প্রোটোজোয়া (এবং প্রোটোজোয়ান, বহুবচন প্রোটোজোয়ানস্) ইউক্যারিওটা পর্বের এক কোষী প্রাণীর নাম, যেগুলো মুক্তভাবে বা অপরের উপর নির্ভর করে বেচেঁ থাকে, এগুলো অন্যান্য ক্ষুদ্র অঙ্গাণু বা জৈবিক টিস্যু খেয়ে থাকে। ইতিহাসগতভাবে, প্রোটোজোয়াকে এক-কোষী প্রাণী বলা হতো, কারণ তারা প্রাণীদের নানা বৈশিষ্ট্য ধারণ করে থাকে এবং তাদের কোষ প্রাচীর নেই। তাদেরকে বিভিন্ন উদ্ভিদে পাওয়া যায়। যদিও বর্তমানে প্রোটোজোয়াকে প্রাণীদের তালিকায় রাখা হয়না তবুও তাদেরকে চেনার সুবিধার্থে তাদেরকে এক-কোষী বলা হয় ও তারা স্বাধীনভাবে চলতে পারে।
জীববিজ্ঞান শ্রেণিবিভাগের কিছু পদ্ধতি অনুসারে প্রোটোজোয়ার অবস্থান শ্রেণিবিন্যাসের উপরের দিকে। ১৮১৮সালে যখন প্রথম আবিষ্কার করা হয়, তখন প্রোটোজোয়া শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল কিন্তু পরবর্তী শ্রেণিবিন্যাসে এটিকে পর্ব, উপরাজ্য এবং রাজ্যে স্থান দেয়া হয়। ১৯৮১সাল থেকে থমাস ক্যাভালিয়ার-স্মিথের প্রস্তাবিত শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে, প্রোটোজোয়াকে প্রোটিস্টা
রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৫ সালে রাগিয়েরোর প্রদর্শিত সাত-রাজ্য মডেলটিতে তিনি প্রোটোজয়া রাজ্যে আটটি পর্ব অন্তর্ভুক্ত করেন: উগ্লেনোজোয়া, অ্যামিবোজোয়া, মেটামোনাডা, কোয়ানোজোয়া , লউকোজোয়া, পারকোলোজোয়া, মাইক্রোস্পোরিডিয়া এবং শুল্কোজোয়া। লক্ষণীয়, এই রাজ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জীবকে স্থান দেয়া হয়নি। মডেল অনুসারে, প্রোটোজোয়া রাজ্য, প্রাকৃতিকভাবে কোন দল গঠন করেনা।
"প্রোটোজোয়া" (একবচন "প্রোটোজুন" বা "প্রোটোজোয়ান") শব্দটির আবির্ভাব হয় ১৮১৮সালে জীববিদ জর্জ অগাস্ট গোল্ডফাস দ্বারা। গোল্ডফাস প্রোটোজোয়াকে শ্রেণিতে রেখে প্রদর্শন করেছিলেন যেটিকে তিনি সবচেয়ে সাধারণ প্রাণী ভেবেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, সেই দলটিতে শুধু এক-কোষী জীবই ছিলনা বরং " নিম্ন" বহুকোষী প্রাণীও ছিল, যেমন জেলিফিশ, স্পঞ্জ এবং কোরাল। "প্রোটোজোয়া" শব্দটি প্রাচীন গ্রীক শব্দ πρῶτος (prôtos), যার অর্থ "প্রথম", এবং ζῶα (zôa), এর বহুবচন ζῶον (zôon), অর্থ " প্রাণী"।
বিভিন্ন ধরনের রাজ্য প্রস্তাব করা হলেও, এবং প্রোটিস্টা ও প্রোটোকটিস্টা রাজ্য জীববিজ্ঞান শিক্ষায় অধিক স্বীকৃতি পায়।
যেহেতু প্রোটোজয়াকে "প্রকৃত প্রাণী" হিসেবে উল্লেখ করা যায় না, তাই অনেক সময় "প্রোটিস্টস", " প্রোটিস্টা" বা "প্রোটোকটিস্টা" শব্দগুলোকে বেশি গ্রহণযোগ্য হিসেবে ধরা হয়।২০০৫সালে, 'দ্য সোসাইটি অব প্রোটোজোনোলিস্ট' এর সদস্যরা এটির নাম পরিবর্তন করে 'দ্য সোসাইটি অব প্রোটিস্টোলোজিস্ট' করার জন্য ভোট দেন।
প্রোটোজোয়া সর্বনিম্ন ১মাইক্রোমিটার হতে কয়েক মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে, বা আরও বেশি। এদের মাঝে সবচেয়ে বড়গুলো হলো সমুদ্রে থাকা জেনোফাইয়োফোর্স, এক-কোষী ফোরামিনিফেরা যাদের কাঠামো ব্যাসে ২০সেমি পর্যন্ত হতে পারে।
মুক্ত প্রোটোজোয়াগুলো সাধারণত বিশুদ্ধ ও লবণাক্ত জলে পাওয়া যায়। তাছাড়া, তারা অন্যান্য ভেজা পরিবেশ যেমন মাটি এবং শৈবালেও থাকতে পারে।কিছু প্রজাতি আবার ভয়াবহ আবহাওয়া যেমন উষ্ণ ঝর্ণাতেও টিকে থাকতে পারে। সকল প্রোটোজোয়ারই ভেজা আবাসস্থল প্রয়োজন; তারপরও, কিছু কিছু প্রজাতি দীর্ঘ সময় ধরে শুকনো আবহাওয়ায় টিকে থাকতে পারে।
