ছট পূজা: হিন্দু উৎসব

ছট পূজা (বা ছঠ পূজা) হিন্দু বর্ষপঞ্জীর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে উদযাপিত একটি প্রাচীন হিন্দু পার্বণ। সূর্য্যোপাসনার এই অনুপম লৌকিক উৎসব পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে পালিত হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে এই পার্বণ প্রবাসী ভারতীয়দের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত হয়েছে। ছট পূজা সূর্য্য ও তার পত্নী ঊষার (ছটী মাঈ) প্রতি সমর্পিত হয়, যেখানে তাকে পৃথিবীতে জীবনের স্রোত বহাল রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আশীর্বাদ প্রদানের কামনা করা হয়। ছটে কোনও মূর্তি পূজা করা হয় না।

ছট পূজা
ছট পূজা: নামকরণ, পূজার উৎপত্তি, তাৎপর্য
পবিত্র নদীর ঘাটে সূর্যের উপাসনা
অন্য নামছট, ছটী মাঈ পূজা, ছট পার্বণ, ডালা ছট, ডালা পূজা, সূর্য ষষ্ঠী
পালনকারীহিন্দু, উত্তর ভারতীয়, ভারতীয় প্রবাসী
ধরনহিন্দুধর্ম
তাৎপর্যসূর্যের উপাসনা, নির্জলা ব্রত, সর্বকামনা পূর্তির আরাধনা
তারিখকার্তিক শুক্লা ষষ্ঠী

নামকরণ

    ছট পার্বণ

ছট বা ছঠ, ষষ্ঠী নামের অপভ্রংশ। মূলত সূর্য ষষ্ঠী ব্রত হওয়ার দরুণ একে ছট বলা হয়। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপাবলি পালনের পর এই চার দিনের ব্রতের (কার্তিক শুক্লা চতুর্থী থেকে কার্তিক শুক্লা সপ্তমী) সবচেয়ে কঠিন ও তাৎপর্যপূর্ণ রাত্রি হল কার্তিক শুক্লা ষষ্ঠী; বিক্রম সংবতের কার্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত উদযাপিত হওয়ার কারণে এর নাম ছট রাখা হয়েছে।

পূজার উৎপত্তি

এই পূজার কখন উৎপত্তি হয়েছিল তার কোনো স্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায় না। কিন্তু কিছু পৌরাণিক আখ্যানে ছট পূজার নীতি নিয়মের সঙ্গে মিল থাকা উৎসব দেখা যায়। ঋগ্বেদের শ্লোকসমূহে সূর্য্যবন্দনার স্পষ্ট নিদর্শন আছে। ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে গ্রীক, রোমান, মিশরীয় ইত্যাদির সভ্যতাসমূহেও সূর্য্য মূখ্য দেবতা ছিলেন। সেভাবে ঊষাও বৈদিক দেবী। বেদে উল্লেখ থাকা মতে, তিনি হলেন পূর্বের দেবী এবং অশ্বিনীকুমারদের মাতা। অগ্নি, সোম এবং ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতা সকলের পরে তিনি হলেন অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈদিক দেবী। রাত্রি হল তার ভগ্নী যাকে হয়তো পরে পৌরাণিক যুগে সন্ধ্যা এবং ছায়ারূপে কল্পিত করা হয়েছে। রামায়ণে উল্লেখ থাকা মতে, রামের কুলদেবতা সূর্য্যের জন্য রাম এবং সীতা এই পূজা করেছিলেন। মহাভারতে উল্লেখ থাকা মতে, দ্রৌপদী ধম্য ঋষির উপদেশ মতে সূর্য্যকে আরাধনা করে অক্ষয় পাত্র লাভ করেছিলেন। সঙ্গে মহাবীর কর্ণের কোমর পর্যন্ত জলে নেমে সূর্য্যের উপাসনা করা উল্লেখ আছে। আজও ছট পূজা উদ্‌যাপন করা সকল মানুষকে কোমর পর্যন্ত জলে নেমে সূর্য বন্দনা করতে দেখা যায়। অন্য এক আখ্যান মতে, পাণ্ডু ঋষি হত্যার পাপের প্রায়শ্চিত্তের কারণে পত্নী কুন্তীর সঙ্গে বনে থাকায় পুত্র প্রাপ্তির জন্য সরস্বতী নদীর পারে সূর্য্য উপাসনা এবং ব্রত করেছিলেন।

পুরাণ মতে, প্রথম মনু প্রিয়বতের কোনো সন্তান ছিল না। তাই তার পিতা কাশ্যপ মুনি পুত্রেষ্ঠী যজ্ঞ করতে পরামর্শ দেন। এর ফলে তার পত্নী মালিনী একটি মৃত পুত্র জন্ম দিলেন। মৃত শিশু দেখে তারাও বিলাপ করতে থাকায় আকাশ থেকে এক দিব্য কন্যা প্রকট হলেন। তিনি নিজকে ব্রহ্মার মানস পুত্রী বলে পরিচয় দিলেন এবং মৃত পুত্রকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে সে জীবিত হয়ে উঠল। এখনও ঊষা দেবী বা ছটি মায়ের মূর্তি কোলে কিছু থাকা অবস্থায় কল্পনা করা হয় এবং পুত্র প্রাপ্তির জন্য ব্রত উপাসনা করা হয়।

তদুপরি লৌকিক দেবী হিসাবে অন্য বহু লোককথা আখ্যান হিসাবে মানুষের মুখে মুখে চলে আসছে।

তাৎপর্য

ভারতে সূর্য্যোপাসনার জন্য প্রসিদ্ধ পার্বণ হল ছট পূজা। এটি বছরে দুবার পালিত হয় — প্রথমবার চৈত্র মাসে (চৈতী ছট) এবং দ্বিতীয়বার কার্তিক মাসে (কার্তিকী ছট)। পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধি তথা মনোবাঞ্ছিত ফল লাভের জন্য এটি পালন করা হয়। নারী-পুরুষ সমানভাবে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।

