গ্নু

গ্নু (ইংরেজি: GNU) একটি অপারেটিং সিস্টেম এবং বিস্তৃত কম্পিউটার সফটওয়্যারের সম্মিলন। গ্নু পরিপূর্ণভাবে ফ্রি সফটওয়্যার দ্বারা গঠিত, যাদের অধিকাংশই গ্নু প্রকল্পের নিজস্ব জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স গ্নু জিপিএলের অধীনে লাইসেন্সকৃত।

গ্নু
গ্নু
গ্নু
প্যারাবোলা গ্নু/লিনাক্স-লিব্রে, একটি পরিপূর্ণ ফ্রি লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন
ডেভলপারকম্যুনিটি
প্রোগ্রামিং ভাষাবিবিন্ন (প্রধানত সি এবং এসেম্বলি ভাষা)
ওএস পরিবারইউনিক্স-সদৃশ
কাজের অবস্থাসক্রিয়
সোর্স মডেলফ্রি সফটওয়্যার
মার্কেটিং লক্ষ্যব্যক্তিগত কম্পিউটার, মুঠোফোন, এম্বেডেড ডিভাইস, সার্ভার, মেইনফ্রেম, সুপারকম্পিউটার
প্ল্যাটফর্মআইএ-৩২ (শুধুমাত্র হার্ড কার্নেলের সাথে) এবং আলিফা, এআরসি, এআরএম, এভিআর৩২, ব্ল্যাকফিন, সি৬এক্স, এট্রাক্স ক্রিস, এফআর-৫, এইচ৮-৩০০, হেক্সাগন, ইটানিয়াম, এম৩২আর, এম৬৮কে, মেটা, মাইক্রোব্লেজ, এমআইপিএস, এমএন১০৩, ওপেনআরআইএসসি, পিএ-আরআইএসসি, পাওয়ারপিসি, এস৩৯০, এস+কোর, সুপারএইচ, স্পার্ক
কার্নেলের ধরনমাইক্রোকার্নেল (গ্নু হার্ড) অথবা মনোলিথিক কার্নেল (গ্নু লিনাক্স-লিব্রে, লিনাক্সের ফোর্ক)
ইউজারল্যান্ডগ্নু
লাইসেন্সগ্নু জিপিএল, গ্নু এলজিপিএল, গ্নু এজিপিএল, গ্নু এফডিএল, গ্নু এফএসডিজি
ওয়েবসাইটhttps://www.gnu.org/home.en.html

গ্নু বা GNU হলো "GNU's Not Unix!"-এর পুনসংক্ষিপ্ত রূপ। এমন নামের কারণ, যদিও গ্নু ইউনিক্স-সদৃশ, এর সাথে ইউনিক্সের তফাৎ হলো এটি ফ্রি, যেখানে ইউনিক্স ফ্রি নয়। তাছাড়াও গ্নুতে ইউনিক্সের কোন কোডই ব্যবহার করা হয়নি। গ্নু প্রকল্পে একটি অপারেটিং সিস্টেম কার্নেল, গ্নু হার্ড, অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেটিই এফএসএফের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলো। যাইহোক, নন-গ্নু কার্নেল, যেমন — লিনাক্সও গ্নু সফটওয়্যারের সাথে ব্যবহার করা যায়, কারণ গ্নু হার্ড এখনও সাধারণের ব্যবহারোপযোগী নয়। গ্নু সফটওয়্যার ও লিনাক্স কার্নেলের এমন সম্মিলন গ্নু/লিনাক্স, গ্নু+লিনাক্স বা শুধু লিনাক্স নামে পরিচিত।

গ্নু
রিচার্ড স্টলম্যান, গ্নু প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা

ইতিহাস

রিচার্ড স্টলম্যান গ্নু অপারেটিং সিস্টেমের এই পরিকল্পনার কথা net.unix-wizards এবং net.usoft নিউজগ্রুপে জানান ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ সালে। সফটওয়্যার ডেভলপমেন্টের কাজ শুরু হয় ৫ জানুয়ারি ১৯৮৪ সালে। এর আগে তিনি এমআইটির আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাব থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কারণ এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকার কারণে গ্নু সফটওয়্যারের ডেভলপমেন্ট বা বিনামূল্যে বিতরণের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে অথবা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সফটওয়্যারগুলোর মালিকানার দাবি উত্থাপন হতে পারে। রিচার্ড স্টলম্যান গ্নু নামটি নির্বাচন করেছেন বিভিন্ন শব্দের খেলা এবং দ্য গঞ্জ নামের একটি গান থেকে।

এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল সম্পূর্ণরূপে ফ্রি সফটওয়্যারের সমন্বয়ে একটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরী করা। স্টলম্যান চেয়েছিলেন কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা যেন "স্বাধীন" থাকতে পারেন, যেমনটা ছিলেন ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে। সে সময় সফটওয়্যার ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যবহৃত সফটওয়্যারের সোর্স কোড নিয়ে স্টাডি, অন্য যে কারও সাথে শেয়ার করা, সফটওয়্যারে যে কোনো ধরনের পরিবর্তন করার স্বাধীনতা পেতেন। এমনকি পরিবর্তীত সফটওয়্যারসমূহ পুনরায় প্রকাশ করার ব্যাপারেও কোনো বাধা ছিল না ব্যবহারকারীদের। গ্নু ইশতেহারে মার্চ ১৯৮৫ সালে এই দর্শনটি উল্লেখ করা হয়েছিল।

রিচার্ড স্টলম্যানের আইটিএসে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল এবং এটিই তাকে একটি পোর্টেবল অপারেটিং সিস্টেম তৈরীতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আইটিএসে ছিল অ্যাসেমব্লি প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা একটি অপারেটিং সিস্টেম, যা পিডিপি-১০ কম্পিউটার স্থাপত্যের উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয়েছিল, তবে এই ডিভাইসটির ডেভলপমেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অপারেটিং সিস্টেমটির ব্যবহারও কমে আসছিল। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গ্নু ইউনিক্সের সমপর্যায়ের একটি অপারেটিং সিস্টেম হিসবে তৈরী করা হবে। সে সময় ইউনিক্স একটি জনপ্রিয় মালিকানাধিন অপারেটিং সিস্টেম ছিল। ইউনিক্সের ডিজাইন প্রমাণ করেছে যে এটি কার্যকর, একই সাথে এটি মডিউলার ছিল, ফলে এর অংশগুলি বিভিন্ন সংযোজন করার সুযোগ ছিল।

প্রয়োজনীয় প্রায় সকল সফটওয়্যারই একেবারে নতুন করে লিখতে হয়েছিল যদিও সহজলভ্য বিভিন্ন ফ্রি সফটওয়্যার উপাদান ছিলো যেমন টেক্স টাইপসেট সিস্টেম এবং এক্স উইন্ডো সিস্টেম। গ্নুর অধিকাংশ অংশ তৈরী করেছে স্বেচ্ছাসেবকরা; অনেকে তাদের অবসর সময়ে কাজ করেছেন, বিভিন্ন কোম্পানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠন থেকে পাওয়া পারিশ্রমিকের বিনিময়েও কাজ করেছেন অনেকে। ১৯৮৫ সালের অক্টোবরে স্টলম্যন ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন (এফএসএফ) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮০ এর শেষে এবং ১৯৯০ সময়ের মধ্যে এফএসএফ গ্নু এর জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার তৈরীর জন্য ডেভলপার নিয়োগ দেয়।

ধীরে ধীরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গ্নুর ডেভলপমেন্ট, বিক্রয়, বিতরণ এবং কারিগরি সহায়তার ব্যপারে সাহায্য করতে শুরু করে। এই সকল প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সিগনাস সল্যুশনস অন্যতম যা বর্তমানে রেড হ্যাটের একটি অংশ।

