মাইকেলেঞ্জেলো (মার্চ ৬, ১৪৭৫ - ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৫৬৪) বা মিকেলেঞ্জেলো রেনেসাঁস যুগের একজন ইতালীয় ভাস্কর,চিত্রকর,স্থপতি এবং কবি। তিনি ইতালির বিখ্যাত ফ্লোরেন্স শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম মাইকেলেঞ্জেলো দি লোদোভিকো বুওনারোত্তি সিমোনি (ইতালিয় উচ্চারণ )। তার বৈচিত্রময়তার ব্যাপ্তি এবং বিস্তৃতির কারণে মিকেলাঞ্জেলোকে রেনেসাঁ মানব বলে বর্ণনা করা হয়। মিকেলাঞ্জেলোর জীবৎকালেই তাকে শ্রেষ্ঠ জীবিত শিল্পী হিসাবে বিবেচনা করা হত, এবং ইতিহাসেও তাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের একজন হিসাবে ধরা হয়। ষোড়শ শতকের শিল্পীদের মধ্যে তারই বিভিন্ন কাজ, খসড়া চিত্র ইত্যাদি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সংরক্ষিত হয়েছে।
মিকেলাঞ্জেলোর জন্ম হয় ১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মার্চ, জন্মস্থান ক্যাপ্রিসি, যা তাসকানি-র আরেজ্জো-র কাছাকাছি অবস্থিত। ক্যাপ্রিসির বর্তমান নাম ক্যাপ্রিসি মিকেলাঞ্জেলো। কয়েক প্রজন্ম ধরে তার পূর্বপুরুষরা ফ্লোরেন্সে ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যাংকিং করতেন। ব্যাংক সর্বস্বান্ত হবার কারণে তার পিতা, লুদভিকো দি লিওনার্দো বুওনারোত্তি সিমোনি, কিছু সময়ের জন্য ছোট শহর ক্যাপ্রিসিতে সরকারি প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালনে আসেন, এবং এখানেই মিকেলাঞ্জেলোর জন্ম হয়। তার মায়ের নাম ফ্রাঞ্চেসকা দি নেরি দেল মিনিয়াতো দি সিয়েনা। মিকেলাঞ্জেলোর জন্মের কয়েক মাস পরে তার পরিবার ফ্লোরেন্সে ফিরে আসে, তার পরে সেখানেই তিনি বড় হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে তার মায়ের ক্রমাগত অসুস্থতার সময়ে এবং মৃত্যুপরবর্তীকালে (১৪৮১, তখন মিকেলাঞ্জেলোর বয়স ৬ বছর) তিনি সেত্তিগনানো শহরে এক পাথর খোদাইকারীর পরিবারের সাথে বসবাস করেন। এই শহরে মিকেলাঞ্জেলোর পিতার মালিকানাধীন একটি মার্বেল খনি ও একটি ছোট খামার ছিল।
সিঁড়িতে ম্যাডোনা (ম্যাডোনা অফ দ্য স্টেপস) মিকেলেঞ্জেলোর প্রথম উল্লেখযোগ্য কীর্তি। ১৪৯১ সালে, যখন তার বয়স মাত্র ১৭ বছর, পাতলা মার্বেলের উপর খোদাই করে এই ভাস্কর্যটি তিনি তৈরি করেন। ম্যাডোনার কোলে বসা বাচ্চাটির শরীরে একটু বেঁকে বসার যে ভঙ্গীটি আমরা এই ভাস্কর্যে দেখতে পাই, সেটিই পরবর্তীকালে মিকেলেঞ্জেলোর কাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিকশিত হয়। ভ্যাটিকান শহরের সন্ত পিতরের ব্যাসিলিকা গির্জায় রক্ষিত পিয়েতা ভাস্কর্যটি ইতালিয় নবজাগরণের যুগের ভাস্কর্যশিল্পর এক অনবদ্য নিদর্শন। ১৪৯৮-৯৯ সালের মধ্যে তিনি এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেন। মার্বেলে তৈরি এই মূর্তিটিতে দেখা যায় ক্রুশ থেকে নামানো যিশুর মৃতদেহ কোলে শোকস্তব্ধ মা মেরি। একজন ৩৩ বছর বয়সী ছেলের মা হিসেবে মেরির যথেষ্ট কম বয়স, অথচ ভঙ্গীমার মধ্য দিয়ে শোকস্তব্ধ মাতৃত্বর এক আশ্চর্য জীবন্ত প্রতিচ্ছবি এই ভাস্কর্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ১৫০২ সালে তার সৃষ্ট আরেকটি খোদাই শিল্প তাদেও তোন্ডো, সেখানে খোদিত শিশু যিশু খ্রিষ্টের আশ্চর্য জীবন্ত প্রতিকৃতির জন্য সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। ক্রুশের প্রতীক দেখে ভীষণ বিচলিত শিশু যিশুর এই ভঙ্গী পরবর্তীকালে আরও বহু শিল্পীর প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। যেমন রাফায়েলের সৃষ্ট ব্রিজওয়াটার ম্যাডোনার মধ্যেও আমরা এর ছাপ দেখতে পাই। বেলজিয়ামের ব্র্যুজ শহরে রক্ষিত ম্যাডোনা ও শিশু (১৫০৪) ভাস্কর্যটিও তার আর এক অনবদ্য কীর্তি। এখানেও শিশু যিশু