ক্রিপ্টন: গ্যাসীয় মৌলিক পদার্থ

ক্রিপ্টন (প্রাচীন গ্রীক থেকে: κρυπτός, রোমানাইজড: ক্রিপ্টোস 'দ্য হিডেন ওয়ান') হলো একটি রাসায়নিক মৌল যার প্রতীক Kr এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৩৬। এটি একটি বর্ণহীন, গন্ধহীন, স্বাদহীন নিষ্ক্রিয় গ্যাস। বায়ুমণ্ডলে ক্রিপ্টন খুবই সামান্য পরিমাণে থাকে। একে বিরল গ্যাসও বলে। ফ্লুরোসেন্ট বাতিতে অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাসের সাথে ক্রিপ্টনও ব্যবহৃত হয়। ক্রিপ্টন রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়। তাই একে নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে।

ক্রিপ্টন   ৩৬Kr
ক্রিপ্টন: ইতিহাস, আবিষ্কার, বৈশিষ্ট্য
ক্রিপ্টন: ইতিহাস, আবিষ্কার, বৈশিষ্ট্য
ক্রিপ্টনের বর্ণালী রেখা
ক্রিপ্টন
উচ্চারণ/ˈkrɪptɒn/ (KRIP-ton)
নাম, প্রতীকক্রিপ্টন, Kr
উপস্থিতিবর্ণহীন গ্যাস, উচ্চ বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে একটি সাদা আভা প্রদর্শন করে
পর্যায় সারণিতে ক্রিপ্টন
হাইড্রোজেন হিলিয়াম
লিথিয়াম বেরিলিয়াম বোরন কার্বন নাইট্রোজেন অক্সিজেন ফ্লোরিন নিয়ন
সোডিয়াম ম্যাগনেসিয়াম অ্যালুমিনিয়াম সিলিকন ফসফরাস সালফার ক্লোরিন আর্গন
পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম স্ক্যান্ডিয়াম টাইটেনিয়াম ভ্যানাডিয়াম ক্রোমিয়াম ম্যাঙ্গানিজ আয়রন Cobalt Nickel Copper Zinc Gallium Germanium Arsenic Selenium Bromine Krypton
Rubidium Strontium Yttrium Zirconium Niobium Molybdenum Technetium Ruthenium Rhodium Palladium Silver Cadmium Indium Tin Antimony Tellurium Iodine Xenon
Caesium Barium Lanthanum Cerium Praseodymium Neodymium Promethium Samarium Europium Gadolinium Terbium Dysprosium Holmium Erbium Thulium Ytterbium Lutetium Hafnium Tantalum Tungsten Rhenium Osmium Iridium Platinum Gold Mercury (element) Thallium Lead Bismuth Polonium Astatine Radon
Francium Radium Actinium Thorium Protactinium Uranium Neptunium Plutonium Americium Curium Berkelium Californium Einsteinium Fermium Mendelevium Nobelium Lawrencium Rutherfordium Dubnium Seaborgium Bohrium Hassium Meitnerium Darmstadtium Roentgenium Copernicium Nihonium Flerovium Moscovium Livermorium Tennessine Oganesson
Ar

