লাওস বড় দেশ নয়। দেশটির লোকসংখ্যা ৭০ লাখেরও বেশি। দেশটিতে মোট ৪৯টি জাতি রয়েছে। লাও জাতির লোকসংখ্যা সবচে বেশি, প্রায় ৫০.৩ শতাংশ। রাজধানী ভিয়েনতিয়েনের লোকসংখ্যা সাড়ে সাত লাখ। ভিয়েনতিয়েন একটি অতি পুরনো শহর। ১৬ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে লাওসের রাজধানী লাংপ্রাবাং থেকে ভিয়েনতিয়েনে স্থানান্তরিত হয়। লাওস ভাষায় 'ভিয়েনতিয়েন' অর্থ 'চন্দন গাছের শহর'। কথিত আছে, প্রাচীনকালে এ শহরে প্রচুর চন্দন গাছ ছিল। ভিয়েনতিয়েন মেকং নদীর তীরে অবস্থিত একটি সমতলভূমি। গোটা শহরটি বেষ্টন করে আছে মেকং নদী। দূর থেকে দেখলে চাঁদের মতো মনে হয়। এ জন্যে ভিয়েনতিয়েনের আরেক নাম 'চাঁদ শহর'।
ভিয়েনতিয়েনের শহর এলাকায় নানা ধরনের মন্দির ও প্যাগোডা দেখা যায়। আপনি একটি সাইকেল ভাড়া করে ম্যাপ হাতে নিয়ে নিজেই গোটা শহরের অনেক দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করতে পারেন। pha that luang লাওসের সবচে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলোর অন্যতম। এটি ভিয়েনতিয়েনের কেন্দ্রীয় এলাকার ৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এর আরেক নাম রাজার প্যাগোডা। এটি লাওসের বৌদ্ধ ধর্মের সংস্কৃতির সবচে মূল্যবান প্রতীক। প্যাগোডার বাইরের অংশ সোনায় মোড়ানো। দূর থেকে দারুণ সুন্দর ও পবিত্র লাগে।
patuxay ভিয়েনতিয়েনের কেন্দ্রীয় এলাকায় অবস্থিত। এটি শহরের একটি দারুণ জনপ্রিয় ও বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। লাওসের মানুষ বিদেশি ঔপনিবেশিকদের আগ্রাসন প্রতিরোধ করে মুক্তি অর্জন করেছিল। সেই সংগ্রামের স্মৃতি রক্ষার্থেই এ স্থাপত্যটি নির্মাণ করা হয়। এর উচ্চতা ৪৫ মিটার, বিস্তার ২৪ মিটার। দূর থেকে দেখলে একে ফ্রান্সের প্যারিস triumphal archয়ের মতো মনে হয়।
ভিয়েনতিয়েন ছাড়া লাওসের আরেকটি শহরের দৃশ্যও দারুণ সুন্দর, এর নাম লাংপ্রাবাং। ভিয়েনতিয়েন থেকে এর দূরত্ব ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি। বিমানে যেতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগে। এটি লাওসের সবচে পুরনো নগরগুলোর অন্যতম। এ শহরের ইতিহাস হাজার বছরের পুরাতন। লাংপ্রাবাংয়ে ৬০০টিরও বেশি পুরনো স্থাপত্য রয়েছে। এখানকার মানুষ অতি সরল এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যও দারুণ সুন্দর। পাশ্চাত্য দেশের পর্যটকরা এ শহরকে 'দুনিয়ার স্বর্গ' বলে ডাকে। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে লাংপ্রাবাং ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
লাংপ্রাবাং লাওসের বৌদ্ধ ধর্মের কেন্দ্র। শহরের মধ্যে ৩০টিরও বেশি মন্দির আছে। স্থানীয় অঞ্চলের লোকেরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এ শহরে একটি দারুণ মজার দৃশ্য দেখা যায়। প্রতিদিন ভোরবেলায় মন্দিরের সন্ন্যাসীরা রাস্তায় এসে সাধারণ মানুষের কাছে খাবার ভিক্ষা করে। বিভিন্ন মন্দিরের সন্ন্যাসীরা রাস্তায় লাইনে দাঁড়িয়ে হাঁটে আর সাধারণ মানুষ স্টিম রাইসসহ বিভিন্ন খাবার তাদের হাতে তুলে দেয়। সুর্যালোকে কালো কাপড় পড়া সন্ন্যাসীদের দেখলে অনেক আন্তরিক ও পবিত্র মনে হয়।
