রাজা রামমোহন রায় (২২ মে ১৭৭২ – ২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩) একজন ভারতীয় সংস্কারক। তিনি ১৮২৮ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের একটি সামাজিক-ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন ব্রাহ্মসভার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর তাকে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন । রাজনীতি, জনপ্রশাসন, শিক্ষা ও ধর্মের ক্ষেত্রে তার প্রভাব ছিল স্পষ্ট । তিনি সতীদাহ প্রথা এবং বাল্যবিবাহ বাতিলের প্রচেষ্টার জন্য পরিচিত ছিলেন । অনেক ইতিহাসবিদ রামমোহন রায় কে ভারতীয় রেনেসাঁর জনক বলে মনে করেন।
রাজা রামমোহন রায় | |
---|---|
২২ মে ১৭৭২ – সেপ্টেম্বর ২৭, ১৮৩৩ | |
রেমব্রান্ট পিল অঙ্কিত রাজা রামমোহন রায় (১৮৩৩) | |
জন্ম তারিখ | ২২ মে ১৭৭২ |
জন্মস্থান | রাধানগর, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু তারিখ | ২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩ | (বয়স ৬১)
মৃত্যুস্থান | স্ট্যাপলেটন, ব্রিস্টল, ইংল্যান্ড |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
উপাধি | রাজা |
আন্দোলন | বাংলার নবজাগরণ |
প্রধান সংগঠন | ব্রাহ্মসমাজ |
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
স্বাক্ষর |
২০০৪ সালে, বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির জরিপে রামমোহন ১০ম স্থানে ছিলেন।
১৭৭২ সালের ২২শে মে হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে রামমোহন রায়ের জন্ম হয়েছিল। তার পিতার রামকান্ত ছিলেন একজন বৈষ্ণব, যখন তার মা ফুলঠাকুরানী দেবী ছিলেন শৈব পরিবার থেকে। তিনি সংস্কৃত, ফার্সি এবং ইংরেজি ভাষার একজন মহান পণ্ডিত ছিলেন এবং আরবি, ল্যাটিন এবং গ্রীক ভাষাও জানতেন।
পনেরো-ষোলো বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে নানা স্থান ভ্রমণ করেন। কাশীতে ও পাটনায় কিছুকাল অবস্থান করেন। এছাড়া তিনি নেপালে গিয়েছিলেন। এর আগে তার সঙ্গে তন্ত্রশাস্ত্রবেত্তা সুপণ্ডিত নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কারের (পরে হরিহরানন্দ তীর্থস্বামী কুলাবধূত নামে পরিচিত) যোগাযোগ হয়। নন্দকুমারের সহযোগিতায় রামমোহনের সংস্কৃত ভাষায় পাণ্ডিত্য হয়, তার বেদান্তে অনুরাগ জন্মে। ব্রাহ্ম উপাসনালয় প্রতিষ্ঠায় হরিহরানন্দই তার দক্ষিণ-হস্ত ছিলেন। বারাণসী থেকে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার পর তিনি পাটনা থেকে আরবি ও ফারসি ভাষা শেখেন। পরে তিনি ইংরেজি, গ্রিক ও হিব্রু ভাষাও শেখেন।
তরুণ বয়সে তিনি কলকাতায় মহাজনের কাজ করতেন। ১৭৯৬ সালে রামমোহন অর্থোপার্জন শুরু করেন। ১৮০৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী ছিলেন। কলকাতায় প্রায়ই আসতেন এবং কোম্পানির নবাগত অসামরিক কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাদের নানা বিষয়ে সাহায্য করেন। এই সুযোগে ভালো করে ইংরেজি শিখে নেন।
১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রামমোহন কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হন, এখন থেকেই প্রকাশ্যে তার সংস্কার-প্রচেষ্টার শুরু। তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ফারসি ভাষায় লেখা তুহফাতুল মুহাহহিদিন। বইটিতে একেশ্বরবাদের সমর্থন আছে। এরপর একেশ্বরবাদ (বা ব্রহ্মবাদ) প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেদান্ত-সূত্র ও তার সমর্থক উপনিষদগুলি বাংলার অনুবাদ করে প্রচার করতে থাকেন। ১৮১৫ থেকে ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রকাশিত হয় বেদান্তগ্রন্থ, বেদান্তসার, কেনোপনিষদ, ঈশোপনিষদ, কঠোপনিষদ, মাণ্ডূক্যোপনিষদ ও মুণ্ডকোপনিষদ। রক্ষণশীল ব্যক্তিরা তার এ কাজের প্রতিবাদ করেন। 'বেদান্ত গ্রন্থ' প্রকাশের সঙ্গে তিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ একেশ্বর উপাসনার পথ দেখালেন আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করে। এই আত্মীয় সভাকেই পরে তিনি ব্রাহ্মসমাজ নাম ও রূপ দেন। সাহেবদের বাংলা শেখানোর জন্য তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে ব্যাকরণ রচনা করেন।
