শাহ আজিজুর রহমান: বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

শাহ আজিজুর রহমান (২৩ নভেম্বর ১৯২৫ - ১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯) বাংলাদেশের আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতার জন্য সমালোচিত ছিলেন।

শাহ আজিজুর রহমান
শাহ আজিজুর রহমান: প্রাথমিক জীবন, বাংলাদেশ পূর্ববর্তী রাজনৈতিক অবস্থান, মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা
বাংলাদেশের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৫ এপ্রিল, ১৯৭৯ – ২৪ মার্চ, ১৯৮২
রাষ্ট্রপতিজিয়াউর রহমান,
আবদুস সাত্তার
পূর্বসূরীমশিউর রহমান (ভারপ্রাপ্ত)
উত্তরসূরীআতাউর রহমান খান
কুষ্টিয়া-৩ আসনের
সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ – ২৪ মার্চ ১৯৮২
পূর্বসূরীআমীর-উল ইসলাম
উত্তরসূরীসৈয়দ আলতাফ হোসেন
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ
কাজের মেয়াদ
১৯৬৫ – ১৯৬৯
পূর্ব পাকিস্তানের রাজস্বমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৩১ আগস্ট ১৯৭১ – ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯২৫-১১-২৩)২৩ নভেম্বর ১৯২৫
কুষ্টিয়া, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯(1989-09-01) (বয়স ৬৩)
ঢাকা
সমাধিস্থলজাতীয় সংসদ ভবন এলাকা
রাজনৈতিক দলবিএনপি
দাম্পত্য সঙ্গীআম্বিয়া খাতুন
সন্তানমিনু রহমান
প্রাক্তন শিক্ষার্থীকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাথমিক জীবন

শাহ আজিজুর রহমান ২৩ নভেম্বর ১৯২৫ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (সম্মান) ডিগ্রি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।

তার স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (মৃত্যু: ১০ অক্টোবর ২০২০)। এই দম্পতীর একমাত্র মেয়ে মিনু রহমান (মৃত্যু: ৯ অক্টোবর ২০২০)।

বাংলাদেশ পূর্ববর্তী রাজনৈতিক অবস্থান

শাহ আজিজুর রহমান ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে অংশ নেয়া এই ব্যক্তি ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৭ সালে অল বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং একইসাথে তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর তিনি কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। এসময় তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।

তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত এ পদে বহাল থাকেন।

১৯৬২ সালে তিনি মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় কুষ্টিয়া থেকে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।

১৯৬২ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টে যোগ দেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৬৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং অল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৬৫ সালে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার নির্বাচনে কুষ্টিয়া এনই-৩৩ নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালের জুন মাসে তিনি জাতীয় পরিষদে সম্মিলিত বিরোধী দলের (কপ) উপনেতা নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বিবাদী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যক্রমের জন্য তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

তিনি ১৯৭০ সালে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় লীগে যোগ দেন এবং দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা

শাহ আজিজুর রহমান ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আবদুল মোতালেব মালিকের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্য হন এবং রাজস্বমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তান কর্তৃক জাতিসংঘে প্রেরিত প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি জাতিসংঘে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করলেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে।

স্বাধীনতার পর অবস্থান

স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতা করার দায়ে ‘পাকিস্তানের সহযোগী’ হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। দালাল আইনে তার বিচার হয়।

১ ডিসেম্বর ১৯৭৩ তারিখ দৈনিক বাংলা পত্রিকার সূত্রে জানা যায়, “স্বাধীনতা বিরোধী শাহ আজিজুর রহমান ও শর্ষিণার পীর সাহেব সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি লাভ করেছেন”। অভিয‍ুক্তদের মধ্যে যারা গণহত্যা ও ধর্ষণের মত ভয়ংকর কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না, সেই ধারার আওতায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের সাধারণ ক্ষমার অধীনে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পান।

শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সমর্থন করেন।

১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত জিয়াউর রহমান কর্তৃক আনব্যানকৃত বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

