সেফালোকর্ডাটা: কর্ডাটার উপপর্ব

সেফালোকর্ডাটা প্রাণী রাজ্যের মধ্যে ছোট একটি উপপর্ব। এদের আরেক নাম এক্রেনিয়া। এ উপপর্বের প্রাণিদেরকে সেফালোকর্ডেট বলা হয়। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ৩৩ প্রজাতির সেফালোকর্ডেট শনাক্ত করা হয়েছে। সেফালোকর্ডাটা শব্দটি গ্রিক শব্দ থেকে উদ্ভূত (kephale = মাথা, chorda = রজ্জু) সেফালোকর্ডাটা উপপর্বের প্রাণীরা ভার্টিব্রাটা পর্বের প্রাণীদের কাছাকাছি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। অর্থাৎ, ইনভার্টিব্রাটা ও ভার্টিব্রাটা প্রাণীর সূচনাসেতু হলো সেফালোকর্ডাটা।

সেফালোকর্ডাটা: বৈশিষ্ট্য, জীবনচক্র, খাদ্য
সেফালোকর্ডাটা

বৈশিষ্ট্য

১. সেফালোকর্ডাটা উপপর্বের সদস্যরা নটোকর্ড ধারণ করে, ডর্সাল নামক ফাঁপা স্নায়ুরজ্জু বিদ্যমান ও ফিল্টার ফিডিং এর জন্য ফ্যারিঞ্জিয়াল স্লিট রয়েছে। পরিণত বয়সে শরীরের পেছনে লেজ বিদ্যমান। এদের পাখনাও রয়েছে।

২. নটোকর্ড বিদ্যমান। দেহের সম্মুখ থেকে পশ্চাৎ প্রান্ত পর্যন্ত নটোকর্ড প্রসারিত। শরীরে এপেন্ডিজ নেই।

৩. এদের শরীর এককোষীয়, সিলিয়াবিহীন এপিডার্মিস, ডার্মিস, যোজক টিস্যু, প্যারেইটাল পেট্রোনিয়ামে গঠিত। বহিঃকঙ্কাল নেই। এনটেরোসিলিক সিলোম উপস্থিত।

৪. শরীরে বদ্ধ রক্তসংবহন ব্যবস্থা রয়েছে। গিল শ্বসনকার্যে অংশ নেয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ শ্বসন অঙ্গ নেই ও হৃৎপিণ্ড নেই। এদের মস্তিষ্কও নেই। যকৃতে পোর্টাল ব্যবস্থা বিদ্যমান। বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন ব্যবস্থাও রয়েছে।

৫. দুই জোড়া সেরেব্রাল ও কয়েক জোড়া সুষুম্না স্নায়ু উপস্থিত৷

৬. যৌন জনন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে।

৭. এ পর্বের প্রাণীরা প্রচুর ঘন হয়ে বসবাস করে। প্রায় ৯০০০ প্রাণী মিলে এক বর্গ মিটার এলাকায় বাস করে।

জীবনচক্র

প্রজনন ও নিষেকের মাধ্যমে লার্ভা দশার সূচনার মাধ্যমে জীবনচক্র শুরু হয়।ডিমের মাধ্যমে সেফালোকর্ডাটা উপপর্বের প্রাণী জননে অংশ নেয়। জনন প্রকৃতি যৌন। ডিমের ব্যাস প্রায় ০.০০৩৯৪ মাইক্রোমিটার এবং এতে কুসুম বিদ্যমান। পানির অভ্যন্তরে এ উপপর্বের প্রাণীরা ডিম্বাণু ও শুক্রাণু ছেড়ে দেয়। গ্রীষ্মকালে প্রজননকাল প্রায় কয় মাস কিন্তু নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় এ সময় খানিক কম।

নিষেকের পরে ব্লাস্টুলা গঠিত হয়। এরপরে এটির ফলে রেডিয়াল ক্লিভেজের সূচনা ঘটে। রেডিয়াল ক্লিভেজ গঠনের পরে গ্যাস্ট্রুলেশন ঘটে ও তখন সেটি গ্যাস্ট্রুলায় রূপান্তরিত হয়। এরপরে স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়ায় একটি লার্ভা তৈরি হয়। লার্ভার সবচেয়ে বড় মুখটি বাম দিকে অবস্থিত। এর সাথে এক সারি গিল স্লিট উৎপন্ন হয় এবং তখন থেকে লার্ভা খাদ্যগ্রহণ শুরু করে। পরবর্তীতে দেহের ডান দিকে আরো গিল স্লিটের উৎপত্তি ঘটে ও গিল স্লিটের নতুন সারি তৈরি হয়। আরো ১২-১৫ জোড়া গিল স্লিট তৈরি হবার পরে লার্ভাটি তরুণ হয়। এভাবে লার্ভাটির রূপান্তর দশা শেষ হয়। এ রূপান্তর দশাটি আসলে ফ্যারিংসের চারপাশের এপিডার্মিস বৃদ্ধি করে এট্রিয়ামের গঠন উন্নত করে। অতঃপর গিল স্লিট আলাদা হয় ও আবার নতুন গিল স্লিট তৈরি হয়। এরপর থেকে প্রাণীটি শুধু দৈর্ঘ্যে বড় হয়।

