বালুচ বা বেলুচ (বেলুচি: بلۏچ) হল একটি পশ্চিম ইরানীয় জাতিগোষ্ঠী। যারা প্রধানত বেলুচিস্তান অঞ্চলে বাস করে। বেলুচিস্তান ইরানী মালভূমির দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত যা পাকিস্তান, ইরান এবং আফগানিস্তানকে একত্র করেছে। এছাড়াও ভারত, তুর্কমেনিস্তান এবং আরব উপদ্বীপে কিছু বালুচ প্রবাসী রয়েছে।
بلۏچ | |
---|---|
মোট জনসংখ্যা | |
১০ মিলিয়ন | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
পাকিস্তান | ৬.৮ মিলিয়ন (২০১৭) |
ইরান | ১.৫ - ২ মিলিয়ন |
ওমান | ৫০০,০০০ |
সংযুক্ত আরব আমিরাত | ৪৬৮,০০০ |
আফগানিস্তান | ৫০০,০০০ |
তুর্কমেনিস্তান | ১০০,০০০ |
ভাষা | |
বালুচী ও ব্রাহুই দ্বিতীয় ভাষা পশতু (আফগানিস্তানে), ফার্সি (ইরানে), উর্দু (পাকিস্তানে) | |
ধর্ম | |
সংখ্যাগরিষ্ঠ : ইসলাম সংখ্যালঘু : হিন্দুধর্ম | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
ইরানি জাতি |
বালুচ জনগণ প্রধানত বেলুচি ভাষায় কথা বলে। এটি একটি উত্তর-পশ্চিম ইরানীয় ভাষা। অধিকাংশ বালুচ পাকিস্তানের বেলুচিস্তান বসবাস করে। মোট বালুচ জনসংখ্যার প্রায় ৫০% বেলুচিস্তানে বসবাস করে। এর মধ্যে ৪০% সিন্ধুতে বসতি স্থাপন করেছে এবং একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা পাকিস্তানী পাঞ্জাবে বাস করে। তারা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩.৬% এবং ইরান ও আফগানিস্তানের জনসংখ্যার প্রায় ২%।
'বেলুচ' শব্দের সঠিক উৎপত্তি অস্পষ্ট।
কিছু লেখক সংস্কৃত শব্দ bal , যার অর্থ শক্তি এবং och অর্থ উচ্চ বা মহৎ থেকে উদ্ভূত হওয়ার কথা বলেন। বেলুচদের একটি প্রাচীনতম সংস্কৃত রেফারেন্স হতে পারে গুর্জরা-প্রতিহার শাসক মিহির ভোজ গোয়ালিয়র শিলালিপি (আর. ৮৩৬-৮৮৫), যা বলে যে রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নাগভট প্রথম ভালচা ম্লেচাসের একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করেছিলেন। প্রশ্নবিদ্ধ সেনাবাহিনী সিন্ধু বিজয়ের পর উমাইয়া খিলাফতের।
বালুচ লোকসাহিত্য অনুসারে তাদের পূর্বপুরুষরা বর্তমান সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে বেলুচিস্তানে এসেছিলেন। তারা নিজেদের নবী মুহাম্মাদ সা.-এর চাচা আমীর হামজার রা. বংশধর বলে দাবি করেন। যাঁর বংশধরেরা আলেপ্পোয় বসতি স্থাপন করেছিল। ৬৮০ সালে কারবালায় দ্বিতীয় উমাইয়া খলিফা ইয়াজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর আমীর হামজার রা. বংশধররা মধ্য কাস্পিয়ান অঞ্চলের পূর্ব বা দক্ষিণ-পূর্বে দিকে, বিশেষ করে ইরানের সিস্তানের দিকে চলে যায়।
বালুচী ভাষার ভাষাগত সংযোগের বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে অনেকে বলেন যে, বালুচী ভাষা পশ্চিম ইরানী ভাষাগুলির মধ্যে একটি। তাই বালুচ উপজাতিদের আদি বাসভূমি সম্ভবত মধ্য কাস্পিয়ান অঞ্চলের পূর্ব বা দক্ষিণ-পূর্বে ছিল। সাসানীয় যুগের শেষভাগে বিশেষ কারণে বালুচরা পূর্ব দিকে অভিবাসন শুরু করে এবং এই অভিবাসন কয়েক শতাব্দী ধরে ঘটেছে।