বেদান্ত-উপনিষদগুলি বের করবার সময়ই তিনি সতীদাহ অশাস্ত্রীয় এবং নীতিবিগর্হিত প্রমাণ করে পুস্তিকা লিখলেন 'প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ'। প্রতিবাদে পুস্তিকা বের হল 'বিধায়ক নিষেধকের সম্বাদ'। তার প্রতিবাদে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুস্তিকা বের হয়। এই বছরেই ডিসেম্বর মাসে আইন করে সহমরণ-রীতি নিষিদ্ধ করা হয়। তবুও গোঁড়ারা চেষ্টা করতে লাগল যাতে পার্লামেন্টে বিষয়টি পুনর্বিবেচিত হয়। এই চেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য রামমোহন বিলেত যেতে প্রস্তুত হলেন। এব্যাপারে তাকে আর্থিক সহায়তা দান করেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। মোঘল সম্রাট ২য় আকবর তার দাবি ব্রিটিশ সরকারের কাছে পেশ করার জন্য ১৮৩০ সালে রামমোহনকে বিলেত পাঠান, তিনি রামমোহনকে রাজা উপাধি দেন।
বেদান্তচন্দ্রিকার প্রতিবাদে রামমোহন ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিচার লিখে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বেদান্ত গ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গে তিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ একেশ্বর উপাসনার পথ দেখান আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করে। এই আত্মীয় সভাকেই পরে তিনি ব্রাহ্মসমাজ নামে নতুন রূপ দেন।
১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর তিনি কলকাতা থেকে বিলেত যাত্রা করেন। দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর তাকে 'রাজা' উপাধি দিয়ে ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে কিছুদিনের জন্য তিনি ফ্রান্সেও গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন আধুনিক ভারতের সমাজ সংস্কারের অন্যতম পথিকৃৎ।
রামমোহন রায় সামাজিক কুফলগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এবং ভারতে সামাজিক ও শিক্ষাগত সংস্কার প্রচারের জন্য আত্মীয় সভা এবং একতাবাদী সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর তিনি কলকাতা থেকে বিলেত যাত্রা করেন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ এপ্রিল রামমোহন লিভারপুলে পৌঁছলেন। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে কিছুদিনের জন্য তিনি ফ্রান্সেও গিয়েছিলেন। সেখানে ফরাসি সম্রাট লুই ফিলিপ কর্তৃক তিনি সংবর্ধিত হন। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে বসবাস করতে থাকেন। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ৮ দিন জ্বরে ভুগে ২৭ সেপ্টেম্বরে মৃত্যবরণ করেন। তার মৃত্যুর দশ বৎসর পর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর 'আনসার ডেল' নামক স্থানে তার সমাধিস্থ করে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেন। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য ব্রিস্টলে তার একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়।
১৯৬৫ সালে বিজয় বোস পরিচালিত ভারতীয় বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র রাজা রামমোহন, প্রধান চরিত্রে বসন্ত চৌধুরী।
১৯৮৮ সালে শ্যাম বেনেগাল প্রযোজিত ও পরিচালিত দূরদর্শন সিরিয়াল ভারত এক খোজ এছাড়াও রাজা রাম মোহন রায়ের উপর একটি পূর্ণাঙ্গ একটি পর্ব চিত্রিত করে । প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিশিষ্ট টিভি অভিনেতা অনঙ্গ দেশাই, উর্মিলা ভাট, টম অল্টার এবং রবি ঝাঁকাল সহ কাস্ট হিসেবে।
১৯৮৪ সালে ভারতের ফিল্ম ডিভিশন পিসি শর্মা পরিচালিত রাজা রামমোহন রায়ের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article রামমোহন রায়, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.