সাধু মথি লিখিত সুসমাচার

সাধু মথি লিখিত সুসমাচার (গ্রিক: Τὸ κατὰ Ματθαῖον εὐαγγέλιον; অপর নাম মথিলিখিত সুসমাচার বা সংক্ষেপে মথি) হল নূতন নিয়মের প্রথম পুস্তক। এই পুস্তকে পাওয়া যায়, মসিহ যিশুকে কীভাবে ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং শেষে কীভাবে তিনি সমগ্র বিশ্বে সুসমাচার প্রচারের জন্য নিজের শিষ্যদের প্রেরণ করেছিলেন।

অধিকাংশ গবেষকই মনে করেন যে, মথিলিখিত সুসমাচারটি ৮০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৯০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কোনও এক সময়ে রচিত হয়। যদিও এই সুসমাচারটি ৭০ থেকে ১১০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কোনও এক সময়ে রচিত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। অল্পসংখ্যক গবেষক মনে করেন যে, এটি ৭০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে রচিত হয়েছিল। এই পুস্তকের অজ্ঞাতনামা লেখক সম্ভবত ছিলেন কোনও পুরুষ ইহুদি। তিনি মতবিশ্বাসের দিক থেকে প্রথাগত ও প্রথা-বহির্ভূত ইহুদি মূল্যবোধের মধ্যবর্তী সীমারেখায় অবস্থান করছিলেন এবং সমসাময়িক কালের বিতর্কিত শাস্ত্রের ব্যবহারিক বিধানগত দিকগুলি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। এই পুস্তকটি একটি মার্জিত সেমিটিক "সিনাগগ গ্রিক" ভাষায় রচিত। পুস্তককার তিনটি প্রধান সূত্র থেকে এই পুস্তকের বিষয়বস্তু গ্রহণ করেছেন: মার্কলিখিত সুসমাচার, কিউ সূত্র নামে পরিচিত বাণীর একটি তাত্ত্বিক সংকলন এবং এম সূত্র বা ‘বিশেষ ম্যাথিউ’ নামে পরিচিত একটি উপাদান, যা তার নিজের সমাজের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল।

মথিলিখিত সুসমাচারটি মার্কলিখিত সুসমাচারের একটি সৃজনশীল পুনর্ব্যাখ্যা। এই পুস্তকে যিশুর শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তার কার্যকলাপও উল্লিখিত হয়েছে এবং তার দিব্য প্রকৃতি উন্মোচিত করার জন্য কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তনও আনা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মার্কলিখিত সুসমাচারে রয়েছে, এক ‘যুবক’ যিশুর সমাধিস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। মথিলিখিত সুসমাচারে দেখানো হয়েছে তিনি এক জ্যোতির্ময় স্বর্গদূত। যিশুর দিব্য প্রকৃতি ম্যাথিয়ান সমাজের একটি প্রধান প্রসঙ্গ ছিল। এটি ছিল ইহুদি প্রতিবেশীদের থেকে তাদের পৃথক করার ব্যাপারে একটি আবশ্যিক উপাদান। মার্কলিখিত সুসমাচারে যিশুর পার্থিক জীবদ্দশার পূর্ববর্তী প্রকাশিত ঘটনাবলি, তার দীক্ষা ও রূপান্তরের সময়কালে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির উপর আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু মথিলিখিত সুসমাচারে আরও দূরে যাওয়া হয়েছে। এই সুসমাচারে যিশুকে জন্মাবধিই ঈশ্বরপুত্র তথা পুরাতন নিয়মের মসিহ-সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলির পরিপূর্ণতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রচনা ও প্রেক্ষাপট

