রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে: রুয়েট) বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং উত্তরাঞ্চলের একমাত্র কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশে PhD প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত রুয়েট এর ভর্তি পরীক্ষা অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ। বর্তমানে সম্মিলিত প্রকৌশল গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে রুয়েট , কুয়েট ও চুয়েটে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয় আনুমানিক ২৫০০০ ছাত্র-ছাত্রীকে ।
নীতিবাক্য | "ঐশী জ্যোতিই আমাদের পথ প্রদর্শক" |
---|---|
ধরন | সরকারি |
স্থাপিত | ১৯৬৪ |
আচার্য | রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন |
উপাচার্য | মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ৩২৫ |
শিক্ষার্থী | ৫৬৫০ |
অবস্থান | , |
শিক্ষাঙ্গন | ১৫২ একর (০.৬১ বর্গ কিমি) |
অধিভুক্তি | বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন |
ওয়েবসাইট | ruet |
এটি ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রকৌশল বিদ্যাপীঠ হিসাবে ১২২ জন ছাত্র নিয়ে রাজশাহী প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রকৌশল অনুষদ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তখন এখানে যন্ত্রকৌশল, পুরকৌশল এবং তড়িৎকৌশল বিভাগের অধীনে সম্মান ডিগ্রী প্রদান করা হত। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। কারণ এর প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করত শিক্ষা মন্ত্রণালয়; একাডেমিক ক্যারিকুলাম ঠিক করত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করত পাবলিক ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্ট। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৭৩ সালে কয়েকটি কমিশন ও কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিশন ও কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দেশের চারটি প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় কে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ডঃ ওয়াহিদ উদ্দীনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়।এই কমিটি দেশের চারটি প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় কে একত্রে নিয়ে ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি) গঠন করে। কিন্তু সীমিত স্বায়ত্তশাসন এবং বিআইটি অধ্যাদেশের কিছু সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কারণে এই প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছিল। তখনই বিআইটি গুলিকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপন্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর ফলশ্রুতিতে জাতীয় সংসদে বিশ্ববিদ্যালয় বিলটি পাশের মাধ্যমে ২০০৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর এটিকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এ রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও নগর পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। মোট শিক্ষকের সংখ্যা তিন শতাধিক।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েটে বর্তমানে ৪ টি পূর্নাঙ্গ অনুষদের অধীনে মোট ১৪ টি ডিগ্রী প্রদানকারী বিভাগ আছে।
অনুষদের নাম | বিভাগ সমূহ | আসনসংখ্যা |
পুরকৌশল অনুষদ | পুরকৌশল বিভাগ নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ স্থাপত্য বিভাগ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগ | ১৮০ ৬০ ৩০ ৩০ |
যন্ত্রকৌশল অনুষদ | ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও প্রোডাকশন কৌশল বিভাগ যন্ত্রকৌশল বিভাগ কেমিক্যাল ও ফুড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ | ৬০ ১৮০ ৬০ ৬০ ৬০ ৩০ |
তড়িৎ এবং কম্পিউটার কৌশল অনুষদ | তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল বিভাগ ইলেক্ট্রনিক ও টেলিকমিউনিকেশন কৌশল বিভাগ | ১৮০ ১৮০ ৬০ ৬০ |
অ্যপ্লাইড সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ | পদার্থ বিভাগ মানবিক বিভাগ রসায়ন বিভাগ গণিত বিভাগ |
পুরকৌশল অনুষদ | তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক অনুষদ | যন্ত্রকৌশল অনুষদ | কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ |
---|---|---|---|
সয়েল মেকানিক্স ল্যাব | ইলেকট্রনিক ল্যাব | মেট্রোলোজি ল্যাব | ডিজিটাল ও হার্ডওয়ার ল্যাব |
স্ট্রেংথ অব ম্যাটেরিয়াল ল্যাব | ইলেকট্রিক্যাল মেশিন ল্যাব | হিট ইঞ্জিন ল্যাব | সফটওয়ার ও নেটয়ার্ক ল্যাব |
এনভায়রনমেন্ট ল্যাব | ইলেকট্রিক্যাল মেজারমেন্ট ল্যাব | ফ্লুইড ল্যাব | সফটওয়ার ল্যাব #২ |