Kr

Xe
ব্রোমিনক্রিপ্টনরুবিডিয়াম
পারমাণবিক সংখ্যা৩৬
আদর্শ পারমাণবিক ভর৮৩.৭৯৮
মৌলের শ্রেণীনিষ্ক্রিয় গ্যাস
গ্রুপগ্রুপ  ১৮;18 (নিষ্ক্রিয় গ্যাস)
পর্যায়পর্যায় ৪
ব্লক  p-block
ইলেকট্রন বিন্যাস[Ar] 3d10 4s2 4p6
প্রতিটি কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা২, ৮, ১৮, ৮
ভৌত বৈশিষ্ট্য
দশাগ্যাস
গলনাঙ্ক১১৫.৭৯ কে ​(-১৫৭.৩৬ °সে, ​-২৫১.২৫ °ফা)
স্ফুটনাঙ্ক১১৯.৯৩ K ​(-১৫৩.২২ °সে, ​-২৪৪.১২ °ফা)
ঘনত্ব৩.৭৪৯ গ্রা/লি (০ °সে-এ, ১০১.৩২৫ kPa)
তরলের ঘনত্বb.p.: 2.413 g·cm−৩
ত্রৈধ বিন্দু১১৫.৭৭৫ কে, ​৭৩.২ kPa
পরম বিন্দু২০৯.৪১ কে, ৫.৫০ MPa
ফিউশনের এনথালপি১.৬৪ kJ·mol−১
বাষ্পীভবনের এনথালপি৯.০৮ kJ·mol−১
তাপ ধারকত্ব5R/2 = ২০.৭৮৬ J·mol−১·K−১
বাষ্প চাপ
P (Pa) ১০ ১০০ ১ k ১০ k ১০ k
at T (K) ৫৯ ৬৫ ৭৪ ৮৪ ৯৯ ১২০
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য
জারণ অবস্থা২, ১,
তড়িৎ-চুম্বকত্ব৩.০০ (পলিং স্কেল)
সমযোজী ব্যাসার্ধ১১৬±৪ pm
ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ২০২ pm
বিবিধ
কেলাসের গঠন ​মুখ-কেন্দ্রিক ঘনক
[[File:মুখ-কেন্দ্রিক ঘনক|50px|alt=মুখ-কেন্দ্রিক ঘনক জন্য কেলাসের গঠন{{{name}}}|মুখ-কেন্দ্রিক ঘনক জন্য কেলাসের গঠন{{{name}}}]]
শব্দের দ্রুতি(গ্যাস, 23 °C) ২২০, (তরল) ১১২০ m·s−১
তাপীয় পরিবাহিতা৯.৪৩×১০-3  W·m−১·K−১
চুম্বকত্বডায়াচৌম্বকত্ব
ক্যাস নিবন্ধন সংখ্যা7439-90-9
ইতিহাস
আবিষ্কারউইলিয়াম রামসে এবং মরিস ট্র্যাভার্স (১৮৯৮)
প্রথম বিচ্ছিন্ন করেনউইলিয়াম রামসে এবং মরিস ট্র্যাভার্স (১৮৯৮)
ক্রিপ্টনের আইসোটোপ
iso NA অর্ধায়ু DM DE (MeV) DP
৭৮Kr ০.৩৫% >১.১×১০২০ y β+β+ ২.৮৪৬ ৭৮Se
৭৯Kr syn ৩৫.০৪ h ε - ৭৯Br
β+ ০.৬০৪ ৭৯Br
γ ০.২৬, ০.৩৯, ০.৬০ -
৮০Kr ২.২৫% Kr ৪৪টি নিউট্রন নিয়ে স্থিত হয়
৮১Kr trace ২.২৯×১০ y ε - ৮১Br
γ ০.২৮১ -
৮২Kr ১১.৬% Kr ৪৬টি নিউট্রন নিয়ে স্থিত হয়
৮৩Kr ১১.৫% Kr ৪৭টি নিউট্রন নিয়ে স্থিত হয়
৮৪Kr ৫৭.০% Kr ৪৮টি নিউট্রন নিয়ে স্থিত হয়
৮৫Kr syn ১০.৭৫৬ y β ০.৬৮৭ ৮৫Rb
৮৬Kr ১৭.৩% Kr ৫০টি নিউট্রন নিয়ে স্থিত হয়
· তথ্যসূত্র

অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো ক্রিপ্টন গ্যাস আলোর প্রযুক্তি এবং ফটোগ্রাফিতে ব্যবহৃত হয়। ক্রিপ্টন আলোতে অনেকগুলি বর্ণালী রেখা রয়েছে এবং ক্রিপ্টন প্লাজমা উজ্জ্বল, উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাস লেজারে (ক্রিপ্টন আয়ন এবং এক্সাইমার লেজার) কাজে লাগে। বর্ণালী রেখাগুলির প্রতিটি একটি একক বর্ণালী রেখাকে অনুরণিত করে এবং প্রসারিত করে। ক্রিপ্টন ফ্লোরাইড একটি দরকারী লেজার মাধ্যমও তৈরি করে। ১৯৬০ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত, মিটারের আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞাটি ক্রিপ্টন-৮৬ এর একটি বর্ণালী রেখার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, কারণ ক্রিপ্টন ডিসচার্জ নলগুলি উচ্চ শক্তি সম্পন্ন এবং এতে অপেক্ষাকৃত সহজে কাজ করা যায়।