সাধু মথি লিখিত সুসমাচার 
প্যাপিরাস ৪, মথিলিখিত সুসমাচারের শিরোনাম (ευαγγελιον κ̣ατ̣α μαθ᾽θαιον (euangelion kata Maththaion)) সহ একটি প্রচ্ছদপৃষ্ঠার খণ্ড। খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দীর শেষভাগে বা ৩য় শতাব্দীর প্রথমভাগে রচিত এই প্যাপিরাসটিই মথিলিখিত সুসমাচারের প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপি শিরোনাম।
সাধু মথি লিখিত সুসমাচার 
প্যাপিরাস ৩৭, মথি ২৬-এর একটি প্যাপিরাস, খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দী।

প্রেক্ষাপট

মথি লিখিত সুসমাচার বা অন্যান্য সুসমাচারের মতো প্রাচীন বইগুলিতে রচয়িতার কোনো সাক্ষর পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সময়ে অনুলিখিত লিপিকরদের কপিতে এই বইগুলি পাওয়া যায়। লিপিকরেরা কপি করার সময় স্থানীয় ঐতিহ্যগুলিকে বাইবেলের মধ্যে ঢোকানোর জন্য, বা সংশোধনের জন্য, বা ধর্মতত্ত্বকে সুবোধ্য করার জন্য, অথবা অন্য ভাষায় অনুবাদ করার সময় সেই ভাষায় বাইবেলকে স্বচ্ছন্দ করে তোলার জন্য নানা পরিবর্তন আনতেন। এই সব ক্ষেত্রে লিপিকরদের সাক্ষর অনুলিপিগুলিতে থাকে না। নূতন নিয়মের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপির প্রাচীনতম উদাহরণদুটি হল কোডেক্স ভ্যাটিক্যানাস ও কোডেক্স সিনাইটিকাস। অধিকাংশ গবেষকের মতে, এগুলি "মার্কাস হাইপোথেসিস"। অর্থাৎ, সাধু লুক লিখিত সুসমাচারের মতো এটি সাধু মার্ক লিখিত সুসমাচার অবলম্বন করে শেষোক্ত সুসমাচারটির রচনা শেষ হওয়ার পর (খ্রিস্টীয় ৬০-৭৫ অব্দ) লেখা হয়।

লেখক

মথি লিখিত সুসমাচারের লেখকের নাম জানা যায় না। বইতে লেখকের নামের উল্লেখ নেই। বইয়ের নামে "মথি লিখিত" শব্দবন্ধটি খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর কোনো এক সময়ে যুক্ত হয়েছিল। বইটি যে সন্ত মথির রচনা, এই কিংবদন্তির সূত্রপাত প্রথম যুগের খ্রিস্টান বিশপ প্যাপিয়াসের (১০০-১৪০ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে। চার্চ ঐতিহাসিক ইউসেবিয়াস (২৬০-৩৪০ খ্রিষ্টাব্দ) তার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন: "মথি ওর্যাকলগুলি (লজিয়া: যিশুর বাণী বা যিশু-সম্পর্কিত উপাখ্যান) হিব্রু ভাষায় ( Hebraïdi dialektōi) সংকলন করেছিলেন, এবং প্রত্যেকটিকে ব্যাখ্যা (hērmēneusen - সম্ভবত অনুবাদ) করেছিলেন খুব সতর্কভাবে।" সাধারণভাবে মনে করা হয়, মথি লিখিত সুসমাচারটি হিব্রু বা আরামিক ভাষায় সন্ত মথির দ্বারা প্রথমে লিখিত হয়েছিল ও পরে গ্রিক ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। কিন্তু কোথাও লেখক দাবি করছেন না যে তিনি কোনো ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। তাছাড়া মথির গ্রিক ভাষাটির মধ্যেও "পুনর্কথনের ভঙ্গিতে অনুবাদের ছাপ স্পষ্ট।" বিশেষজ্ঞেরা প্যাপিয়াসের বক্তব্যটি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন: হয়তো মথি দুটি সুসমাচার লিখেছিলেন। তার মধ্যে একটি এখন হারিয়ে গিয়েছে। সেটি হিব্রুতে লেখা ছিল। অন্যটি গ্রিক ভাষায় লেখা হয়েছিল। বা হয়তো লজিয়া ঠিক সুসমাচার নয়, বাণী-সংকলন। বা হয়তো dialektōi প্যাপিয়াস বোঝাতে চেয়েছিলেন মথি হিব্রু ভাষায় নয়, বরং ইহুদি ধাঁচে সুসমাচারটি লিখেছিলেন। প্রচলিত মতটি হল, প্যাপিয়াস যে সুসমাচারটির কথা বলেছেন, সেটি আমাদের জানা মথি লিখিত সুসমাচার নয়। সাধারণত মনে করা হয় আরামিক বা হ্রিব্রুতে নয়, মথি এটি লিখেছিলেন গ্রিক ভাষায়।

