রোসা লুক্সেমবুর্গ

রোসা লুক্সেমবুর্গ (জন্ম মার্চ ৫, ১৮৭০/৭১, মৃত্যু জানুয়ারি ১৫, ১৯১৯) ছিলেন জন্মসূত্রে পোলিশ মার্কসবাদী তাত্তিক, সমাজ দার্শনিক ও বিপ্লবী । তিনি পোল্যান্ড সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তাত্তিক ছিলেন । পরে তিনি জার্মান সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এসপিডি)সাথে জড়িয়ে পড়েন । ১৯১৮ সালের নভেম্বরে তিনি ডি রোটে ফাহরে (বাংলা: লাল পতাকা) পত্রিকা চালু করেন । এসপিডি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সমর্থন দেবার পর তিনি কার্ল লিবটকেনেখট-এর সাথে স্পার্টাসিস্ট লীগ (জার্মান : স্পার্টাকুসবুন্ড ) নামক এক বিপ্লবী দল গঠন করেন যেটা পরে জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টি নামে পরিচিতি লাভ করে । লুক্সেমবার্গ ১৯১৯ সালের জানুয়ারি মাসে এক ব্যর্থ অভ্যুথানের নেতৃত্ব দেন । অভ্যুথান ব্যর্থ হবার পর রোজা লুক্সেমবুর্গ, কার্ল লিবটকেনেখট সহ হাজার হাজার বিপ্লবী ধরা পড়েন ও তাদের হাতে নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ।

রোসা লুক্সেমবুর্গ
রোসা লুক্সেমবুর্গ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম৫ মার্চ ১৮৭১
Zamość, ভিস্টুলা ল্যান্ড, রাশিয়া
মৃত্যু১৫ জানুয়ারি ১৯১৯(1919-01-15) (বয়স ৪৭)
বার্লিন, জার্মানি
নাগরিকত্বজার্মান
রাজনৈতিক দলপ্রোলেতারিয়েত পার্টি, সোস্যাল ডেমোক্রেসি অভ দ্যা কিংডম অভ পোল্যান্ড অ্যান্ড লিথুনিয়া, সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অভ জার্মানি, ইন্ডিপেনডেন্ট সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, স্পারটাকাস লিগ, কম্যুনিস্ট পার্টি অভ জার্মান
দাম্পত্য সঙ্গীগুস্তাভ লুবেক
ঘরোয়া সঙ্গীLeo Jogiches
সম্পর্কEliasz Luxemburg (বাবা)
Line Löwenstein (মা)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীজুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়
জীবিকাদার্শনিক, অর্থনীতিবিদ এবং বিপ্লবী
ধর্মইহুদী; পরবর্তী জীবনে নাস্তিক ছিলেন

সংক্ষিপ্ত জীবনী

রোসা লুক্সেমবুর্গ 
রোসা লুক্সেমবুর্গ 1895
রোসা লুক্সেমবুর্গ 
বার্লিনে রোসা লুক্সেমবুর্গের মূর্তি

রোসা লুক্সেমবুর্গ ৫ মার্চ ১৮৭১ সালে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত পোল্যান্ডের সামোসক নামক স্থানে এক ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিলো রোজালিয়া লুক্সেবুর্গ । রোসা লুক্সেমবুর্গ ঠিক কত সালে জন্মেছিলেন তা নিয়ে একটা বিভ্রান্তি রয়েছে । পুরনো নথীপত্র থেকে এর পেছনে যে কারণটা পাওয়া যায় সেটা হলো তিনি তার স্কুলের সার্টিফিকেট ও জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফর্মে দু'টি ভিন্ন তারিখ লিখেছিলেন । তাঁর পরিবার জার্মান ভাষা এবং জার্মান ভাষায় কথা বলতে পারে এবং লাক্সেমবার্গ রুশ ভাষা ভাষাও শিখত। এই মহীয়সী নারী শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্মালেও সেটা তার জীবনে কোন প্রতিবন্ধক হিসেবে দাড়াতে পারেনি ।

রোসা লুক্সেমবুর্গের পরিবার তার ৯/১০ বছর বয়সে ওয়ারশ'তে স্থায়ী হন । সেখানেই মাত্র ১৫-১৬ বছর বয়সেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন । নিষিদ্ধ ঘোষিত বামপন্থি দল প্রোলেতারিয়েতে যোগ দেন তিনি ।এরপর বছর দুই পর গ্রেফতার এড়াতে তিনি সুইজারল্যান্ড পাড়ি জমান । সেখানে রোজা জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ।