উপাদান

সিস্টেমটির প্রাথমিক উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্নু কম্পাইলার কালেকশন (জিসিসি), গ্নু সি লাইব্রেরি (জিলিবসি), এবং গ্নু কোর ইউটিলিটিজ (কোরইউটিলস) রয়েছে। তবে আরও গ্নু ডিবাগার (জিডিবি), গ্নু বাইনারি ইউটিলিটিজ (বিনইউটিলস), গ্নু ব্যাশ শেল এবং গ্নোম ডিইও রয়েছে। গ্নু এপ্লিকেশন ও ইউটিলিটির লিনাক্স পোর্টে গ্নু ডেভেলপাররা অবদান রেখেছে, যেগুলো বর্তমানে বিএসডি সংস্করণ, সোলারিস এবং ম্যাকওএসেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

অনেকগুলো গ্নু প্রোগ্রাম অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমেও পোর্ট হয়েছে, যেখানে মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম, যেমন মাইক্রোসফট উইন্ডোজও ও ম্যাকওএসও রয়েছে। ইউনিক্স প্রতিলিপির চেয়ে গ্নু প্রোগ্রামগুলো আরও বেশি নির্ভরযোগ্য বিবেচিত হয়।

নভেম্বর ২০১৫ মোতাবেক, গ্নু ডেভেলপমেন্ট সাইটে হোস্টকৃত সর্বমোট ৪৬৬টি গ্নু প্যাকেজ রয়েছে।

গ্নুয়ের বিভিন্ন রূপ

গ্নু 
জিনিউসেন্স, এফএসএফ অনুমোদিত গ্নু অপারেটিং সিস্টেমের একটি উদাহরণ
গ্নু 
প্যারাবোলা গ্নু/লিনাক্স-লিব্রে, এফএসএফ অনুমোদিত রোলিং রিলিজ মডেল ব্যবহার করা ডিস্ট্রোর একটি উদাহরণ

গ্নু প্রকল্পের প্রাতিষ্ঠানিক কার্নেল ছিলো গ্নু হার্ড মাইক্রোকার্নেল; তবে, ২০১২ মোতাবেক, লিনাক্স কার্নেল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে লিনাক্স-লিব্রে হিশেবে গ্নু প্রকল্পের একটি অংশে পরিণত হয়।

ডেবিয়ান গ্নু/হার্ড ২০১৫ ডিস্ট্রোর এপ্রিল ৩০, ২০১৫ সালের মুক্তির সাথে গ্নু ওএস এখন থেকে কম্পিউটারে ইন্সটল ও ব্যবহারের জন্যে প্রয়োজনীয় সব উপাদান সরবরাহ করে। যার মধ্যে রয়েছে, গ্নু হার্ড কার্নেল, যেটি বর্তমানে প্রাক উৎপাদন পর্যায়ে রয়েছে।

হার্ড যেহেতু উৎপাদনে ব্যবহারে উপযোগী নয়, ব্যবহারিকভাবে এ অপারেটিং সিস্টেমগুলো লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন। এগুলোতে লিনাক্স কার্নেল, গ্নু উপাদান এবং অন্য ফ্রি সফটওয়্যার প্রকল্পের সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১১ সালে উবুন্টু লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনের সমস্ত প্রোগ্রাম কোড দেখে বুঝা যায়, এটি গনোমসহ ১৩% গ্নু বেষ্টিত, যেখানে লিনাক্স বেষ্টন করে আছে ৬%।