সূত্র

সাধু মথি লিখিত সুসমাচার 
মথি-লিখিত সুসমাচারের সূত্রগুলির অন্যতম হল মার্ক-লিখিত সুসমাচার, কিউ সূত্র নামক ‘সাধারণ প্রথা’ ও মথি-লিখিত সুসমাচারের নিজস্ব উপাদান এম সূত্র।

অধিকাংশ আধুনিক গবেষকের মতে, মার্ক-লিখিত সুসমাচারটিই প্রথম রচিত সুসমাচার। তারা মনে করেন ম্যাথিউ (যিনি মার্কের ৬৬১টি চরণের মধ্যে ৬০০টি চরণ গ্রহণ করেছিলেন) এবং লুক উভয়েই মার্ক-লিখিত সুসমাচার থেকে নিজের রচনার প্রধান প্রধান উপাদানগুলি গ্রহণ করেছিলেন। যদিও মথি-লিখিত সুসমাচারের রচয়িতা মার্ক-লিখিত সুসমাচারের উপাদান শুধুমাত্র অনুকরণ করেনন, তিনি স্বাধীনভাবে এই সূত্রটি সম্পাদনা করেছেন। তিনি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন ইহুদি প্রথায় যিশুর স্থান নির্ধারণের উপর এবং যিশুর শিক্ষার একটি বৃহৎ অংশ তার সুসমাচারে যুক্ত করেছেন। মথি ও মার্ক-লিখিত সুসমাচারে প্রায় ২২০টি অতিরিক্ত যে চরণ পাওয়া যায়, তা মার্ক-লিখিত সুসমাচারে নেই। এগুলি গৃহীত হয়েছে দ্বিতীয় এক সূত্র থেকে। এই সূত্রটি যিশুর উক্তিসমূহের একটি প্রকল্পিত সংকলন। গবেষকেরা এই সূত্রের নাম দিয়েছেন ‘কুয়েল’ (জার্মান ভাষায় যার অর্থ ‘সূত্র’) বা কিউ সূত্র। দ্বিসূত্র প্রকল্পনা (মার্ক ও কিউ) নামে পরিচিত এই মতবাদ থেকে আরেকটি মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। এটিকে বলা হয় ‘বিশেষ মথি’ বা এম সূত্র। অর্থাৎ, মথি-লিখিত সুসমাচারের নিজস্ব উপাদান। এটি হয় একটি পৃথক সূত্র, অথবা এটি রচয়িতার চার্চ থেকে এসেছে, অথবা রচয়িতা নিজে এগুলি রচনা করেছেন। এছাড়াও রচয়িতা নিজে গ্রিক শাস্ত্রগুলিকে অপসারিত করেছেন। অধিকাংশই সেপ্টুয়াজিন্টের কোনো পরিচিত সংস্করণ, (বুক-স্ক্রোল (ইসাইয়ার পুস্তক, গীতসংহিতা ইত্যাদির গ্রিক অনুবাদ) বা ‘টেস্টিমনি সংগ্রহ’ (খণ্ডিত রচনার সংগ্রহ) কোনো আকারেই যা নেই)। প্যাপিয়াস যদি ঠিক হয়, তবে সম্ভবত লেখকের নিজস্ব সম্প্রদায়ের মৌখিক উপাখ্যানগুলি যুক্ত হয়েছে। এই সূত্রগুলি মূলত গ্রিক ভাষায় রচিত হয়েছিল। এর অধিকাংশই সেপ্টুয়াজিন্টের কোনো পরিচিত সংস্করণে পাওয়া যায় না। যদিও কোনো কোনো গবেষকের অতে, এই মূল নথগুলি সম্ভবত হিব্রু বা আরামিক সূত্র থেকে গ্রিক ভাষায় অনূদিত হয়।