ছত্রাক জাতীয় প্রোটোজোয়াগুলো সাধারণত অন্য প্রাণীর সাথে বা অন্য প্রাণীর ভেতর বাস করতে পারে। এসকল জীব হতে পারে বিভিন্ন উদ্ভিদ বা অন্যান্য এক-কোষী প্রাণী। কিছু কিছু ক্ষতিহীন বা লাভজনক; অন্যান্যরা ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে যেমন, ম্যালেরিয়া, ব্যাবেসিয়া।
সকল প্রোটোজোয়াই পরভোজী, যারা অন্য প্রাণী থেকে খাবার সংগ্রহ করে, তারা নিজেরা খাদ্য তৈরি করতে পারেনা। তারা মূলত অন্যান্য প্রাণীর সম্পূর্ণ খেয়ে ফেলে বা অন্য প্রাণীর বর্জ্য বা মৃত অংশ খেয়ে ফেলে। কিছু প্রোটোজোয়া ফ্যাগোসাইটোসিস ব্যবহার করে খাদ্য গ্রহণ করে, বা মুখের মতো অংশ সাইটোস্টোম দিয়ে। অন্যান্যরা অসমোট্রোফি দ্বারা বা কোষ দ্বারা গলিত খাদ্যের কণা গ্রহণ করে।
কিছু প্রোটোজোয়া জীবন চক্রের দুটি পর্যায় রয়েছে, সক্রিয় পর্যায় ও নিষ্ক্রিয় পর্যায়। নিষ্ক্রিয় পর্যায়ে, প্রোটোজোয়া কঠিন পরিস্থিতিতেও বেচেঁ থাকতে পারে, যেমন উচ্চ তাপমাত্রা বা ক্ষতিকারক রাসায়নিকের সংস্পর্শে আশা, বা দীর্ঘ সময় ধরে পুষ্টি, জল বা অক্সিজেন থেকে দূরে থাকা। নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছত্রাক জাতীয় প্রজাতিগুলো অন্যপ্রাণীর দেহের বাইরে থাকতে পারে এবং এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে স্থানান্তর হতে পারে৷ যখন প্রোটোজোয়া সক্রিয় অবস্থায় থাকে তখন তারা নিয়মিত খাবার গ্রহণ করে। প্রোটোজোয়ার সক্রিয়া অবস্থাকে ট্রোফোজোয়েট এবং নিষ্ক্রিয় অবস্থাকে সিস্ট বলে। আর ট্রোফোজোয়েট থেকে সিস্টে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে এনসিস্টেশন এবং সিস্ট থেকে ট্রোফোজোয়েট হওয়ার প্রক্রিয়াকে এক্সসিস্টেশন বলে।
পূর্বে, প্রোটোজোয়াকে "এককোষী প্রাণী" হিসেবে উল্লেখ করা হতো, যেহেতু এটি এক-কোষী, সালোকসংশ্লেষণকারী উদ্ভিদ (শৈবাল), প্রোটোফাইটা থেকে ভিন্ন ছিল। এই উভয় দলকেই প্রোটিস্টা রাজ্যে পর্বের স্থান দেয়া হয়েছিল। পুরোনো শ্রেণিবিন্যাসে, প্রোটোজোয়া পর্বকে বিভিন্ন উপদলে ভাগ করা হতো। শ্রেণিবিন্যাসের ধরন পাল্টেছে, কিন্তু ২০শতাব্দীতে প্রোটোজোয়ার উল্লেখযোগ্য কিছু দল হলো:
প্রোটোজোয়া হলো ক্ষুদ্র অমেরুদন্ডী প্রাণীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার উৎস। তাই খাদ্যশৃঙ্খলে প্রোটোজোয়া পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা ব্যাকটেরিয়ার জনসংখ্যা এবং জৈবসারকেও অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করে।
কিছু সংখ্যক প্রোটোজোয়া রোগ সংক্রামক জীবাণু হলো মানব ছত্রাক যেগুলো ম্যালেরিয়া ("প্লাজমোডিয়াম" দ্বারা), এমিবায়েসিস, গিয়ার্ডিয়াসিস, টক্সোপ্লাসমোসিস, আফ্রিকান ট্রাইপেনোসোমিয়াসিস (ঘুমানোর অসুখ), এমিবিক ডাইসেন্টারি, এসানৃথামিবা কেরাটিটিস, ক্রিপ্টোস্পোরোডায়োসিস, ট্রাইকোমোনিয়াসিস, চাগাস রোগ, লেইশমানিয়াসিস।
"অফ্রিয়োসিস্টিস ইলেক্ট্রোশিরা" প্রটোজোয়া হলো প্রজাপতির লার্ভার এক ধরনের ছত্রাক যা নারী থেকে ছেঙ্গাতে ছড়ায়। আক্রান্ত প্রজাপতিগুলো দুর্বল হয়, তাদের পাখা মেলতে পারেনা, ও তাদের জীবনসীমা ছোট হয়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article প্রোটোজোয়া, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.