ইতিহাস

আবিষ্কার

১৮৯৮ সালে ব্রিটেনে স্কটিশ রসায়নবিদ উইলিয়াম রামসে (১৮৫২-১৯১৬) এবং ইংরেজ রসায়নবিদ মরিস ট্র্যাভার্স (১৮৭২-১৯৬১) তরল বায়ুর প্রায় সমস্ত উপাদানকে বাষ্পীভূত করার পর তার অবশিষ্টাংশে ক্রিপ্টন আবিষ্কার করেছিলেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে একই বিজ্ঞানীদের দ্বারা অনুরূপ পদ্ধতির সাহায্যে নিয়ন গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছিল। ১৯০৪ সালে উইলিয়াম রামসে ক্রিপ্টনসহ কয়েকটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস আবিষ্কারের জন্য রসায়নে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন।

১৯৬০ সালে ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরো অফ ওয়েটস অ্যান্ড মেজারস মিটারকে ১,৬৫০,৭৬৩.৭৩ আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে। যেটি আইসোটোপ ক্রিপ্টন-৮৬র পরমাণু কক্ষের স্তরের মধ্যে শক্তি পরিবর্তনের ফলে বায়ুশূন্যে নির্গত আলো সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এই সংজ্ঞা ১৮৮৯ সালের আন্তর্জাতিক প্রোটোটাইপ মিটারকে প্রতিস্থাপিত করেছে, যা সেভরেসে অবস্থিত একটি ধাতব দণ্ডের মাপের সমান ছিল। এটি লাল ক্যাডমিয়াম বর্ণালী রেখার উপর ভিত্তি করে অ্যাংস্ট্রমের ১৯২৭ সালের সংজ্ঞাটিকেও বাতিল করে দেয়। অ্যাংস্ট্রমের মান দাঁড়ায়, ১ অ্যাংস্ট্রম = ১০১০ মিটার। ১৯৮৩ সালের অক্টোবর সম্মেলন পর্যন্ত ক্রিপ্টন-৮৬ সংজ্ঞাটি স্থায়ী ছিল। এরপরে সংজ্ঞাটি আবার পরিবর্তিত হয়ে যায়। ১/২৯৯,৭৯২,৪৫৮ সেকেন্ডে আলো শূন্যে যে দূরত্ব অতিক্রম করে সেই দূরত্বকে এক মিটার ধরা হয়।

বৈশিষ্ট্য

ক্রিপ্টনকে বেশ কয়েকটি বর্ণালী রেখা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো সবুজ এবং হলুদ রঙের বর্ণালী রেখা। ইউরেনিয়াম নিউক্লীয় বিভাজনে অন্যতম উপাদান হিসাবে ক্রিপ্টন তৈরি হয়। কঠিন অবস্থায় ক্রিপ্টন দেখতে সাদা রঙের। এই অবস্থায় ক্রিপ্টনের স্ফটিক কাঠামোকে মুখ-কেন্দ্রিক ঘনক (FCC) হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যা সব নিষ্ক্রিয় গ্যাসের স্ফটিক কাঠামোর গঠনের মতো, শুধু হিলিয়াম ছাড়া। হিলিয়ামের ষড়ভুজাকার স্ফটিক কাঠামো রয়েছে।