৯ম শতাব্দীর আরব লেখকরা বালুচদের বর্তমান পূর্ব ইরানের কেরমান, খোরাসান, সিস্তান এবং মাক্রানের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী বলে উল্লেখ করেছেন। এসব অঞ্চলে তারা ভেড়ার পাল লালনপালন করত এবং সুযোগ পেলে মরুভূমির যাত্রীদের লুণ্ঠন করত। এক সময় তারা গজনভী এবং সেলজুকদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে তারা তাদের পূর্বমুখী অভিবাসন অব্যাহত রাখে, যা তাদের বর্তমানে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে নিয়ে আসে। অনেক গবেষকের মতে, বেলুচিস্তানের জলবায়ু অধিক ঠাণ্ডা হওয়ার কারণে ১৩০০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে বালুচরা এবং সিন্ধু ও পাঞ্জাবে চলে আসে এবং সেখানে বসতি স্থাপন করেছিল।
বালুচ উপজাতিরা যে অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল তা পারস্যের সাফাভী সাম্রাজ্য এবং মুঘল সম্রাটদের মধ্যে বিরোধপূর্ণ অঞ্চল ছিল। যদিও মুঘলরা এই এলাকার পূর্ব অংশের উপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল। ১৭ শতকেরর মধ্যে মীর হাসান নামে একজন উপজাতীয় নেতা নিজেকে প্রথম "বালুচদের খান" হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ১৬৬৬ সালে মীর আহমাদ খান কামবারানি তার স্থলাভিষিক্ত হন, যিনি আহমদজাই রাজবংশের অধীনে কালাতের বেলুচি খানাত প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৩৯ সালে মুঘলদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে কালাত খানাত তার স্বায়ত্তশাসন হারায় এবং এই অঞ্চলটি কার্যকরভাবে ব্রিটিশ রাজের অংশ হয়ে যায়।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলে বেলুচিস্তান স্বাধীন পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়। তবে বালুচদের কিছু ক্ষু্দ্র দল অনেক আগ থেকেই বালুচ অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো নিয়ে স্বাধাীন বেলুচিস্তান গঠনের উদ্দেশ্য আন্দোলন করে আসছে।
পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ বালুচ জনগণ সুন্নি মুসলমান। তাদের প্রায় ৬৪.৭৮% দেওবন্দী আন্দোলনের সাথে, ৩৩.৩৮% বেরেলভি আন্দোলনের সাথে এবং ১.২৫% আহলে হাদিস আন্দোলনের সাথে জড়িত। মাত্র ০.৫৯% বেলুচ শিয়া ইসলামের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ৮০০,০০ পাকিস্তানি বালুচি জিকরি সম্প্রদায়কে অনুসরণ করে বলে অনুমান করা হয়। অল্প সংখ্যক বুগতি গোত্রের বালুচ অমুসলিম। তাদের মধ্যে কিছু হিন্দু ও শিখ সদস্য রয়েছে। এছাড়াও বেজেঞ্জো, মারি, রিন্দ এবং অন্যান্য বেলুচ উপজাতিতে কিছু হিন্দু রয়েছে। ভাগনারীরা ভারতে বসবাসকারী একটি হিন্দু বালুচ সম্প্রদায়, যারা তাদের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ বেলুচিস্তান থেকে দেশভাগের সময় ভারতে চলে আসে।