প্রেক্ষাপট ও সময়

অধিকাংশ গবেষকের মতে, মথিলিখিত সুসমাচার রচিত হয়েছিল খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীর শেষ ভাগে। অর্থাৎ, এটি দ্বিতীয় প্রজন্মের খ্রিস্টানদের রচনা। ৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ইহুদি-রোমান যুদ্ধের (৬৬-৭৩ খ্রিষ্টাব্দ) সময় রোমানদের দ্বারা জেরুজালেম ও মন্দির ধ্বংস এই অনুমানের অন্যতম প্রমাণ। এখান থেকেই ইহুদি মেসিহা নাজারেথের যিশু একটি পৃথক ধর্মব্যবস্থার অ-ইহুদি চরিত্র হয়ে উঠলেন। ঐতিহাসিকভাবে, মথিলিখিত সুসমাচারের রচনাকাল ততটা স্পষ্ট নয়। কোনো কোনো আধুনিক গবেষক মনে করেন, এই সুসমাচার আরও আগে রচিত হয়েছিল।

ম্যাথিউ যে খ্রিস্টান গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন, ১ম শতাব্দীর অনেক খ্রিস্টানের মতো, সেটিও তখনও একটি বৃহত্তর ইহুদি গোষ্ঠীর অংশ ছিল। তাই তাদের ইহুদি-খ্রিস্টান বলেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। ইহুদিদের এই বৃহত্তর জগতের সঙ্গে ম্যাথিউয়ের সম্পর্ক এখনও গবেষণা ও বিতর্কের বিষয়। প্রধান প্রশ্নটি হল, যদি ম্যাথিউ এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হন তবে, ম্যাথিউরা তাদের ইহুদি শিকড় কতটা কেটে ফেলতে পেরেছিলেন। ম্যাথিউদের গোষ্ঠী ও অন্যান্য ইহুদি গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ অবশ্যই ছিল। সবাই এই বিষয়ে একমত যে, ম্যাথিউদের গোষ্ঠী যিশুকে মসিহা ও ধর্মীয় বিধানের প্রামাণ্য ব্যাখ্যাকর্তা মনে করতেন এবং সেই থেকেই এই বিরোধের সূত্রপাথ হয়। যিশু যে পুনরুজ্জীবিত হয়েছিলেন এবং তার মাধ্যমে যিশুর প্রামাণ্যতার দিব্য প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে – এই বিশ্বাসও উক্ত বিরোধের কারণ ছিল।