আইসোটোপ

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ক্রিপ্টন পাঁচটি স্থিতিশীল প্রাকৃতিক আইসোটোপ এবং একটি আইসোটোপ (78Kr), যেটি দীর্ঘ অর্ধ-জীবন (৯.২×১০২১ বছর) নিয়ে গঠিত। এই আইসোটোপটিকে স্থিতিশীল বলে বিবেচনা করা হয়। (সমস্ত আইসোটোপের মধ্যে এই আইসোটোপের দ্বিতীয় দীর্ঘতম অর্ধ-জীবন রয়েছে। এটি ক্ষয় হবার সময় দুটি ইলেকট্রন শোষন করে 78Se তে রূপান্তরিত হয়)। এছাড়াও, প্রায় ত্রিশটি অস্থায়ী আইসোটোপ এবং আইসোমার রয়েছে। মহাজাগতিক রশ্মি বিকিরণ দ্বারা 80Kr এর থেকে খুবই অল্প মাত্রায় উৎপাদিত 81Kr একটি মহাজাগতিক নিউক্লাইড। এটি প্রকৃতিতেও দেখা যায়। এই আইসোটোপটি তেজস্ক্রিয়। এর অর্ধ-জীবন ২৩০,০০০ বছর। ক্রিপ্টন অত্যন্ত উদ্বায়ী এবং কাছাকাছি ভূ-পৃষ্ঠের জলে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকতে পারে না, তবে পুরানো (৫০,০০০-৮০০,০০০ বছর) ভূগর্ভস্থ জলের বয়স নির্ধারণের জন্য 81Kr এর পরিমাপ করা হয়।

85Kr এই আইসোটোপটি হলো একটি তেজস্ক্রিয় নিষ্ক্রিয় গ্যাস যার অর্ধ-জীবন ১০.৭৬ বছর। এটি ইউরেনিয়াম এবং প্লুটোনিয়ামের বিভাজনের দ্বারা উৎপন্ন হয়, যেমন পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার সময় এবং পারমাণবিক চুল্লিতে এটি উৎপন্ন হয়ে থাকে। পারমাণবিক চুল্লির জ্বালানী দণ্ডের পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের সময় 85Kr তৈরি হয়। পরিবাহী মিশ্রণের কারণে উত্তর মেরুতে এর ঘনত্ব দক্ষিণ মেরুর তুলনায় শতকরা ৩০ ভাগ বেশি।

রসায়ন

অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো, ক্রিপ্টন গ্যাস রাসায়নিকভাবে বিক্রিয়াশীল নয়। এটি অত্যন্ত নিষ্ক্রিয়। ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত কোন নিষ্ক্রিয় গ্যাসের যৌগ সংশ্লেষ করা সম্ভব হয়নি।

১৯৬২ সালে জেনন যৌগগুলির প্রথম সফল সংশ্লেষণের পরে, ১৯৬৩ সালে ক্রিপ্টন ডাইফ্লুরাইড (KrF2) সংশ্লেষণ করা হয়। একই বছরে বিজ্ঞানী গ্রোস এবং তার সহকর্মী মিলে ক্রিপ্টন টেট্রাফ্লুরাইড (KrF4) সংশ্লেষণ করার দাবী করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে একটি ভুল শনাক্তকরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। চরম পরিস্থিতিতে, ক্রিপ্টন ফ্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া করে নিম্নলিখিত সমীকরণ অনুসারে ক্রিপ্টন ডাইফ্লুরাইড (KrF2) গঠন করে:

    ক্রিপ্টন: ইতিহাস, আবিষ্কার, বৈশিষ্ট্য 

ক্রিপ্টন ফ্লোরাইড লেজারে ক্রিপ্টন গ্যাস উৎস থেকে শক্তি শোষণ করে। যার ফলে ফ্লোরিন গ্যাসের সাথে ক্রিপ্টন বিক্রিয়া করে, ক্রিপ্টন ফ্লোরাইড উৎপন্ন করে। এটি একটি অস্থায়ী জটিল যৌগ:

    ক্রিপ্টন: ইতিহাস, আবিষ্কার, বৈশিষ্ট্য 

জটিল যৌগটি স্বতঃস্ফূর্ত বা উদ্দীপিত নির্গমনের মধ্য দিয়ে গিয়ে শক্তি হ্রাস করে একটি স্বল্প-সুস্থিত অবস্থায় আসে। পরে ভেঙ্গে গিয়ে পরমাণুতে পরিণত হয়:

