জ্যোতির্বিজ্ঞানে ভূকেন্দ্রিক মডেল(ইংরেজি ভাষায়: Geocentric model) বলতে এমন একটি বিশ্ব ব্যবস্থা বোঝায় যেখানে পৃথিবী বিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং তাকে কেন্দ্র করে অন্য সকল বস্তু আবর্তন করে। এর অন্য নাম ভূকেন্দ্রিক মতবাদ, ভূকেন্দ্রিকতাবাদ বা টলেমীয় জগৎ বা টলেমীয় ব্যবস্থা। অনেক সভ্যতায়ই এই মডেল খুব গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল, যেমন প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা। এজন্য অনেক গ্রিক দার্শনিককেই পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করতে দেখা যায়। এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে এরিস্টটলীয় পদার্থবিদ্যা এবং টলেমির জগৎ।
দুটি খুবই সাধারণ পর্যবেক্ষণ পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। প্রথমত, তারা, সূর্য এবং গ্রহগুলো প্রতিদিন নিয়ম করে পৃথিবীর চারদিকে আবর্তন করছে বলে মনে হয়। প্রতিটি তারা একটি খ-গোলকের মধ্যে প্রথিত আছে বলে মনে হতো, যে খ-গোলকের কেন্দ্র পৃথিবী এবং যে গোলকটি পৃথিবীর উত্তর উ দক্ষিণ মেরু দিয়ে অতিক্রমকারী একটি অক্ষ রেখার সাপেক্ষে প্রতিদিন আবর্তিত হয়। তারার অবস্থান বিষুব রেখার যত নিকটে ছিল তাকে তত বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে দেখা যেতো এবং সকল তারাই একদিনের ব্যবধানে তার পূর্বের উদিত হওয়ার অবস্থানে ফিরে আসতো। দ্বিতীয়ত, পৃথিবীতে অবস্থানকারী একজন পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে পৃথিবীর কোন গতি নেই, সে কঠিন, সুস্থিত এবং নিশ্চল। অন্য কথায়, পৃথিবী সম্পূর্ণ স্থির অবস্থায় আছে।
প্রাচীন গ্রিক ও মধ্যযুগীয় দার্শনিকরা ভূকেন্দ্রিক মডেল গ্রহণের পাশাপাশি মনে করতেন পৃথিবীর গোলকাকৃতির। আরও প্রাচীন কিছু পৌরাণিক কাহিনীতে পৃথিবীকে সমতল হিসেবে বিবেচনা করা হতো যার সাথে এর স্পষ্ট বিরোধ রয়েছে। অবশ্য প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিকরা মনে করতেন সকল গ্রহের কক্ষপথ বৃত্তাকার। সপ্তদশ শতকের পূর্বে এই বৃত্তাকার কক্ষপথ সম্পর্কে কেউ খুব একটা সন্দেহ পোষণ করেননি। নিকোলাউস কোপের্নিকুস এবং ইয়োহানেস কেপলারের মত বিজ্ঞানীদের গবেষণার বদৌলতে অবশেষে উপবৃত্তাকার কক্ষপথের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়।
টলেমির ভূকেন্দ্রিক মতবাদ অবলম্বন করে প্রায় ১৫০০ বছর সব ধরনের জ্যোতিষতাত্ত্বিক ছক তৈরি করা হতো। ১৬শ এবং ১৭শ শতকের মধ্যে এই মতবাদ ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্যতা হারায় এবং কোপের্নিকুস, কেপলার এবং গালিলেওদের হাত ধরে এক সময় সৌরকেন্দ্রিক মডেল (যাতে সূর্যকে কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়) পূর্ণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। অবশ্য ভূকেন্দ্রিক থেকে সৌরকেন্দ্রিক মতবাদে স্থানান্তরের এই পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। একদিকে ক্যাথলিক চার্চ তাদের বর্ণনামতে ঈশ্বরের সর্বশেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের আবাসস্থলকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র না ভেবে থাকতে পারছিল না, অন্যদিকে অনেকে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সবকিছু আবর্তিত হচ্ছে এই প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণটি দুর্বল একটি তত্ত্বের কারণে ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন না।
টলেমি প্রথমে তিন ধরনের কক্ষপথের চিন্তা করেছিলেন: উৎকেন্দ্রিক, মন্দবৃত্ত এবং ইকুয়েন্ট। সকল ক্ষেত্রেই ধরে নিয়েছিলেন, গ্রহগুলো পৃথিবীকে বা পৃথিবীর খুব কাছের একটি বিন্দুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। পৃথিবী নিজে ছিল সম্পূর্ণ স্থির। উৎকেন্দ্রিক (eccentric) মডেলে গ্রহগুলো যে বৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তন করে পৃথিবীকে তার কেন্দ্র থেকে একটু দূরে স্থাপন করা হয়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ভূকেন্দ্রিক মডেল, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.