ছট পূজায় কোনো মূর্তি উপাসনার স্থান নেই। এতে ডুবিত এবং উদিত সূর্যকে পূজা করা হয়। আজকাল পূজা অনুষ্ঠিত করা কমিটিগুলিকে সকল ঘাটের কাছে সূর্য এবং ঊষার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে দেখা যায়। পূজার দুদিন আগে লাউ ভাত এবং একদিন আগে খির ভাত খাওয়ার সঙ্গে ৩৬ ঘণ্টার এক কঠোর ব্রত পালন করতে হয়। পূজায় সম্পূর্ণ সাত্বিক নৈবেদ্য ইত্যাদি কুলো, ডলা বা পাচিতে রেখে উৎসর্গ করা হয়। বিভিন্ন ফলমূল, মিঠাই ইত্যাদির সঙ্গে পরম্পরাগত বিহারী লোকখাদ্য "ঠেকুয়া" প্রস্তুত করে নৈবেদ্যরূপে প্রদান করা হয়। এই সময় নুন-মশলাবর্জিত সম্পূর্ণ নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করা হয়। পূজার শেষে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের প্রসাদ বিতরণ এই পূজার অন্যতম নিয়ম। এই পূজায় অনেককে বাগরি নদীর ঘাটে গিয়ে পূজা করার দৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে এই পূজা এক সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। বিভিন্ন ভাষাভাষী, ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ এই পূজার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে পূজায় সামিল হতে শুরু করেছেন।

আচার-অনুষ্ঠান

ছট পূজা: নামকরণ, পূজার উৎপত্তি, তাৎপর্য 
বিহারে ছট পূজা উদ্‌যাপন

চারদিনের এই ব্রতের প্রথম দিনে ব্রতধারী বাড়িঘর পরিষ্কার করে স্নান সেরে শুদ্ধাচারে নিরামিষ ভোজন করেন (যাকে নহায়-খায় বলা হয়)। পরদিন থেকে উপবাস শুরু হয়; ব্রতী দিনভর নির্জলা উপবাস পালনের পর সন্ধ্যায় পূজার শেষে ক্ষীরের ভোগ গ্রহণ করেন (এটি খরনা নামে পরিচিত)। তৃতীয় দিনে নিকটবর্তী নদী বা জলাশয়ের ঘাটে গিয়ে অন্যান্য ব্রতীর সাথে অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য অর্থাৎ দুধ অর্পণ করা হয়। ব্রতের শেষদিনে পুনরায় ঘাটে গিয়ে উদীয়মান সূর্যকে পবিত্র চিত্তে অর্ঘ্যপ্রদানের পর উপবাসভঙ্গ করে পূজার প্রসাদরূপে বাঁশ নির্মিত পাত্রে সুপ, গুড়, মিষ্টান্ন, ক্ষীর, ঠেকুয়া, ভাতের নাড়ু এবং আখ, কলা, মিষ্টি লেবু প্রভৃতি ফল জনসাধারণকে দেওয়া হয়।

চিত্রসম্ভার

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Bihar topics টেমপ্লেট:Nepal topics

Tags:

ছট পূজা নামকরণছট পূজা পূজার উৎপত্তিছট পূজা তাৎপর্যছট পূজা আচার-অনুষ্ঠানছট পূজা চিত্রসম্ভারছট পূজা তথ্যসূত্রছট পূজা বহিঃসংযোগছট পূজাউত্তরপ্রদেশকার্তিকঝাড়খণ্ডনেপালপূর্ব ভারতপৃথিবীবিহারমূর্তি (হিন্দুধর্ম)শুক্ল পক্ষসূর্য (দেবতা)হিন্দু বর্ষপঞ্জী

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়বীর শ্রেষ্ঠশিববাংলাদেশের মেডিকেল কলেজসমূহের তালিকামুহাম্মাদইফতারমামুনুর রশীদসুরেন্দ্রনাথ কলেজজিয়াউর রহমানহরিপদ কাপালীবাজিমদিনাসালোকসংশ্লেষণফিলিস্তিনভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহবাংলাদেশের বিমানবন্দরের তালিকারাদারফোর্ড পরমাণু মডেলকোষ বিভাজনবাস্তব সংখ্যাগঙ্গা নদীসাহাবিদের তালিকাগর্ভধারণবদরের যুদ্ধবাবরআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসঅযুআদমসংস্কৃতিঅকালবোধনম্যালেরিয়াহরপ্পাউইকিবইইসলামে আদমভারী ধাতুআল পাচিনোহনুমান (রামায়ণ)জান্নাতবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশননোয়াখালী জেলাজাপানক্যান্সারবিবাহনাইট্রোজেনপল্লী সঞ্চয় ব্যাংকপশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকৃষ্ণগহ্বরশবনম বুবলিফুলপানি দূষণবুর্জ খলিফাসিলেটজ্ঞানইংল্যান্ডজীবাশ্ম জ্বালানিগ্রামীণ ব্যাংককেন্দ্রীয় শহীদ মিনারস্বত্ববিলোপ নীতিবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীনালন্দাঅনুসর্গঅ্যান মারিজেলা প্রশাসকমালদ্বীপন্যাটোএইচআইভিকুমিল্লা জেলাপাঠান (চলচ্চিত্র)সূরা কাফিরুনমানব শিশ্নের আকারলাইকিচট্টগ্রাম বিভাগকুরআনের ইতিহাসজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সালেহ আহমদ তাকরীমহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরভূগোলআর্জেন্টিনা–ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতারামায়ণ🡆 More