সূরা কাওসার: কুরআন মাজীদ এর ১০৮তম সূরা

সূরাতুল কাউসার (আরবি: سورة الكوثر) মুসলিমদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১০৮ম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৩টি। কুরআনের সংক্ষিপ্ততম সূরা, যা দশটি শব্দ এবং বিয়াল্লিশটি অক্ষর নিয়ে গঠিত এবং পবিত্র কুরআনের ক্রমানুসারে সুরা আল-মাউনের পরে এবং সূরা আল-কাফিরুনের পূর্বে রয়েছে। আল-কাউসার ত্রিশতম পারায় অবস্থিত এবং মুহাম্মদ হাদি মারেফাতের মতে নাজিলের ক্রমানুসারে এর অবস্থান ১৫তমের দিকে যা ইবনে আব্বাসের বর্ণনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। ইবনে ইসহাকের মতে, এটি পূর্ববর্তী মাক্কী সূরা, যা মক্কায় ইসরা ও মিরাজের কিছু আগে নাজিল হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

সুরাতুল কাউসার
سورة الكوثر
সূরা কাওসার: নামকরণ, শানে নুযূল, আয়াতসমূহ
শ্রেণীমাক্কী সূরা
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম১০৮
আয়াতের সংখ্যা
পারার ক্রম৩০
রুকুর সংখ্যা
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা মাউন
পরবর্তী সূরা →সূরা কাফিরুন
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

সূরাটি নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর আল্লাহর অনুগ্রহের কথা বলে। জান্নাতের অন্যতম নদী বা ঝর্ণা আল-কাওসার, তার সম্পর্কে আবদুল্লাহ বিন ওমর বলেন: আল্লাহর রসূল বলেছেন: "আল-কাউসার জান্নাতের একটি নদী, তার পাড় সোনার এবং তার গৌরব এলম ও নীলকান্তমণির চেয়ে উত্তম গন্ধ কস্তুরীর চেয়ে ভাল এবং এর পানি বরফের চেয়ে সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি।"

নামকরণ

এই সুরার নাম টি এর প্রথম আয়াত থেকে উদ্ভূত। "কাওসার" শব্দটি কুরআনে একবারই ব্যবহৃত হয়েছে। আল-কাওসার প্রথম আরবি অর্থ "প্রাচুর্য" এর কবিতায় ব্যবহৃত হয়। রাঘেব ইস্পাহানি তার বই দ্য বুক অব সিংগুলারিটিজে "প্যারাডাইস ক্রিক" শব্দ দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, যে এটি নবী মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরের আল্লাহ বিরাট কল্যাণ ও অনুগ্রহ। মাজমাই আল-বাহরাইন এবং আবু মনসুর 'আব্দ আল-মালিক আল-সা'লাবির ফিকহ-এ তারিহির অর্থ "কল্যাণের প্রভু"। আল-আরবের ইবনে মাঞ্জুরী কাওসারের অর্থকে "সবকিছুতে ভাল" বলে মনে করেন এবং কাওসারের বিভিন্ন অর্থ ও ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন। আল-কামুস আল-মুহিয়াত ফিরুজাবাদী আল-কাওসার অর্থ "প্রচুর পরিমাণে" এবং "খাঁড়ি" বা "করুণাময় মানুষ" এর মতো অন্যান্য অর্থকে বুঝিয়েছেন।

যদিও ইবনে আশুর, একজন সুন্নি তাফসিরবিদ, শুধুমাত্র সূরার নামকে "কাওসার" বলে মনে করেন।

শানে নুযূল

যে ব্যক্তির পুত্রসন্তান মারা যায়, আরবে তাকে নির্বংশ বলা হয়। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পুত্র আল-কাসেম আথবা ইবরাহীম যখন শৈশবেই মারা গেলেন, তখন কাফেররা তাকে নির্বংশ বলে উপহাস করতে লাগল। ওদের মধ্যে 'আস ইবনে ওয়ায়েলের' নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার সামনে রসূলুল্লাহ্‌ -এর কোন আলোচনা হলে সে বলতঃ আরে তার কথা বাদ দাও, সে তো কোন চিন্তারই বিষয় নয়। কারণ, সে নির্বংশ। তার মৃত্যু হয়ে গেলে তার নাম উচ্চাচরণ করারও কেউ থাকবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা আল কাওসার অবতীর্ণ হয়।

আয়াতসমূহ

আরবি ভাষায় উচ্চারণ বাংলায় অনুবাদ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ বিস্‌মিল্লাহির রাহ্‌মানির রাহীম

إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ

ইন্নাআ‘তাইনা-কাল কাওছার।

ফাসালিল লিরাব্বিকা ওয়ানহার।

ইন্না শা-নিআকা হুওয়াল আবতার।

নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাউসার (বা প্রভূত কল্যাণ) দান করেছি।

অতএব আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কড়ুন এবং কুরবানী করুন।

নিশ্চয় আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই লেজকাটা, নির্বংশ।

