মুদ্রানীতি হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত নীতি যা দেশের অর্থনীতিতে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। মুদ্রানীতি দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সুদের হার এবং অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা স্বাধীন কোন প্রতিষ্ঠান আর্থিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশের এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ভারতের আর্থিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে। দেশের সরকারের পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও পরিচালনা করে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সামষ্টিক, অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে এবং বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অবস্থা অনুমান করে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে থাকে।
বহু শতাব্দী ধরে মুদ্রানীতি মূলত (১) ধাতব মুদ্রা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং (২) ঋণ সৃষ্টির জন্য কাগজী মুদ্রা ছাপার সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা হতো। ১৬৯৪ সালে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠার পর তারা কাগজী মুদ্রা ছাপা শুরু করে। তখন ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ছাপাক্রিত মুদ্রার বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ সোনা গচ্ছিত বা মজুত রাখত। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও পরিচাননার বিষয়টি স্বাধীনরূপে প্রতিষ্ঠা পায়। ওই সময়, মুদ্রানীতির মুল লক্ষ্য ছিল ধাতব মুদ্রা ও কাগজী মুদ্রার মূল্য ঠিক রাখা। পরবর্তীতে শিল্পোন্নত দেশসমূহ কর্তৃক কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে স্বর্ণমানের সাথে তাদের দেশীয় মুদ্রার মান নির্দিষ্ট করার প্রচলন শুরু হয়। স্বর্ণমান ঠিক রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকসমূহকে প্রায় প্রতি মাসেই সুদের হার সমন্বয় করতে হতো। ১৮৭০ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত শিল্পোন্নত দেশসমূহ তাদের নিজস্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে তোলে। যার মধ্যে ১৯১৩ সালে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম প্রতিষ্ঠা অন্যতম। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করা হতো।ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধীরে ধীরে সকলেই এটা অনুধাবন করতে শুরু করে যে, সুদের হারের সাথে গোটা অর্থনীতির একটা সম্পর্ক আছে। যার ফলে পরবর্তীতে, শুধুমাত্র মুদ্রা ছাপা ও মুদ্রার মান বজায় রাখাই নয় বরং সুদের হার নিয়ন্ত্রণের কথা বিবেচনা করেই মুদ্রানীতি প্রনয়ন ও পরিচালনা করা শুরু হয়।
সকল দেশের মুদ্রানীতির লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য এক নয়। মুদ্রানীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত তা মূলত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। যেমন একটা উন্নত দেশের মুদ্রানীতি ও একটা অনুন্নত দেশের মুদ্রানীতি একরকম হবে না। তবে সাধারণত, প্রায় সকল দেশের মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্যগুলো হচ্ছে-
দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুলত এই লক্ষ্য নিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও পরিচালনা করে। যখন মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়, তখন বেকারত্ব হ্রাস পায় অর্থাৎ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় থাকে।
মুদ্রানীতি মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে।এগুলো হচ্ছেঃ
এছাড়াও একধরনের মুদ্রানীতির প্রয়োগ হতে পারে, যখন অর্থনীতিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য হ্রাস পেতে থাকে এবং সুদের হার ০ শতাংশ বা ০ শতাংশের কাছাকাছি থাকে। এটাকে ব্যতিক্রমধর্মী মুদ্রানীতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যদিও, বাস্তবে কোন দেশেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য হ্রাস পেতে দেখা যায় না বা সুদের হার ০ শতাংশ হয় না। তাই এই ধরনের মুদ্রানীতির প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না। ২০০৭-০৮ সালের মন্দার সময় আমেরিকাসহ বহু দেশ মন্দা কাটানোর জন্য অনেকটা এই ধরনের মুদ্রানীতির প্রয়োগ করেছিলো।
মুদ্রানীতির মুল হাতিয়ারসমুহ হচ্ছেঃ
উপর্যুক্ত হাতিয়ার ছারাও পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানাভাবে মুদ্রানীতি পরিচালনা করে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার সদস্য ব্যাংকগুলোকে চাপ প্রয়োগ করে বা ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিশেষ ধারা বলে প্রজ্ঞাপন জারি করে মুদ্রা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article মুদ্রানীতি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.