অন্যান্য কার্নেল, যেমন ফ্রিবিএসডি কার্নেলও গ্নু সফটওয়্যারের সাথে সংযুক্ত করে নতুন অপারেটিং সিস্টেম নির্মান করা যায়। এফএসএফের মতে, যেসব অপারেটিং সিস্টেম গ্নু উপাদান ও লিনাক্স কার্নেল ব্যবহার করে, তাদেরকে গ্নু/লিনাক্স ডাকা উচিত। গ্নু প্রকল্প জিনিউসেন্স, ট্রিস্কলপ্যারাবোলা গ্নু/লিনাক্স-লিব্রে পরিগ্রহণ করেছে। গ্নুয়ের অন্যান্য সংস্করণ যেগুলো হার্ড কার্নেল ব্যবহার করে না, তাদের মধ্যে রয়েছে, ডেবিয়ান গ্নু/কেফ্রিবিএসডি এবং ডেবিয়ান গ্নু/নেটবিএসডি।

লোগো

গ্নু 
গ্নু ৩০তম বার্ষিকীর লোগো

গ্নুর লোগো হলো একটি গ্নুর মাথা। ইটিয়েন সুভাস মূল লোগোটির ডিজাইনার হলেও, অরেলিও হ্যাকার্টের আরও বোল্ড ও সিম্পল ডিজাইনটি বর্তমানে ব্যবহৃত হয়। গ্নু সফটওয়্যারে এ লোগো দেখা যায়। ছাপানো বা ইলেকট্রনিক ডকুমেন্টেশন ও ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন ম্যাটারিয়ালেও এ লোগোর দেখা মিলে। এখানে উল্লেখিত ছবিটি, প্রাতিষ্ঠানিক লোগোর একটি পরিবর্তিত সংস্করণ। গ্নু প্রকল্পের ৩০তম বার্ষিকীতে ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন এটি তৈরী করে।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

গ্নু ইতিহাসগ্নু উপাদানগ্নু য়ের বিভিন্ন রূপগ্নু লোগোগ্নু তথ্যসূত্রগ্নু বহিঃসংযোগগ্নুঅপারেটিং সিস্টেমইংরেজি ভাষাকম্পিউটার সফটওয়্যারগ্নু প্রকল্পফ্রি সফটওয়্যার

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমবাংলার ইতিহাসজোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনউমর ইবনুল খাত্তাবহুনাইন ইবনে ইসহাকশিবা শানুবৃষ্টিবেল (ফল)ওপেকজান্নাতজীবনানন্দ দাশশব্দদূষণবঙ্গাব্দআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলবাঙালি হিন্দুদের পদবিসমূহআদমযৌনসঙ্গমবিবর্তনবাংলাদেশের মেডিকেল কলেজসমূহের তালিকাবাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাববাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবিবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিঅশোকপেপসিঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসূর্য (দেবতা)নাহরাওয়ানের যুদ্ধসাঁওতাল বিদ্রোহবিবাহমহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রইউরোশুক্রাণুশুভমান গিলজাতীয় স্মৃতিসৌধমৌলসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাস (উপাত্ত পাতা)যকৃৎহনুমান (রামায়ণ)১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনভৌগোলিক আয়তন অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকানেপালনেতৃত্বআমলাতন্ত্রসৈয়দ সায়েদুল হক সুমনপায়ুসঙ্গমবাগদাদ অবরোধ (১২৫৮)তাহসান রহমান খানকুষ্টিয়া জেলারাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়দীন-ই-ইলাহিশিশ্ন বর্ধননামাজঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়প্লাস্টিক দূষণইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজিনিম০ (সংখ্যা)অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামতুলসীপহেলা বৈশাখণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধানভূমিকম্পহুমায়ূন আহমেদটাইফয়েড জ্বরমুসাধর্ষণবৃত্তবাংলাদেশের পোস্ট কোডের তালিকাতেঁতুলমিজানুর রহমান আজহারীসূরা ফালাকদুর্গাপূজানোয়াখালী জেলাগোপাল ভাঁড়কমনওয়েলথ অব নেশনসজলবায়ুসন্ধিশান্তিনিকেতনসিলেট বিভাগ🡆 More