জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (সংক্ষেপে জাসদ) বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। বর্তমানে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল | |
---|---|
সংক্ষেপে | জাসদ |
সভাপতি | হাসানুল হক ইনু |
সাধারণ সম্পাদক | শিরীন আখতার |
প্রতিষ্ঠাতা | মেজর (অবঃ) মোহম্মদ আব্দুল জলিল, আ.স.ম. আব্দুর রব, হাসানুল হক ইনু |
প্রতিষ্ঠা | ৩১ অক্টোবর ১৯৭২ |
বিভক্তি | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
সদর দপ্তর | ৩৫-৩৬ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ঢাকা |
ছাত্র শাখা | বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) |
যুব শাখা | জাতীয় যুব জোট |
মহিলা শাখা | জাতীয় নারী জোট |
শ্রমিক সংগঠন | জাতীয় শ্রমিক জোট |
ভাবাদর্শ | সমাজতন্ত্র |
রাজনৈতিক অবস্থান | বামপন্থী |
জাতীয় অধিভুক্তি | মহাজোট |
আনুষ্ঠানিক রঙ | লাল |
জাতীয় সংসদে আসন | ১ / ৩৫০ |
নির্বাচনী প্রতীক | |
দলীয় পতাকা | |
ওয়েবসাইট | |
জাসদ | |
বাংলাদেশের রাজনীতি রাজনৈতিক দল নির্বাচন |
১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর দলটির সাত সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়। মোহাম্মদ আবদুল জলিল হন সভাপতি এবং আ স ম আবদুর রব হন যুগ্ম আহ্বায়ক। একই বছরে ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অতিরিক্ত কাউন্সিলে ১০৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই সম্মেলনে জাসদ তার ঘোষণাপত্রও অনুমোদন করে। সেই ঘোষণাপত্রে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র তথা শ্রেণিহীন শোষণহীন কৃষক শ্রমিকরাজ প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেয়া হয়। ৭ মার্চ ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ২৩৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, শতকরা ৭ ভাগ(১,২২৯,১১০) ভোট পেয়ে ৫টি আসনে বিজয়ী হয় । ১৯৭৪ সালের শুরু থেকে শেখ মুজিব সরকারকে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, নির্যাতনের বিরুদ্ধে নতুন মাত্রায় আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়ন করে । ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪ সালে আহ্বান করে হরতাল। ১৭ মার্চ পল্টন ময়দানের জনসভা শেষে প্রায় হাজার ত্রিশ উত্তেজিত জনতার এক বিক্ষোভ মিছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেবার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। মিছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির সামনে পৌঁছলে পুলিশের সংগে জনতার খণ্ডযুদ্ধ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রক্ষীবাহিনী তলব করা হয় এবং রক্ষীবাহিনীর গুলিতে প্রায় ২২/২৩ জন জাসদ কর্মী নিহত হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবকে হত্যাকারী খুনী ফারুক-রশিদের তল্পী বাহক খন্দকার মোস্তাকের বিরুদ্ধে জাসদ অবস্থান নেয়। যার ফলশ্রুতিতে খন্দকার মোস্তাকের স্বল্পকালীন শাসন আমলে কয়েকশ নেতা-কর্মী নিহত হন। সেনাবহিনী শৃংখলা (চেইন অব কমান্ড) ফিরিয়ে আনার নামে ৩ নভেম্বর খালেদ মোশারফ পাল্টা ক্যু করলেও ৩ নভেম্বর জেল হত্যার ঘটনা ঘটে, বঙ্গবন্ধুর খুনীরা নির্বিঘ্নে বিদেশে চলে যায়। এই পটভুমিতে ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংঘটিত হয়, যা খালেদ মোশাররফ স্বল্পকালীন সরকারের অবসান ঘটায়। বন্দি জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত হন, তাকে অভ্যুত্থানকারী সৈনিকরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া উত্থাপন করে (-তার মধ্যে ছিল জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা) । আবু তাহের ছিলেন জাসদের গণবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং ৭ নভেম্বরের সিপাহী অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সাথে জড়িত। এই বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ছিলো গণবাহিনীর শাখা সংগঠন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের সরকারের আমলে দায়েরকৃত এক হত্যা মামলায় সামরিক আদালতে তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং ১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই তার ফাঁসী কার্যকর হয়।
