ক্ষেপণাস্ত্র পৃথ্বী

পৃথ্বী একটি কৌশলগত (ট্যাকটিক্যাল) ভূমি-থেকে-ভূমি স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক মিশাইল (এসআরবিএম)। ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংগঠন (ডিআরডিও) সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে এটি নির্মাণ করেছে।

পৃথ্বী (ক্ষেপণাস্ত্র)
ক্ষেপণাস্ত্র পৃথ্বী
পৃথ্বী এসআরবিএম (শর্ট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল)
প্রকার শর্ট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল
উদ্ভাবনকারী ক্ষেপণাস্ত্র পৃথ্বী ভারত
ব্যবহার ইতিহাস
ব্যবহারকাল ১৯৯৪ (পৃথ্বী-১)
ব্যবহারকারী ভারতীয় সেনাবাহিনী
ভারতীয় বিমানবাহিনী
ভারতীয় নৌবাহিনী
উৎপাদন ইতিহাস
উৎপাদনকারী প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংগঠন (ডিআরডিও)
ভারত ডায়নামিকস লিমিটেড (বিডিএল)
উৎপাদনকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮ (পৃথ্বী-১)
২৭ জানুয়ারি, ১৯৯৬ (পৃথ্বী-২)
১১ এপ্রিল, ২০০০ (ধনুষ)
২৩ জানুয়ারি, ২০০৪ (পৃথ্বী-৩)
তথ্যাবলি
ওজন ৪,৪০০ কিলোগ্রাম (পৃথ্বী-১)
৪,৬০০ কিলোগ্রাম (পৃথ্বী-২)
৫,৬০০ কিলোগ্রাম (পৃথ্বী-৩)
দৈর্ঘ্য ৯ মিটার (পৃথ্বী-১)
৮.৫৬ মিটার (পৃথ্বী-২, পৃথ্বী-৩)
ব্যাস ১১০ সেন্টিমিটার (পৃথ্বী-১, পৃথ্বী-২)
১০০ সেন্টিমিটার (পৃথ্বী-৩)

ইঞ্জিন সিঙ্গল স্টেজ লিকুইড ফুয়েল ডুয়েল মোটর (পৃথ্বী-১, পৃথ্বী-২),
সিঙ্গল স্টেজ সলিড মোটর (পৃথ্বী-৩)
অপারেশনাল
রেঞ্জ
১৫০ কিলোমিটার (পৃথ্বী-১)
২৫০-৩৫০ কিলোমিটার (পৃথ্বী-২)
৩৫০ - ৬০০ কিলোমিটার (পৃথ্বী-৩)
নির্দেশনা
পদ্ধতি
স্ট্র্যাপ-ডাউন ইনার্টিয়াল গাইডেন্স
লঞ্চ
প্লাটফর্ম
৮ x ৮ টার্টা ট্রান্সপোর্টার ইরেক্টর লঞ্চার

নেপথ্য-ইতিহাস

বিভিন্ন পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে স্বনির্ভরতা অর্জনে ভারত সরকার ১৯৮৩ সালে সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়। এই কর্মসূচির আওতায় নির্মিত প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হল পৃথ্বী। প্রজেক্ট ডেভিল নামে একটি প্রকল্পের অধীনে ডিআরডিও ভূমি-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। পৃথ্বী ক্ষেপণাস্ত্রগুলিতে তরল অথবা তরল ও কঠিন উভয় প্রকার জ্বালানিই ব্যবহার করা যায়। সামরিক ক্ষেপণাস্ত্র বলে পৃথ্বী পারমাণবিক ওয়ারহেডও বহন করতে সক্ষম।

ক্ষেপণাস্ত্র-সমূহ

পৃথ্বী ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পে ভারতীয় সেনাবাহিনী, ভারতীয় বায়ুসেনা ও ভারতীয় নৌবাহিনীর ব্যবহারের জন্য ৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নির্মিত হয়েছে। সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির প্রাথমিক প্রকল্প রূপরেখা অনুযায়ী এর বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্রগুলি হল:

