ফ্রঁসোয়া ওগ্যুস্ত ভিক্তর গ্রিনিয়ার (ফরাসি: Francois Auguste Victor Grignard, ৬ই মে, ১৮৭১, শেরবুর – ১৩ই ডিসেম্বর, ১৯৩৫, লিওঁ) ছিলেন একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফরাসি রসায়নবিদ।
ফ্রঁসোয়া ওগ্যুস্ত ভিক্তর গ্রিনিয়ার | |
---|---|
জন্ম | শেরবুর, ফ্রান্স | ৬ মে ১৮৭১
মৃত্যু | ১৩ ডিসেম্বর ১৯৩৫ লিওঁ, ফ্রান্স |
সমাধি | গিইয়োতিয়ের সমাধিস্থল, লিওঁ |
জাতীয়তা | ফরাসি |
মাতৃশিক্ষায়তন | লিওঁ বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | গ্রিনিয়ার বিক্রিয়া |
দাম্পত্য সঙ্গী | ওগ্যুস্তিন মারি বুলঁ |
সন্তান | রোজ্যর গ্রিনিয়ার |
পুরস্কার | রসায়নে নোবেল পুরস্কার (১৯১২) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | জৈব রসায়ন |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | নঁসি বিশ্ববিদ্যালয় |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | ফিলিপ বার্বিয়ে |
গ্রিনিয়ার ছিলেন একজন পাল প্রস্তুতকারকের পুত্র। তিনি একজন বিনীত এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তিনি গণিতে সাম্মানিক করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রবেশিকা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। এরপর ১৮৯২ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে তালিকাভুক্ত হন। এক বছর চাকরির পরে, গণিত নিয়ে পড়াশুনা করার জন্য আবার তিনি লিওঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গিয়েছিলেন এবং অবশেষে ১৮৯৪ সালে তিনি গণিতে ডিগ্রি লাভ করেন। সেই বছরেরই ডিসেম্বর মাসে, তিনি বিষয় পরিবর্তন করে রসায়নে বিভাগে চলে গিয়েছিলেন এবং অধ্যাপক ফিলিপ বার্বিয়ে (১৮৪৮-১৯২২) ও লুই বুভোর (১৮৬৪-১৯০৯) সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন। ত্রিমাত্রিক রসায়ন এবং এনাইন নিয়ে কাজ করার পরে, গ্রিনিয়ারের এই বিষয়টি পছন্দ হয়নি। তিনি বার্বিয়েকে তার ডক্টরেট পর্যায়ের গবেষণার জন্য নতুন কোন দিক দেখাতে বলেছিলেন। বার্বিয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন যে ব্যর্থ সাইজেফ বিক্রিয়া ম্যাগনেসিয়াম ব্যবহার করার পরে কীভাবে জিংকের সাহায্যে সফল হয়, গ্রিনিয়ার সেটি গবেষণা করুন। তারা অ্যালকাইল হ্যালাইড, অ্যালডিহাইডস, কিটোন এবং অ্যালকেন থেকে অ্যালকোহল সংশ্লেষিত করার চেষ্টা করেছিলেন। গ্রিনিয়ার অনুমান করেছিলেন যে অ্যালডিহাইড / কিটোন ম্যাগনেসিয়ামকে অ্যালকাইল হ্যালাইডের সাথে বিক্রিয়া করতে বাধা দেয়, যেজন্য ফলন কম হয়ে যায়। তিনি প্রথমে অ্যালকাইল হ্যালাইড এবং ম্যাগনেসিয়াম গুঁড়ো নির্জল ইথারের দ্রবণে যুক্ত করে এবং তারপরে অ্যালডিহাইড / কিটোন যুক্ত করে তার অনুমান সঠিক কিনা পরীক্ষা করেছিলেন। এর ফলে বিক্রিয়ার শেষে ফলনে প্রচুর বৃদ্ধি ঘটেছিল
বছর কয়েক পরে গ্রিনিয়ার মধ্যবর্তী অংশটি বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ম্যাগনেসিয়াম গুঁড়ো এবং আইসোবিউটাইল আয়োডাইড গরম করেছিলেন। এরপর তিনি সেই মিশ্রণে শুকনো ইথাইল ইথার যুক্ত করে বিক্রিয়াটি লক্ষ্য করেছিলেন। পণ্যটি গ্রিনিয়ার বিকারক হিসাবে পরিচিত। তার নামে নামকরণ করা এই জৈব-ম্যাগনেসিয়াম যৌগটি (R-MgX) (R = অ্যালকাইল ; X = হ্যালোজেন) সহজেই কিটোন, অ্যালডিহাইড এবং অ্যালকেনের সাথে বিক্রিয়া ঘটিয়ে তাদের নিজ নিজ অ্যালকোহল উৎপাদন করে এবং উৎপাদনের পরিমান যথেষ্ট বেশি। ১৯০০ সালে গ্রিনিয়ার সংশ্লেষাত্মক বিক্রিয়াটি আবিষ্কার করেছিলেন, বর্তমানে এটি তার নাম (গ্রিনিয়ার বিক্রিয়া) দিয়ে পরিচিত। ১৯০১ সালে, গ্রিনিয়ার তেজ স্যুর লে কোঁবিনেজোঁ অর্গানোমাগনেজিয়েন মিক্সত