নিউটনের গতিসূত্রসমূহ

আইজ্যাক নিউটনের গতিসূত্রগুলি হল প্রকৃতির তিনটি নিয়ম, যা চিরায়ত বলবিদ্যার ভিত্তি স্বরূপ।এই সূত্রগুলি বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং তার দরুন সৃষ্ট গতির মধ্যে সম্পর্ক বর্ণনা করে। প্রথম সূত্রে বলা হয়েছে যে, বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করলে, বস্তু হয় স্থির থাকবে অথবা সমবেগে চলতে থাকে। দ্বিতীয় সূত্রে বলা হয়েছে যে, কোনও বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে ভরবেগও সেদিকে ক্রিয়া করে, অথবা ধ্রুব ভরসম্পন্ন কোনও বস্তুর জন্য লদ্ধি বল বস্তুর ভর ও ত্বরণের গুণফলের সমান। তৃতীয় সূত্রে বলা হয়েছে যে, যখন একটি বস্তু দ্বিতীয় কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে, তখন দ্বিতীয় বস্তুটি প্রথম বস্তুর উপর সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে।

নিউটনের গতিসূত্রসমূহ
১৬৮৭ সালে সম্পাদিত এবং লাতিন ভাষায় প্রকাশিত বই ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা -এ নিউটনের প্রথম ও দ্বিতীয় গতিসূত্র।

বলবিদ্যার এই সূত্র তিনটি সর্বপ্রথম আইজাক নিউটন তার লেখা ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা (প্রাকৃতিক দর্শনের গাণিতিক মূলনীতিসমূহ) গ্রন্থে সংকলন করেছিলেন, যা ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুলাই প্রকাশিত হয়েছিল। নিউটন সূত্রগুলো ব্যবহার করে অনেক প্রাকৃতিক বস্তু এবং ব্যবস্থার গতি ব্যাখ্যা এবং তদন্ত করেছিলেন, যা নিউটোনীয় বলবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

সূত্রসমূহ

নিউটনের গতিসূত্রসমূহ 
আইজ্যাক নিউটন (১৬৪৩–১৭২৭),পদার্থবিজ্ঞানী যিনি গতি সূত্রগুলো আবিষ্কার করেছেন

নিউটনের প্রথম সূত্র

প্রথম সূত্রানুযায়ী, বাইরে থেকে কোনো বল প্রযুক্ত না হলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখায় বা সরল পথে গতিশীল থাকবে। গাণিতিকভাবে বলা যায় যে কোনও বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল যদি শূন্য হয় তবে বস্তুর গতিবেগ শূন্য হবে।

নিউটনের গতিসূত্রসমূহ 

নিউটনের প্রথম সূত্রকে প্রায়শই জড়তার সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

নিউটনের প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র কেবল জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র

দ্বিতীয় সূত্রানুযায়ী, সময়ের সাথে কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই ঘটে।

    নিউটনের গতিসূত্রসমূহ 

ধ্রুব ভর

ধ্রুবক ভরের বস্তু এবং ব্যবস্থাসমূহের জন্য দ্বিতীয় সূত্রকে বস্তুর ত্বরণের সাহায্যে পুনরায় বিবৃত করা যেতে পারে।

    নিউটনের গতিসূত্রসমূহ 

যেখানে F হলো প্রযুক্ত নিট বল, m হলো বস্তুর ভর, এবং a হলো বস্তুর ত্বরণ। সুতরাং, কোনো বস্তুতে প্রয়োগকৃত নিট বল সমানুপাতিক ত্বরণ সৃষ্টি করে।

