ভারতীয় পতাকাবিধি (ইংরেজি: Indian flag code) হল ভারতের জাতীয় পতাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া নিয়ম। ভারতীয় মানক ব্যুরো এই পতাকা উৎপাদনের পদ্ধতি ও নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন স্থির করে দিয়েছে। জাতীয় পতাকার উৎপাদনের অধিকার কেবল খাদী উন্নয়ন ও গ্রামীণ শিল্প কমিশ্যন-এর হাতে ন্যস্ত। ১৯৬৮ সালে প্রথমবারের জন্য পতাকাবিধিটি গৃহীত করা হয়েছিল। এই বিধিটি ২০০৮ সালে সংশোধন করা হয়।
২০০২ সালে ভারতীয় পতাকাবিধি গৃহীত করা হয়: Provisions of the Emblems and Names (Prevention of Improper Use) Act, 1950 (No.12 of 1950) ও Prevention of Insults to National Honour Act, 1971 (No. 69 of 1971)। ২০০২ সালের ২৬ জানুয়ারী থেকে ভারতীয় পতাকাবিধি, ২০০২ হিসাবে এই বিধি কার্য্যকারী করা হয়।
ভারতীয় পতাকাবিধি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে :-
ভারতের জাতীয় পতাকা হ’ল মধ্যস্থলে চব্বিশটি দণ্ডযুক্ত নীল "অশোকচক্র" সহ গেরুয়া, সাদা ও সবুজ আনুভূমিক আয়তাকার ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই গণপরিষদর একটি অধিবেশনে এই পতাকার বর্তমান রূপটি ভারত অধিরাজ্যর সরকারী পতাকা হিসাবে গৃহীত হয়েছিল। পরবর্তীকালে ইহা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকার মর্যাদা লাভ করে। ভারতে এই পতাকাকেে সাধারণত "ত্রিরঙ্গা" বা "ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা" বলা হয়। পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়ার দ্বারা অঙ্কিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-এর "স্বরাজ" পতাকার ভিত্তিতে এই পতাকার নক্সা প্রস্তুত করা হয়েছিল।
পতাকা উৎপাদনের জন্য একমাত্র খাদী নামের হস্তচালিত তাঁতবস্ত্র ব্যবহার করা যায়। তুলা, রেশম ও ঊল বাদ দিয়ে অন্য কোনো খাদীর কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। পতাকা উৎপাদনে দুই ধরনের খাদী ব্যবহার করা হয় ; প্রথমটি হ’ল খাদী-বান্টিং, যা দিয়ে পতাকার মূল অংশটি প্রস্তুত করা হয় এবং দ্বিতীয়টি হ’ল পাতলা বাদামী রঙের খাদী-ডাক বস্ত্রখণ্ড, যা পতাকাকেে পতাকাদণ্ডের দড়ির সাথে ধরে রাখে। খাদী-ডাক এক অপ্রচলিত বয়নপদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে তিনটি সূতা একসঙ্গে জালের আকারে বোনা হয়। উল্লেখ্য, প্রচলিত বয়নপদ্ধতিতে দুটি সূতাকে একসঙ্গে বোনা হয়। খাদী-ডাক অত্যন্ত দুর্লভ এক বয়নপদ্ধতি। ভারতে এক ডজনের কম বয়নশিল্পী এই ধরনের বয়নে সক্ষম। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে, প্রতি সেন্টিমিটারে ১৫০টি সূতার বেশি বা কম থাকতে পারবে না, প্রতি সেলাইতে চারটি করে সূতা থাকবে এবং এক বর্গফুট পতাকার ওজন ২৫ গ্রামের বেশি বা কম হওয়া চলবে না।
আকার | দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ (মিঃমিঃ) | অশোক চক্রের আকার (মিঃমিঃ) |
---|---|---|
