সিমোন বোলিভার (স্পেনীয়: Simón Bolívar) (২৪শে জুলাই, ১৭৮৩, কারাকাস, ভেনেজুয়েলা - ১৭ই ডিসেম্বর, ১৮৩০, সান্তা মার্তা, কলম্বিয়া) দক্ষিণ আমেরিকার একজন বিপ্লবী সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি ১৯শ শতকের শুরুতে স্পেনীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, পানামা এবং বলিভিয়া রাষ্ট্রগুলির সফল স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তাঁর পূর্ণ নাম সিমোন্ হোসে আন্তোনিও দে লা সান্তিসিমা ত্রিনিদাদ বোলিভার ই পোন্তে পালাসিওস ই ব্লাংকো (Simón José Antonio de la Santísima Trinidad Bolívar y Ponte Palacios y Blanco)। তাঁকে স্থানীয়ভাবে এল লিবের্তাদোর (মুক্তিদাতা) নামেও ডাকা হয়। এছাড়া তাঁকে দক্ষিণ আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন নামেও ডাকা হয়। তিনি ১৮১৯ থেকে ১৮৩০ সাল পর্যন্ত গ্রান কলম্বিয়া নামক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি এবং ১৮২৩ থেকে ১৮২৬ সাল পর্যন্ত পেরুর একনায়ক রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন।
সিমোন বোলিভার | |
---|---|
ভেনেজুয়েলার ২য় রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ আগস্ট ৬, ১৮১৩ – জুলাই ২, ১৮১৪ | |
পূর্বসূরী | ক্রিস্তোবাল মেন্দোসা |
কাজের মেয়াদ ফেব্রুয়ারি ১৫, ১৮১৯ – ডিসেম্বর ১৭, ১৮১৯ | |
উত্তরসূরী | হোসে আন্তোনিও পেস |
গ্রান কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি (কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, পানামা) | |
কাজের মেয়াদ December 17, 1819 – May 4, 1830 | |
উপরাষ্ট্রপতি | ফ্রান্সিসকো দে পাউলা সান্তানদের |
উত্তরসূরী | দোমিঙ্গো কাইসেদো |
বলিভিয়ার ১ম রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ August 12, 1825 – December 29, 1825 | |
উত্তরসূরী | আন্তোনিও হোসে দে সুক্রে |
পেরুর রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ February 17, 1824 – January 28, 1827 | |
পূর্বসূরী | হোসে বের্নার্দো দে তাগলে |
উত্তরসূরী | আন্দ্রেস দে সান্তা ক্রুস |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | কারাকাস, ভেনেজুয়েলা, স্পেনীয় সাম্রাজ্য | ২৪ জুলাই ১৭৮৩
মৃত্যু | ডিসেম্বর ১৭, ১৮৩০ সান্টা মার্তা, নুয়েভা গ্রানাদা | (বয়স ৪৭)
মৃত্যুর কারণ | যক্ষ্মা |
দাম্পত্য সঙ্গী | মারিয়া তেরেসা রোদ্রিগেস দেল তোরো ই আলাইসা |
ধর্ম | রোমান ক্যাথলিক |
স্বাক্ষর |
বোলিভার ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন স্পেনীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত নুয়েভা গ্রানাদা উপরাজ্যের কারাকাস শহরে (বর্তমান ভেনেজুয়েলা রাষ্ট্রের রাজধানী) এক অভিজাত স্পেনীয় বংশোদ্ভূত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তিনি বাবা-মাকে হারান। তাঁর একজন গৃহশিক্ষক সিমোন রোদ্রিগেস ফরাসি দার্শনিক জঁ-জাক রুসো-র ভাবশিষ্য ছিলেন। রোদ্রিগেসের সুবাদে বোলিভার ১৮শ শতকের উদারপন্থী মতবাদের সাথে পরিচিতি লাভ করেন। ১৬ বছর বয়সে বোলিভার উচ্চশিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে ইউরোপের স্পেনে গমন করেন। সেখানে তিনি তিন বছর কাটান এবং একজন অভিজাত স্পেনীয় পরিবারের কন্যার সাথে বিবাহ সম্পন্ন করে নববধূকে সাথে করে কারাকাসে ফেরত আসেন। বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় পীতজ্বরে বোলিভারের স্ত্রীর মৃত্যু হয়। স্ত্রীর মৃত্যু বোলিভারকে যৌবনকালেই রাজনৈতিক জীবনের দিকে ঠেলে দেয়। ১৮০৪ সালে বোলিভার আবার ইউরোপে ফেরত যান। এবার তিনি ফ্রান্সের প্যারিস নগরীতে গমন করেন। এবার গৃহশিক্ষক রোদ্রিগেসের নির্দেশনায় তিনি ইউরোপীয় যুক্তিবাদী চিন্তাবিদ যেমন জন লক, টমাস হবস, জর্জ-লুই ল্যক্লের্ক, জঁ ল্য রোঁ দালঁবের, ক্লোদ-আদ্রিয়াঁ এল্ভেসিউস, ভোলতের, মোঁতেসকিও ও রুসোর