বায়ুশক্তি

বায়ুশক্তি হল বায়ুর গতিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পাওয়া রূপান্তরিত শক্তি। যেমন, বায়ুকল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি, যান্ত্রিক শক্তি জন্য বাতচক্র, পানি তোলা বা নিষ্কাশনের জন্য বায়ু পাম্প, জাহাজসমূহ চালনার জন্য পাল।

বায়ুশক্তি
একটি বায়ু পাম্প সেট পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম

বড় বায়ু খামারসমূহ শত শত বায়ুকল দিয়ে গঠিত যারা একটি অপরটির সাথে একটি বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চালন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। একটি নতুন নির্মাণের জন্য উপকূলবর্তী বায়ু বিদ্যুতের জন্য একটি স্বল্প ব্যয়সম্পন্ন উৎস, যা প্রতিযোগিতামূলকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি উদ্ভিদের তুলনায় অনেক জায়গায় সস্তা। এটি সৌরশক্তির একটি পরোক্ষ রূপ এবং এজন্য এটি নবায়নযোগ্য শক্তি হিসাবে পরিচিত যা পরিবেশকে দুষণমুক্ত রাখতে সহয়তা করে। ছোট উপকূলবর্তী বায়ু খামার বিচ্ছিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বিদ্যুৎ সবরাহ কোম্পানি ক্রমবর্ধমান ছোট অভ্যন্তরীণ বায়ুকল দ্বারা উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ক্রয় করে।

ইতিহাস

বায়ুশক্তি শতাব্দি ধরে মানুষের দ্বারা ব্যবহত হয়ে আসছে। মানুষ কমপক্ষে ৫,৫৫০ বছর আগে থেকে বায়ুশক্তি পালতোলা নৌকা, জাহাজ এবং সেচ পাম্প চালানোর জন্য ব্যবহার করে আসছে।

চার্লস ফ্রান্সিস ব্রুস (১৮৪৯- ১৯২৯) ১৮৮৭-৮৮ সালে একটি বাতচক্র (বায়ু টারবাইন) নির্মাণ করেন যা একটা ব্যাটারী মাধ্যমে বিদ্যুতের উৎপাদনের জন্য জেনেরেটরের সাতে যুক্তছিল। ১৮৯১ সালে ডেনিশ পদার্থবিজ্ঞানী এবং উদ্ভাবক পল লা চউর প্রথম " বায়ু ঘূর্ণনযন্ত্র" পরীক্ষা করেন। ১৯০০ সালের কাছাকাছি তিনি বায়ু-চালিত বিদ্যুত্ প্লান্ট বিকাশ শুরু করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন কয়লাতেলের ঘাটতি ছিল তখন এফএল স্মিথ কোম্পানি ৬০-৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বায়ু টারবাইন নির্মাণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন তেল এবং কয়লা আবার ছিল প্রধান শক্তির উৎস, বায়ু শক্তির আগ্রহ আবার লীন হয়ে যায়। এরমধ্যে ১৯৭০ সালে ডেনমার্কে ১২-১৫ মি উচ্চতা ও ২০ মি থেকে ব্যাস বিশিষ্ট বায়ু ঘূর্ণযন্ত্র নির্মাণ করে, যা থেকে ২০০ কিলোওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৭০সালে, মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের নাসা আধুনিক ও আকারে বড় আকৃতি বিশিষ্ট বায়ু টারবাইন নির্মাণের জন্য গবেষণা চালু করে। ১৯৭৩ সালে বিশ্বে শক্তি সঙ্কটের কারণে সবার কাছে বায়ু শক্তি নিয়ে আবার ক্রমবর্ধমান আগ্রহের সৃষ্টি হয় ও বিকাশ সাধন করে। বাংলাদেশে খুব সামান্য পরিমানে বায়ু শক্তি নিয়ে গবেষণা হয়েছে। ১৯৮২ সালে একটি প্রারম্ভিক গবেষণায় দেশের ৩০টি আবহাওয়া তথ্য স্টেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে প্রতিবেদনে দেখা যায় যে,চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা থেকেপ্রাপ্ত বায়ুগতি ছিল শুধুমাত্র বায়ু শক্তি উৎপাদনের জন্য উপযোক্ত

বাংলাদেশ প্রথমবারের মত মুহুরি বাঁধ এলাকায় একটি ০.৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সম্পন্ন বায়ু শক্তি পাইলট প্রকল্প শুরু করে যা জাতীর পাওয়ার গ্রিডের সাথে সংযুক্ত।

বায়ুশক্তি 
ডেনিশ বায়ু ফার্ম

বায়ু টারবাইনের কার্যপ্রক্রিয়া

বায়ু টারবাইন একটি সহজ নীতির উপর কাজ করে। বায়ু যখন টারবাইনের ব্লেডের মধ্যে দিয়ে যায় তখন বায়ুর গতিশক্তি ঐ ব্লেডগুলোকে ঘূড়ায়।আর ঐ ব্লেডগুলোর সাথে রোটর সংযুক্ত থাকে যা ব্লেডগুলোর ঘূর্ণনের ফলে সক্রিয় হয়। আবার এই রোটর জেনারেটরের সাথে সংযুক্ত থাকে যার ঘূর্ণনের ফলে বিদ্যুত উৎপন্ন হয়।