পরিবর্তনশীল-ভর ব্যবস্থাসমূহ

পরিবর্তনশীল-ভর ব্যবস্থা, যেমন রকেটে জ্বালানি পুড়িয়ে গ্যাস নির্গমন করা, এক্ষেত্রে এটি একটি বদ্ধ ব্যবস্থা নয় এবং দ্বিতীয় সূত্রে ভরকে সময়ের ফাংশন বিবেচনা করে এর সমাধান করা যায় না। এমন একটি বস্তু যার ভর m সময়ের সাথে নির্গমন বা সংযুক্তির মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে থাকে তার জন্য গতির সমীকরণ পাওয়ার জন্য বস্তুটির ভর এবং নির্গত বা আগত ভরকে সামগ্রিকভাবে ধ্রুব ভর ব্যবস্থা বিবেচনা করে দ্বিতীয় সূত্র প্রয়োগ করতে হয়। ফলাফলস্বরূপ,

    নিউটনের গতিসূত্রসমূহ 

যেখানে u হলো বস্তুর সাপেক্ষে নির্গত বা আগত ভরের গতিবেগ। এই সমীকরণটি থেকে বিভিন্ন পরিবর্তনশীল ভর ব্যবস্থার জন্য গতির সমীকরণ পাওয়া যায়, উদাহরণস্বরূপ, ৎসিওলকোভ্‌স্কি রকেট সমীকরণ।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে, বামপাশের নিউটনের গতিসূত্রসমূহ  যা পরিবর্তিত ভরের ভরবেগের পরিবর্তনের হার নির্দেশ করে, এর পরিমাণকে বল (পরিবর্তিত ভর দ্বারা বস্তুর উপর প্রয়োগকৃত বল, যেমন রকেটের গ্যাস নির্গমন) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং F এর পরিমানের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর ত্বরণের সংজ্ঞা প্রয়োগের ফলে সমীকরণটি দাঁড়ায়, F = ma.

নিউটনের তৃতীয় সূত্র

তৃতীয় সূত্রানুযায়ী, প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে । যদি A বস্তু দ্বিতীয় কোন বস্তু B এর উপর FA বল প্রয়োগ করে, তাহলে B বস্তুটিও একইসাথে A বস্তুর উপর -FB বল প্রয়োগ করবে, এবং দুইটি বলের মান সমান ও বিপরীতমুখী: FA = −FB

নিউটনের গতিসূত্রসমূহ 
নিউটনের তৃতীয় সূত্রের প্রদর্শনঃ দুই ব্যক্তি একে অপরকে ঠেলছে প্রথম ব্যক্তি(বাম দিক) দ্বিতীয় ব্যক্তির(ডান দিক ) উপর লম্বিক বল N12 বল প্রযুক্ত করছেন , এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তির উপর লম্বিক লম্ব N12 বামদিকে প্রযুক্ত করছে।
উভয় ক্ষেত্রে বলের মান সমান , কিন্তু নিউটনের তৃতীয় সূত্র মতে, তাদের দিক পরস্পর বিপরীতমুখী হবে।

ইতিহাস

গ্রীক দার্শনিক এরিষ্টটল মনে করতেন যে, মহাবিশ্বে সকল বস্তুর প্রাকৃতিক অবস্থান রয়েছে: ভারী বস্তুসমূহ (যেমন- পাথর) পৃথিবীতে স্থির থাকতে চায়, হালকা বস্তুসমূহ (যেমন- ধোঁয়া) আকাশে উঠে স্থির হতে চায় এবং নক্ষত্রসমুহ স্বর্গে থাকতে চায়। তিনি আরও মনে করতেন যে, কোন বস্তু স্থির থাকলে এটি প্রাকৃতিক অবস্থানে থাকে এবং বস্তুটি সমবেগে চলার জন্য বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করতে হয়, নাহলে এটি থেমে যায়। কিন্তু, গ্যালিলিও গ্যালিলেই পরবর্তীতে বুঝতে পারেন যে, বস্তুর বেগ পরিবর্তনের (এককথায় ত্বরণ) জন্য বল প্রয়োগ করতে হয় এবং সমবেগে চলার জন্য বল প্রয়োগ করতে হয় না। অন্যভাবে, বল ক্রিয়া না করলে সমবেগে চলমান বস্তু সমবেগে চলতে থাকে। নিউটনের প্রথম সূত্রটি মূলত গ্যালিলিওর সূত্রের পুনবিবরণ। তাই নিউটন প্রথম সূত্রটিতে গ্যালিলিওর অবদানের কথা উল্লেখ করেন।