  • পৃথ্বী-১ (এসএস-১৫০) - সেনাবাহিনীর জন্য নির্মিত (১৫০ কিলোমিটার পাল্লা, ১,০০০ কিলোগ্রাম পেলোড বহনের ক্ষমতা)
  • পৃথ্বী-২ (এসএস-২৫০) - বায়ুসেনার জন্য নির্মিত (২৫০ কিলোমিটার পাল্লা, ৫০০ কিলোগ্রাম পেলোড বহনের ক্ষমতা)
  • পৃথ্বী-৩ (এসএস-৩৫০) - নৌবাহিনীর জন্য নির্মিত (৩৫০ কিলোমিটার পাল্লা, ৫০০ কিলোগ্রাম পেলোড বহনের ক্ষমতা)
  • ধনুষ - পৃথ্বী-৩ ক্ষেপণাস্ত্রের একটি সংস্করণ। এটি জাহাজ থেকে ছোঁড়া যায়। কোনো কোনো সূত্র থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, ধনুষে যে স্টেবিলাইজেশন প্লাটফর্ম ও মিশাইল রয়েছে তার মাধ্যমে জাহাজ থেকে পৃথ্বী-২ ও পৃথ্বী-৩ দুটিই ছোঁড়া যায়। অন্য মতে, ধনুষ পৃথ্বী-২ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের একটি সংস্করণ।

পৃথ্বী ক্ষেপণাস্ত্রগুলিতে অনেক সংশোধনী আনা হয়েছে। "কোডনেম" পৃথ্বী বোঝাতে ভারতের সামরিক বাহিনীতে ব্যবহৃত এই বর্গের যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্রকে বোঝায়। পরবর্তীকালের সংস্করণগুলিকে পৃথ্বী-২পৃথ্বী-৩ "কোডনেম" দেওয়া হয়েছে।

বর্ণনা

পৃথ্বী-১

পৃথ্বী-১ শ্রেণীটি ভূমি-থেকে-ভূমি ক্ষেপণাস্ত্রের শ্রেণী। এটি সর্বোচ্চ ১,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ওয়ারহেড বহন করতে পারে। এর রেঞ্জ ১৫০ কিলোমিটার। এর যাথার্থতা ১০-৫০ মিটার। এটি ট্রান্সপোর্টার ইরেক্টর লঞ্চার থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়। ১৯৯৪ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে পৃথ্বী ক্ষেপণাস্ত্র শ্রেণীর ব্যবহার শুরু হয়।

পৃথ্বী-২

পৃথ্বী-২ শ্রেণীট সিঙ্গল স্টেজ লিকুইড-ফুয়েলড ক্ষেপণাস্ত্র। এর ওয়ারহেড বহনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ৫০০ কিলোগ্রাম। এর রেঞ্জ ২৫০ কিলোমিটার। ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাথমিক ব্যবহারের জন্য এটি নির্মিত হয়। ১৯৯৬ সালের ২৭ জানুয়ারি এর প্রথম পরীক্ষা হয়। ২০০৪ সাল পর্যন্ত এতে নানারকম সংশোধন আনা হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সেনাবাহিনীতেও ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি এই ক্ষেপণাস্ত্রটির একটি নতুন সংস্করণ পরীক্ষিত হয়েছে। এই নতুন সংস্করণটির রেঞ্জ ৩৫০ কিলোমিটার ও এটি উন্নত এইডেড ইনার্টিয়াল নেভিগেশন সম্পন্ন। এটি অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিশাইল ধ্বংস করতে পারে। ২০১০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এই মিশাইলের পরীক্ষা ব্যর্থ হলেও ২০১০ সালের ২২ ডিসেম্বরের দুটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ সফল হয়। আইটিআর-এর পরিচালক এস পি দাশ বলেন, "অসাধারণ উৎক্ষেপণ। দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু ছিল ভিন্ন ভিন্ন। দুটিই লক্ষ্য সম্পূর্ণ করেছে। এটি দারুণ সাফল্য।" সংবাদসূত্র অনুযায়ী, এখন এর রেঞ্জ বেড়ে হয়েছে ৩৫০ কিলোমিটার এবং এখন এই ক্ষেপণাস্ত্র ৫০০ থেকে ১০০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত পেলোড বহন করতে সক্ষম। ২০১১ সালের ৯ জুন চাঁদিপুরের ইন্টেরিম টেস্ট রেঞ্জ থেকে একটি টেস্ট ফায়ারিং-এর মাধ্যমে এর বর্ধিত ১০ মিটার যাথার্থতার পরীক্ষা সফল হয়েছে।

পৃথ্বী-৩

পৃথ্বী-৩ শ্রেণী ("কোডনেম" ধনুষ) হল একটি টু-স্টেজ জাহাজ-থেকে-ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র।

