মুরারিচাঁদ কলেজ (সংক্ষেপে: এমসি কলেজ) বাংলাদেশের একটি উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি সিলেট শহরের টিলাগড় এলাকায় অবস্থিত এবং বৃহত্তর সিলেটের সবচাইতে পুরনো ও শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাকালের দিক দিয়ে এটি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলোর মধ্যে ৭ম; ঐতিহ্যবাহী কলেজটি ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এম সি কলেজ | |
ধরন | সরকারি কলেজ |
---|---|
স্থাপিত | ১৮৯২ |
অধ্যক্ষ | প্রফেসর আবুল আনাম মোঃ রিয়াজ [১] |
শিক্ষার্থী | প্রায় ১৪,০০০ |
ঠিকানা | টিলাগড় , , , ৩১০০ , ২৪°৫৩′৫৪″ উত্তর ৯১°৫৪′০৮″ পূর্ব / ২৪.৮৯৮৩৯৩° উত্তর ৯১.৯০২২৫২° পূর্ব |
ওয়েবসাইট | mccollege |
মুরারিচাঁদ কলেজ ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় তৎকালীন সিলেটের প্রখ্যাত শিক্ষানুরাগী রাজা গিরিশচন্দ্র রায় (১৮৪৫ - ১৯০৮) -এর অনুদানে। কলেজটির নামকরণ করা হয় তার প্রমাতামহ মুরারিচাঁদ এর নামে। পূর্বে কলেজটি সিলেটের বন্দর বাজারের নিকট রাজা জি. সি. উচ্চ বিদ্যালয় এর পাশে অবস্থিত ছিল। ১৮৯১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিতে এফ. এ. ক্লাস খোলার অনুমতি দিলে ১৮৯২ সালের ২৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে মুরারিচাঁদ কলেজের যাত্রা শুরু হয়। সেসময় ছাত্রদের বেতন ছিল ৪ টাকা এবং ১ম বিভাগে এন্ট্রান্স পাশকৃতদের জন্য বিনা খরচে পড়ার ব্যবস্থা ছিল।
১৮৯২ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত রাজা গিরিশচন্দ্র রায় নিজেই কলেজটির সকল খরচ বহন করেন। ১৯০৮ সালে রাজা মারা গেলে কলেজটি সরকারি সহায়তা চায়। তখন থেকে কলেজটি সরকারি সহায়তায় পরিচালিত হতে থাকে। এরপর ১৯১২ সালে কলেজটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি কলেজ রূপে আত্মপ্রকাশ করে। একই বছর তৎকালীন আসামের চিফ কমিশনার স্যার আর্চডেল আর্ল কলেজটিকে ২য় শ্রেণির কলেজ থেকে ১ম শ্রেণির কলেজে উন্নীত করেন । ১৯১৩ সালে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান ক্লাস চালু হয়। পরবর্তীকালে জননেতা আব্দুল মজিদ (কাপ্তান মিয়া) সহ আরও অনেকে মিলে ১৮০০০ টাকা অনুদান দিলে কলেজটিতে স্নাতক শ্রেণি চালু হয়।
১ম বিশ্বযুদ্ধ ও অন্যান্য নানা সমস্যার কারণে কলেজের ক্যাম্পাস পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন কলেজ থেকে ৩ কি. মি. দূরে থ্যাকারে টিলায় (বর্তমান টিলাগড়) ১২৪ একর ভূমি নিয়ে বিশাল ক্যাম্পাসে কলেজ স্থানান্তর করা হয়। সে সময় কলেজের ছাত্রসংখ্যা ছিল ৫৬৮ জন। ১৯২১ সালে তৎকালীন আসামের গভর্নর স্যার উইলিয়াম মরিস কলেজের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯২৫ সালে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে তা উদ্বোধন করেন তৎকালীন আসামের গভর্নর স্যার উইলিয়াম রীড।
১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত কলেজটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। দেশ বিভাগের পর এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসে। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৬৮ সালে কলেজটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়, এবং সর্বশেষ ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এর মত মুরারিচাঁদ কলেজটিকেও বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত করা হয় এবং অদ্যাবধি রয়েছে।
সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজের ইতিহাসের এক মহান নায়ক সৈয়দ আব্দুল মাজিদ (কাপ্তান মিয়া) । ১৮৯৭ সালের বিরাট ভূমিকম্পের ফলে রাজার বাড়ি ঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি ঋণ গ্রহণ করে তা পুনর্নির্মাণ করতে যেয়ে ধীরে ধীরে আর্থিক অনটনে পতিত হন। ১৯০৮ সালে রাজা গিরিশ চন্দ্রের মৃত্যুর পর এইডেড প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বাবু দুলাল চন্দ্র দেব এবং কাপ্তান মিয়ার উদ্যোগে কলেজটি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়। সেই সময় মুরারিচাঁদ কলেজ সিলেট শহরের ভিতর ছিল এবং প্রথম শ্রেণীর ডিগ্রি কলেজের উপযুক্ত পরিবেশ এবং দালান কোঠা সেখানে ছিলনা। তিনি শহর থেকে তিন মাইল দূরে ১২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে বর্তমান মুরারিচাঁদ কলেজ প্রাঙ্গণের ভিত্তির সূচনা। কাপ্তান মিয়া কলেজের নতুন কোনো নাম বা নিজের নাম না দিয়ে এই নতুন প্রাঙ্গণে কলেজটিকে মুরারিচাঁদ কলেজের নামই রাখেন। রাজা গিরিশ চন্দ্রে যে বীজ বপন করেছিলেন কাপ্তান মিয়া সেটাকে মহীরুহুতে পরিণত করেন। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ১৯১৯ সালে সিলেট আগমন করলে তাকে যে বিরাট সংবর্ধনা দেয়া হয়, আব্দুল মাজিদ কাপ্তান মিয়া ছিলেন সেই অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি।
