আ.ক.ম.
মোজাম্মেল হক (জন্ম ১ অক্টোবর ১৯৪৬) হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবিদ। তিনি বর্তমানে গাজীপুর-১ আসনের সাংসদ ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। সংবিধান অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে ৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে একাদশ সংসদের সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি শপথবাক্য পাঠ করেন।
আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক | |
---|---|
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১২ জানুয়ারি, ২০১৪ – বর্তমান | |
প্রধানমন্ত্রী | শেখ হাসিনা |
গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ জানুয়ারি ২০০৮ – বর্তমান | |
পূর্বসূরী | রহমত আলী |
সংখ্যাগরিষ্ঠ | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | গাজীপুর | ১ অক্টোবর ১৯৪৬
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
দাম্পত্য সঙ্গী | লায়লা আরজুমান বানু |
মাতা | রাবেয়া খাতুন |
পিতা | ডা. আনোয়ার আলী |
পেশা | আইনজীবী |
আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক ১৯৪৬ সালের ১লা অক্টোবর গাজীপুর সদর উপজেলার দাখিণ খান গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আনোয়ার আলী ও মাতার নাম রাবেয়া খাতুন।তিনি ঐতিহ্যবাহী রাণী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় এর একজন কৃতি শিক্ষার্থী ছিলেন।
মোজাম্মেল হক ছাত্রাবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তৎকালীন গাজীপুর মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ৩ বার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪ বার পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে পৌর মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করে গাজীপুর-১ আসন থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৯-ও সালে গাজীপুর-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। এ সময় তিনি সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে ৬ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের ধর্মমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালযয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি গাজীপুরের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার পান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা পুরস্কার বিভাগে তিনি এ পুরস্কার প্রাপ্ত হন।
অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তাঁর ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত বই ‘বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ’-এ লেখেন যে মোজাম্মেল ১৯৭৪ সালে একজন নববিবাহিত বউকে কিছু দুর্বৃত্তদের সাথে মিলে ধর্ষণ করেন:
একদিন ঢাকার উত্তরে টঙ্গী এলাকায় একটি দেশব্যাপী সন্ত্রাস দমন সামরিক অভিযান (combing operation)-এর সময় মেজর নাসের যিনি বেঙ্গল ল্যান্সার্সের আরেকটি স্কোয়াড্রনের নেতৃত্বে ছিলেন, তিনি তিনজন তুচ্ছ দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় একজন ব্যক্তি ভেঙ্গে পড়ে এবং সেনা কর্মকর্তাদের একটি বিশেষ ভয়ঙ্কর ট্রিপল হত্যার কাহিনী বলে যা টঙ্গীকে গত শীতে কাঁপিয়ে তুলে। এটি প্রকাশিত হয় যে একটি নববিবাহিত দম্পতি একটি ট্যাক্সিতে করে তাদের বাড়িতে যাতায়াতের সময় শহরের অদূরে রাস্তার পাশে তাদের থামিয়ে আটক করা হয়। বর ও ট্যাক্সি চালককে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। কনে, যাকে একটি বিচ্ছিন্ন কুটিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাকে তার অপহরণকারীদের দ্বারা বারবার ধর্ষণ করা হয়েছিল। তিন দিন পর একটি ব্রিজের কাছে রাস্তার ওপর তার বিকৃত লাশ পাওয়া যায়।