১ | ৬৩০০ × ৪২০০ | ১২৯৫ |
২ | ৩৬০০ × ২৪০০ | ৭৪০ |
৩ | ২৭০০ × ১৮০০ | ৫৫৫ |
৪ | ১৮০০ × ১২০০ | ৩৭০ |
৫ | ১৩৫০ × ৯০০ | ২৮০ |
৬ | ৯০০ × ৬০০ | ১৮৫ |
৭ | ৪৫০ × ৩০০ | ৯০ |
৮ | ২২৫ × ১৫০ | ৪০ |
৯ | ১৫০ × ১০০ | ২৫ |
২০০২ সালের পূর্বাবধি ভারতের সাধারণ নাগরিকগণ জাতীয় ছুটির দিনগুলির বাইরে অন্য সময়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অধিকারী ছিল না। শিল্পপতি নবীন জিন্দাল পতাকাবিধি ভঙ্গ করে তার কার্য্যালয় ভবনের শীর্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করাতে পতাকাটি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয় যে এই ধরনের বিধি ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। জিন্দাল দিল্লী উচ্চতম ন্যায়ালয়-এ একটি জনস্বার্থ মামলা দাখিল করে। তার বক্তব্য ছিল, পূর্ণ মর্যাদা ও যথাযথ ব্যবহারবিধি অনুসরণ করে জাতীয় পতাকা উত্তোলন তার নাগরিক অধিকারে পড়ে; কারণ এই দেশের প্রতি তার ভালবাসা ব্যক্ত করার এটি একটা উপায়। বিষয়টি দিল্লী উচ্চতম ন্যায়ালয় পর্যন্ত হস্তান্তরিত হলে সর্বোচ্চ আদালত ভারত সরকারকে এই বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি স্থাপনের নির্দেশ দেয়। কেন্দ্রীয় কেবিনেট জাতীয় পতাকাবিধি সংস্কার করে এবং ২০০২ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে সংশোধিত বিধি আরম্ভ হয়। এই নতুন পতাকাবিধি অনুযায়ী মর্যাদা, গৌরব ও সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে যে কোনো নাগরিক বছরের যে কোনো দিনেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারবে। অন্যদিকে, ভারতীয় সংঘ বনাম যশোবন্ত শর্মা বিচারে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় যে, জাতীয় পতাকাবিধি বিধিবদ্ধ আইন না হলেও এই বিধির বিধিনিষেধসমূহ জাতীয় পতাকার গৌরবরক্ষার্থে অবশ্য পালনীয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অধিকার পরম অধিকার নয়; এটি এক অর্জিত অধিকার এবং সংবিধানের ৫১ নং ধারা অনুযায়ী একে মান্য করা উচিত।
ভারতীয় আইন অনুসারে জাতীয় পতাকার ব্যবহার সর্বদা "মর্যাদা, আনুগত্য ও সম্মান" ("dignity, loyalty and respect") সহকারে হওয়া উচিত। "প্রতীক ও নাম (অপব্যবহার রোধ) আইন, ১৯৫০" ("The Emblems and Names (Prevention of Improper Use) Act, 1950") অনুসারে জারি করা "ভারতীয় পতাকা বিধি – ২০০২" ("Flag Code of India – 2002") পতাকার প্রদর্শনী ও ব্যবহার সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশিকা বহন করে। সরকারী বিধিত বলা হয়েছে যে, জাতীয় পতাকা কখনো মাটি বা জলকে স্পর্শ করবে না; একে টেবিলক্লথ হিসাবে বা কোনো প্লেটফর্মের সামনে আচ্ছাদন হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না; জাতীয় পতাকায় কোনো মূর্তি, নামলিপি বা শিলান্যাস প্রস্তর আটকানো যাবে না ইত্যাদি। ২০০৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় পতাকা