দ্য ব্লু মার্বেল

দ্য ব্লু মার্বেল (ইংরেজি: The Blue Marble, আক্ষ. 'নীল মার্বেল') হচ্ছে ১৯৭২ সালের ৭ ডিসেম্বরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৯,৪০০ কিলোমিটার (১৮,৩০০ মাইল) দূরত্বে তোলা পৃথিবীর একটি আলোকচিত্র।

দ্য ব্লু মার্বেল
"দ্য ব্লু মার্বেল"। ১৯৭২ সালে হয় রোনাল্ড ইভান্স কিংবা হ্যারিসন শ্মিট অ্যাপোলো ১৭ মহাকাশযান থেকে এই আলোকচিত্রটি তুলেছিলেন। আসল চিত্রে দক্ষিণ মেরু উপরের দিকে মুখ করে ছিল, কিন্তু উপরে চিত্রিত চিত্রটি সবচেয়ে বেশি হারে বিতরণ করা হয়েছে।

আসল চিত্রটি (নাসা ডেজিগনেশন এএস১৭-১৪৮-২২৭২৭) অ্যাপোলো ১৭ মহাকাশযান থেকে তোলা হয়েছিল যখন মহাকাশযানটি চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছিল, এবং হয় রোনাল্ড "রন" ইভান্স কিংবা হ্যারিসন "জ্যাক" শ্মিট এই চিত্রটি তুলেছিলেন। ঐ চিত্রে পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু উপরের দিকে মুখ করে ছিল। পরবর্তীকালে এর ক্রপ করে ঘোরানো সংস্করণটি ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত চিত্রের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে।

এই আলোকচিত্রে মূলত ভূমধ্যসাগর থেকে অ্যান্টার্কটিকা পর্যন্ত পৃথিবীকে দেখা যায়। অ্যাপোলো ১৭ মহাকাশযানের ভ্রমণপথের জন্য দক্ষিণ মেরুর বরফের স্তূপের আলোকচিত্র তোলা সম্ভব হয়েছিল, যদিও দক্ষিণ গোলার্ধ অনেকটা মেঘে আচ্ছন্ন। এখানে আরব উপদ্বীপমাদাগাস্কার সহ আফ্রিকার প্রায় সমগ্র উপকূলরেখা ও ভারত মহাসাগরের বেশিরভাগ অংশ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। এছাড়া ভারত মহাসাগরে এক ঘূর্ণাবর্ত এবং একদম পূর্বদিকে ভারতের মূল ভূখণ্ড লক্ষ করা যায়।

নাসা ২০১২ সালের সমগ্র পৃথিবীর উচ্চ রেজোলিউশনের বিভিন্ন চিত্রের সংকলনকে বোঝানোর জন্যও "ব্লু মার্বেল" কথাটি ব্যবহার করেছে। নাসার মতে, নিম্ন ভূ-কক্ষপথে তোলা বিভিন্ন মেঘমুক্ত উপগ্রহ চিত্র নিয়ে এই কম্পোজিট চিত্রগুলো তৈরি করা হয়েছে। এই চিত্রগুলো সঠিকভাবে একসঙ্গে থাকতে পারে না এবং আলোর প্রজ্বলন, আবহাওয়া ও মেঘের ব্যতিচারের জন্য একইসঙ্গে সমগ্র পৃথিবীর সমন্বিত বা সম্পূর্ণভাবে মেঘমুক্ত চিত্র সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।

চিত্রের বিবরণ

দ্য ব্লু মার্বেল 
"দ্য ব্লু মার্বেল" চিত্রের এই সংস্করণে দক্ষিণ মেরু উপরের দিকে মুখ করে আছে।

১৯৭২ সালের ৭ ডিসেম্বরে তোলা এই চিত্রটি সবচেয়ে বেশি বিতরণ করা আলোকচিত্রের মধ্যে অন্যতম। চিত্রটি তোলার সময় অ্যাপোলো ১৭ মহাকাশযানের নভোচারীরা দক্ষিণ মেরুকে উপরের দিকে মুখ করে এবং সূর্যকে তাঁদের উপরে (স্থানীয় চালনার ভাষায়, তাঁদের জেনিথ অবস্থানে) রেখেছিলেন। নভোচারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবীর আকার ও আকৃতি অনেকটা কাচের মার্বেলের মতো।

ইতিহাস

পরিস্থিতি

দ্য ব্লু মার্বেল 
এএস১৭-১৪৮-২২৭২৭, যেখান থেকে "দ্য ব্লু মার্বেল" চিত্রটি তৈরি করা হয়েছে।