বিএনপি গঠনের পূর্বে ১৯৭৮ সালে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট নামক একটি দল গঠিত হয়। এই দলে তৎকালীন মুসলিম লীগের একটি অংশ নিয়ে তিনি যোগদান করেন। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমান ৩ জুন ১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। পরে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ও আরো কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন মিলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠিত হলে তিনি ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

১৯৭৮ সালের জুন মাসে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় শ্রম ও শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।

১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়া-৩ আসন থেকে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদ নেতা নিযুক্ত হন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশে বিএনপি সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রীজিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে অসীন থাকেন। হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তাকে পদচ্যূত করেন।

জুন ১৯৮৫ সালে বিএনপিতে ভাঙন দেখা দেয় এবং দ্বিধাবিভক্ত দলের এক অংশের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি নেতৃত্ব দেন।

কিছুদিন পর তিনি জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং ১৯৮৫ সালের ১৭ আগস্ট এরশাদ কর্তৃক গঠিত জাতীয় ফ্রন্টে যোগ দেন। তবে কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি ফ্রন্ট থেকে সরে যান।

১৯৮৯ সালের আগস্ট মাসে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত বিএনপির মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে আসেন।

মৃত্যু

শাহ আজিজুর রহমান ১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় সমাহিত করা হয়।

তথ্যসূত্র

পূর্বসূরী:
মশিউর রহমান
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
এপ্রিল ১৫, ১৯৭৯ - মার্চ ২৪, ১৯৮২
উত্তরসূরী:
আতাউর রহমান খান

Tags:

শাহ আজিজুর রহমান প্রাথমিক জীবনশাহ আজিজুর রহমান বাংলাদেশ পূর্ববর্তী রাজনৈতিক অবস্থানশাহ আজিজুর রহমান মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকাশাহ আজিজুর রহমান স্বাধীনতার পর অবস্থানশাহ আজিজুর রহমান মৃত্যুশাহ আজিজুর রহমান তথ্যসূত্রশাহ আজিজুর রহমানআইনজীবীপাকিস্তান সেনাবাহিনীবাংলাদেশবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধরাজনীতিবিদ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

চাঁদক্লিওপেট্রাদাজ্জালসূরা আল-ইমরানকার্বনহিন্দুধর্মতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়লালবাগের কেল্লানেলসন ম্যান্ডেলাআরবি ভাষাখুররম জাহ্‌ মুরাদনিউটনের গতিসূত্রসমূহঘূর্ণিঝড়হনুমান চালিশাফরিদপুর জেলারক্তশূন্যতামাযহাবসিংহবাংলা সাহিত্যস্টার জলসাইসলামে বিবাহরামমোহন রায়আফরান নিশোচট্টগ্রাম জেলাজাতীয় সংসদের স্পিকারদের তালিকাপূর্ণিমা (অভিনেত্রী)ঋগ্বেদসভ্যতাফ্রান্সব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলামাতৃভাষীর সংখ্যা অনুসারে ভাষাসমূহের তালিকাপ্রতিবেদনসুন্দরবনব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলসূরা নাসজার্মানিশ্রীকৃষ্ণকীর্তনহিন্দি ভাষা৮৭১নিউমোনিয়াঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানশিবাজীবেদবারো ভূঁইয়াপায়ুসঙ্গমমিয়া খলিফাবাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলইসলামের পঞ্চস্তম্ভইংল্যান্ডমাক্সিম গোর্কিআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলসাঁওতাল বিদ্রোহসেন্ট মার্টিন দ্বীপফজরের নামাজব্রহ্মপুত্র নদমাহিয়া মাহিতায়াম্মুমআল পাচিনোআর্জেন্টিনাইলেকট্রনমসজিদে নববীহস্তমৈথুনের ইতিহাসবিপন্ন প্রজাতিকলা (জীববিজ্ঞান)মূলদ সংখ্যাফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংপ্লাস্টিক দূষণসংক্রামক রোগবাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকাসিরাজগঞ্জ জেলাইসলামে যৌনতাভুট্টাবাংলা ব্যঞ্জনবর্ণমিয়ানমারদক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলাকনডমজাতিসংঘসিরাজউদ্দৌলা🡆 More