পাবলিক হেলথ ল্যাব | টেলিকমিউনিকেশন ল্যাব | উড ল্যাব | আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও রোবোটিক্স ল্যাব |
ট্রান্সপোর্টেশন ল্যাব | ন্যানো টেকনোলজি ল্যাব | মেশিন শপ | এনালাইটিক্যাল প্রোগ্রামিং ল্যাব |
কম্পিউটার ল্যাব
| কম্পিউটার ল্যাব মাইক্রোওয়েব ল্যাব হাই ভোল্টেজ ল্যাব ফটোভোলাটিক ল্যাব | ফাউন্ড্রি শপ | সফটওয়ার ল্যাব #১
|
বয়লার শপ | |||
কম্পিউটার ল্যাব | |||
ওয়েল্ডিং শপ ও শিট মেটাল |
রুয়েট ক্যাম্পাস রাজশাহী শহর থেকে ৩ কি.মি. পূর্বে বহমান পদ্মার তীর ঘেষে অবস্থিত। তার পূর্বেই রয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রুয়েট ক্যাম্পাসের আয়তন ১৫২ একর। এতে ডিপার্টমেন্ট ভবন, ল্যাবেরেটরি, ওয়ার্কশপ, লাইব্রেরী, জিমনেশিয়াম, কেন্দ্রীয় সাধারণ কক্ষ, ক্যাফেটেরিয়া, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল, শিক্ষক ও কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা অবস্থিত। রুয়েটগেট থেকে পাঁচ কিমি পশ্চিমে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কাঁটাখালী নর্দার্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র অবস্থিত।
এখানে ৫ তলা বিশিষ্ট লাইব্রেরী ভবন আছে। লাইব্রেরীতে সকল বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সহায়ক বই সমুহ রয়েছে।
শহীদ লেফটেন্যান্ট সেলিম হলের সম্মুখে মেডিক্যাল সেন্টারটি অবস্থিত। দুইজন এমবিবিএস ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে মেডিক্যাল অফিসার ও কর্মচারীদের নিয়ে গড়ে উঠা মেডিক্যাল সেন্টারটি ছাত্রদের সকল শারীরিক অসুস্থতার আরোগ্যসাধন করে থাকে। এখানে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া জরুরি প্রয়োজনের জন্য মেডিক্যাল সেন্টারের নিজস্ব একটি এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।
প্রত্যেক বিভাগীয় ভবনে একটি করে অত্যন্ত আধুনিক কম্পিউটার সেন্টার রয়েছে।
ছাত্র-ছাত্রীদের যাবতীয় বিষয়াদি দেখাশোনার জন্যে রয়েছে ছাত্র কল্যাণ পরিচালক।
বর্তমানে এই বিভাগ পরিচালনায় আছেনঃ
১। অধ্যাপক ড. মো. রবিউল আওয়াল
২। মো. মামুনুর রশিদ
৩। আবু সাঈদ
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং সুবিধা অসুবিধা লক্ষ্য রাখাই এই বিভাগের কাজ।
রুয়েট প্রশাসনিক ভবনের পাশেই ৭০০ আসনবিশিষ্ট শীতাতপনিয়ন্ত্রিত একটি আধুনিক মিলনায়তন রয়েছে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কনফারেন্সগুলো অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব সেমিনার রুম ও কনফারেন্স হল রয়েছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করতে ছাত্রদের জন্য ৭ টি এবং ছাত্রীদের জন্য ১টি আবাসিক হল আছে। ছাত্রদের হলগুলোর নামকরনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্যতীত বাকি সবাই অত্র প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলেন এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন।
হলের নাম | বর্তমান প্রভোস্ট | আসনসংখ্যা |
শহীদ প্রেসিডেণ্ট জিয়াউর রহমান হল | ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম | ৫০০ |
শহীদ আব্দুল হামিদ হল | ড. মোঃ আলী হোসেন | ২২০ |
শহীদ শহিদুল ইসলাম হল | ড. অনুপম চৌধুরী | ২২০ |
টিনশেড হল | এস এম মেহেদী হাসান | ১০০ |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর হল। | ড. আবু সুফিয়ান মোঃ জিয়া হাসান | ২৫০ |
শহীদ লেঃ সেলিম হল | ড. মোঃ আবু সাঈদ | ৩৫০ |
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল | ড. মোঃ রবিউল ইসলাম | ১৫০ |
এছাড়া ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন ৩ টি আবাসিক হল নির্মিতব্য
রুয়েটের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শরীরচর্চা এবং ইনডোর গেম্স খেলার সুবিধার্থে শহীদ শহিদুল ইসলাম হলের সামনে একটি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত ব্যায়ামাগার রয়েছে।
উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সুদৃশ্য একটি জামে মসজিদ রয়েছে। রাজশাহী নগরীতে রুয়েটের এই মসজিদ বহুল আলোচিত। দুই ঈদেই এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট এবং হল গুলোতে আলাদা মসজিদ আছে।
বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে রুয়েট ক্যাম্পাসে একটি বিশাল পানি সংগ্রাহাগার ও একটি ওয়াটার ট্রিটমেণ্ট প্লাণ্ট স্থাপিত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে চমৎকার একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। এখানে কমদামে বেশ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পাওয়া যায়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.