"দ্য ব্লু মার্বেল" চিত্রের নাসার দাপ্তরিক ডেজিগনেশন হচ্ছে এএস১৭-১৪৮-২২৭২৭। এটি আলোকচিত্রের এক ধারাবাহিকের তৃতীয় চিত্র, যা প্রায় একইরকম দেখতে এএস১৭-১৪৮-২২৭২৫ ও এএস১৭-১৪৮-২২৭২৬ চিত্রের পরে তোলা হয়েছে। এএস১৭-১৪৮-২২৭২৬ চিত্রকেও অনেকসময় এক সম্পূর্ণ পৃথিবীর চিত্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়। "দ্য ব্লু মার্বেল" চিত্রের সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত রূপ আদতে মূল চিত্রকে ক্রপ করে ও বর্ণগত সামঞ্জস্য এনে তৈরি করা হয়েছে।

নাসা প্রদত্ত বিবরণ অনুযায়ী ০৫:৩৯ ইএসটি সময়ে, অর্থাৎ অ্যাপোলো ১৭ মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের ৫ ঘণ্টা ৬ মিনিট পরে এবং পৃথিবীর চারিদিকে মহাকাশযানের পার্কিং কক্ষপথ ত্যাগ করে চাঁদের দিকে রওনা দেওয়ার ১ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট পরে এই চিত্রটি তোলা হয়েছিল। মতান্তরে, এরিক হার্টওয়েল এই চিত্রকে ৫ ঘণ্টা ৩ মিনিটের সামান্য আগে তোলা হয়েছিল বলে চিহ্নিত করেছেন। তখন একজন ক্রু সদস্য এফ-সংখ্যা বদল করার কথা বলেছেন, সম্ভবত এএস১৭-১৪৮-২২৭২৫ (আগে উল্লেখিত ধারাবাহিকের প্রথম চিত্র) এবং "দ্য ব্লু মার্বেল" চিত্রের ন্যায় পরবর্তী কম এক্সপোজ হওয়া চিত্রের মধ্যবর্তী সময়ে। আফ্রিকা মহাদেশে তখন মধ্যাহ্ন, এবং ডিসেম্বরের সংক্রান্তির সময় অ্যান্টার্কটিকাও আলোয় আলোকিত ছিল।

অ্যাপোলো ১৭ হচ্ছে বিংশ শতাব্দীর শেষ মানব চন্দ্রাভিযান এবং এরপর থেকে কোনো ব্যক্তি "দ্য ব্লু মার্বেল" চিত্রের মতো এক সম্পূর্ণ পৃথিবীর আলোকচিত্র তোলার মতো দূরত্বে যেতে পারেনি, যদিও অনেক যান্ত্রিক মহাকাশযান সম্পূর্ণ পৃথিবীর চিত্র তুলেছে।

পরবর্তী "ব্লু মার্বেল" চিত্রসমূহ

২০০১–২০০৪ এর ধারাবাহিক

২০০১ ও ২০০২ সালে নাসা দ্বারা প্রস্তুত দুটি "ব্লু মার্বেল" কম্পোজিট চিত্র
"ব্লু মার্বেল নেক্সট জেনারেশন" ধারাবাহিকের অ্যানিমেশন (২০০৪)

২০০২ সালে নাসা উপগ্রহ চিত্রের এক বড় সংকলন প্রকাশ করেছিল, যার মধ্যে সরাসরি মানব দৃষ্টির পক্ষে উপযুক্ত চিত্র এবং পরবর্তী কর্মের জন্য উপযুক্ত চিত্রের সম্পূর্ণ সংকলন রয়েছে। তখনকার সময় বিনামূল্যে সর্বোচ্চ ১ কিমি প্রতি পিক্সেল পর্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ চিত্র পাওয়া যেত এবং মেঘের আবরণ অপসারণ, বাদ পড়ে যাওয়া তথ্য লুকিয়ে দেওয়া ইত্যাদির প্রয়োজন ছাড়াই পুনঃব্যবহার করার অনুমতি ছিল। এই তথ্যে একইরকমভাবে হাত দিয়ে সাজানো নিম্ন রেজোলিউশনের মেঘের অবরণসহ চিত্রের সংকলন এবং রাতের আলোসহ চিত্রের সংকলন ছিল।

২০০৫ সালে "ব্লু মার্বেল নেক্সট জেনারেশন" নামক আরেক ধারাবাহিক চিত্র প্রকাশ করা হয়েছিল। নাসা আর্থ অবজারভেটরি থেকে গৃহীত চিত্রগুলো থেকে এই ধারাবাহিক ডিজিটাল চিত্র মোজাইক তৈরি করা হয়েছিল। এই ধারাবাহিকে জানুয়ারি ২০০৪ থেকে ডিসেম্বর ২০০৪ পর্যন্ত প্রত্যেক মাসের সম্পূর্ণ ও মেঘমুক্ত পৃথিবীর চিত্র রয়েছে এবং এদের রেজোলিউশন আরও বেশি (৫০০ মিটার/পিক্সেল)।

