ভুবন চিল, বাদামি চিল, গোদা চিল, ডোম চিল (বৈজ্ঞানিক নাম: Milvus migrans) (ইংরেজি: Black Kite) বা কেবলই চিল Accipitridae (অ্যাক্সিপিট্রিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Milvus (মিলভাস) গণের এক প্রজাতির মাঝারি আকারের সুলভ শিকারী পাখি। ভুবন চিলের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ পরিযায়ী চিল (গ্রিক Milvus = চিল, migrans = পরিযায়ন)। সাঁওতালি ভাষায় ভুবন চিলের নাম কুরিত, সিংহলিতে রাজালিয়া, অসমিয়ায় চিলানা ও মুগাচারানি; সিন্ধিতে নাম সিরিউন।
ভুবন চিল | |
---|---|
ভুবন চিল, Milvus migrans | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Falconiformes (or Accipitriformes, q.v.) |
পরিবার: | Accipitridae |
গণ: | Milvus |
প্রজাতি: | M. migrans |
দ্বিপদী নাম | |
Milvus migrans (বোডায়ের্ট, ১৭৮৩) | |
উপপ্রজাতি | |
৫টি, নিবন্ধ দেখুন | |
ভুবন চিল ও হলদেঠুঁটি চিলের বিস্তৃতি সারাবছর অবস্থান গ্রীষ্মকালীন অবস্থান শীতকালীন পরিযায়ী | |
প্রতিশব্দ | |
|
দুই মেরু আর দুই আমেরিকা মহাদেশ বাদে প্রায় পুরো পৃথিবী জুড়ে এদের বিস্তৃতি। এরা বিগত কয়েক বছরে কি হারে কমছে বা বাড়ছে সে সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে এরা সন্তোষজনক সংখ্যায় রয়েছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। পৃথিবীতে মোট ভুবন চিলের সংখ্যা আনুমানিক ১০ লক্ষ থেকে ৬০ লক্ষটি বলে বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
অ্যাক্সিপিট্রিডি (Accipitridae) গোত্রের অন্তর্গত Milvus ও Haliaeetus (সিন্ধুঈগল) গণদ্বয়ের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে মিল রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গণ দুইটি একটি উপগোত্রের অন্তর্গত। Milvus গণের আরেকটি প্রজাতি লাল চিলের (Milvus milvus) সাথে ভুবন চিলের বেশ মিল রয়েছে। বন্দী অবস্থায় এবং বন্য পরিবেশে এই দুই প্রজাতির সংমিশ্রণে সঙ্কর ছানা জন্ম দেয়ারও নজির রয়েছে।
ভুবন চিলের প্রকৃতপক্ষে মোট কতটি উপপ্রজাতি রয়েছে তা একটি [[বিতর্ক|বিতর্কের বিষয়। পূর্বে ভুবন চিলের মোট সাতটি উপপ্রজাতি ছিল। aegyptius ও parasitus উপপ্রজাতি দু'টো নিয়ে নতুন একটি প্রজাতি হলদে-ঠুঁটি চিলের উদ্ভব হয়েছে। অনেকে অবশ্য এই নতুন প্রজাতিকরণ সমর্থন করেন না। উপপ্রজাতি দু'টিকে ভুবন চিলেরই উপপ্রজাতিরূপে গণ্য করেন। aegyptius-এর আবাস মিশর, আরব উপদ্বীপের পশ্চিমাংশ এবং কেনিয়া পর্যন্ত পূর্ব উপকূলীয় আফ্রিকা জুড়ে এদের বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ। আর parasitus উপপ্রজাতির প্রধান আবাস দক্ষিণ সাহারা, কেপ ভার্দ দ্বীপপুঞ্জ, কমোরোস দ্বীপপুঞ্জ ও মাদাগাস্কার। অন্য পাঁচটি উপপ্রজাতিগুলো হল:
ভুবন চিল লম্বা চেরা লেজওয়ালা কালচে-বাদামি মাঝারি আকারের শিকারী পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৬১ সেন্টিমিটার, ডানা ৪৩.৮ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৩.৬ সেন্টিমিটার, পা ৫.২ সেন্টিমিটার ও লেজ ২৬.৫ সেন্টিমিটার। পুরুষ চিলের ওজন ৬৩০-৯৩০ গ্রাম এবং স্ত্রী পাখির ওজন ৭৫০-৯৪০ গ্রাম। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা অভিন্ন। তবে স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির তুলনায় একটু বড় হয়। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ স্পষ্ট গাঢ় লালচে-বাদামি। পিঠ কালচে লাল-বাদামি। ডানার উপরের অংশের মধ্য-ঢাকনি বরাবর ফিকে বাদামি রঙের ফিতা থাকে। ওড়ার সময় এর ডানার নিচের সাদা প্রাথমিক পালকগুলো স্পষ্ট নজরে পড়ে। ঠোঁট স্লেট-কালো। চোখ বাদামি; এবং পা ও পায়ের পাতা ফিকে হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও পেটে প্রশস্ত সাদাটে কিংবা পীতাভ ডোরা থাকে। গায়ে অনিয়মিত ফিকে তিলা দেখা যায়। তখন দূর থেকে এদের হালকা বাদামি দেখায়। উপপ্রজাতিভেদে ভুবন চিলের চেহারায় বিভিন্নতা দেখা যায়।