মথিলিখিত সুসমাচারের রচয়িতা সম্ভবত সিরিয়ার (অ্যান্টিওচ, রোমান সিরিয়ার বৃহত্তম শহর এবং সাম্রাজ্যের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। এই শহরের উল্লেখ প্রায়ই করা হয়েছে) গ্রিক-ভাষী ইহুদি খ্রিস্টান একটি গোষ্ঠীর জন্য লিখেছিলেন। মার্কলিখিত সুসমাচারে ইহুদি রীতিনীতির বর্ণনা থাকলেও, এই বইতে তা পাওয়া যায় না। অন্যদিকে লুক-লিখিত সুসমাচারে যিশুকে আদি পিতা আদমের বংশধর প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা দেখা গেলেও, এখানে তাকে ইহুদি জাতির জনক আব্রাহামের বংশধর অবধিই দেখানো হয়েছে। মথিলিত সুসমাচারের তিনটি অনুমিত সূত্রের মধ্যে একমাত্র তার নিজের গোষ্ঠীর ‘এম’ সূত্রটিই শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি সংগঠিত গোষ্ঠী হিসেবে ‘চার্চ’ বা ‘ইক্লেসিয়া’র উল্লেখ করেছে। ‘এম’-এর বিষয়বস্তু থেকে অনুমান করা হয় যে, এই গোষ্ঠী ইহুদি আইন রক্ষার ব্যাপারে কঠোর মনোভাবাপন্ন ছিল। তারা মনে করতেন ‘সত্যতা’ (ইহুদি আইনের প্রতি আনুগত্য) রক্ষার ব্যাপারে তাদের স্ক্রাইব ও ফরিশিদের ছাড়িয়ে যেতে হবে। একটি ইহুদি-খ্রিস্টান গোষ্ঠীর মধ্যে থেকে লিখতে গিয়ে অন্যান্য ইহুদিদের থেকে তারা পৃথক হয়ে পড়েন। ক্রমশ সদস্যতা ও দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে তারা অ-ইহুদি হয়ে উঠতে থাকেন। ময়াথিউ তার সুসমাচারটিকে এমন এক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখেন যাতে ‘ইহুদি ও অ-ইহুদি একসঙ্গে একটি গোষ্ঠী বা চার্চের মধ্যে বিকাশলাভ করতে পারে।’

গঠন ও বিষয়বস্তু

সাধু মথি লিখিত সুসমাচার 
মাইনাসকিউল ৪৪৭-এ মথি লিখিত সুসমাচারের সূত্রপাত।

টেমপ্লেট:Content of Matthew

গঠন

সুসমাচারগুলির মধ্যে একমাত্র মথি লিখিত সুসমাচারেই আখ্যানবস্তুর পাঁচটি ভাগকে পাঁচটি কথোপকথন দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি কথোপকথনের শুরু হয়েছে “যখন যিশু সমাপ্ত করলেন...” – এই ভাবে (দেখুন মথি লিখিত সুসমাচারের পাঁচটি কথোপকথন)। কোনো কোনো গবেষক মনে করেন, এর মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত ভাবে পুরাতন নিয়মের প্রথম পাঁচটি পুস্তকের সমান্তরাল একটি পুস্তক সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যরা মনে করেন, এর মাধ্যমে মসিহা-রূপী যিশুর ধারণাটিকে কেন্দ্র করে একটি ত্রিস্তর ভঙ্গিমা গড়ে তোলা হয়েছে। কারোর মতে এটি সারা বছর প্রতি সপ্তাহে পড়ার জন্য এটি এক-একটি সেট; আবার কেউ এর মধ্যে কোনো পরিকল্পনাই দেখেন না। ডেভিস ও অ্যালিসন তাদের বহুল ব্যবহৃত টীকায় ‘ত্রয়ী’র (সুসমাচারে তিন ভাগে বিষয় ভাগ করার প্রবণতা) ব্যবহারের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রিচার্ড টমাস ফ্রান্স অপর একটি প্রভাবশালী টীকায় গালিল থেকে জেরুজালেম পর্যন্ত একটি ভৌগোলিক আন্দোলনের কথা বলেছেন। গালিলে পুনরুজ্জীবন-উত্তর যিশুর আবির্ভাবেই গল্পের সমাপ্তি এই অনুমানের কারণ।

মুখবন্ধ: বংশলতিকা, যিশুর জন্ম ও শৈশব

মথি লিখিত সুসমাচার শুরু হয়েছে এই বাক্য দিয়ে, “যিশু খ্রিস্টের বংশলতিকা [গ্রিক ভাষায়, ‘জেনেসিস’]”। এখানে ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রিক ভাষায় পুরাতন নিয়মের আদিপুস্তকের (২:৪) প্রতিধ্বনি করা হয়েছে। এই বংশলতিকায় যিশুকে আব্রাহাম ও রাজা ডেভিডের বংশধর হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং তাঁর কুমারী গর্ভে জন্মের সঙ্গে জড়িত নানা অলৌকিক কাহিনির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে রাজা হেরোদের শিশু হত্যা, জোসেফ ও মেরির মিশরে পলায়ন ও পরে নাজারেথে ফিরে আসার উপাখ্যান।