বস্ত্র, ইউনিফর্ম বা সাজপোশাক হিসাবে ব্যবহার করা যেত না। ২০০৫ সালের ৫ জুলাই সরকার পতাকাবিধি সংশোধন করে বস্ত্র বা ইউনিফর্ম হিসাবে ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করে। যদিও নিম্নাবরণ বা অন্তর্বাস হিসাবে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। এছাড়া, গাড়ির কভার বা ডিঙিত মেরুবা রুমাল জাতীয় পতাকা বা অন্য কোনো প্রতীকচিহ্ন অঙ্কন করা নিষিদ্ধ। ইচ্ছাকৃতভাবে উল্টো অবস্থায় পতাকা উত্তোলন, কোনো পানীয়তে ডুবিয়ে বা উত্তোলনের আগে ফুলের পাপরির বাইরে অন্য কোনো বস্তু তাতে বাঁধা বা পতাকাটিতে কোনো কিছু লেখাও নিষিদ্ধ।
জাতীয় পতাকার ব্যবহার ও প্রদর্শনী সংক্রান্ত একাধিক প্রথা অনুসরণ হয়। মুক্ত আকাশের তলায় সূর্যোদয়ের সময় পতাকা উত্তোলিত হয় এবং সূর্যাস্তের সময় নামিয়ে দেওয়া হয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারী ভবনে রাতেও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের রীতি আছে।
জাতীয় পতাকা কখনও উল্টো অবস্থায় বর্ণনা করা, প্রদর্শিত করা, বা উত্তোলন করা অনুচিত। প্রথা অনুসারে পতাকাটি ৯০ ডিগ্রীর বেশি আবর্তিত করা যায় না। যেকোনো ব্যক্তি পতাকাকেে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত এবং বাঁদিক থেকে ডানদিকে বইয়ের পাতা পড়ার মত "পড়তে" পারে এবং আবর্তিত হওয়ার পর যেন এই বৈশিষ্ট্যের ব্যতিক্রম না হয়। ফাটা-ছেঁড়া বা অপরিষ্কার অবস্থায় পতাকার প্রদর্শনী অপমানজনক। পতাকাদণ্ড বা উত্তোলন দড়ির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য; এগুলি যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হয়।
কোনো স্টেডিয়াম ইত্যাদির দেওয়ালে দুটি পরস্পর অভিমুখী পতাকাদণ্ডে গেরুয়া ভাগটি উপরে রেখে অনুভূমিকভাবে পতাকাদুটিকে পূর্ণ প্রসারিত অবস্থায় প্রদর্শিত করতে হয়। ক্ষুদ্রাকার পতাকাদণ্ডে পতাকা প্রদর্শিত করলে দণ্ডটিকে দেওয়ালে কৌণিকভাবে স্থাপন করে তাকে রুচিসম্মতভাবে টাঙাতে হয়। পরস্পর পাশাপাশি দুটি পতাকাদণ্ডের উপরে দুটি জাতীয় পতাকা একত্রে প্রদর্শিত হলে দণ্ডদুটির অভিমুখ পরস্পরের দিকে রাখতে হয় এবং পতাকাদুটি পূর্ণ প্রসারিত অবস্থায় প্রদর্শিত করতে হয়। জাতীয় পতাকা টেবিল, লেকটার্ন, ষ্টেডিয়াম বা ভবনের আচ্ছাদনরূপে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। এমনকি প্রদর্শনীর খাতিরে রেলিংএ লাগানোও নিষিদ্ধ।
বাইরের অন্যান্য দেশের জাতীয় পতাকার সঙ্গে একসাথে প্রদর্শিত হওয়ার সময়ে পতাকা উত্তোলনের একাধিক রীতি অনুসরণ হয়। বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখা হয় পতাকার সম্মানের প্রতি। এর অর্থ লেটিন বর্ণমালা অনুযায়ী বর্ণানুক্রমে যেদিকে একাধিক দেশের জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত হয় সেদিকে অন্যান্য পতাকার ডানদিকে (দর্শকের বাঁদিকে) রাখা হয় জাতীয় পতাকাকেে। সমস্ত পতাকা যেন সমান আকারের হয় ও কোনো পতাকাই যেন