    ক্রিপ্টন: ইতিহাস, আবিষ্কার, বৈশিষ্ট্য 

এর ফলে একটি এক্সিপ্লেক্স লেজার তৈরি হয় যেটি বর্ণালীর অতিবেগুনী অংশের কাছে ২৪৮ ন্যনোমিটার শক্তি বিকিরণ করে। এই শক্তি জটিল যৌগটির সুস্থিত অবস্থা এবং উত্তেজিত অবস্থার শক্তির পার্থক্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

ফ্লোরিন ছাড়া অন্যান্য পরমাণুর সাথে ক্রিপ্টনের যৌগও আবিষ্কৃত হয়েছে। ক্রিপ্টন হাইড্রাইড (Kr(H2)4) স্ফটিক ৫ GPa-এর উপর চাপে তৈরি হতে পারে। এই যৌগটির একটি মুখ-কেন্দ্রিক ঘন কাঠামো রয়েছে যেখানে ক্রিপ্টন অষ্টতলক এলোমেলোভাবে হাইড্রোজেন অণু দ্বারা বেষ্টিত থাকে।

ক্রিপ্টন: ইতিহাস, আবিষ্কার, বৈশিষ্ট্য 
Kr(H2)4 এবং H2 ডায়মন্ড অ্যাভিল সেলের (DAC) গঠনযুক্ত কঠিন পদার্থ গঠিত।
ক্রিপ্টন: ইতিহাস, আবিষ্কার, বৈশিষ্ট্য 
Kr(H2)4 এর গঠন। ক্রিপ্টন অষ্টতলক (সবুজ) এলোমেলোভাবে হাইড্রোজেন অণু দ্বারা বেষ্টিত।
ক্রিপ্টন: ইতিহাস, আবিষ্কার, বৈশিষ্ট্য 
ক্রিপ্টন এর ইলেক্ট্রন বিন্যাস

এছাড়াও ক্রিপ্টন অক্সোঅ্যাসিডের বেরিয়াম লবণের অস্তিত্বের কথা বলা হলেও এটি প্রমাণিত নয়। ArKr+ এবং KrH+ এই বহু পারমাণবিক আয়নগুলি নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে এবং KrXe অথবা KrXe+ আয়নের সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

B(OTeF
5
)
3
-এর সাথে KrF
2
-এর বিক্রিয়া করলে একটি অস্থির যৌগ Kr(OTeF
5
)
2
উৎপন্ন হয়। সেই যৌগে একটি ক্রিপ্টন-অক্সিজেন বন্ধনী থাকে। ক্যাটায়ন [HC≡N–Kr–F]+
-তে একটি ক্রিপ্টন-নাইট্রোজেন বন্ধন পাওয়া যায়। এটি −৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের এর নিচে KrF
2
-এর সাথে [HC≡NH]+
[AsF
6
]-এর বিক্রিয়া দ্বারা উৎপন্ন হয়। HKrCN এবং HKrC≡CH (ক্রিপ্টন হাইড্রাইড-সায়ানাইড এবং হাইড্রোক্রিপ্টোঅ্যাসিটিলিন) ৪০ ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রা পর্যন্ত স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।

প্রাকৃতিক লভ্যতা

হিলিয়াম ছাড়া আমাদের পৃথিবী তার গঠনের সময় উপস্থিত সমস্ত নিষ্ক্রিয় গ্যাসকে আজও ধরে রেখেছে। বায়ুমণ্ডলে ক্রিপ্টনের ঘনত্ব দশ লক্ষ ভাগে প্রায় এক ভাগ (১ পিপিএম)। তরল বায়ু থেকে আংশিক পাতনের সাহায্যে ক্রিপ্টন নিষ্কাশন করা যায়। মহাকাশে ক্রিপ্টনের পরিমাণ অনিশ্চিত। এর কারণ হলো মহাকাশে ক্রিপ্টনের পরিমাপ করা হয় উল্কাপাত এবং সৌর বায়ুর পরিমাণ থেকে। এই পরিমাপ মহাকাশে প্রচুর পরিমাণে ক্রিপ্টনের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়।

