মৌলিক জনন সংখ্যা

রোগবিস্তার বিজ্ঞানের আলোচনায় কোনও রোগ সংক্রমণের মৌলিক জনন সংখ্যা বলতে রোগটি সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনও জনসমষ্টি বা সম্প্রদায়ের সব ব্যক্তি যখন সংক্রমিত হবার ঝুঁকিতে থাকে, তখন একজন সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে সরাসরি আরও কত জন ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে, সেই সংখ্যার প্রত্যাশিত গড় মানকে বোঝায়।

মৌলিক জনন সংখ্যা
মৌলিক জনন সংখ্যা R0 হল একজন সংক্রামক ব্যক্তি থেকে গড়ে আরও কতজন সংক্রামিত হতে পারে, তার সংখ্যা; যেমন ইবোলা রোগের R0 হলো ২, সুতরাং ইবোলাতে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি গড়ে ২ জন ব্যক্তির দেহে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

ইংরেজিতে একে সাঙ্কেতিকভাবে R0 লেখা হয় এবং "আর নট" বা "আর জিরো" উচ্চারণ করা হয়। এই সংজ্ঞাটি এমন একটি অবস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেখানে অন্য কোনও ব্যক্তি এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়নি কিংবা টিকা গ্রহণ করে বা অন্য কোনও স্বাভাবিক উপায়ে অনাক্রম্যতা অর্জন করেনি। কিছু কিছু সংজ্ঞাতে (যেমন অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী) মৌলিক জনন সংখ্যাটির মান তখনই গণনা করতে হয়, যখন রোগ সংবহন প্রক্রিয়া ব্যহত করতে কোনও পরিকল্পিত হস্তক্ষেপমূলক ব্যবস্থা এখনও গৃহীত হয়নি। মৌলিক জনন সংখ্যার সাথে বিদ্যমান জনন সংখ্যার (Effective Reproduction Number) পার্থক্য আছে। বিদ্যমান জনন সংখ্যা (যার সংকেত R) হল কোনও জনসমষ্টির বিদ্যমান বর্তমান অবস্থায় প্রতিটি সংক্রামক ব্যক্তি থেকে সরাসরি নতুন করে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা; বর্তমান অবস্থাতে সবাইকে সংক্রমণমুক্ত হতে হবে না। সংজ্ঞানুযায়ী R0 টিকাদান কর্মসূচির দ্বারা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আরও উল্লেখ্য যে R0 একটি মাত্রাহীন, এককহীন সংখ্যা; এটি সময়ের সাপেক্ষে কোনও কিছুর পরিবর্তনের হার (যেমন দ্বিগুণ হবার সময়) নয়।

অতি-পরিচিত কিছু সংক্রামক রোগের R0 (মৌলিক জনন সংখ্যা)
রোগ সংবহনের পদ্ধতি R0
হাম বায়ুবাহিত ১২–১৮
জলবসন্ত (ভ্যারিসেলা) বায়ুবাহিত ১০–১২
পোলিও মল-থেকে-মুখে ৫–৭
রুবেলা বায়ুবাহিত অতিক্ষুদ্র ফোঁটা ৫–৭
মাম্প্‌স বায়ুবাহিত অতিক্ষুদ্র ফোঁটা ১০–১২
হুপিং কাশি বায়ুবাহিত অতিক্ষুদ্র ফোঁটা ৫.৫
গুটিবসন্ত বায়ুবাহিত অতিক্ষুদ্র ফোঁটা ৩.৫–৬
করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ বায়ুবাহিত অতিক্ষুদ্র ফোঁটা ১.৪–৫.৭
এইচআইভি/এইডস দেহজ রস ২–৫
সার্স বায়ুবাহিত অতিক্ষুদ্র ফোঁটা ২–৫
সর্দি-কাশি বায়ুবাহিত অতিক্ষুদ্র ফোঁটা ২–৩
ডিপথেরিয়া লালারস ১.৭–৪.৩
ইনফ্লুয়েঞ্জা
(১৯১৮ সালের বৈশ্বিক মহামারী প্রজাতি)
বায়ুবাহিত অতিক্ষুদ্র ফোঁটা ১.৪–২.৮
ইবোলা
(২০১৪ সালের ইবোলা প্রাদুর্ভাব)
দেহজ রস ১.৫–২.৫[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ইনফ্লুয়েঞ্জা
(২০০৯ সালের বৈশ্বিক মহামারী প্রজাতি)
বায়ুবাহিত অতিক্ষুদ্র ফোঁটা ১.৪–১.৬
ইনফ্লুয়েঞ্জা
(মৌসুমী ভাইরাস প্রজাতিসমূহ)
বায়ুবাহিত অতিক্ষুদ্র ফোঁটা ০.৯–২.১
মার্স বায়ুবাহিত অতিক্ষুদ্র ফোঁটা ০.৩–০.৮