স্থানীয় অঞ্চলের লোকদের বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি যে আন্তরিকতা, তা সন্ন্যাসীদের খাবার দেওয়ার এই দৃশ্যে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। লাংপ্রাবাংয়ের রাজপ্রাসাদ জাদুঘর আরেকটি দর্শনীয় স্থান। স্থানীয় অঞ্চলের ইতিহাস ভালভাবে বুঝতে চাইলে এ জাদুঘর পরিদর্শন করতে হবে। ১৯০৪ সালে এ রাজপ্রাসাদ মেকং নদীর তীরে নির্মিত হয়। তখন রাজা sisavangvong ও তার পরিবারের সদস্যরা সেখানে বসবাস করা শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে রাজার মৃত্যুর পর তার ছেলে savangvattana নতুন রাজা হন। তবে ১৯৭৫ সালে লাওস বিপ্লবের পর রাজা ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্বাসনে পাঠানো হয়। পরে এ রাজপ্রাসাদটিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। জাদুঘরে ভারত, ক্যাম্পুচিয়া ও লাওসের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা শ্রেষ্ঠ বুদ্ধমূর্তি স্থান পেয়েছে। এতে phabang নামের একটি সোনার বুদ্ধমূর্তিও আছে।
জাদুঘর ছাড়া, শহরের মাঝখানে অবস্থিত ফুসি (phusi) পাহাড় আরেকটি দর্শনীয় স্থান। এ পাহাড়ের শৃঙ্গ থেকে সুর্যাস্ত দেখা যায়; উপভোগ করা যায় গোটা শহরের সুন্দর দৃশ্য। পাহাড়ের চূড়ায় that chomsi নামের একটি প্যাগোডা আছে। লাওসের নববর্ষের সময় লোকেরা এই প্যাগোডা থেকেই শুরু করে শ্রদ্ধানিবেদনের অনুষ্ঠান।
আসলে এ পাহাড়ের উচ্চতা বেশি নয়। পায়ে হেঁটেই প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করা যায়। সিয়েংথোং মন্দির (xieng thong) লাংপ্রাবাংয়ের সবচে সুন্দর মন্দির। ১৫৬০ সালে এ মন্দির নির্মাণ করা হয়। মন্দিরে বড় হলটি লাওসের নিজস্ব স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এর দেয়ালে সুন্দর গাছের ছবি অঙ্কিত আছে, যা দেখতে মনোহর ও রহস্যময়। হলের বাইরের দেওয়ালে মহাকাব্য রামায়নের পৌরাণিক দৃশ্য খোদাই করা আছে। লাংপ্রাবাংয়ের পুরনো শহর পরিদর্শন করতে অর্ধেক দিনই যথেষ্ট। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে আপনি রাস্তার দু'পাশে মাসাজ পার্লারগুলোতে লাওসের বিশেষ মাসাজ উপভোগ করতে পারে।
লাওস একসময় ফরাসি উপনিবেশ ছিল। এ কারণে, স্থানীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের খাবারে ফরাসি প্রভাব লক্ষণীয়। এখানে সানভিচ, কফি, পিজা আর ফরাসি পাউরুটি বেশ চলে। পুরনো শহরে lecafe নামের একটি কফি দোকান অতি জনপ্রিয়। এখানকার কফি সুগন্ধযুক্ত ও মজা। অনেক পর্যটক কফি দোকানে বসে গল্প করেন বা পত্রিকা পড়েন, দারুণ আরামদায়ক ব্যাপার। তা ছাড়া, রাতের সময় chaophanyakang রাস্তায় একটি বড় নাইট বাজার বসে। সেখানে স্থানীয় অঞ্চলের নানা ধরনের মজার খাবার পাওয়া যায় এবং বৈশিষ্ট্যময় হস্তশিল্পকর্মও কেনা যায়।
সেই নাইট বাজার অনেক সরগরম থাকে। পর্যটকরা রাতের সময় বাজারে এসে ডিনার করেন। এখানে নানা ধরনের মজার মজার খাবার পাওয়া যায় এবং দামও খুবই সস্তা। লাওসের বিয়ার বিশ্ববিখ্যাত। গরম আবহাওয়াতে এ বিয়ার খেলে শরীরে আরাম অনুভূত হয়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article লাওসের ইতিহাস, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.