গড় সমুদ্র পৃষ্ঠকেই সংক্ষেপে সমুদ্র পৃষ্ঠ বলা হয়। একে ইংরেজিতে mean sea level (MSL) বা সি লেভেল বলা হয়। সমুদ্র পৃষ্ঠ হল, সমুদ্রের উপরিভাগের (সি সারফেস) গড় উচ্চতা, যে মানকে আদর্শ মান বিবেচনা করে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানের উন্নতি-অবনতি (উঁচুনিচু) পরিমাপ করা হয়। গড় সমুদ্র পৃষ্ঠ (MSL) হল এক প্রকার উলম্ব উপাত্ত (vertical datum) – আদর্শিক/প্রমিত ভূতাত্ত্বিক উপাত্ত (standardized geodetic datum), যা ব্যবহার করা হয় তালিকা উপাত্ত হিসাবে (চার্ট ডেটাম) হিসাবে মানচিত্রাংকন বিদ্যায় ও সামুদ্রিক নৌচালন বিদ্যায়, অথবা বিমানচালনবিদ্যায়- সমুদ্র পৃষ্ট থেকে বায়ুমন্ডলীয় চাপ নির্ণয়ের মাধ্যমে উচ্চতার ক্রমাঙ্ক নির্ধারন, ফলত এ থেকে উড্ডয়নরত বিমানের উচ্চতা পরিমাপ করা হয়। মূলত গড় ভাটা ও জোয়ারের মধ্যবর্তী অবস্থানই হল সাধারণ ও সহজবোধ্য আদর্শ গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ। সমুদ্র পৃষ্ঠ অনেক উপাদান দ্বারাই প্রভাবিত হতে পারে এবং ভূতাত্ত্বিক সময় মাত্রার উপর নির্ভর করে এর পরিচিতি। তবে, বিংশ শতাব্দী ও বর্তমান সহস্রাব্দে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণ বৈশ্বিক উঞ্চায়ন, এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের যত্নশীল পরিমাপণ অন্তদৃষ্টি খোলে দিতে পারে চলমান জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে।
যথাযথভাবে গড় সমুদ্র পৃষ্ঠ নির্ণয় করা খুবই দুরূহ ব্যাপার কেননা অনেক প্রভাবক দ্বারা এটি প্রভাবিত হয়। সমুদ্র পৃষ্ঠের ক্ষণিক পরিবর্তন নির্ভর করে স্থান ও সময়ের বিভিন্ন মাত্রার উপর। সমুদ্রের এই গতিশীলতা নির্ভর করে জোয়ার-ভাটা, বায়ু, বায়োমন্ডলীয় চাপ, মহাকর্ষীয় বলের স্থানিক পার্থক্য, তাপমাত্রা, লবণাক্ততা সহ আরও অনেক উপাদানের উপর। সমুদ্র পৃষ্ঠ নির্ণয়ের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, একটি নির্দিষ্ট জায়গার সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতা নির্ণয় করা এবং এটিকে উপাত্ত হিসেবে ব্যবহার করা। যেমনঃ কোনো একটি জায়গার বিগত ১৯ বছরের সমুদ্র পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত তথ্যের গড় মানের সাহায্যে ওই জায়গার গড় সমুদ্র স্তর/সমুদ্র পৃষ্ঠ নির্ণয় করা হয়।
প্রায় সময়ই গড় সমুদ্র পৃষ্ঠের এই মানটি নির্ধারণ করা হয় কোনো ভূমির সাহায্যে, আর তাই গড় সমুদ্র পৃষ্ঠের আপেক্ষিক পরিবর্তনের কারণে অথবা যে স্থানে টাইড গেজ (জোয়ার-ভাটার উচ্চতা মাপক যন্ত্র) রাখা হয়েছে সেই স্থানের উন্নতি অবনতির কারণে গড় সমুদ্র পৃষ্ঠের বাস্তব মান পরিবর্তিত হয়। যুক্তরাজ্যে অর্ডন্যান্স উপাত্তই হল গড় সমুদ্র পৃষ্ঠ, যা নিউলিনের কর্নওয়ালে ১৯১৫ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে পরিমাপ করা হয়। ১৯২১ সালের পূর্বে, ভিক্টোরিয়া ডক, লিভারপুলে উলম্ব উপাত্তই গড় সমুদ্র সমতল/গড় সমুদ্র পৃষ্ঠ। রাশিয়ান সাম্রাজ্যের সময় থেকে, রাশিয়া ও এর অন্যান্য অংশগুলি (বর্তমানে স্বাধীন রাষ্ট্র), সমুদ্র পৃষ্ঠ পরিমাপ করা হত কনস্ট্যাড সমুদ্র গজের শুন্য (০) মাত্রা থেকে। হংকং-এ “এমপিডি” নামে একটি জরিপ দল যার পূর্ণরূপ হল ‘মিটারস এবাভ প্রিন্সিপাল ডাটাম’ এবং যা গড় সমুদ্র সমতলের ১.২৩০ মিটার নিচের অবস্থানকে বুঝায়। ফ্রান্সের মার্সিলিসে ম্যারেগ্রাফে নামক একজন ১৮৮৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাকিকভাবে সমুদ্র পৃষ্ঠ পরিমাম করেন এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ সম্পর্কিত দীর্ধতম পর্যায়ক্রমিক উপাত্ত উপস্থাপন করেন। এটি ইউরোপে ও মূল আফ্রিকাতে সমুদ্র পৃষ্ঠ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবহৃত হত। স্পেনে সমুদ্র সমতল থেকে উপরের বা নিচের উচ্চতা পরিমাপ করার প্রমাণ গেজটি অ্যালিকান্তে অবস্থিত। ইউরোপের অন্যত্র প্রমাণ উলম্ব উচ্চতা (ইউরোপিয়ান প্রমাণ উলম্ব পদ্ধতি) আমস্টারডাম পেলি স্থাপন করা হয়েছে, ১৬৯০ সালের দিকে।
টিওপিইএক্স/পসিইডন উৎক্ষেপনের পর ১৯৯২ সাল থেকে স্যাটেলাইট অলটিমিটারের সাহায্যে আরও সূক্ষভাবে সমুদ্র পৃষ্ঠ পরিমাপ করা সম্ভব হচ্ছে। নাসা এবং সিএনইস এর একটি যৌথ অভিযান।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article সমুদ্র সমতল, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.