R0 কোনও রোগসৃষ্টিকারীর জীবাণুর জন্য একটি জীববৈজ্ঞানিক ধ্রুবসংখ্যা নয়, কেননা অন্যান্য অনেক নিয়ামক যেমন পরিবেশগত অবস্থা এবং সংক্রমিত জনসমষ্টির আচরণের উপরেও এটি নির্ভর করে। অধিকন্তু, R0-এর মানগুলি সচরাচর গাণিতিক প্রতিমান বা মডেল থেকে প্রাক্কলন করা হয় এবং এই প্রাক্কলিত মানগুলি ব্যবহৃত প্রতিমান ও এতে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন চলরাশির (প্যারামিটার বা পরামিতি) মানের উপরে নির্ভরশীল। সুতরাং প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রে R0-এর দেয়া মানগুলিকে অবশ্যই যে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে এই মানগুলি নির্ণয় করা হয়েছে, সে ব্যাপারটিকে গণনায় নিতে হবে। প্রচলন উঠে গেছে, এমন মান ব্যবহার করা কিংবা ভিন্ন ভিন্ন প্রতিমান বা মডেলের উপর ভিত্তি করে প্রাপ্ত মান তুলনা করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। কোনও জনসমষ্টি বা সম্প্রদায়ে একটি রোগের সংক্রমণ কত দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে, তা কেবল R0-এর মান দিয়ে বের করা সম্ভব নয়।

R0-এর ব্যবহার এই কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে কোনও প্রদত্ত জনসমষ্টিতে একটি সম্প্রতি-উদ্ভূত সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে কি না এবং রোগটিকে নির্মূল করতে জনসমষ্টির কতটুকু অংশকে টিকাদানের মাধ্যমে অনাক্রম্যতা (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) প্রদান করা যাবে, তা নির্ণয়ে এটি সাহায্য করতে পারে। বহুল প্রচলিত সংক্রমণ প্রতিমান বা মডেলগুলিতে যখন R0-এর মান ১ অপেক্ষা বেশি হয়, তখন সংক্রমণটি জনসমষ্টিতে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে। এর বিপরীতে যদি R0-এর মান ১-এর কম হয়, তাহলে এটি ছড়িয়ে পড়বে না। সাধারণত R0-এর মান যত বড় হবে, সেটির বিস্তার বা মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা ততই কঠিন হবে। সরল প্রতিমানগুলিতে (মডেলগুলিতে) কোনও সংক্রমণের দীর্ঘস্থায়ী বিস্তার প্রতিরোধের লক্ষ্যে কোনও জনসমষ্টির ন্যূনতম যে অংশকে কার্যকরীভাবে অনাক্রম্যতা অর্জন করতে হয় (অর্থাৎ সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিমুক্ত হতে হয়), সেটিকে 1 − 1/R0 অপেক্ষা বেশি হতে হয়। এরূপ একটি স্থানীয় মহামারীর সাম্যাবস্থার (endemic equilibrium) ক্ষেত্রে জনসমষ্টির যে অংশটি সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে, তা হল 1/R0

মৌলিক জনন সংখ্যাটি বেশ কিছু নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয়, যেমন আক্রান্ত রোগীদের সংক্রমণশীলতার স্থায়িত্ব (Duration of infectivity), রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর সংক্রমণ-ক্ষমতা (Infectiousness) এবং আক্রান্ত রোগীরা সম্প্রদায়ের কতজন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির সংস্পর্শে আছে, ইত্যাদি।

তথ্যসূত্র

Tags:

রোগবিস্তার বিজ্ঞান

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

রফিকুন নবীইন্দোনেশিয়াকাজী নজরুল ইসলামতাজমহলঅতিপ্রাকৃত কাহিনীহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরনারী ক্ষমতায়নলোহিত রক্তকণিকামিয়া খলিফাক্রোমোজোমহস্তমৈথুনের ইতিহাসআন্তর্জাতিক নারী দিবসবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমপৃথিবীর বায়ুমণ্ডলইসলাম ও হস্তমৈথুনশর্করাদারাজইফতারপ্রবালপর্তুগালবাংলাদেশ সরকারবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাএস এম শফিউদ্দিন আহমেদগায়ত্রী মন্ত্রএশিয়াঅ্যান্টিবায়োটিক তালিকাসাইবার অপরাধবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহজুবায়ের জাহান খানসহীহ বুখারীবাংলাদেশের স্থল বন্দরসমূহের তালিকামক্কাইব্রাহিম (নবী)সবচেয়ে বেশি গোলকারী ফুটবলারের তালিকাঅন্নপূর্ণা (দেবী)সেশেলস জাতীয় ফুটবল দলপদার্থবিজ্ঞানসূরা কাওসারজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়বলকোষ বিভাজনআল্লাহহিন্দুধর্মআর্যইক্বামাহ্‌সুকুমার রায়মনোবিজ্ঞানইসলামের নবি ও রাসুলগানা ডট কমরোজাম্যানুয়েল ফেরারাফ্রান্সসুরেন্দ্রনাথ কলেজকৃষ্ণগহ্বরবাঘভ্লাদিমির পুতিনমসজিদে নববীদোয়াআলহামদুলিল্লাহপ্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগোলাপনীল বিদ্রোহধানডিম্বাশয়পেশীছবিআবু বকরসোনালী ব্যাংক লিমিটেডগুগলজীববৈচিত্র্যসজনেনেপালআসরের নামাজশয়তানপদার্থের অবস্থাইউক্রেনকুরাসাও জাতীয় ফুটবল দল🡆 More