প্রথম উপাখ্যান ও কথোপকথন

এখানে প্রথম আখ্যানটি বর্ণিত হয়েছে। জন যিশুকে দীক্ষা দেন এবং পবিত্র আত্মা তাঁর উপর নেমে আসেন। ঊষর প্রান্তরে ৪০ দিন যিশু প্রার্থনা ও ধ্যান করলেন। শয়তান তাঁকে প্রলোভিত করল। গালিলে বাণী ও অলৌকিক কর্মের দ্বারা তাঁর প্রথম শিষ্যমণ্ডলী গঠন করলেন। পর্বতচূড়ায় তিনি প্রথম বাণীপ্রচার করলেন। এটিই যিশুর শৈলোপদেশ নামে পরিচিত। এই উপদেশে তিনি স্বর্গরাজ্যের নীতিগুলি বললেন। উপদেশ শুরু হয়েছিল “ধন্য তারা...” এই শব্দবন্ধের মাধ্যমে। উপদেশের শেষে তিনি মনে করিয়ে দিলেন স্বর্গরাজ্যের ডাকে সাড়া দেওয়ার ফল চিরন্তন। উপদেশের শ্রোতৃমণ্ডলী অবাক হল। এরপর সুসমাচারের দ্বিতীয় উপাখ্যানে চলে যাওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয় উপাখ্যান ও কথোপকথন

সুসমাচারে যিশুর প্রামাণ্য বাক্যগুলি তিন ধরনের তিনটি অলৌকিক কর্মের দিকে গেল। এগুলি দুই ধরনের শিষ্যত্ব কাহিনির (দ্বিতীয় উপাখ্যান) সঙ্গে পরস্পর-সংযুক্ত। এরপর রয়েছে ধর্মপ্রচার ও যন্ত্রণাভোগের কথা। যিশু বারো জন শিষ্যকে সংগঠিত করলেন ইহুদিদের মধ্যে ধর্মপ্রচার, অলৌকিক কর্ম সাধন ও যে স্বর্গরাজ্য আসছে তার ভবিষ্যদবাণী করার জন্য। তিনি শিষ্যদের যাত্রাপথে ভারী বোঝা বা লাঠি নিতে অথবা জুতো পরতে বারণ করলেন।

তৃতীয় উপাখ্যান ও কথোপকথন

যিশুর বিরোধীরা অভিযোগ করল যে তার অলৌকিক কর্মগুলি শয়তানের শক্তিতে বলীয়ান। অন্যদিকে যিশু অভিযোগ করলেন যে তার বিরোধীরা পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধাচারণ করছেন। এই কথোপকথন একাধিক রূপক আখ্যানের গুচ্ছ। এই কাহিনিগুলিতে যিশু ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের কথা ঘোষণা করে শিষ্যদের স্বর্গরাজ্যের ধর্মগ্রন্থের শিক্ষা অনুধাবন করার আহ্বান জানিয়েছেন (ম্যাথিউ ‘স্বর্গরাজ্য’ ধারণায় ’ঈশ্বর’ নামক পবিত্র শব্দটি ব্যবহার করেননি; বরং ‘স্বর্গরাজ্য’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। ইহুদিরা ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করেন না। এটি সেই প্রথাটিকে প্রতিফলিত করছে।)