গুরুত্ব এবং সীমাবদ্ধতা

২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, নিউটনের সূত্র সমুহ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। নিউটনের সুত্রসমূহ গাণিতিক ভাবে প্রমাণ করা যায় না। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে খুবই কাজে লাগে।

নিউটনের সূত্র সমূহ এক ধরনের বিশেষ প্রসঙ্গ কাঠামোর ক্ষেত্রে সঠিক। এ ধরনের প্রসঙ্গ কাঠামো কে বলা হয় জড় প্রসঙ্গ কাঠামো। অনেক পদার্থবিদ মনে করেন, নিউটনের প্রথম সূত্র হল দ্বিতীয় সূত্রের বিশেষ রূপ যেখানে বল = ০।

নিউটনের তৃতীয় সূত্র দিয়ে মানুষ কেন হাঁটে তার ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। চলন্ত সাইকেল কেন থেমে যায় তা ব্যাখ্যা করা যায় ২য় সূত্রের মাধ্যমে। তবে, আলোর বেগের কাছাকাছি বেগের বস্তুর ক্ষেত্রে, নিউটনের সূত্র সমূহ দিয়ে সেই বস্তুর গতি ব্যাখ্যা করা যায় না। এক্ষেত্রে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব দিয়ে তা ব্যাখ্যা করতে হয়। আবার খুবই ছোট কণার ক্ষেত্রে নিউটনের সূত্র তেমন কাজের না। এক্ষেত্রে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা দিয়ে তা ব্যাখ্যা করতে হয়।

তথ্যসূত্র

Tags:

নিউটনের গতিসূত্রসমূহ সূত্রসমূহনিউটনের গতিসূত্রসমূহ ইতিহাসনিউটনের গতিসূত্রসমূহ গুরুত্ব এবং সীমাবদ্ধতানিউটনের গতিসূত্রসমূহ তথ্যসূত্রনিউটনের গতিসূত্রসমূহগতিচিরায়ত বলবিদ্যাত্বরণবল

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

পথের পাঁচালীরক্তহার্নিয়াঅরিজিৎ সিংনেপোলিয়ন বোনাপার্ট২৩ এপ্রিলরাজবাড়ী জেলাপাবনা জেলাঅণুজীবসতীদাহউদ্ভিদকোষরশিদ চৌধুরীচাকমাবন্ধুত্বভিসাবিজয় দিবস (বাংলাদেশ)যৌনসঙ্গমবিজ্ঞাপনউসমানীয় সাম্রাজ্যমানুষসজনেউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগকিশোরগঞ্জ জেলাভালোবাসাময়মনসিংহ জেলাগ্রীষ্মপ্রাকৃতিক ভূগোলবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাইউক্যালিপটাসস্বাস্থ্যের উপর তামাকের প্রভাবঅরবরইমান্নাবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাগাণিতিক প্রতীকের তালিকাপারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে মৌলসমূহের তালিকামঙ্গল গ্রহহরিচাঁদ ঠাকুরবাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীগুলঞ্চরাজশাহী বিভাগঈদুল ফিতরইব্রাহিম রাইসিশিল্প বিপ্লবজ্বীন জাতিচৈতন্যচরিতামৃতবাংলাদেশের মন্ত্রিসভাবাঙালি হিন্দুদের পদবিসমূহরক্তের গ্রুপমুহাম্মাদের স্ত্রীগণশেখ মুজিবুর রহমানমহাসাগরবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়বেদমাইকেল মধুসূদন দত্তবিবাহদুর্গাপূজাবেগম রোকেয়াযৌনাসনকারকব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলফুলরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়অমর সিং চমকিলাযৌতুকবুধ গ্রহএপ্রিলবুর্জ খলিফামঙ্গলকাব্যইসরায়েল–হামাস যুদ্ধহনুমান জয়ন্তীজান্নাতুল ফেরদৌস পিয়ারামমোহন রায়তরমুজভাষাস্ক্যাবিসসংস্কৃতিজিমেইল🡆 More