ভারতীয় পতাকা থেকে বড় না হয়, তার প্রতি দৃষ্টি রাখা হয়। প্রত্যেক দেশের পতাকা পৃথক পৃথক পতাকাদণ্ডে থাকে। একটি দণ্ডে একটি পতাকার বাইরে অন্য একটি পতাকার প্রদর্শনী নিষিদ্ধ। অনুমতিক্রমে স্বাভাবিক দেশভিত্তিক বর্ণানুক্রমিক পতাকার সারীর শুরুতে ও শেষে ভারতের পতাকা রাখা যায়। যদি আবদ্ধ বৃত্তে একাধিক জাতীয় পতাকার প্রদর্শনী করতে হয়, তাহলে বৃত্তটি ভারতের পতাকার ঘড়ির কাঁটার অভিমুখে আরম্ভ করতে হয়; অন্যান্য পতাকা ভারতীয় পতাকার পর থাকে এবং শেষের পতাকাটি ভারতীয় পতাকার শেষে থাকে। ভারতের জাতীয় পতাকা সর্বাগ্রে উত্তোলিত ও সর্বশেষে অবনমিত হয়।
পরস্পরর পাশাপাশি হয়ে অন্য জাতীয় পতাকার সঙ্গে প্রদর্শিত হওয়ার সময়ে ভারতের জাতীয় পতাকার সম্মুখভাগ এবং অন্য পতাকার ডানদিকে (দর্শকর বাঁদিকে) স্থাপিত হয়। অবশ্য রাষ্ট্রসংঘের পতাকার ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকাকেে উভয় দিকেই রাখা যায়। সাধারণভাবে সম্মুখ অভিমুখে সর্ব দক্ষিণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের রীতি আছে।
কর্পোরেট পতাকা বা বিজ্ঞাপনর বেনার জাতীয় অন্যান্য পতাকার সঙ্গে একসাথে প্রদর্শিত করতে হলে, পতাকাবিধি অনুযায়ী, পতাকাসমূহ পৃথক পৃথক দণ্ডে স্থাপন করার নিয়ম আছে; ভারতের জাতীয় পতাকা সেই ক্ষেত্রে এই পতাকাসমূহের মধ্যস্থলে অথবা দর্শকের দৃষ্টির থেকে সর্বদিকে অথবা পতাকামণ্ডলীতে অন্য পতাকার তুলনায় অন্ত:ত এক পতাকা-প্রস্থ উচ্চতায় প্রদর্শিত হয়। জাতীয় পতাকার দণ্ড এই মণ্ডলীতে সবগুলির আগে থাকে। যদি একটি পতাকাদণ্ডে সবগুলি পতাকা প্রদর্শিত করতে হয়, তবে জাতীয় পতাকা সবচেয়ে উপরে থাকে। অন্যান্য পতাকার সঙ্গে শোভাযাত্রার সময়ে ব্যবহৃত হলে, জাতীয় পতাকা শোভাযাত্রার সামনে অথবা সমাভিমুখী পতাকার সারিতে ব্যবহৃত হলে শোভাযাত্রার ডানদিকে অবস্থান করে।
কোনো সভাকক্ষে সভানুষ্ঠান বা অন্য কোনো প্রকার অন্তর্দ্বার জনসমাবেশের সময় বিধি অনুসারে পতাকাটি ডানদিকে (দর্শকের বাঁদিকে) রাখতে হয়। অর্থাৎ, সভাকক্ষে বক্তার কাছে প্রদর্শিত করতে হলে একে বক্তার ডানদিকে রাখতে হয়। অন্য সময়ে এটিকে শ্রোতার ডানদিকে রাখতে হয়। পতাকাটির গেরুয়া রং শীর্ষে রেখে পূর্ণ প্রসারিত অবস্থায় প্রদর্শিত করা হয়। ষ্টেডিয়ামের দেওয়ালে লম্বভাবে প্রদর্শিত করতে হলে গেরুয়া ভাগটিকে দর্শকের দৃষ্টি অনুযায়ী বাঁদিকে রাখা হয়; ও পতাকার দড়িটি শীর্ষে স্থাপন করা হয়।
অন্য পতাকার সঙ্গে কোনো শোভাযাত্রা বা কুচকাওয়াজ করতে হলে জাতীয় পতাকাকে অন্য পতাকার মাঝে বা ডানদিকে আলাদাভাবে রাখা হয়। মূর্তি, স্মৃতিস্তম্ভ বা নামলিপি উন্মোচনের অঙ্গ হিসাবে একে ব্যবহার করা যায় না। জাতীয় পতাকার দ্বারা এটিকে ঢাকাও যায় না। পতাকার সম্মানের অঙ্গ হিসাবে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সন্মুখে একে অবনত করা যায় না, রেজিমেন্টাল পতাকা বা প্রতিষ্ঠানিক পতাকা সম্মান প্রদর্শনের অঙ্গ হিসাবে অবনত করা হতে পারে।