ব্যবহার

ক্রিপ্টন: ইতিহাস, আবিষ্কার, বৈশিষ্ট্য 
ক্রিপ্টন গ্যাসের আলো

আয়নযুক্ত ক্রিপ্টন গ্যাসের আলোর নিঃসরণ সাদা রঙের হয়। তাই ক্রিপ্টন গ্যাসপূর্ণ বাল্ব ফটোগ্রাফিতে সাদা আলোর উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। উচ্চ গতির ফটোগ্রাফির জন্য কিছু ফটোগ্রাফিক ফ্ল্যাশে ক্রিপ্টন ব্যবহার করা হয়। ক্রিপ্টন গ্যাসকে পারদ বাষ্পের সাথে মিশিয়ে উজ্জ্বল তৈরি করা যায়। এইসব আলো উজ্জ্বল সবুজ-নীল আভায় জ্বলে।

বেশি দক্ষতার ফ্লুরোসেন্ট বাতিতে আলো উৎপন্ন করতে ক্রিপ্টন গ্যাসকে আর্গনের সাথে মেশানো হয়। এতে বিদ্যুৎ শক্তির খরচ কমে। তবে আলোর পরিমাণও কমে। ক্রিপ্টনের দাম আর্গনের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি। ভাস্বর বাতির ফিলামেন্টের বাষ্পীভবন কমাতে এবং উচ্চতর তাপমাত্রায় আলো দিতে জেননের সাথে ক্রিপ্টনও ব্যবহার করা হয়।

ক্রিপ্টনের সাদা আলোর বিচ্ছুরণ কখনও কখনও "নিয়ন" গ্যাস নলে একটি শৈল্পিক প্রভাব আনতে ব্যবহৃত হয়। ক্রিপ্টনের লাল বর্ণালী আলোতে নিয়নের তুলনায় অনেক বেশি আলোক শক্তি থাকে। এই কারণে উচ্চ-শক্তির লাল লেজার আলো তৈরি করতে প্রায়শই ক্রিপ্টন গ্যাস ব্যবহার করা হয়।

ক্রিপ্টন ফ্লোরাইড লেজার পারমাণবিক সংযোজন শক্তি গবেষণায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই লেজার উচ্চ শক্তি সম্পন্ন ও ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের হয়।

পরীক্ষামূলক কণা পদার্থবিদ্যায় তরল ক্রিপ্টন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্যালোরিমিটার তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো CERN-এ NA48 পরীক্ষার ক্যালোরিমিটার। এতে প্রায় ২৭ টন তরল ক্রিপ্টন থাকে। তবে এই ব্যবহার বিরল। ক্রিপ্টনের থেকে তরল আর্গন দামে সস্তা হয়।

ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (MRI) এর প্রয়োগ করে বায়ু পথের যে ছবি তোলা হয় তাতে ক্রিপ্টন-৮৩ ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে, এটি বায়ুপথের জলাকর্ষী এবং জলবিকর্ষী পৃষ্ঠের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।

শরীরের বিশদ অভ্যন্তরীণ ছবি পেতে যে কম্পিউটেড টমোগ্রাফি বা CT স্ক্যান করা হয় তাতে পুরোপুরি জেনন গ্যাস ব্যবহার করলে গ্যাসের আংশিক চাপ বাড়ার জন্য রোগীর অসুবিধা হয়। তাই শতকরা ৩০ ভাগ জেনন এবং শতকরা ৩০ ভাগ ক্রিপ্টনের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ক্ষণস্থায়ী আইসোটোপ ক্রিপ্টন-৮১এম ফুসফুসের স্ক্যানের সময় ওষুধে ব্যবহৃত হয়। পারমাণবিক জ্বালানি সনাক্ত করতে অনেক সময় বায়ুমণ্ডলে ক্রিপ্টন-৮৫-এর পরিমাণ মাপা হয়। ক্রিপ্টন-৮৫ আইসোটোপের আয়ু স্বল্প। তাই পারমাণবিক চুল্লীর তেজস্ক্রিয় বিকিরণ আটকাতে যে সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেগুলি অপসারণ করা হলে ক্রিপ্টন-৮৫র পরিমাণ বাড়ে।