আশ্চর্য জীবন্ত। দেখে মনে হয় তিনি যেন এখনই মার কোল ছেড়ে পৃথিবীর পথে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত। মা ম্যাডোনা শুধু বাঁহাতে আলতো করে তাকে তখনও ধরে আছেন। এই ভাস্কর্যটি আরও উল্লেখযোগ্য, তার কারণ মিকেলেঞ্জেলোর জীবনকালেই ইতালির বাইরে যাওয়া তার একমাত্র শিল্পকর্ম এটিই। ৪ হাজার ফ্লোরিনের বিনিময়ে এটি বিক্রি হয় ও জিওভানি এটি বেলজিয়ামের ব্র্যুজ শহরে নিয়ে আসেন। যতদূর সম্ভব এই মূর্তিটি গির্জার বেদিতে (অল্টারে) বসানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ম্যাডোনার সামান্য ডানদিকে ঘোরানো মুখ ও নিচের দিকে নীমিলিত দৃষ্টি তেমনই ইঙ্গিত করে। ইতোমধ্যেই উল্লিখিত পিয়েতা ভাস্কর্যটির সাথে এই ভাস্কর্যটির বিষয়গত মিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১৫০৪-০৬'এর মধ্যে অঙ্কিত দোনি তোন্ডো তার আরেক উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম। এর বিষয়বস্তু হল 'পবিত্র পরিবার', অর্থাৎ কুমারী মা মেরি, শিশু যিশু ও যোসেফ। ছবিটির বৃত্তাকার গঠন ও চরিত্রগুলির জীবন্ত রূপের মধ্যে পূর্বে উল্লিখিত 'তাদেও তোন্ডো'র ছাপ সহজেই চখে ধরা পড়ে। উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার এ' ছবির আরেক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। পরবর্তীকালে সিস্টিন চ্যাপেলের ছাদে অঙ্কিত তার ছবির অনেক বৈশিষ্ট্যই এই ছবতে চিহ্নিত করা সম্ভব।
মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর স্থাপত্য নকশাগুলো অধিকাংশই অনুধাবিত হয়নি, বিশেষত ফ্লোরেন্সের ব্রুনেলেচি-র চার্চ অফ সান লরেঞ্জোর সম্মুখভাগ, যার জন্য মাইকেল অ্যাঞ্জেলো একটি কাঠের মডেল তৈরি করেছিলেন, কিন্তু যা আজও অসমাপ্ত ইটের দেয়াল রয়ে গেছে। একই চার্চে, জুলিও দ্যা ম্যাডিচি (পরবর্তীতে পোপ ক্লেমেন্ট দি সেভেন) তাকে কমিশন করেছিলেন ম্যাডিচি চ্যাপেল এবং জুলিয়ানো ও লরেঞ্জো ম্যাডিচি'র সমাধি নকশা করতে। এছাড়া পোপ ক্লেমেন্ট কমিশন করেছিলেন লরেনশ্যেন লাইব্রেরি, যার জন্যে মাইকেল অ্যাঞ্জেলো অসাধারণ চত্বর নকশা করেছিলেন যার কলামগুলি কুলুঙ্গিগুলিতে বিভক্ত ছিল এবং একটি সিঁড়ি যা লাইব্রেরি থেকে লাভার প্রবাহের মতো ছড়িয়ে পড়ে বলে মনে হয়। নিকোলাস পেভসনারের মতে, "সবচেয়ে মহৎ স্থাপত্য আকারে ম্যানেরিজম প্রকাশ করে।"
১৫৪৬ সালে মাইকেল অ্যাঞ্জেলো ক্যাপিটোলিও এর ফুটপাথের জন্য অত্যন্ত জটিল ডিম্বাকার নকশা তৈরি করেন এবং ফারনিস প্রাসাদ-এর জন্য একটি উপরের তলা নকশা করতে শুরু করেন। ১৫৪৭ সালে তিনি সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা সম্পূর্ণ করার কাজটি গ্রহণ করেন, ব্রামান্তের দ্বারা একটি নকশা করা শুরু করেন এবং বেশ কয়েকটি স্থপতি দ্বারা মধ্যবর্তী নকশা তৈরি করেন। মাইকেল অ্যাঞ্জেলো পরবর্তীতে ব্রামান্টের নকশায় ফিরে আসেন, আরও গতিশীল এবং একীভূত সমগ্র তৈরি করার জন্য নকশাটিকে সরলীকরণ ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে মৌলিক রূপ এবং ধারণাগুলি বজায় রেখে৷ যদিও ১৬ শতকের শেষের দিকে খোদাইতে গম্বুজটিকে একটি গোলার্ধের প্রোফাইল হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে, তবে মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর মডেলের গম্বুজটি কিছুটা ডিম্বাকার এবং চূড়ান্ত পণ্য, যা জিয়াকোমো ডেলা পোর্টা দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে।
মাইকেল অ্যাঞ্জেলার উল্লেখযোগ্য ভাষ্কর্য গুলো হলো ম্যাডোনা এন্ড চাইল্ড,নাইট, মোজেস, পিয়েটা, স্লেইভ ইত্যাদি।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article মাইকেলেঞ্জেলো, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.