অপরাধে তার অংশের কথা স্বীকার করে, দুর্বৃত্তটি সেনা সদস্যদের জানায় যে পুলিশি তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল যখন তারা জানতে পারে যে এই গুণ্ডাচক্রের রিং-লিডার তার বস, টঙ্গী আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল। ফারুকের মতে, স্বীকারোক্তিটি জিজ্ঞাসাবাদকারী অফিসার ইশতিয়াক নামের একজন যুবক লেফটেন্যান্টকে এতটাই ক্রোধান্বিত করেছিল যে ‘তিনি লোকটিকে এত জোরে লাথি মারতে শুরু করেছিলেন যে সে অভ্যন্তরীণ আঘাতে নিহত হয়।’ তিনি (ইশতিয়াক) তখন থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান।
গুণ্ডাটি যে সত্য বলেছে তা পুলিশ রেকর্ড থেকে নিশ্চিত হওয়ার পর মেজর নাসের মোজাম্মেলকে বিচারের জন্য ঢাকায় নিয়ে যান। ফারুকের মতে, মোজাম্মেল নাসেরকে তার মুক্তির জন্য তিন লক্ষ টাকা প্রস্তাব করেছিলেন। ‘এটাকে জনসাধারণের ব্যাপার বানায়ো না,’ আওয়ামী লীগ নেতা তাকে পরামর্শ (হুমকি) দিলেন। ‘আজ না হয় কাল তোমাকে যাই হোক আমাকে যেতে দিতে হবে। তাহলে কেন টাকাটা নিয়ে এটি ভুলে যাও না?’ নাসের, যিনি তাকে ঘুষ দেওয়ার এই নির্মম প্রচেষ্টায় বিক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, তিনি শপথ করেছিলেন যে তিনি মোজাম্মেলকে বিচারের মুখোমুখি করবেন এবং তার অপরাধের জন্য তাকে ফাঁসি দেবেন। তিনি তাকে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। ফারুক বলেন, কয়েকদিন পর শেখ মুজিবের সরাসরি হস্তক্ষেপে মোজাম্মেলকে মুক্তি দেওয়ায় তারা সবাই অবাক হয়েছিলেন। ‘আমি তোমাকে টাকা নিতে বলেছিলাম,’ মোজাম্মেল দম্ভস্বরে বললো। ‘তুমিই লাভবান হতে। এখন যেভাবেই হোক আমি মুক্তি পেয়েছি, তুমি কিছুই পাও নাই।’
ঘটনাটি ফারুক ও তার সহকর্মীদের স্তব্ধ করে দেয়। টঙ্গী তাদের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাড়ায়। ‘মনে হচ্ছিল আমরা এমন একটা সমাজে বাস করছি যেটা একটা অপরাধী সংগঠনের নেতৃত্বে। যেন বাংলাদেশ দখল করে নিয়েছে মাফিয়ারা। আমরা সম্পূর্ণরূপে স্বপ্নহারা হয়ে যাই। এখানে সরকার প্রধান খুন এবং অন্যান্য চরম জিনিসগুলোকে সাহায্য করে আসছিল যা থেকে তার আমাদের রক্ষা করার কথা ছিল। এটা গ্রহণযোগ্য ছিল না। আমরা ঠিক করেছি তাকে যেতেই হবে।’
মেজর ফারুক সেদিনই শেখ মুজিবকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। তিনি স্মরণ করে বলেন: ‘আমি আমার মেজাজ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি ক্যাপ্টেন শরিফুল হোসেনকে বললাম, “শরিফুল হোসেন। এটা একেবারেই অকেজো। চলো গিয়ে এই বেটাকে ছিটকে দেই।” তিনি বললেন, “হ্যাঁ স্যার। তবে এটা নিয়ে আরো একটু ভাবুন।” আমি বললাম, “ঠিক আছে, আমি ভেবে দেখব।”
হুমায়ুন আহমেদ তার দেয়াল উপন্যাসে মাসকারেনহাসের বইকে অনুসরণ করে নিজস্ব রচনাশৈলীতে এ ঘটনা তুলে ধরেন।
২০১৯ সালের ১৫ই ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক। কিন্তু ওই তালিকায় গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সংশোধনের জন্য উক্ত তালিকা স্থগিত করা হয়।
২০২১ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারী চলাকালে আ. ক. ম. মোজাম্মেল হকের টিকা নেয়ার এক মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাকে টিকা নেয়ার অভিনয় করতে দেখার ঐ ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যবহারকারীরা নানারকম মন্তব্য করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক জানান প্রথমে টিকা নেয়ার পর একজন সাংবাদিকের অনুরোধে ভিডিও করতে দেয়ার জন্য তিনি আবার টিকা নেয়ার অভিনয় করেছিলেন।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.