১২৪ একর ভূমির উপর অবস্থিত মুরারিচাঁদ কলেজের সুবিশাল ক্যাম্পাসে রয়েছে একটি ক্যান্টিন, একটি মসজিদ, ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হোস্টেল, বিভিন্ন বিভাগীয় ভবন এবং একটি খেলার মাঠ রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ম্যুরাল, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এঁর ম্যুরাল। নতুন করে নির্মিত হয়েছে সৈয়দ আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়া এঁর ম্যুরাল। ক্যাম্পাসের পূর্বে রয়েছে সিলেট সরকারি কলেজ এবং উত্তরে রয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। এছাড়াও কলেজের পাশেই রয়েছে টিলাগড় ইকো পার্ক। কলেজের ভিতরে একটি পুকুরও রয়েছে।
বর্তমানে কলেজে ৯টি একাডেমিক ভবন রয়েছে। এ ভবনগুলো প্রধানত শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি ও প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ বিভাগেরই নিজস্ব ভবন রয়েছে।
এই কলেজের লাইব্রেরিটি সমগ্র সিলেটের এমনকি বাংলাদেশেরই একটি অন্যতম প্রাচীন লাইব্রেরি। বর্তমানে এই লাইব্রেরিতে ৬০,০০০-এর অধিক বই রয়েছে। একই সাথে সকল বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব সেমিনার লাইব্রেরি রয়েছে ।
কলেজ ক্যাম্পাসে ১টি ছোটোখাটো বোটানিক্যাল গার্ডেন আছে। এই বোটানিক্যাল গার্ডেনটি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। এটি সমগ্র সিলেটের একমাত্র বোটানিক্যাল গার্ডেন। এছাড়া কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে একটি জ্যুওলজিক্যাল মিউজিয়াম আছে। এতে বিভিন্ন ধরনের প্রাণির একটি বিশাল সংগ্রহ রয়েছে।
বর্তমানে কলেজে ২টি হোস্টেল রয়েছে। একটি ছাত্রদের ও অপরটি ছাত্রীদের জন্য। ছাত্রদের হোস্টেলটি ৬ টি ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত যার মধ্যে ১টি ব্লক হিন্দু ছাত্রদের জন্য এবং বাকি ৫টি ব্লক মুসলমান ছাত্রদের জন্য। ছাত্রাবাসের পুকুরের পূর্বপাশে নতুন ৪তলা বিশিষ্ট আরও একটি ছাত্রাবাস চালু হয়েছে ছাত্রদের জন্য।
শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধার জন্য ৩টি বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। যার মধ্যে একটি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও আরেকটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শিক্ষার্থীদের উপহার দিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের টাকায় কেনা একটি। এছাড়া কলেজ প্রশাসনের কাজের জন্য একটি জিপ ও একটি মাইক্রোবাস রয়েছে।
ছাত্রদের হোস্টেলের উল্টোপাশে রয়েছে কলেজের নিজস্ব সুবিশাল খেলার মাঠ।
কলেজের অভ্যন্তরে রয়েছে একটি ক্যান্টিন যা কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কলেজে থাকাকালীন খাবারের চাহিদা পূরণ করে।
কলেজ ক্যাম্পাসের পাশে রয়েছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ-এর একটি পোস্ট অফিস।
মুরারিচাঁদ কলেজে বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে; সেগুলো হলঃ
প্রতিবছর মুরারিচাঁদ কলেজে বাংলা নববর্ষ এর অনুষ্ঠান বেশ জাঁকজমকভাবে উদযাপিত হয়। সকল পেশার,সকল শ্রেণির অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে, যা এই অনুষ্ঠানকে এতদঞ্চলের সবচাইতে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে পরিণত করেছে।
কলেজের সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে থিয়েটার মুরারিচাঁদ,মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠন,মুরারিচাঁদ কবিতা পরিষদ উল্লেখযোগ্য। থিয়েটার মুরারিচাঁদ নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন,নাট্য কর্মশালা আয়োজন,প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article মুরারিচাঁদ কলেজ, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.