চতুর্থ উপাখ্যান ও কথোপকথন

চতুর্থ উপাখ্যান অংশে প্রকাশিত হয়েছে, যিশুর ক্রমবর্ধমান বিরোধিতা শেষ পর্যন্ত জেরুসালেমে তার ক্রুশবিদ্ধকরণের দিকে যায় এবং তার শিষ্যেরাও তার অনুপস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন। ক্রুশবিদ্ধকরণ-পরবর্তী চার্চের প্রতি নির্দেশিকায় দায়িত্ব ও নম্রতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। (মথি ১৬:১৩-১৯-এ এই অংশটি পাওয়া যায়। এখানে সাইমনকে সদ্য পিতর নামে (πέτρος, petros, অর্থাৎ ‘পাথর’) চিহ্নিত করা হয়েছে। পিতর যিশুকে ‘খ্রিস্ট, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র’ বলে অভিহিত করেছেন এবং যিশু বলেছেন এই ‘ভিত্তিপ্রস্তরে’র (πέτρα, petra) উপর তিনি তার চার্চ গঠন করবেন – এই অংশ থেকেই পোপতন্ত্র কর্তৃত্ব দাবি করে।

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

টীকা

সাধারণ গ্রন্থপঞ্জি

বহিঃসংযোগ

সাধু মথি লিখিত সুসমাচার
Synoptic Gospel
পূর্বসূরী
Old Testament
Malachi
Minor prophets
New Testament
Books of the Bible
উত্তরসূরী
Gospel of
Mark

টেমপ্লেট:Jesus footer

Tags:

সাধু মথি লিখিত সুসমাচার রচনা ও প্রেক্ষাপটসাধু মথি লিখিত সুসমাচার গঠন ও বিষয়বস্তুসাধু মথি লিখিত সুসমাচার পাদটীকাসাধু মথি লিখিত সুসমাচার তথ্যসূত্রসাধু মথি লিখিত সুসমাচার গ্রন্থপঞ্জিসাধু মথি লিখিত সুসমাচার বহিঃসংযোগসাধু মথি লিখিত সুসমাচারগ্রিক ভাষানূতন নিয়মমসিহযিশুসুসমাচার

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকাবঙ্গবন্ধু-১সিন্ধু সভ্যতাভারতের রাষ্ট্রপতিহস্তমৈথুনের ইতিহাসপ্রিয়তমাআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসএইচআইভি/এইডসবিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসসূরা ফালাকঢাকা মেট্রোরেলহজ্জবাংলা ভাষাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসবায়ুদূষণভিটামিনশিয়া ইসলামবাংলার ইতিহাসভৌগোলিক আয়তন অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাডায়াচৌম্বক পদার্থনিমধর্মইসরায়েললালবাগের কেল্লাবাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকাভৌগোলিক নির্দেশকআল-মামুনরাজা মানসিংহআকিজ গ্রুপআগলাবি রাজবংশখুলনা বিভাগজান্নাতকাঠগোলাপমৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাস (উপাত্ত পাতা)বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়সানি লিওনসংস্কৃতিদৌলতদিয়া যৌনপল্লিবাগদাদশ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ওয়ালাইকুমুস-সালামআকবররিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজিজেরুসালেমনিউমোনিয়াআশারায়ে মুবাশশারারবীন্দ্রসঙ্গীতআর্কিমিডিসের নীতিপায়ুসঙ্গমঅক্ষয় তৃতীয়াআবু মুসলিমনূর জাহান২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপআবহাওয়াপলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমসৌরজগৎজীবনানন্দ দাশইউরোতানজিন তিশাজিয়াউর রহমানমাইকেল মধুসূদন দত্তব্যাংকশেখ মুজিবুর রহমানপ্লাস্টিক দূষণপানিপথের প্রথম যুদ্ধরামকৃষ্ণ পরমহংসমোশাররফ করিমবাংলা ভাষা আন্দোলনআবদুল মোনেম লিমিটেডবৌদ্ধধর্মতাজমহলরাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)পুরুষে পুরুষে যৌনতাবেলি ফুলচুম্বকআমাশয়🡆 More