ইহুদী, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মকে ইব্রাহিমীয় ধর্ম বলা হয় কারণ তারা সব এই মতবাদ গ্রহণ করেন যে, ঈশ্বর ইব্রাহীম/আব্রাহামকে তাঁর বার্তাবাহক হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। একইভাবে সব ইব্রাহিমীয় ধর্মের ধর্মতাত্ত্বিক মতবাদগুলো হিব্রু বাইবেলের ইসরায়েলীয় ঈশ্বর এবং একেশ্বরবাদ মতবাদের সাথে কিছুটা সাদৃশ্যপূর্ণ।
এই অর্থে ইব্রাহিমীয় ঈশ্বর হচ্ছে ঈশ্বর সম্পর্কে এমন একটি ধারণা যা সাধারণ বৈশিষ্ট্যে তিনটি ধর্মেই বজায় আছে। ঈশ্বরকে অনন্ত, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ এবং মহাবিশ্বের স্রষ্টা হিসেবে ভাবা হয়। ঈশ্বরের পবিত্রতা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়াশীলতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য আছে বলা হয়। ইব্রাহিমীয় ধর্মের প্রবক্তারা বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বর এমনকি ব্রহ্মাণ্ডের নিয়মের বাইরে, যার অর্থ তিনি স্থান এবং সময়ের পরিধির বাইরে এবং সেইজন্য তার সৃষ্টির কোনকিছুর সাথে তুলনা করার বিষয় নন, কিন্তু একই সময় তিনি তাঁর সমস্ত সৃষ্টির প্রার্থনা শোনেন এবং কৃতকর্ম দেখেন।
বাহাই ধর্ম একজন একেশ্বরবাদী, অগম্য, সর্বজ্ঞ, সর্বব্যাপী, অক্ষয়, এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বর্ণনা দেয় যিনি মহাবিশ্বের সকল কিছুর স্রষ্টা। ঈশ্বর এবং মহাবিশ্বের অস্তিত্বকে শাশ্বত বলে মনে করা হয়, যার কোন শুরু বা শেষ নেই।
সৃষ্টি প্রার্থনা, প্রতিফলন, এবং মানবজাতির সেবায় নিয়োজিত হয়ে তাঁর স্রষ্টা সম্পর্কে জানার এবং তাকে ভালোবাসার ক্ষমতা অর্জন করবে। ঈশ্বর মানবজাতির প্রতি তার ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য প্রকাশ করেন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে, যারা ঈশ্বরের প্রকাশ হিসেবে পরিচিত, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ধর্মের বর্তমান কাল পর্যন্ত ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করা নবী ও রাসূলগণ।
নবীগণের চরিত্রে ঐশ্বরিক বৈশিষ্ট্যাবলীর প্রতিফলন হয়, যাদেরকে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন মানবকূলের উদ্দেশ্যে আধ্যাত্মিক জ্ঞানদানের জন্য। বাহাই মতে, সমস্ত জীবিত স্বত্তা এই বৈশিষ্ট্যাবলীর অন্তত একটি এবং মানুষের আত্মা সম্ভাব্য তাদের সবকয়টি প্রতিফলিত করতে পারে। বাহাই মতবাদ সর্বেশ্বরবাদ, নরত্বারোপ, এবং পুনর্বিভাব বিশ্বাস অস্বীকার করে।
সেকন্ড টেম্পল ইহুদীধর্মের সময়টাতে খ্রীষ্টধর্মের শুরু হয়েছিল। তাই এ ধর্মের অনুসারীরা ঈশ্বরের অসীম ক্ষমতা, সর্বজ্ঞতা, সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা, ব্যক্তিত্ব, সর্বেশ্বরবাদ, উৎকর্ষ, চূড়ান্ত ঐক্য ও আধিপত্যসহ অধিকাংশ বিষয়ে ইহুদিধর্ম বিশ্বাসের সাথে ঐকমত্য পোষণ করে। এ ধর্মের নতুনত্ব এই যে যিশু খ্রিস্টকে বিবেচনা করা হয় প্রাচীন ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা অথবা ইসরাইলের নবীদের বিধানের সম্পূর্ণতা হিসেবে।