উপরে গভীর পড়াশোনা করেন। এদের মধ্যে মোঁতেসকিও ও রুসো তাঁর রাজনীতির উপরে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে ভলতের ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনদর্শনের পাথেয়। প্যারিসে অবস্থানকালে বোলিভারের সাথে জার্মান বিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার ফন হুমবোল্টের সাক্ষাৎ হয়। হুমবোল্ট সেসময় সদ্য স্পেনীয়ভাষী আমেরিকা সফর শেষ করে ইউরোপে ফেরত এসেছিলেন। তিনি বোলিভারকে বলেন যে স্পেনের উপনিবেশগুলি স্বাধীনতার জন্য পরিপক্কতা লাভ করেছে। বোলিভার ইতালির রোমে তাঁর বন্ধু রোদ্রিগেসের সাথে তাঁর মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার প্রতিজ্ঞা করেন এবং ১৮০৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় নগরীগুলি পরিদর্শন করে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকাতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর এক বছর পরে ১৮০৮ সালে ফ্রান্সের সামরিক শাসক নাপোলেওঁ বোনাপার্ত স্পেনের বিরুদ্ধে বিজয়লাভ করলে দক্ষিণ আমেরিকায় স্পেনের অস্থিতিশীল উপনিবেশগুলিতে স্পেনের কর্তৃত্ব খর্ব হয় এবং তারা এর সুযোগ নিয়ে বিদ্রোহ শুরু করে। ভেনেজুয়েলা সর্বপ্রথম উপনিবেশ হিসেবে ১৮১১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বোলিভার ১৮১০ থেকে ১৮১৪ সালের মধ্যে স্পেনের বিরুদ্ধে দুইটি স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন ও দুইবারই পরাজিত হন। দ্বিতীয় পরাজয়ের পরে তিনি প্রথমে জামাইকা ও পরে হাইতিতে পালিয়ে যান।
১৮১৯ সালে বোলিভার নুয়েভা গ্রানাদাতে আবারও একটি সাহসী আক্রমণ চালান। এই রাজ্যটিতে আধুনিক ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও পানামা রাষ্ট্রগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮১৯ সালের আগস্ট মাসে বোলিভারের সেনারা অপেক্ষাকৃত অনেক বড় স্পেনীয় সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। এরপর বোলিভার ঘোষণা দেন নুয়েভা গ্রানাদা একটি নতুন প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে, যার নাম গ্রান কলম্বিয়া। তিনি নিজেকে গ্রান কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। ১৮২২ সাল নাগাদ সমস্ত গ্রান কলম্বিয়া স্পেনের শাসন থেকে মুক্তিলাভ করে।
বোলিভার এরপর পেরুর দিকে মনোনিবেশ করেন। ১৮২৪ সালে বোলিভারের সেনারা সেখানে স্পেনীয় সেনাদের পরাজিত করে। ১৮২৫ সালে বোলিভারের অধীনস্থ একজন কর্মকর্তা দক্ষিণ আমেরিকাতে স্পেনীয় শাসনাধীন সর্বশেষ অঞ্চল "ঊর্ধ্ব পেরু"-কে স্বাধীন করে। বোলিভারের সম্মানে এই নব্যস্বাধীন অঞ্চলের নাম দেওয়া হয় "বোলিভিয়া" বা বলিভিয়া।
কিন্তু বোলিভারের সমর্থকেরা দক্ষিণ আমেরিকাতে স্থিতিশীল সরকার গঠনে তাঁকে সহায়তা প্রদানে বিশ্বস্ত ছিলেন না। বোলিভার গ্রান কলম্বিয়ার এই নব্যস্বাধীন অঞ্চলগুলির মধ্যে মৈত্রী চেয়েছিলেন। কিন্তু এর পরিবর্তে এগুলি নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৮২৯ সালে ভেনেজুয়েলা ও ১৯৩০ সালে ইকুয়েডর গ্রান কলম্বিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিক্ত ও ভগ্নহৃদয়ে সিমোন বোলিভার রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং পদত্যাগের মাত্র ৭ মাস পরে ১৮৩০ সালে কলম্বিয়ার সান্তা মার্তা শহরের কাছে এক বন্ধুর জমিদারিতে অবস্থানরত অবস্থায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
বোলিভার মুক্তি ও সাম্যের সোচ্চার সমর্থক ছিলেন। ভেনেজুয়েলা আনুষ্ঠিকভাবে ক্রীতদাস প্রথা রদ করার বহু আগেই তিনি তাঁর নিজস্ব ক্রীতদাসদের মুক্তি প্রদান করেছিলেন। তিনি দক্ষিণ আমেরিকান প্রজাতন্ত্রগুলির মধ্যকার ঐক্যের এক অগ্রগণ্য প্রবক্তা ছিলেন।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article সিমোন বোলিভার, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.