এ ল্যর আপ্লিকাসিওঁ আ দে সাঁতেজ দাসিদ, দালকোল এ দিদ্রোকার্ব্যুর শীর্ষক তার ডক্টরেট অভিসন্দর্ভটি প্রকাশ করেন। ১৯১০ সালে তিনি নঁসি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। ১৯১২ সালে, তিনি এবং পোল সাবাতিয়ে (১৮৫৪-১৯৪১) রসায়নে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি রাসায়নিক যুদ্ধের অন্যতম উপাদানগুলি সম্বন্ধে জর্জ উ্যরবাঁর সঙ্গে সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। বিশেষত ফসজেন উৎপাদন এবং মাস্টার্ড গ্যাস সনাক্তকরণ নিয়ে তিনি শিক্ষালাভ করেছিলেন।১৯১৮ সালে, গ্রিনিয়ার আবিষ্কার করেছিলেন যে মাস্টার্ড গ্যাস শনাক্তকরণে যুদ্ধক্ষেত্রে সোডিয়াম আয়োডাইড ব্যবহার করা যেতে পারে। সোডিয়াম আয়োডাইড মাস্টার্ড গ্যাসকে ডাইআয়োডোডাইইথাইল সালফাইডে রূপান্তরিত করে, যা মাস্টার্ড গ্যাসের চেয়ে সহজে স্ফটিকে রূপান্তরিত হতে পারে। এই পরীক্ষাটি দিয়ে এক ঘনমিটার বায়ুতে ০.০১ গ্রাম মাস্টার্ড গ্যাসও সনাক্ত করা যেতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে তার এই পরীক্ষা সফলভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। জার্মান পক্ষে তার মত বিজ্ঞানী ছিলেন আরেক নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রসায়নবিদ, ফ্রিৎস হেবার।
গ্রিনিয়ার ম্যাগনেসিয়াম ব্যবহার করে কিটোন এবং অ্যালকাইল হ্যালাইডকে যুক্ত করে কার্বন-কার্বন বন্ধন তৈরির একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করার জন্য সবচেয়ে বেশি খ্যাতিলাভ করেছিলেন। এই বিক্রিয়াটি জৈব সংশ্লেষণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত মূল্যবান। এটি দুটি ধাপে ঘটে:
১৮৯২ সালে বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবার অংশ হিসাবে গ্রিনিয়ার ফরাসি সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন। তার প্রথম সময়কালের চাকরীর দুই বছরের মধ্যে তিনি কর্পোরাল পদে উন্নীত হন।১৮৯৪ সালে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং পড়াশুনা এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি লিওঁতে ফিরে আসেন। তিনি লেজিওঁ দনর পদক লাভ করেন এবং ১৯১২ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জনের পরে শেভালিয়ার (সম্মানিত সামরিক পদ) হয়েছিলেন। যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, গ্রিনিয়ার কর্পোরাল পদমর্যাদায় আবার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে সান্ত্রী-দায়িত্বে রাখা হয়েছিল। সেনাধ্যক্ষকে পরিকল্পনা ও প্রশাসনের কাজে সহায়তাকারী কর্মচারীবৃন্দের নজরে না আসা পর্যন্ত তিনি সেখানে বেশ কয়েক মাস কাজ করেছিলেন। উর্ধতনের কাছ থেকে লেজিওঁ দনর পদক খুলে রাখার আদেশ পাওয়া সত্ত্বেও তিনি তার পদকটি খোলেননি। গ্রিনিয়ারকে আরও ভালভাবে দেখার পরে, সেনাধ্যক্ষ সিদ্ধান্ত নেন যে সান্ত্রী-দায়িত্বের চেয়ে গ্রিনিয়ার গবেষণার পক্ষে আরও বেশি উপযুক্ত, সুতরাং তারা তাঁকে বিস্ফোরক বিভাগে নিয়োগ দিয়েছিল। যখন টিএনটি বিষ্ফোরকের উৎপাদন আর বাস্তবোপযোগী ছিলনা, তখন গ্রিনিয়ারকে প্রতিষেধক বিভাগ থেকে রাসায়নিক অস্ত্রের বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়, তার গবেষণার কারণে। শেষ পর্যন্ত গ্রিনিয়ারকে ফরাসি সেনাবাহিনীর জন্য নতুন রাসায়নিক অস্ত্রের গবেষণা করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
টেমপ্লেট:Nobel Prize in Chemistry Laureates 1901-1925 টেমপ্লেট:1912 Nobel Prize winners
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ভিক্তর গ্রিনিয়ার, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.