লাল পান বিবি | |||||
শেষ চিঠি | |||||
১৯৯৫ | মোহিনী | হিন্দি | দিব্য | হেমা মালিনী | |
১৯৯৭ | দহন | রমিতা চৌধুরী | ঋতুপর্ণ ঘোষ | ||
১৯৯৮ | দেশ দরদী | বাংলা | শরীফ উদ্দীন খান দীপু | বাংলাদেশী চলচ্চিত্র | |
২০০০ | পারমিতার একদিন | পারমিতা | |||
২০০০ | উৎসব | কেয়া | |||
২০০০ | সিঁদুর খেলা | ||||
আমি সেই মেয়ে | |||||
মধুমালতী | |||||
বিষ্ণু নারায়ণ | |||||
গানে ভুবন ভরিয়ে দেবো | |||||
স্বামী কেন আসামী | বাংলা | ||||
রাঙা বউ | |||||
মিস মৈত্রেয়ী | |||||
তোমার আমার প্রেম | |||||
সিঁদুরের অধিকার | |||||
২০০০ | কালি টোপি লাল রুমাল | ||||
২০০২ | সবসে বড়কর কৌন | ||||
২০০২ | মন্দ মেয়ের উপাখ্যান | ||||
২০০৩ | ব্যতিক্রমী | ||||
২০০৩ | আলো | ||||
২০০৪ | কালোচিতা | সুজাতা | শতরূপা সান্যাল | ||
২০০৪ | স্বামী ছিনতাই | ||||
২০০৫ | নিশিযাপন | ||||
২০০৫ | ইউএনএনএস | ||||
২০০৫ | ম্যায়, মেরি পত্নী আউর ওহ্ | ||||
২০০৬ | তপস্যা | ||||
২০০৬ | অনুরণন | ||||
২০০৬ | অন্ধকারের শব্দ | ||||
২০০৭ | গৌরী | ||||
২০০৭ | চাঁদের বাড়ি | ||||
২০০৮ | সির্ফ লাইফ লুকস গ্রিনার অন দ্য আদার সাইড | ||||
২০০৮ | মোন অ্যামোর : শেষের কবিতা রিভিজিটেড | ||||
২০০৮ | ম্যায় ওসামা | ||||
২০০৮ | আয়নাতে | ||||
২০০৮ | চতুরঙ্গ | ||||
২০০৯ | ফেরা | ||||
২০০৯ | লাভ খিচদি | ||||
২০০৯ | এস আর কে | ||||
২০০৯ | ফক্স | ||||
২০০৯ | তৃষ্ণা | ||||
২০০৯ | ডো নট ডিস্টার্ব | ||||
২০১০ | মিত্তাল vs মিত্তাল | ||||
২০১০ | ম্যায় ওসামা | ||||
২০১০ | ফুটপাথ | ||||
২০১০ | মহানগর @কলকাতা | ||||
২০১০ | রেহমত আলী | ||||
২০১০ | আরোহণ | ||||
২০১০ | দোনো ইয়া...না জানে কিউ | ||||
২০১০ | ..এন্ড ওয়ান্স এ্যাগেইন | ||||
২০১০ | লাইফ এক্সপ্রেস | ||||
২০১০ | বুম বুম বলে | ||||
২০১০ | বেদিনি | ||||
২০১১ | দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি | ||||
২০১১ | নেকলেস | ||||
২০১১ | আগুন পাখি | ||||
২০১১ | জিও কাকা | বাংলা | |||
২০১২ | চারুলতা | বাংলা | |||
২০১২ | আলাপ | ||||
২০১২ | মুক্তধারা | ||||
২০১২ | তিন কন্যা | ||||
২০১৩ | কাঠভেদু | ||||
২০১৩ | মিসেস সেন | ||||
২০১৩ | অলীক সুখ | ||||
২০১৩ | ভিলিয়ান | ||||
২০১৩ | চালাপর | ||||
২০১৩ | এ পলিটিক্যাল মার্ডার | ||||
২০১৪ | পারাপার | ||||
২০১৪ | টান | ||||
২০১৫ | বেলা শেষে | বাংলা | |||
২০১৫ | রাজকাহিনী | বাংলা | |||
২০১৬ | তদন্ত | ||||
২০১৬ | প্রাক্তন | বাংলা | |||
২০১৬ | রাতের রজনী গন্ধা | ||||
দ্বিতীয় বসন্ত | |||||
শেষ চিঠি | |||||
তিসরা কৌন | |||||
চক্রব্যুহ | |||||
স্পর্শ | অনন্য মামুন ও অভিনন্দন দত্ত | ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনা | |||
২০২৩ | দত্তা | বাংলা | বিজয়া | নির্মল চক্রবর্তী | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস দত্তা অবলম্বনে |
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.