খোলা বিস্তীর্ন এলাকা ভুবন চিলের প্রিয় এলাকা। এছাড়া ঘন বন, পাতলা বন, পার্বত্য অঞ্চল, নদীর পাড়, বেলাভূমি, বন প্রান্ত, ঘাসবন, সাভানা প্রভৃতি অঞ্চলে দেখা যায়। এছাড়া বড় বড় বন্দর, শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলেও দেখা যায়। govinda উপপ্রজাতিটি নগর এলাকায় বেশি দেখা যায়। lineatus উপপ্রজাতি আর্দ্র ও জনহীন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। বড় বড় গাছে এরা দলবদ্ধভাবে রাত কাটায়। ভোরে সূর্য উঠলে এরা দল বেঁধে আকাশে ওড়ে আর অনেক্ষণ ঝাঁক বেঁধে চক্রাকারে উড়ে বেড়ায়। তারপর খাদ্যের সন্ধানে বিভক্ত হয়ে যায়। সন্ধ্যা বেলায় এরা তাদের আবাসে ফিরে আসে এবং পুনরায় ভোর বেলার মত চক্রাকারে কিছুক্ষণ ওড়ে। তারপর গাছে এসে বসে পড়ে।
শীতে বিপুলসংখ্যক পরিযায়ী ভুবন চিল এসে বাংলাদেশে আবাসিক পাখির দলে যোগ দেয়।
ভুবন চিল সুযোগসন্ধানী খাদক। এর খাদ্যতালিকা বেশ বিশাল। এর খাদ্যতালিকা স্থানীয় খাদ্যের যোগানের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। পানির আশেপাশে আবাস হলে মাছই এদের প্রধান শিকার হয়। অনেকসময় এরা মৃত বা রুগ্ন মাছও খায়। আহত, মৃত বা অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি, স্তন্যপায়ী, ব্যাঙ, সরিসৃপ ও পোকামাকড়ও খায়। অন্য ভুবন চিল, পাখি বা প্রাণীর কাছ থেকে এরা খাবার ছিনিয়ে খায়। গ্রামে হাঁস-মুরগির ছানা ছিনতাই করতে এরা ওস্তাদ। বর্জ্যভূক পাখি হিসেবে কসাইখানা, বর্জ্য-স্তুপ, ময়লাপোঁতা, মাছবাজার ও পোতাশ্রয়ে ওরা উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য খায়। প্রায়ই শকুনের সাথে মিলে উচ্ছিষ্ট বা পশুর মৃতদেহ খায়।
খাদ্যের সন্ধানে এরা আকাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অলস ভঙ্গিমায় চক্কর কেটে বেড়ায়। এরা খুব কমই ডানা ঝাপটায়। ডানার তুলনায় শরীর হালকা হওয়ায় এরা অনেক্ষণ ডানা না ঝাপটে ভেসে বেড়াতে পারে। নৌকার হালের মতো লেজ ব্যবহার করে ঝটপট দিক বদল করতে পারে। উড়তে পারে বাতাসের প্রতিকূলেও। খাদ্যের সন্ধান পেলে এরা ডানা গুটিয়ে ফেলে ও ঝাঁপ দিয়ে শিকার ধরে।
ভুবন চিল দীর্ঘ কাঁপা কাঁপা সুরে শিস দিয়ে ডাকে: কিউইইইইইইই-উয়ি-উয়ি-উয়ি-উই-উ.....।
মার্চ থেকে মে ভুবন চিলের প্রধান প্রজনন ঋতু। এ সময় পুরুষ চিল আকাশে চক্রাকারে উড়তে থাকে এবং হঠাৎ ঝাঁপ দিয়ে ডালে বসে থাকা স্ত্রী চিলের পিঠে এসে নামে। স্থানভেদে প্রজনন মৌসুমে বিভিন্নতা দেখা যায়। উঁচু গাছে কাঠি, ডালপালা ও কাঠি দিয়ে এলোমেলো মাচার মত বাসা বানায়। উঁচু দালানে পানির ট্যাঙ্কেও বাসা করতে পারে। বাসায় নষ্ট কাগজ, পাখির পালক, ছেঁড়া কাপড়, শুকনো গোবর, কাদা, উজ্জ্বল প্লাস্টিকের বস্তুও থাকে। বাসার উচ্চতা ভূমি থেকে ৫ মিটার থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত হয়। বাসা বানানো হয়ে গেলে ২-৪টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ পাটল-সাদা। ডিমের মাপ ৫.৩ × ৪.৩ সেন্টিমিটার। ৩০ থেকে ৩৪ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ছানারা প্রায় দুই মাস বাসায় থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় চিলই বাসা বানায়, ডিমে তা দেয় ও সন্তান লালন-পালনের ভার নেয়। দুই বছর বয়সে ছানারা প্রজননক্ষম হয়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ভুবন চিল, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.