পতাকা উত্তোলন বা অবনমন অনুষ্ঠানের সময়, অথবা কুচকাওয়াজ বা রিভিউর সময়, উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে পতাকার দিকে মুখ করে উঠে দাঁড়াতে হয়। পদমর্যাদা থাকা ব্যক্তিদেরকে যথাবিধি অভিবাদন জানানো হয়। পতাকার সারি ব্যবহৃত হলে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে পতাকাসমূহ পার হওয়ার সময় উঠে দাড়িয়ে সম্মান বা অভিবাদন জানাতে হয়। যেকোনো পদাধিকারী সেলুট না জানালে অভিবাদন গ্রহণ করা যায় না। জাতীয় সংগীত বাজাবার পরেই পতাকা অভিবাদন অনুষ্ঠিত হয়।
কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও লেফট্যানেন্ট গভর্নরগণ, মুখ্যমন্ত্রীগণ, কেবিনেট মন্ত্রীগণ এবং ভারতীয় সংসদ ও রাজ্য বিধানসভার জুনিয়র কেবিনেট সদস্যগণ, লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষগণ, রাজ্যসভা ও রাজ্য বিধানপরিষদের চেয়ারমেনগণ, দিল্লী উচ্চতম ন্যায়ালয় ও উচ্চ ন্যায়ালয়ের বিচারপতিগণ ও সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর ফ্লেগ-রেঙ্ক আধিকারিকবৃন্দ নিজের যানবাহনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অধিকারী। তারা যখনই প্রয়োজন বোধ করবেন, তখনই তাদের গাড়ীতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে পতাকাটি একটি পতাকাদণ্ডে গাঁথা থাকে। দণ্ডটি বনেটের সামনে-মধ্যদিকে অথবা গাড়ীর সামনে-ডানদিকে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। যখন সরকারী গাড়ীতে কোনো বিদেশী পদাধিকারী ভ্রমণ করেন, তখন তার দেশের পতাকা গাড়ীর সামনে-আগে এবং ভারতের জাতীয় পতাকা গাড়ীর সামনে-ডানদিকে প্রদর্শিত হয়।
রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী বিদেশ ভ্রমণে গলে তাদের বিমানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। যে দেশে ভ্রমণ করতে যাওয়া হয়, সেই দেশের জাতীয় পতাকাও বিমানে উত্তোলন করা হয়। তথাপি মধ্যে অন্য কোনো দেশে অবতীর্ণ হলে সৌজন্য স্মারক হিসাবে সেই দেশের জাতীয় পতাকাও উত্তোলনের রীতি আছে। রাষ্ট্রপতি দেশের মধ্যে কোনো স্থানে ভ্রমণে গেলে বিমানের যে দিক দিয়ে ওঠা নামা করেন সেইদিকে জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত হয়। রাষ্ট্রপতি যখন বিশেষ রেলে দেশর কোনো স্থানে যান, তখন ড্রাইভার ইঞ্জিনে যে স্টেশনের-প্লেটফর্ম থেকে ট্রেনটি ছাড়ছে সেই দিকে মুখ করে জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত করে। বিশেষ ট্রেনটি যখন নিশ্চল অবস্থায় থাকে বা কোনো স্টেশনে ঢোকার জন্য প্রবেশ করে কেবল তখন জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত হয়।
কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকা অনুসারে শোকের চিহ্ন হিসাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার রীতি আছে; রাষ্ট্রপতি সেইক্ষেত্রে শোককালীন সময়সীমাও নির্ধারিত করে দেন। অর্ধনমিত করার আগে পতাকাটি একবার সম্পূর্ণভাবে উত্তোলিত করা হয়। আর সূর্যাস্তর সময়ে অবনমিত করার আগেও এবার সম্পূর্ণ উত্তোলিত করে তারপর অবনমিত করা হয়। কেবলমাত্র জাতীয় পতাকাটি অর্ধনমিত করা হয়; অন্যান্য পতাকা স্বাভাবিক উচ্চতায় থাকে।
রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে সমগ্র দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে রাখা হয়। লোকসভার অধ্যক্ষ ও উচ্চতম ন্যায়ালয়ের প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে দিল্লীতে ও কোনো কেন্দ্রীয় কেবিনেট মন্ত্রীর মৃত্যুতে দিল্লী ও রাজ্যের রাজধানীতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে রাখা হয়। রাষ্ট্রমন্ত্রীদের মৃত্যুতে দিল্লীতেপতাকা অর্ধনমিত করে রাখা হয়। রাজ্যপাল, লেফটেনেন্ট গভর্নর ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মৃত্যুতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে রাখা হয়।
এছাড়া, কোনো পদাধিকারীর মৃত্যুসংবাদ এলে যদি পরদিন সূর্যোদয়র আগে অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন না হয় তবে পরদিন থেকে জাতীয় পতাকা উপরে উল্লিখিত স্থানকাল অনুসারে অর্ধনমিত থাকে। অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া স্থলে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে রাখা হয়।
গণতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস, গান্ধী জয়ন্তী ও জাতীয় সপ্তাহ (৬-১৩ এপ্রিল), রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস বা ভারত সরকার নির্ধারিত অন্য কোনো জাতীয় উৎসবের দিন কেবলমাত্র মৃতের শরীর যে ভবনে সুরক্ষিত থাকে সেই ভবন বাদে অন্য কোনো স্থানে অর্ধনমিত রাখা হয় না। এই ক্ষেত্রে শরীর ভবনের থেকে অপসৃত হলে পতাকা সম্পূর্ণরূপে উত্তোলন করা হয়।
কোনো স্বতন্ত্র ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের নির্দেশ অনুসারে বিদেশী পদাধিকারীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হতে পারে। যদিও, কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানের মৃত্যুর পর উপরে উল্লেখিত দিনগুলিতে ভারতীয় দূতাবাস জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারে।
রাষ্ট্রীয়, সামরিক বা কেন্দ্রীয় অর্ধসামরিক বাহিনীর অন্ত্যেষ্টিতে মৃতদেহ বা কফিনের উপর আচ্ছাদিত করা হয়। গেরুয়া রংটি মৃতদেহ বা কফিনের উপরদিকে থাকে। তথাপি পতাকাটি কবরস্থ বা চিতাতে ভষ্ম করা যায় না।
জাতীয় পতাকা ক্ষতিগ্রস্থ হলে বা অপরিষ্কার হলে, একে ফেলে দেওয়া বা অমর্যাদায় নষ্ট করা যায় না। একে লোকচক্ষুর অন্তরালে পুড়িয়ে বা পতাকার মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্য কোনো পন্থায় নষ্ট করা হয়। এর বাইরেও গঙ্গাতে বিসর্জন দেওয়া হয় বা সসম্মানে কবরস্থ করেও একে বিনষ্ট করা যায়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ভারতীয় পতাকাবিধি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.