সর্বাধিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়গুলি বিশ্বাস করে যিশু একজন মানুষ হিসেবে ঈশ্বরের পুনর্বিভাব, যা ইহুদীধর্ম এবং ইসলাম থেকে খ্রিষ্টধর্মের প্রধান পার্থক্য। যদিও ব্যক্তিগত পরিত্রাণ সম্পর্কে ইহুদীধর্মে পরোক্ষভাবে বিবৃত করা হয়েছে, অনুগ্রহ ও সঠিক বিশ্বাসের জোরে ব্যক্তিগত পরিত্রাণের কথা খ্রিস্টানধর্মেই জোর দিয়ে বলা হয়েছে। তবে মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে মধ্যবর্তী কারো অস্তিত্বে বিশ্বাস নুহ আইনের সাথে বিরোধ করে এবং একেশ্বরবাদে অস্বীকার করে।
অধিকাংশ খ্রিস্টানের জন্যই, ঈশ্বর সম্পর্কে বিশ্বাস ত্রিত্ববাদ মতবাদের উপর দাঁড়িয়ে আছে, যাতে বলা হয় যে তিনজন ঈশ্বর একসঙ্গে একজন একক ঈশ্বর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই মতবাদ মূলত নিসিয়া কাউন্সিলে বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল এবং নিসিয়ান ধর্মমতে সন্নিবেশিত রয়েছে। ত্রি-স্বত্তা মতবাদ এ বিশ্বাসের উপর উপর জোর দেয় যে, ঈশ্বরের একটি ইচ্ছা আছে, এবং ঈশ্বরপুত্রের দুইটি ইচ্ছা আছে- ঐশ্বরিক এবং মানবিক, এবং এরা কখনোই পরস্পর সংঘাতী নয়, বরং হাইপোস্ট্যাটিক সংঘে মিলিত।যদিও তাদের ধর্মগ্রন্থে ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি।
খ্রিষ্টানদের একটি ছোট সংখ্যালঘু যারা একত্ববাদ মতবাদের অধীনে আসছে, তারা ত্রি-স্বত্তা মতবাদ বিশ্বাস করেন না।
মর্মন সম্প্রদায়ের অধিকাংশ (পরবর্তী দিনের সাধুদের যীশু খ্রীষ্টের চার্চ সহ) দ্বারা প্রতিনিধিত্ব মর্মনবাদে, ঈশ্বর মানে এলোহিম (পিতা), আর গডহেড হচ্ছে তিনজন পৃথক ঈশ্বরের একটি কাউন্সিল; এলোহিম, যিহোবা (পুত্র বা যিশু), এবং পবিত্র আত্মা। পিতা ও পুত্রের শরীর আছে এবং পবিত্র আত্মা একটি আত্মা যার কোন শরীর নেই। এই ধারণা প্রচলিত খ্রিস্টান ট্রিনিটি থেকে পৃথক; মর্মনিজম মতে ঈশ্বর তিনজন শারীরিকভাবে আলাদা স্বত্তা, বা ব্যক্তিবর্গ, কিন্তু ইচ্ছায় ও উদ্দেশ্যে একতাবদ্ধ। এভাবে, মর্মনিজমে গডহেডের সংজ্ঞা প্রচলিত খ্রিষ্টধর্ম থেকে পৃথক। ঈশ্বরের এরূপ বর্ণনা ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত পরবর্তী দিনের সাধুদের যীশু খ্রীষ্টের চার্চ (এলডিএস চার্চ) এ দৃঢ় বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করে।