সোনার অলঙ্কার, যেমন: নেকলেস ও ব্রেসলেট পরিধান করা বেলুচ মহিলাদের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের গহনার সবচেয়ে পছন্দের জিনিসগুলির মধ্যে একটি হল ডর। এটি এক ধরনের ভারী কানের দুল, যা সোনার চেইন দিয়ে মাথায় বেঁধে দেওয়া হয় যেন ভারী ওজন কানের ক্ষতি না করে। তারা সাধারণত একটি সোনার ব্রোচ (তাসনি ) পরে থাকে, যা স্থানীয় জুয়েলারীদের দিয়ে বিভিন্ন আকারে তৈরি করা হয়। এটি পোশাকের দুটি অংশ বুকের উপর একসাথে বেঁধে রাখতে ব্যবহৃত হয়।
প্রাচীনকালে বিশেষ করে প্রাক-ইসলামী যুগে বেলুচ মহিলাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ এবং লোকগান গাওয়ার সাধারণ রেওয়াজ ছিল। একজন বেলুচ মায়ের ঐতিহ্য প্রাচীনকাল থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্মে জ্ঞান স্থানান্তরের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বেলুচদের নিজস্ব পোশাকের স্টাইল ছাড়াও দেশীয় ও স্থানীয় রীতিনীতিও বেলুচদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২ মার্চ বেলুচ জনগণ তাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাস চর্চার অংশ হিসেবে বার্ষিক বেলুচ সংস্কৃতি ও ইতিহাস দিবস অত্যন্ত উৎসবের সাথে উদযাপন করে।
ঐতিহ্যগতভাবে ১২ শতকে জালাল খান প্রথম বেলুচি কনফেডারেসির শাসক এবং প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। জালাল খান চার ছেলে ও এক মেয়ে রেখে যান: রিন্দ খান, লাশার খান, হোত খান, কোরা খান এবং এক বিবি জাতো। বিবি জাতো তার ভাগ্নে মুরাদকে বিয়ে করেছিলেন।
২০০৮ সালের হিসাবে অনুমান করা হয় যে, আফগানিস্তান, ইরান এবং পাকিস্তানে ৮ থেকে ৯ মিলিয়ন বেলুচ লোক বাস করে এবং তারা ১৩৯ টিরও বেশি উপজাতিতে বিভক্ত। কিছু অনুমান মতে, তারা ১৫০ টিরও বেশি শাখায় বিভক্ত।তামান নামে পরিচিত উপজাতিদের নেতৃত্ব দেন তুমান্দার হিসেবে পরিচিত একজন উপজাতি প্রধান এবং প্যারা নামে পরিচিত উপজাতিদের নেতৃত্বে দেন মুকদ্দাম হিসেবে পরিচিত একজন উপজাতি প্রধান।
পাঁচটি বেলুচ উপজাতি জালাল খানের সন্তানদের থেকে তাদের নাম নিয়েছে। এরা হয়তো তাদের প্রকৃত বংশোদ্ভূত অথবা ঐতিহাসিক উপজাতীয় আনুগত্যের উপর ভিত্তি করে তাদের এভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
পাকিস্তানের ডেরা বুগতি জেলায় ১৮০,০০০ জন বুগতি রয়েছে। তারা রাহিজা বুগতি, মাসোরি বুগতি, কালপার বুগতি, মারেহতা বুগতি এবং অন্যান্য উপ-উপজাতির মধ্যে বিভক্ত।
নবাব আকবর খান বুগতি ২০০৬ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তুমান্দার হিসেবে বুগতির নেতৃত্ব দেন। তালাল আকবর বুগতি ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উপজাতীয় নেতা এবং জামহুরি ওয়াতান পার্টির সভাপতি ছিলেন।
কোহলো জেলায় ৯৮,০০০ জন মারি রয়েছে। তারা নিজেদেরকে আরো বিভক্ত করে গজনি মারি, বেজারানি মারি এবং জারকন মারি হিসেবে পরিচিত করে
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article বালুচ জাতি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.