রাজনৈতিক জীবন ও দর্শন

রোসা লুক্সেমবুর্গ 
ক্লারা জেটকিন ও রোসা লুক্সেমবুর্গ

দর্শনগত দিক থেকে রোজা বৈপ্লবিক মার্ক্সবাদী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন । প্রথম জীবনে তিনি এসপিডির রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী থাকলেও ১৮৯০ সালে বিসমার্ক যখন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন তখন থেকে এসপিডি আস্তে আস্তে ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় আলাদা রাজনৈতিক প্লাটফর্মের কথা চিন্তা করতে থাকেন তিনি । এরই মধ্যে ১৮৯৮ সালে রোজা জার্মান নাগরিকত্ব পান গুস্তাভ লোয়েবেক নামের একজনকে বিয়ে করে । এর পরপরই মধ্যে রাজনৈতিক কর্মপন্থা নিয়ে এসপিডির উচ্চপর্যায়ের সাথে সরাসরি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন । বিতর্ক বিরোধীতায় রূপ নেয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পর । যুদ্ধের অর্থসংস্থানে এসপিডি ক্ষমতাসীনদের সমর্থন দিলে রোজা ও তার সঙ্গীরা দলত্যাগ করেন । বিরুদ্ধ আচরণের দায়ে এরপর তাকে আড়াই বছরের কারাবাস দেয়া হয় । জেলে বসেই তিনি কলম চালাতে থাকেন যুদ্ধরত সরকারের বিপক্ষে । এসময়ই তিনি কীভাবে একটি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র একনায়কতন্ত্র হয়ে বসে সেটার একটা তাত্তিক কাঠামো দাড় করান । যেটার বাস্তব রূপ পরে হিটলারের উথথানের মধ্য দিয়ে আমরা দেখতে পাওয়া যায় ।

রোসার জেল মেয়াদ শেষ হবার সময় জার্মানির উত্তরের শহর কিল - এ এক গণআন্দোলন দানা বেধে ওঠে । ৪ নভেম্বর ১৯১৮ তারিখে জার্মানির উত্তরানচল ৪০ হাজার সৈন্য ও আন্দোলনরত জনতারা দখল করে ফেলে । এরকম একটা উত্তাল সময়ে ৮ নভেম্বর জেল থেকে ছাড়া পান রোজা । বের হয়েই আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন তিনি । সমমনা সকল বামপন্থী দলগুলো নিয়ে গঠন করেন জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টি । অধিকৃত অঞ্চলে ততকালীন সোভিয়েত আদলে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেন তারা । এদিকে সরকার বিদ্রোহীদের দমন করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয় । ফ্রাইকর্প নামে পরিচিত কট্টর জাতীয়তাবাদী মিলিশিয়াদের লেলিয়ে দেয় তারা । তাদেরই হাতে ১৫ জানুয়ারি ১৯১৯ সালে সপরিবারে রোসা লুক্সেমবার্গ নিহত হন । তার মৃতদেহ পরে নদীতে ফেলে দেয়া হয় ।

বর্তমান রাজনীতিতে প্রভাব

বিপ্লব ব্যর্থ হলেও জার্মানি তথা সারা বিশ্বের বাম রাজনীতিতে রোসা লুক্সেমবার্গ একটি স্মরনীয় নাম । জার্মানির বার্লিন শহরে তার একাধিক স্মৃতিসোধ ও রাজপথের নামকরণ করা হয়েছে । এছাড়াও শহরের প্রানকেন্দ্রে একটি উ-বান (পাতাল রেল) স্টেশন তার নামে নামকরণ করা হয়েছে ।

বহিঃসংযোগ

তথ্যসূত্র

Tags:

রোসা লুক্সেমবুর্গ সংক্ষিপ্ত জীবনীরোসা লুক্সেমবুর্গ রাজনৈতিক জীবন ও দর্শনরোসা লুক্সেমবুর্গ বর্তমান রাজনীতিতে প্রভাবরোসা লুক্সেমবুর্গ বহিঃসংযোগরোসা লুক্সেমবুর্গ তথ্যসূত্ররোসা লুক্সেমবুর্গলুক্সেমবুর্গ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

আবু হানিফাবনলতা সেন (কবিতা)হরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরপ্রিয়তমামানুষকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাইউরো২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপহস্তমৈথুনের ইতিহাসপেপসিমিশরদৈনিক যুগান্তরআয়াতুল কুরসিবাংলাদেশের জনমিতিরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্মবাংলা ভাষা আন্দোলনকালেমাবিড়ালক্রিয়েটিনিনঋগ্বেদবাংলা স্বরবর্ণপদ্মা সেতুমাওয়ালিবাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসসূরা ইয়াসীনজনগণমন-অধিনায়ক জয় হেবাউল সঙ্গীততাপ সঞ্চালনই-মেইলজরায়ুইসলামের ইতিহাসদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচননাহরাওয়ানের যুদ্ধআবু মুসলিমআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসবিষ্ণুবাংলাদেশের বন্দরের তালিকাপুরুষে পুরুষে যৌনতাযতিচিহ্নঅণুজীবউসমানীয় খিলাফতবিন্দুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকানিউমোনিয়াবাঁশরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরজায়েদ খান (বাংলাদেশী অভিনেতা)বিশ্বায়নআল্লাহবাগদাদবীর্যপান (পাতা)ভূগোলবাংলাদেশ সরকারচট্টগ্রাম জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থানক্রিকেটহারুন-অর-রশিদ (পুলিশ কর্মকর্তা)ইশার নামাজবর্তমান (দৈনিক পত্রিকা)বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসজিএসটি ভর্তি পরীক্ষাপশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকাবাংলাদেশের মেডিকেল কলেজসমূহের তালিকামাহিয়া মাহিগ্রামীণ ব্যাংকবাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডমহাদেশটাঙ্গাইল জেলাবাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিচট্টগ্রামনাদিয়া আহমেদশায়খ আহমাদুল্লাহডিপজলচাঁদপুর জেলাদক্ষিণ কোরিয়াইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিসুলতান সুলাইমানময়মনসিংহ🡆 More