ইসলাম ধর্মমত অনুযায়ী, ঈশ্বরকে মনে করা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞ স্রষ্টা যিনিই বিশ্বজগতের প্রতিপালক এবং পরকালের বিচারক। ইসলাম কঠোরভাবে ঈশ্বরের একত্ববাদে (তাওহীদ) বিশ্বাসের উপর জোর রাখে। বলা হয় তিনি অনন্য (ওয়াহিদ) এবং এক (আহাদ), পরম দয়ালু এবং সর্বশক্তিমান। কুরআন অনুযায়ী ঈশ্বরের ৯৯টি নাম আছে (আল-আসমাউল হুসনা যার অর্থ: "সৌন্দর্যমন্ডিত নামসমূহ") যার প্রত্যেকটি ঈশ্বরের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের পরিচয় বহন করে। এই সকল নাম সর্বোৎকৃষ্ট এবং সমস্ত ব্যাপক ঐশ্বরিক আরবি নাম আল্লাহ কে নির্দেশ করে। এই ৯৯টি নামের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং প্রায় ব্যবহৃত নাম হল "দয়াময়" (আর-রহিম) এবং "পরম দয়ালু" (আর-রহমান)।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং রক্ষণাবেক্ষণকে তাঁর রহমত হিসেবে দেখা হয়। তাই সমস্ত জীব তাঁর গুণগান গায় এবং ঐক্য ও প্রভুত্বের সাক্ষী বহন করে।
কুরআন মতে,
চক্ষুসমূহ তাকে আয়ত্ত করতে পারে না। আর তিনি চক্ষুসমূহকে আয়ত্ত করেন। আর তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত। (সূরা আল-আনআম ৬: ১০৩)।
কুরআন মতে, ঈশ্বর একজন ব্যক্তির গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও ঐ ব্যক্তির অধিক নিকটবর্তী। যখনই কোনো প্রয়োজনে বা মর্মপীড়ায় তাঁর সৃষ্টি তাকে ডাকে, তখনই তিনি সাড়া দেন। সর্বোপরি, তিনি "সরল পথ", সঠিক পথে মানবজাতিকে পথ দেখান।
ইসলাম শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বর অদ্বিতীয়। এটি যদিও অমুসলিমদের দ্বারা সার্বজনীনভাবে গৃহীত নয় কারণ ইসলাম ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে যীশু খ্রিষ্টের দেবত্ব অস্বীকার করে। ইসলাম ধর্মমতে ঈশ্বরের কোন সন্তান বা বংশধর নেই। তিনি যিশু খ্রিষ্টসহ যাবতীয় নবী-রাসূলদের সৃষ্টি করেছেন।
ইহুদীধর্ম কঠোর একেশ্বরবাদের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। একটি দ্বৈত বা ত্রি-স্বত্তা হিসাবে ঈশ্বরের ধারণা ইহুদীধর্ম মতবিরোধী, এটা শিরক সদৃশ বলে মনে করা হয়।
তাওরাতে রয়েছে,
ঈশ্বর, সবকিছুর মূল, এক। এর মানে এই নয় যে তিনি কোন শ্রেণির এক, অথবা কোন একটি প্রজাতির মত, বা একটি বস্তু যা অনেক উপাদান নিয়ে গঠিত, কিংবা একটি একক বস্তু যা অসীম বিভাজ্য। বরং, ঈশ্বর একটি ঐক্য যা অন্য কোন সম্ভাব্য ঐক্যের সদৃশ নয়।
তাওরাত এ এরূপ উল্লেখ আছে
শোনো বনি ইসরায়েল, প্রভু আমাদের ঈশ্বর, প্রভু এক। 6: 4
ঈশ্বরকে অনন্ত, বিশ্বজগতের স্রষ্টা, আর নৈতিকতার উৎস হিসেবে ভাবা হয়। ঈশ্বরের ক্ষমতা রয়েছে জগতে হস্তক্ষেপ করার। ঈশ্বর শব্দটি এইভাবে একটি প্রকৃত সত্তাতাত্ত্বিক বাস্তবতা, নিছক মানুষের কল্পনাপ্রসূত নয়। মাইমোনাইডস এইরূপে ঈশ্বর বর্ণনা করেন:
সব বুনিয়াদের মূল এবং জ্ঞানের ভিত্তি হচ্ছে এটা জানা যে একটি আদি স্বত্তা আছে যিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন। স্বর্গ, পৃথিবী, এবং এদের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে, সব সৃষ্টির মূলে রয়েছে তাঁর অস্তিত্বের সত্যতা।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ইব্রাহিমীয় ধর্মে ঈশ্বর, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.