বায়ু টারবাইন একটি টাওয়ারের(মিনার) উপর থেকে অধিকাংশ শক্তি ধারণ করে। সাধারণত ১০০ ফুট (৩০ মিটার) মাটি উপরে অথবা তার অধিক উচ্চতা সম্পন্ন টাওয়ার, বায়ু থেকে দ্রুত ঘূর্ণনের সুবিধা নিতে পারে। বায়ু টারবাইন ব্যবহৃত একটি বাড়িতে অথবা বিল্ডিং জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে, অথবা জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সাথে বিদ্যুত বিতরণের জন্য সংযুক্ত থাকতে পারে।

গাণিতিক ব্যাখ্যা

একটি কল্পিত A ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট এলাকায় t সময় ধরে বায়ু প্রবাহিত হলে মোট বায়ু শক্তি:

বায়ুশক্তি 

যেখানে v হল বায়ু গতি; ρ বাতাস ঘনত্ব; Avt হল A ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট জায়গার মধ্যে প্রবাহিত বাতাসের আয়তন যা বায়ু অভিমুখে হয় ঋজু ভাবে বিবেচিত; সেইজন্য Avtρ হল একক সময়ে প্রবাহিত বায়ুর ভর, m। উল্লেখ্য ½ ρv2 হল একক আয়তনে প্রবাহিত বায়ুর গতিশক্তি. ক্ষমতা হল একক সময়ে প্রাপ্ত শক্তি, সুত্ররাং A ক্ষেত্রফলে (রোটরের ক্ষেত্রফলের সমান) প্রাপ্ত ক্ষমতা হল:

বায়ুশক্তি 

একটি ছোট ১ মিটার (প্রায় ৩ ফুট) ব্যাসবিশিষ্ট বায়ু ঘূর্ণনযন্ত্র কী পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম তা নির্ণয় করার প্রক্রিয়া। যদি ঘূর্ণনযন্ত্রের কর্মদক্ষতা ২০% এবং বাতাসের গতি ৬ মিটার / সেকেন্ড হয়, তবে
বায়ুযন্ত্রের রোটারের ক্ষেত্রফল = π × (ব্যাসার্ধ / ২) ২ = ৩.১৪ × (১/২) ২ = ০.৭৮৫ মি^২

একক সময়ে প্রাপ্ত বায়ু শক্তি : P =১/২{বায়ুর ঘনত্ব × ক্ষেত্রফল × (বায়ু গতি)^৩}= (১.২ × ০.৭৮৫ × ৬৩)/২ = ১০১.৭ ওয়াট যদি ঘূর্ণযন্ত্রের কর্মদক্ষতা ২০% হয়, তবে মোট প্রাপ্ত: P = ০.২০ × ১০১.৭ = ২০.৩ ওয়াট

যদি এই একটি বছরের(প্রায় ৮৭৫০ ঘণ্টা) জন্য অবিরত চলতে থাকে, তখন প্রাপ্ত শক্তি হবে (২০.৩ ওয়াট × ৮৭৫০ ঘণ্টা)= ১৭৭,৬২৫ ওয়াট-ঘণ্টা, বা প্রায় ১৭৭ কিলো ওয়াট-ঘণ্টা।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

বায়ুশক্তি ইতিহাসবায়ুশক্তি বায়ু টারবাইনের কার্যপ্রক্রিয়াবায়ুশক্তি গাণিতিক ব্যাখ্যাবায়ুশক্তি তথ্যসূত্রবায়ুশক্তি বহিঃসংযোগবায়ুশক্তিগতিশক্তিজাহাজবায়ুবায়ুকলবিদ্যুৎ শক্তিশক্তি

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

প্রিয়তমাবাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীমূত্রনালীর সংক্রমণআকিজ গ্রুপশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়গীতাঞ্জলিএইডেন মার্করাম২০২৩–২৪ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগঢাকা মেট্রোরেলজনি সিন্সজীবনতাকওয়াইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সবাংলাদেশের সংস্কৃতিবাংলাদেশভারতের নির্বাচন কমিশনছোলাওয়াজ মাহফিলপ্যারাডক্সিক্যাল সাজিদমিশনারি আসনবৌদ্ধধর্মসূর্যচিকিৎসকস্বরধ্বনিমাইটোসিসআহসান হাবীব (কার্টুনিস্ট)আবু হুরাইরাহসাইবার অপরাধলালনবায়ুদূষণবাংলার প্ৰাচীন জনপদসমূহবাংলাদেশের ইউনিয়নের তালিকাহুমায়ূন আহমেদবেল (ফল)মহেন্দ্র সিং ধোনিসাঁওতাল বিদ্রোহকাফিরতিলক বর্মারুকইয়াহ শারইয়াহশিল্প বিপ্লবএম এ ওয়াজেদ মিয়াহাসান হাফিজুর রহমানজান্নাতবলপিঁয়াজতিতুমীরভিসাকরবাংলা ভাষায় সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকাপূরণবাচক সংখ্যা (ভাষাতত্ত্ব)সিকিমআবহাওয়াসমাসগুগলপানিভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহসোনালী ব্যাংক পিএলসিপশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন, ২০২১বেদে জনগোষ্ঠীবাংলা স্বরবর্ণআরবি বর্ণমালাপূর্ণিমা (অভিনেত্রী)নিউটনের গতিসূত্রসমূহবীর্যমেটা প্ল্যাটফর্মসস্বামী বিবেকানন্দসৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতাআডলফ হিটলাররচিন রবীন্দ্রব্রিক্‌সসংযুক্ত আরব আমিরাতসিলেটআসিফ নজরুলযৌন খেলনাফুলপরমাণুবিকাশ🡆 More