ব্লু মার্বেল ২০১২

দ্য ব্লু মার্বেল 
ব্লু মার্বেল ২০১২

২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারিতে নাসা "ব্লু মার্বেল ২০১২" নামক পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধের এক কম্পোজিট চিত্র প্রকাশ করেছিল। রবার্ট সিমন তাঁর পশ্চিম গোলার্ধের চিত্রায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। প্রকাশনার এক সপ্তাহের মধ্যে ফ্লিকার ওয়েবসাইটে এই চিত্রের দর্শক সংখ্যা ৩১ লাখ হয়ে গিয়েছিল। ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে নাসা এই নতুন "ব্লু মার্বেল" চিত্রের এক সহচর চিত্র প্রকাশ করেছিল, যা ২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারিতে গৃহীত উপাত্তের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা পূর্ব গোলার্ধের এক কম্পোজিট চিত্র।

২০১২ সালের ৪ জানুয়ারিতে সুওমি এনপিপি কৃত্রিম উপগ্রহের ভিজিবল/ইনফ্রারেড ইমেজার রেডিওমিটার স্যুট (ভিআইআইআরএস) দ্বারা প্রাপ্ত উপাত্ত বা ডাটা থেকে এই "ব্লু মার্বেল" চিত্রটি তৈরি করা হয়েছে। আট ঘণ্টা ধরে পৃথিবীর চারিদিকে ছয়বার আবর্তন করে সুওমি এনপিপি এই উপাত্ত সংগ্রহ করেছিল।

ব্ল্যাক মার্বেল ২০১২

দ্য ব্লু মার্বেল 
ব্ল্যাক মার্বেল – রাতের সময় উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলের কাছে হ্যারিকেন স্যান্ডিকে দেখা যাচ্ছে।

২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নে ভূবিজ্ঞানীদের মধ্যে এক বার্ষিক সম্মেলন চলাকালীন নাসা "ব্ল্যাক মার্বেল" নামক পৃথিবীর এক রাত্রিকালীন চিত্র প্রকাশ করেছিল। এই চিত্রে সমস্ত আলোকিত মানব ও প্রাকৃতিক পদার্থকে দেখানো হয়েছে এবং এগুলো মহাকাশ থেকে দেখতে পাওয়া যায়।

আরও দেখুন

  • "আর্থরাইজ" — পৃথিবীর অপর বহুল প্রকাশিত চিত্র, যা উইলিয়াম অ্যান্ডারস ১৯৬৮ সালে অ্যাপোলো ৮ মহাকাশযান থেকে তুলেছেন।
  • "পেল ব্লু ডট" — ১৯৯০ সালে ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীর চিত্র।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

দ্য ব্লু মার্বেল চিত্রের বিবরণদ্য ব্লু মার্বেল ইতিহাসদ্য ব্লু মার্বেল পরবর্তী ব্লু মার্বেল চিত্রসমূহদ্য ব্লু মার্বেল আরও দেখুনদ্য ব্লু মার্বেল তথ্যসূত্রদ্য ব্লু মার্বেল বহিঃসংযোগদ্য ব্লু মার্বেলআলোকচিত্রইংরেজি ভাষাপৃথিবী

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

জাপানশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়সেলজুক সাম্রাজ্যভারতের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাবাংলাদেশএম এ ওয়াজেদ মিয়ানীল বিদ্রোহলোহাউপন্যাসআল-আকসা মসজিদআংকর বাটহুমায়ূন আহমেদজীবনানন্দ দাশলোহিত রক্তকণিকাচাশতের নামাজনেইমারগনোরিয়াইন্দিরা গান্ধীঔষধচ্যাটজিপিটিআবদুল হামিদ খান ভাসানীছোলাশিক্ষাবাংলার প্ৰাচীন জনপদসমূহফিফা বিশ্বকাপশ্রীলঙ্কাবিপন্ন প্রজাতিউসমানীয় সাম্রাজ্যসমাজতন্ত্রমূলদ সংখ্যাবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকারাজশাহী বিভাগআমলিঙ্গ উত্থান ত্রুটিহা জং-উভারতের ভূগোলমহেরা জমিদার বাড়িপানিজুবায়ের জাহান খানক্যালাম চেম্বার্সভারতঅসমাপ্ত আত্মজীবনীপ্যারিসমাদার টেরিজাঅশোক (সম্রাট)আইনজীবীপল্লী সঞ্চয় ব্যাংকভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহচড়ক পূজাতুলসীছায়াপথকুরাকাওনোয়াখালী জেলাচিঠিবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসুবহানাল্লাহমুসাসূর্যসালমান শাহপর্নোগ্রাফিবাংলাদেশের একাডেমিক গ্রেডিং পদ্ধতিকোষ নিউক্লিয়াসদক্ষিণ আফ্রিকাকানাডাআব্বাসীয় খিলাফতবাংলাদেশের উপজেলাশুক্রাণুগুগলজলবায়ু পরিবর্তন২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপরক্তভেষজ উদ্ভিদআতাবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাবিদায় হজ্জের ভাষণচতুর্থ শিল্প বিপ্লবপর্যায় সারণী🡆 More