বিষয়বস্তুর বিবরণ

সারকথা, পুত্রসন্তান না থাকার কারণে কাফেররা রসূলুল্লাহ্‌ (সা.) -এর প্রতি দোষরোপ করত আথবা অন্যান্য কারণে তার প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন করত। এরই প্রেক্ষাপটে সূরা কাউসার অবতীর্ণ হয়। এতে দোষরোপের জওয়াব দেয়া হয়েছে যে, শুধু পুত্রসন্তান না থাকার কারণে যারা রসূলুল্লাহ্‌ (সা.)-কে নির্বংশ বলে, তারা তার প্রকৃত মর্যাদা সম্পর্কে বে-খবর। রসূলুল্লাহ্‌ (সা.)-এর বংশগত সন্তান-সন্ততিও কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, যদিও তা কন্যা-সন্তানের তরফ থেকে হয়। অনন্তর নবী আধ্যাত্নিক সন্তান অর্থাৎ, উম্মত তো এত অধিকসংখ্যক হবে যে, পূর্ববর্তী সকল নবীর উম্মতের সমষ্টি অপেহ্মাও বেশি হবে। এছাড়া এ সূরায় রসূলুল্লাহ্‌ (সা.) যে আল্লাহ্‌ তা'আলার কাছে প্রিয় ও সম্মানিত তাও তৃতীয় আয়াতে বিবৃত হয়েছে।

হাদিস

কুরআনের প্রথম ও সর্বাগ্রে তাফসির মুহাম্মদের হাদিসে পাওয়া যায়। যদিও ইবনে তাইমিয়াহ সহ আলেমরা দাবি করেন যে মুহাম্মদ সমগ্র কুরআন সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ইমাম গাজ্জালি সহ অন্যরা সীমিত পরিমাণ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, এভাবে তিনি কেবল কুরআনের একটি অংশের ব্যাখ্যা করেছেন। হাদিস (حديث) আক্ষরিক অর্থে "বক্তৃতা" বা "প্রতিবেদন", এটি ইসনাদ দ্বারা বৈধ মুহাম্মদের কথা কাজ ও মৌন সম্মতির রেকর্ড; সিরাতে রসুল আল্লাহর সাথে এগুলির মধ্যে রয়েছে সুন্নাহ এবং শরিয়ত প্রকাশ। আয়িশার মতে নবী মুহাম্মদের জীবন ছিল কুরআনের ব্যবহারিক বাস্তবায়ন। তাই, হাদিস নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাসঙ্গিক সূরার ব্যাখ্যার উচ্চতর হাতিয়ার। এই সূরাটি হাদিসে বিশেষ সম্মানের সাথে উপস্থাপিত হয়েছে, যা এই সম্পর্কিত আখ্যানগুলি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

সূরা কাওসার নামকরণসূরা কাওসার শানে নুযূলসূরা কাওসার আয়াতসমূহসূরা কাওসার বিষয়বস্তুর বিবরণসূরা কাওসার হাদিসসূরা কাওসার তথ্যসূত্রসূরা কাওসার বহিঃসংযোগসূরা কাওসারআরবি ভাষাইসরা ও মিরাজকুরআনপারামক্কামুসলমানসূরাসূরা আল-মাউনসূরা কাফিরুন

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

আইসোটোপদেশ অনুযায়ী ইসলামঅভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়আল-আকসা মসজিদচেলসি ফুটবল ক্লাবম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবশুক্রাণুউমাইয়া খিলাফতউজবেকিস্তানপ্রাচীন ভারততামিম বিন হামাদ আলে সানিষাট গম্বুজ মসজিদডিপজলমহাত্মা গান্ধীবিটিএসচন্দ্রগ্রহণহজ্জবীর্যঝড়ডিএনএবাংলাদেশের সংবিধানসংযুক্ত আরব আমিরাতসাদিয়া জাহান প্রভাপানিপথের প্রথম যুদ্ধদ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের তালিকাতাপপ্রবাহপৃথিবীআয়াতুল কুরসিহৃৎপিণ্ডবাংলা সাহিত্যবিন্দুসামাজিকীকরণসূর্যগ্রহণতাপইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিবাংলাদেশ সেনাবাহিনীব্রিটিশ রাজের ইতিহাসহস্তমৈথুনবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়বাংলাদেশ পুলিশলোকনাথ ব্রহ্মচারীওয়ালাইকুমুস-সালামফোরাতবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীলিঙ্গ উত্থান ত্রুটিবেদবাংলাদেশের মেডিকেল কলেজসমূহের তালিকাফরাসি বিপ্লবের কারণপারি সাঁ-জেরমাঁবিকাশদোয়া কুনুতব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসিলেটবিদ্রোহী (কবিতা)বাংলাদেশের একাডেমিক গ্রেডিং পদ্ধতিমুহাম্মাদের স্ত্রীগণবিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকাবাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকাআসমানী কিতাবনব্যপ্রস্তরযুগআয়িশাবাংলাদেশের নদীবন্দরের তালিকাআবদুল হামিদ খান ভাসানীঅপারেশন সার্চলাইটরাশিয়াভারত বিভাজনআকবরঅসহযোগ আন্দোলন (ব্রিটিশ ভারত)শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নিকলকাতাঅমর্ত্য সেনকারামান বেয়লিকরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবনারায়ণগঞ্জ জেলাজন্ডিসআদমওপেকশক্তি🡆 More