১৯৮০ সালে বিভিন্ন বিতর্ককে কেন্দ্র করে প্রথম জাসদ ভাঙনের কবলে পড়ে এবং জাসদ থেকে বেরিয়ে একদল নেতা বাসদ গড়ে তোলে। ১৯৮৪ সালে আরেক দফা ভাঙ্গন হয়। ১৯৮৬ সালে কাজী আরেফ আহমেদ ও হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ জাসদ (ইনু) হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৯৭ সালে জাসদ (রব), জাসদ (ইনু) এবং বাসদ (মাহাবুব) এর একাংশ মঈন উদ্দিন খান বাদলের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়, আ স ম রব সভাপতি এবং হাসানুল হক ইনু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে আ স ম রবের নেতৃত্বে কতিপয় নেতা জেএসডি নামে জাসদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০০৪ সালে থেকে হাসানুল হক ইনু’র নেতৃত্বে জাসদ ১৪ দল গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে মহাজোট গঠিত হলে জাসদ (ইনু) মহাজোটের শরিক হয়। ২০১৬ সালের ১১ ও ১২ মার্চ জাসদের জাতীয় সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। ১২ মার্চ কাউন্সিল অধিবেশনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সেশন শেষে নির্বাচনী অধিবেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, নেতা নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন (এ সময় মূলত দলীয় সাংগঠনিক পদ বিলুপ্ত হয়)। হাসানুল হক ইনু সর্বসম্মতভাবে একক প্রার্থী হিসেবে কন্ঠ ভোটে সভাপতি পুনঃনির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক পদে শিরীন আখতার এমপি ও নাজমুল হক প্রধান এমপি-র নাম প্রস্তাব আসে। এ সময় শ্লোগান দেয়াকে কেন্দ্র করে উভয় প্রার্থীর পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নেতৃত্বে কিছু কাউন্সিলর কাউন্সিল অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি শান্ত হলে কাউন্সিলররা কাজী বশির মিলানায়াতনে (মহানগর নাট্যমঞ্চ) সাংগঠনিক নিয়মে সরাসরি সাধারণ সম্পাদক পদে গোপন ব্যালটে ভোট প্রদান করেন। শিরীন আখতার এমপি পান ৬০৩ ভোট এবং নাজমুল হক প্রধান পান ১২৩ ভোট পান । প্রাপ্ত ভোটে শিরীন আখতার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অন্যদিকে কাজী বশির মিলানায়াতন (মহানগর নাট্যমঞ্চ) ত্যাগকারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমাবেশ করে, শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে সভাপতি, নাজমুল হক প্রধানকে সাধারণ সম্পাদক এবং নিজেকে কার্যকরী সভাপতি ঘোষণা করেন মঈন উদ্দিন খান বাদল এমপি। এর মাধ্যমে কার্যত জাসদের আরেক দফা বিভক্তি চূড়ান্ত হয়।
নির্বাচন কমিশনে শরীফ নুরুল আম্বিয়া এবং নাজমুল হক প্রধান নিজেদের-কে বৈধ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে প্রতীক মশাল দাবি করেন। নির্বাচন কমিশন উভয় পক্ষের জন্য আলাদা আলাদা শুনানি এবং দাবির স্ব-পক্ষে দালিলিক প্রমাণ প্রদান করার জন্য পত্র প্রদান করে। ৬ এপ্রিল ২০১৬ সালে দুইপক্ষ আলাদা আলাদা শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে হাসানুল হক ইনু, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে মশাল সুরক্ষার আবেদন জানিয়ে চিঠি উল্লেখ করেন, জাসদ ২০০৮ সালের ০৩ নভেম্বর ইসিতে নিবন্ধন নেয়। নিবন্ধিত ১৩ নম্বর দল হিসেবে এর প্রতীক হচ্ছে ‘মশাল’। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ৩৫-৩৬ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা-১০০০। নিবন্ধন নেওয়ার সময় দলটির সভাপতি ছিলেন হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ। ১৩ এপ্রিল ২০১৬ নির্বাচন কমিশন হাসানুল হক ইনু’র নেতৃত্বাধীন অংশকে নিয়ম আনুযায়ী কাউন্সিল করার জন্য বৈধ কমিটি এবং তাদের অনুকুলে দলে নিবন্ধ বহাল রাখা হয়। নিবন্ধিত ১৩ নং দল জাসদ এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘মশাল’ এর আইনগত কর্তৃত্ব লাভ করেন। নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক কারণেই শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন অংশ মেনে নেয়নি। তারা নির্বাচন কমিশনে রিভিউ আবেদন করেন, আবেদন নিস্পত্তিত্বে সময়ক্ষেপনের অভিযোগ নিয়ে হাইকোর্টে রীট করেন। রীটটি গ্রহণ না করে নির্বাচন কমিশনকে ৩০দিনের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করতে বলেন। নির্বাচন কমিশন পুর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে এর প্রতিকার চেয়ে শরীফ নুরুর আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধান হাইকোর্টে রীট করেন। মহামান্য হাইকোর্ট এ প্রশ্নে রুল জারি করেন। কিন্তু জাসদের ‘১৩’ নং নিবন্ধন অথবা ‘মশাল’ প্রতীকের বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট কোন বিধি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। উল্লেখ্য প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে ‘লা্ঙ্গল’ নিয়ে হাইকোর্টের একটি রায় আছে।
জাতীয় কাউন্সিল ২০২০
সভাপতি: হাসানুল হক ইনু এমপি, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, কার্যকরী সভাপতি এড. রবিউল আলম
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের গণসংগঠনসমূহ হচ্ছে:
সভাপতি: সাইফুজ্জামান বাদশা, সাধারণ সম্পাদক: নইমুল আহসান জুয়েল।
সভাপতি: শরিফুল কবির স্বপন সাধারণ সম্পাদক: শরিফুল ইসলাম সুজন
আহবায়ক: আফরোজা হক রীনা
সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত): কৃষিবিদ কাওছার আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত): আশেক ই এলাহী
সভাপতি:রাশিদুল হক ননী, সাধারণ সম্পাদক:মাসুদ আহম্মেদ
১০ম জাতীয় সংসদে জাসদের মোট ৬ সংসদ সদস্য :
জাসদ সভাপতি, হাসানুল হক ইনু এমপি ২০১৪-২০১৯ সরকারে তথ্য মন্ত্রী’র দায়িত্ব পালন করছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮। ১১তম জাতীয় সংসদে জাসদের সংসদ সদস্য-৪ :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ । জাসদের ১জন সংসদ সদস্য : এ.কে.এম. রেজাউল করিম তানসেন এমপি, বগুড়া-৪
১১তম জাতীয় সংসদে জাসদের সংসদ সদস্য ৩ জন। তারা হলেন:
নির্বাচন | নেতা/প্রার্থী | ভোট | % | আসন/অবস্থান |
---|---|---|---|---|
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৭৩ | সিরাজুল | ১২,২৯,১১০ | ৬.৫ | ১ |
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৭৯ | সিরাজুল | ৯,৩১,৮৫১ | ৪.৮ | ৮ |
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ১৯৮১ | জলিল | ২,৪৮,৭৬৯ | ১.১ | পঞ্চম |
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৮৬ | রব (জাসদ-রব) | ৭,২৫,৩০৩ | ২.৫ | ৪ |
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৮৬ | সিরাজ (জাসদ-সিরাজ) | ২,৪৮,৭০৫ | ০.৯ | ৩ |
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৮৮ | সিরাজ (জাসদ-সিরাজ) | ৩,০৯,৬৬৬ | ১.২ | ৩ |
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯১ | সিরাজ | ৮৪,২৭৬ | ০.২ | ১ |
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জুন ১৯৯৬ | রব | ৯৭,৯৭৬ | ০.২ | ১ |
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০১ | ইনু | ১,১৯,৩৮২ | ০.২১ | ০ |
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০৮ | ইনু | ৫,০৬,৬০৫ | ০.৭২ | ৩ |
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৪ | ইনু | ৭,৯৮,৬৪৪ | ১.৭৫ | ৫ |
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৮ | ইনু | ৬,১০,০৪৪ | ০.৭২ | ২ |
উৎস: Nohlen et al. |
জাসদ রাজনীতি বিষয়ে আলোচনা সমালোচনামূলক বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে,
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.