প্রথম স্টেজটি ১৮ মেট্রিক টন ফোর্স (১৫৭ কিলোনিউটন) থ্রাস্ট মোটর-যুক্ত এবং সলিড ফুয়েলে চালিত। দ্বিতীয় স্টেজটি লিকুইড ফুয়েলে চালিত। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ৩৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ১০০০ কিলোগ্রাম ওয়ারহেড, ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ২৫০ কিলোগ্রাম ওয়ারহেড এবং ৭৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ২৫০ কিলোগ্রাম ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। ধনুষে একটি স্টেবিলাইজেশন প্লাটফর্ম (ধনুক) ও একটি ক্ষেপণাস্ত্র (তীর) থাকে। এটিকে পৃথ্বীর সংস্করণ বলা হয়। এটি সমুদ্র থেকেও ব্যবহার করা যায়। ধনুষ হাইড্রলিক্যালি স্টেবিলাইজড লঞ্চ প্যাড থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়। এর মাধ্যমে শত্রুর যুদ্ধবিমান বা শত্রুর বন্দর ধ্বংস করা যায়।

পৃথ্বী-৩-এর প্রথম পরীক্ষা হয় ২০০০ সালে, আইএনএস সুভদ্রা নামে একটি সুকন্যা শ্রেণী টহলদার জাহাজ থেকে। জাহাজের একটি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার ডেক থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়। প্রথম টেস্ট ছিল ২৫০ কিলোমিটারের। এটি আংশিক সফল হয়। ২০০৪ সালে ফুল অপারেশনাল টেস্টিং সম্পন্ন হয়।

পরের বছর ডিসেম্বরে উন্নত ৩৫০ কিলোমিটার সংস্করণটি পরীক্ষা হয় আইএনএস রাজপুত থেকে। এই উৎক্ষেপণ সম্পূর্ণ সফল হয়। ২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর চাঁদিপুরের ইন্টিগ্রেডেট টেস্ট রেঞ্জ থেকে সামান্য দূরে সমুদ্রে আইএনএস সুভদ্রা থেকে পরীক্ষার সময়ও এর উৎক্ষেপণ সফল হয়। এটি ছিল ক্ষেপণাস্ত্রটির ষষ্ঠ পরীক্ষা।

পাদটীকা

টেমপ্লেট:Defence Research and Development Organisation (DRDO)

টেমপ্লেট:Indian missiles

Tags:

ক্ষেপণাস্ত্র পৃথ্বী নেপথ্য-ইতিহাসক্ষেপণাস্ত্র পৃথ্বী বর্ণনাক্ষেপণাস্ত্র পৃথ্বী পাদটীকাক্ষেপণাস্ত্র পৃথ্বীপ্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংগঠনব্যালিস্টিক মিশাইলভারতসুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

সূরা কাহফতক্ষকমুহাম্মাদের স্ত্রীগণবঙ্গবন্ধু সেতুনরেন্দ্র মোদীহাদিসবাউল সঙ্গীতবিশেষ্যআযানভারতের ইতিহাসইন্সটাগ্রামবাংলাদেশের পোস্ট কোডের তালিকাসূরা কাফিরুনহরপ্পামুহাম্মাদআমর ইবনে হিশামউসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতানদের তালিকা২০২৪ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগহরমোনমুস্তাফিজুর রহমানবাংলা উইকিপিডিয়াঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়বীর উত্তমবাংলাদেশের জেলাসাহাবিদের তালিকাকারাগারের রোজনামচানিষ্ক্রিয় গ্যাসরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকুইচাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহমাটিউসমানীয় উজিরে আজমদের তালিকাপিনাকী ভট্টাচার্যউসমানীয় সাম্রাজ্যদ্বৈত শাসন ব্যবস্থাইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিপিংক ফ্লয়েডপৃথিবীকার্বন ডাই অক্সাইডহিন্দুধর্মের ইতিহাসবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাটিম ডেভিডশুক্রাণুআসরের নামাজবিরাট কোহলিপ্রাকৃতিক পরিবেশমুকেশ আম্বানিজালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমিজাতীয় গণহত্যা স্মরণ দিবসভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আমতাহাজ্জুদকুরআনের সূরাসমূহের তালিকামিশনারি আসনউপসর্গ (ব্যাকরণ)পিরামিডমেটা প্ল্যাটফর্মসবাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের তালিকাসতীদাহবীর্যইউরোপীয় দেশগুলো ও অধীনস্থ ভূভাগের তালিকাঅপারেশন জ্যাকপটডায়াজিপামরাগ (সংগীত)মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়গাজওয়াতুল হিন্দরাদারফোর্ড পরমাণু মডেলবিজ্ঞানসূরা বাকারাপ্রথম মুয়াবিয়াপর্যায় সারণিপ্রথম উসমানআবু হানিফারামকৃষ্ণ পরমহংসখন্দকের যুদ্ধবাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকাপদ্মা নদীসর্বনাম🡆 More