জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস

বাংলাদেশে ৭ নভেম্বর তারিখটিকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস বা মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সংঘটিত সিপাহী ও জনতার বিপ্লব এর স্মরণে এই দিবসটি পালিত হয়। কর্নেল (অবঃ) আবু তাহের এর নেতৃত্বে সংঘটিত এই বিপ্লব জেনারেল খালেদ মোশাররফ এর ৩ দিনের সরকারের পতন ঘটায়। এই বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দীদশা থেকে মুক্তি পান, এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসেন। কোন কোন সময়ে ৭ই নভেম্বর বাংলাদেশে সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হয়েছে।

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস
মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস
পালনকারীবাংলাদেশ
তারিখ৭ নভেম্বর
পরবর্তী আয়োজন৭ নভেম্বর ২০২৪
সংঘটনবার্ষিক

কিছু সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হবার পর শেখ মুজিব সরকারের তেইশ জন মন্ত্রীর একুশ জনকে সাথে নিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। কিন্তু খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার নেপথ্যে ছিলেন ১৫ই অগাষ্টের ঘটনার মুল নায়কেরা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) এই ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি। তিনি তার অনুগত সৈন্য বাহিনী নিয়ে ৩রা নভেম্বর মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটান। অভ্যুত্থানটি প্রাথমিক ভাবে সফলও হয়। কিন্তু তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩ দিন। বস্তুতঃ খালেদ মোশাররফ রক্তপাত এড়াতে চেষ্টা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

৩রা নভেম্বরের অভ্যুত্থানে জেনারেল খালেদ মোশাররফ রক্তপাতহীন ক্যু করতে গিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার নিজ বাসভবনে গৃহবন্দী করেন। কর্নেল (অবঃ) আবু তাহের সে সময় নারায়ণগঞ্জ অবস্থান করছিলেন। কর্নেল তাহের ছিলেন জিয়াউর রহমানের একজন বিশেষ শুভাকাঙ্খী। তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। সৈনিক-অফিসার বৈষম্য তার পছন্দ ছিলনা। তার এই নীতির জন্য তাহের সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিকদের মাঝেও দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন। কর্নেল তাহের বিশ্বাস করতেন জিয়াও তারই আদর্শের লোক।

জিয়া তার বাসভবনে বন্দী হয়ে থাকেন। খালেদ মোশারফের নির্দেশে তাকে বন্দী করে রাখেন তরুণ ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লাহ। জিয়ার বাসার টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লাহ একটি ভুল করেন। তিনি ভুলে যান বেডরুমেও একটি টেলিফোন আছে। জিয়া কৌশলে বেডরুম থেকে ফোন করেন তাহেরকে। খুব সংক্ষেপে বলেন "সেভ মাই লাইফ"।

তাহের জিয়ার আহ্বানে সাড়া দেন। তিনি ঢাকাতে তার অনুগত ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহীদের পাল্টা প্রতিরোধ গড়ার নির্দেশ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া থেকে ঢাকা রওনা হন, এ সময় তার সফর সঙ্গী ছিল শত শত জাসদ কর্মী। কর্নেল তাহেরের এই পাল্টা অভ্যুত্থান সফল হয় ৭ই নভেম্বর। কর্নেল তাহের, জিয়াউর রহমানকে বন্দী দশা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। ঐ দিনই পাল্টা অভ্যুত্থানে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা জেনারেল খালেদ মোশাররফকে হত্যা করে।

কথা ছিল, জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে আনা হবে। তারপর জাসদের অফিসে তাকে এনে তাহেরদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হবে। পরে সিপাহী-জনতার এক সমাবেশ হবে। সেখানে বক্তব্য রাখবেন জিয়া আর তাহের। কিন্তু মুক্ত হওয়ার পরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। জিয়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হতে সম্মত হন না। ঊর্ধ্বতন সামরিক অফিসাররা তাকে পরামর্শ দিতে থাকেন। তাহের জিয়াকে ভাষণ দিতে বলেন। জিয়া ভাষণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তাহের বুঝতে পারেন জিয়া তাদের সাথে আর থাকছেন না। তিনি পুনরায় সংগঠিত হতে থাকেন। কিন্তু জিয়া বুঝতে পারেন ক্ষমতায় টিকতে হলে তাহেরসহ জাসদকে সরাতে হবে। সেই অনুযায়ী গ্রেফতার হতে থাকেন জাসদের সব নেতারা। তাহেরও গ্রেফতার হন। শুরু হয় এক প্রহসনের এক বিচার। গোপন আদালতে চলতে থাকে সেই বিচার

১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়। অন্যান্য নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদের জেল হয়। ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের কারিগর ছিলেন তাহের। আর তার ফলে ক্ষমতায় বসেন জিয়া।

"বিপ্লব ও সংহতি" -শব্দটি সাধারণত সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের স্লোগান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমানে দিনটিকে মূলত জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল বিএনপি "জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস" হিসেবে পালন করে।

তথ্যসূত্র

Tags:

আবু তাহেরখালেদ মোশাররফজিয়াউর রহমাননভেম্বর ৭বাংলাদেশসিপাহী ও জনতার বিপ্লব

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

হামাসধানব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসমাসবাইতুল হিকমাহগাজওয়াতুল হিন্দবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাবাংলাদেশি কবিদের তালিকাইমাম বুখারীপৃথিবীইশার নামাজঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েবাঙালি হিন্দু বিবাহগণতন্ত্রতাজমহলবাংলাদেশের ইতিহাসএল নিনোএইচআইভিফজরের নামাজভূমি পরিমাপমাওয়ালিঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়রামায়ণবাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার তালিকাবাংলাদেশের বন্দরের তালিকাউত্তম কুমারভারতের রাষ্ট্রপতিবাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরপহেলা বৈশাখবাংলাদেশের পৌরসভার তালিকাকালীদক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাবৈষ্ণব পদাবলিবাংলার ইতিহাসসমরেশ মজুমদার১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনহোয়াটসঅ্যাপঘূর্ণিঝড়হার্নিয়াতাসনিয়া ফারিণবাংলাদেশ সেনাবাহিনীসূরা ফাতিহাগজলবিদ্রোহী (কবিতা)পানিপথের যুদ্ধজনি সিন্সচট্টগ্রাম জেলাঅসমাপ্ত আত্মজীবনীমুদ্রাবাংলা স্বরবর্ণসূর্যগ্রহণলালবাগের কেল্লাভূগোলডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসিবেদচট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রভালোবাসাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকৃষ্ণচূড়াপরীমনিচাকমাঅর্থ (টাকা)বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রসমূহের তালিকারয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুবঙ্গবন্ধু-২বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণজ্বীন জাতিজীববৈচিত্র্যসিঙ্গাপুরফেসবুকশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডঅকাল বীর্যপাতমান্নাঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনরাজ্যসভাধর্মবট🡆 More