খাদ্য

এদের প্রধান খাদ্য হলো প্ল্যাংক্টন ও ডায়াটম। ফ্যারিঞ্জিয়াল গিল স্লিট ব্যবহার করে সেফালোকর্ডেটরা ফিল্টার ফিডিং এর মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করে। এ পদ্ধতিতে পানিতে দ্রবীভূত খাদ্য কণা পানির সাথে মুখগহ্বরে ঢুকে। তাদের মিউকাসের আস্তরণে আটকে যায় যা ফ্যারিঞ্জিয়াল স্লিট এর ভেতরটাকে আবৃত রাখে। সেফালোকর্ডেটদের ২০০ টির মতো ফ্যারিঞ্জিয়াল স্লিট থাকতে পারে৷ এসবের মাধ্যমে ফিল্টার ফিডিং তারা সহজে করতে পারে। মিউকাস মিশ্রিত খাদ্যকণা এসোফ্যাগাসের ভেতরে ও প্রবেশ করে ও সেটি থেকে অন্ত্রে প্রবেশ করে। সেখানে খাদ্য পরিপাক হয়।

শ্রেণী

সেফালোকর্ডেটদের মধ্যে একটি শ্রেণী দেখা যায়। তা হলো লেপ্টোকার্ডি। এই লেপ্টোকার্ডির একটি গোত্র রয়েছে (ব্রাঞ্চিওস্টোমিডা)। আবার এই গোত্রের অন্তর্গত দুটি বর্গ রয়েছে। একটি হলো ব্রাংকিওস্টোমা (এম্ফিওক্সাস), যাদেরকে ল্যান্সেলেট নামেও ডাকা হয় ও অপরটি হলো এসিমেট্রন।

এম্ফিওক্সাস

এম্ফিওক্সাসরা ছোটখাটো সামুদ্রিক প্রাণী যাদেরকে পৃথিবীর উষ্ণ স্থানের উপকূলবর্তী এলাকায় দেখা যায়। নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় তাদেরকে তেমন একটা দেখা যায় না। এরা প্রায় ৮ সে.মি লম্বা হয় ও চক্ষু ও মস্তিষ্কহীন ক্ষুদ্রাকৃতির মাছ জাতীয় প্রাণী।

যদিও এম্ফিওক্সাসরা সাঁতরাতে পারে, তবুও বেশিরভাগ সময় এরা সাগরের তলদেশে কাঁদা বা নুড়ির তলায় আশ্রয় নিয়ে থাকে। খাদ্য গ্রহণের সময় নুড়ির বাইরে তাদের দেহের অংশ বের করে দেয় ও ফিল্টার ফিডিং পদ্ধতি অনুসরণ করে খাদ্য গ্রহণ করে। এরা ফিল্টার ফিডার

গুরুত্ব

সেফালোকর্ডাটা প্রাণীদের আর্থিক ও বাস্তুতান্ত্রিক গুরুত্ব যথেষ্ট কম। চীনের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলের কিছু গ্রামের জেলেরা একসময় Branchiostoma belcheri মাছ ধরে বেশি লাভবান হতো। বর্তমানে এই মাছের গুরুত্ব উপেক্ষিত তবে জিয়ামেনে এই মাছ এখনো গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। এই উপপর্বের মাছগুলো সংরক্ষণ করে অনেক বড় বড় গবেষণার কাজে ব্যবহারও করা হয়।

তথ্যসূত্র

Tags:

সেফালোকর্ডাটা বৈশিষ্ট্যসেফালোকর্ডাটা জীবনচক্রসেফালোকর্ডাটা খাদ্যসেফালোকর্ডাটা শ্রেণীসেফালোকর্ডাটা গুরুত্বসেফালোকর্ডাটা তথ্যসূত্রসেফালোকর্ডাটা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিজলাতংকবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহমুহাম্মাদের নেতৃত্বে যুদ্ধের তালিকাপৃথিবীর বায়ুমণ্ডলউত্তম কুমারসুফিয়া কামালপ্রাণ-আরএফএল গ্রুপরামায়ণপর্যায় সারণী (লেখ্যরুপ)রাজশাহী বিভাগদেব (অভিনেতা)ওয়ালাইকুমুস-সালাম২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপনীল বিদ্রোহহরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)পাকিস্তানসূরা ইখলাসশাকিব খানতাওরাতসানরাইজার্স হায়দ্রাবাদভারতের ইতিহাসশ্রীলঙ্কাচিয়া বীজপ্রথম উসমানকলকাতা নাইট রাইডার্সব্রিটিশ রাজের ইতিহাসসূরা নাসরএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)রক্তপ্রাকৃতিক পরিবেশ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপতরমুজচ্যাটজিপিটিবিদ্রোহী (কবিতা)বসন্তবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী২৭ মার্চআতারামজিমেইলঅস্ট্রেলিয়ারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণযতিচিহ্নজেলা প্রশাসকমশাবাংলা ভাষায় সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকাবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহপুদিনাবর্তমান (দৈনিক পত্রিকা)দৈনিক ইত্তেফাককুলম্বের সূত্রলোকসভা কেন্দ্রের তালিকাসিন্ধু সভ্যতাব্রাহ্মী লিপিউপসর্গ (ব্যাকরণ)পহেলা বৈশাখসুভাষচন্দ্র বসুসালাতুত তাসবীহবসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকোস্টা রিকা জাতীয় ফুটবল দলসেজদার আয়াতসুলতান সুলাইমানরাদারফোর্ড পরমাণু মডেলচর্যাপদশাহবাজ আহমেদ (ক্রিকেটার)পাল সাম্রাজ্যবাংলা একাডেমিমেঘনাদবধ কাব্যলুয়ান্ডাচাঁদমাদার টেরিজারাগ (সংগীত)খুলনা🡆 More