জানালা বা দরজার কাচের মধ্যে একটি অন্তরক গ্যাস হিসাবে ক্রিপ্টন মাঝে মাঝে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কোনো কোনো মহাকাশযানে বৈদ্যুতিক চালনার সরঞ্জামে ক্রিপ্টন গ্যাস প্রপেলান্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

সতর্কতা

ক্রিপ্টন বিষাক্ত নয়। তবে এটি শ্বাসরোধকারী। ক্রিপ্টন গ্যাস তেল, চর্বি প্রভৃতি অজৈব পদার্থে দ্রবীভূত হয় এই কারণে ক্রিপ্টনের উল্লেখযোগ্য চেতনানাশক প্রভাব রয়েছে, যদিও এই প্রক্রিয়াটি এখনও সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানীদের কাছে পরিষ্কার নয়। বায়ুর তুলনায় ক্রিপ্টনের চেতনানাশক ক্ষমতা প্রায় সাত গুণ বেশি। শতকরা ৫০ ভাগ ক্রিপ্টন এবং শতকরা ৫০ ভাগ বায়ুর মিশ্রণে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর। খানিকটা চার গুণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে শ্বাস নেওয়ার মতো। এতে চেতনানাশক অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিটি ৩০ মিটার (১০০ ফুট) গভীরতায় স্কুবা ডাইভিংয়ের সাথে তুলনীয়। এটি যে কোন মানুষের স্বাভাবিক শ্বাস প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।

তথ্যসূত্র

Tags:

ক্রিপ্টন ইতিহাসক্রিপ্টন আবিষ্কারক্রিপ্টন বৈশিষ্ট্যক্রিপ্টন ব্যবহারক্রিপ্টন সতর্কতাক্রিপ্টন তথ্যসূত্রক্রিপ্টন বহিঃসংযোগক্রিপ্টননিষ্ক্রিয় গ্যাসপারমাণবিক সংখ্যারাসায়নিক মৌল

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরপর্তুগাল জাতীয় ফুটবল দলসৌদি আরবের ইতিহাসশেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডদোয়াধর্মীয় জনসংখ্যার তালিকাকৃষ্ণপিংক ফ্লয়েডভারতের জাতীয় পতাকাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহবাংলাদেশ পুলিশবিজয় দিবস (বাংলাদেশ)বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগঙ্গা নদীকালেমাবাংলাদেশের উপজেলাজীবনদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধমৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাস (উপাত্ত পাতা)আমাজন অরণ্যবাংলাদেশ বিমান বাহিনীঅস্ট্রেলিয়া (মহাদেশ)জন্ডিসমুজিবনগর সরকারকারাগারের রোজনামচাহামদক্ষিণ কোরিয়াপ্রীতি জিনতামল্লিকা সেনগুপ্তরাজশাহীগুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রীয় রোগলক্ষণসমষ্টি সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস ২স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রদুবাইপশ্চিমবঙ্গবেগম রোকেয়াবসন্ত উৎসবমূত্রনালীর সংক্রমণআরবি ভাষামুহাম্মাদ ফাতিহখালেদা জিয়াবারাসাত লোকসভা কেন্দ্রদেশ অনুযায়ী ইসলামআলাউদ্দিন খিলজিইউসুফকলকাতাভৌগোলিক নির্দেশকসাইবার অপরাধটিম ডেভিডলাহোর প্রস্তাববদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাদের তালিকাতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ব্রাহ্মী লিপিরশিদ চৌধুরীবাংলাদেশবাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২তাহাজ্জুদসরকারসূরা ক্বদরডেঙ্গু জ্বরপিঁয়াজখেজুরকোকা-কোলাশিল্প বিপ্লবভিটামিনফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালের তালিকাজাতিসংঘবাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীগাজওয়াতুল হিন্দবাংলাদেশের নদীবন্দরের তালিকাবিশেষ্যপিনাকী ভট্টাচার্যমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবাংলাদেশের পোস্ট কোডের তালিকাশাকিব খানমালাউইনামাজের সময়সমূহভাইরাসবাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চলঢাকা বিভাগ🡆 More