জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা এবং পরিবর্তন

কোন জায়গার গড় জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তন যার ব্যাপ্তি কয়েক যুগ থেকে কয়েক লক্ষ বছর পর্যন্ত হতে পারে তাকে জলবায়ু পরিবর্তন (ইংরেজি: climate change) বলা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন বিভিন্ন নিয়ামকের উপর নির্ভরশীল; যেমন- জৈব প্রক্রিয়াসমূহ, পৃথিবী কর্তৃক গৃহীত সৌর বিকিরণের পরিবর্তন, ভূত্বক গঠনের পাততত্ত্ব (plate tectonics), আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ইত্যাদি। তবে বর্তমান কালে সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন বললে সারা পৃথিবীর ইদানীং সময়ের মানবিক কার্যকর্মের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন বোঝায় যা ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি বেশি পরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, বায়ুচাপ, বাতাস, ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রধান কারন হচ্ছে গ্রিনহাউস এফেক্ট। শক্তি উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানির পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন,মিথেন সহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক গ্যাস বৃদ্ধি পায় এবং এই গ্যাস গুলো আমাদের বায়ুমণ্ডলকে উৎতপ্ত করে চলেছে। ফলাফল স্বরূপ মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে,যার কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী নিম্ন অঞ্চল ‌‌‌‌‌‌‌‌‌গুলো প্লাবিত হচ্ছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া মেরু অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন: এসিড বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি বড় কারন হচ্ছে অধিক পরিমাণে বৃক্ষ নিধন এবং নতুন নতুন শিল্প কারখানা প্রতিস্থাপন ।এইসব কারখানা থেকে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত করে চলছে। এই সকল গ্যাস পরিবেশ এবং জলবায়ুর জন্য অন্তত্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে বৃক্ষের রয়েছে এইসকল ক্ষতিকর গ্যাস গুলো গ্রহণ করে, সেগুলোকে অক্সিজেনে রুপান্তরিত করার ক্ষমতা। কিন্তু আমরা সেই বৃক্ষ গুলোকেও নিধন করে চলেছি। বনের পর বন উজাড় করে চলছে শিল্প কারখানা এবং নতুন নতুন ভবন তৈরি করা।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ি আমরা মানুষরাই। তাই আগে আমাদের ভুল গুলো সুদরে নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অনেক পরিমাণে বৃক্ষ রোপন করতে হবে এবং যে সব শিল্প কারখানা বায়ুতে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর গ্যাস গুলো নির্গমন করে চলছে, সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। অতঃপর আশাকরা যায় এই সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করলে পৃথিবীর জলবায়ু কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহ

বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ওপর জলবায়ুর পরিবর্তন নির্ভর করে। এর মধ্যে যেমন আছে পৃথিবীর বিভিন্ন গতিশীল প্রক্রিয়া, তেমন আছে বহির্জগতের প্রভাব । শেষোক্ত কারণটির মধ্যে থাকতে পারে সৌর বিকিরণের মাত্রা, পৃথিবীর অক্ষরেখার দিক-পরিবর্তন কিংবা সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান । বর্তমান সময়ে মনুষ্যজনিত গ্রীনহাউজ গ্যাসের ফলে পৃথিবীর উষ্ণায়নকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম কারণ ধরা হয়। জলবায়ুর বৈজ্ঞানিক মডেলে এই সমস্ত সূচককে ইংরেজিতে অনেক সময় Climate Forcing বলে সম্বোধন করা হয়।

হিমবাহতা

জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা এবং পরিবর্তন 
আন্টার্টিক তুষার আস্তর। শৈত্য বা বরফ যুগে তুষার আস্তরের আয়তন বাড়ে।
জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা এবং পরিবর্তন 
আন্টার্টিকের ভাস্তক স্টেশনের গত ৪০০,০০০ বছরের ভূগর্ভস্থ্ বরফের তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি,CO2, এবং ধূলিকনার পরিমাণ

জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম সংবেদনশীল সূচক হিসাবে হিমবাহদের হ্রাস-বৃদ্ধিকে ধরা হয়.। জলবায়ু শীতল হলে হিমবাহের আকার বাড়ে আর উষ্ণ জলবায়ুতে হিমবাহের আয়তন ও সংখ্যা কমে যায়। শৈত্যযুগ বা বরফযুগের সময় পৃথিবীর একটা বিরাট অঞ্চল হিমবাহ ও তুষার আস্তরের নিচে ঢাকা থাকে।

আজ থেকে হয়তো ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লক্ষ বছর আগে প্রায় হঠাৎ করেই পৃথিবীতে একটা পর্যায়ক্রমিক শৈত্যযুগ ও অন্তর্বর্তীকালীন উষ্ণ যুগের সূত্রপাত হয়। কেন এইভাবে শৈত্য ও উষ্ণ যুগ চক্রের আবির্ভাব হল তাই নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে, তবে অনেকে মনে করেন পৃথিবীর মহাদেশগুলোর পারস্পরিক অবস্থান, সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর কক্ষপথ ও পৃথিবীর অক্ষরেখার দিক পরিবর্তন, ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস এর জন্যে দায়ী। কারণ যাই হোক না কেন এখন দেখা যাচ্ছে যে দুটি উষ্ণ যুগের চূড়ান্ত পর্যায়ের মাঝে সময় হচ্ছে প্রায় ১,০০,০০০ বা এক লক্ষ বছর । তবে এক লক্ষ বছর নিতান্তই একটা আনুমানিক সময়, এই সময়টা ৮০,০০০ বছর থেকে ১,২০,০০০ বছরের মধ্যে ধরা যেতে পারে। আবার এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে ছোট ছোট শৈত্য বা উষ্ণ যুগের অবস্থান হতে পারে।

তথ্যসূত্র

Tags:

Climate changeইংরেজি ভাষাজলবায়ুজীবাশ্মপৃথিবীর বায়ুমণ্ডলপ্রাকৃতিক দুর্যোগ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

অর্থ (টাকা)ময়মনসিংহ জেলাশিয়া ইসলামতাপমাত্রাজয়নুল আবেদিনযৌনাসনজন মিলটনরাজ্যসভাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী২০২১–২২ ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরনৃত্যশশাঙ্ক সিংকাঠগোলাপআকিজ গ্রুপমান্নাভৌগোলিক আয়তন অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাদুধদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনমানব দেহময়মনসিংহ বিভাগমাশাআল্লাহবিশ্ব দিবস তালিকাআন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবিবাংলাদেশের উপজেলার তালিকামেঘনাদবধ কাব্যচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়প্লাস্টিক দূষণআনারসগাজওয়াতুল হিন্দহিন্দুধর্মের ইতিহাসপানি দূষণআমাশয়গেরিনা ফ্রি ফায়ারমৌলিক বলআলাওলবাংলাদেশের সংবাদপত্রের তালিকাপশ্চিমবঙ্গে ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০১৯সুফিয়া কামালজামাল নজরুল ইসলামদ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের তালিকাবিদায় হজ্জের ভাষণআরসি কোলাব্র্যাকছোটগল্পবেনজীর আহমেদবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজিরাষ্ট্রবিজ্ঞানবাংলাদেশের মন্ত্রিসভাধর্মনোয়াখালী জেলাসাহাবিদের তালিকাবাংলাদেশের ইতিহাস২০২২ ফিফা বিশ্বকাপকালো জাদুকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাজব্বারের বলীখেলামাইটোসিসমিমি চক্রবর্তীবালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রশিবলী সাদিকমেঘালয়ফুলউইকিপিডিয়াব্রিটিশ ভারতবাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনরাজীব গান্ধীগোপাল ভাঁড়মহাত্মা গান্ধীআর্দ্রতাযৌন নিপীড়নআয়িশাবাংলা শব্দভাণ্ডারকলকাতা🡆 More