বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ (আরবি: بيت المكرَّم الوطني مسجد) বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ। মসজিদটি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে অবস্থিত। ১৯৬৮ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। তৎকালীন পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গৃহীত হয়। মসজিদে একসাথে ৩০,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে, ফলে ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম মসজিদ। তবে মসজিদটিতে জুমার নামাজ ছাড়াও বিশেষত রমজানের সময় অত্যধিক মুসল্লির সমাগম হয় বিধায়, বাংলাদেশ সরকার মসজিদের ধারণক্ষমতা ৪০ হাজারে উন্নিত করে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ

স্থানাঙ্ক: ২৩°২৬′ উত্তর ৯০°১৪′ পূর্ব / ২৩.৪৩° উত্তর ৯০.২৪° পূর্ব / 23.43; 90.24
অবস্থান বাংলাদেশ ঢাকা, বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠিত ১৯৬০
প্রশাসন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার
মালিকানা সরকারি
পরিচালনা সিনিয়র ইমাম:
হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান

ইমাম:
হাফেজ মাওলানা মুফতি মহিবুল্লাহিল বাকী নাদভী
ইমাম:
হাফেজ মাওলানা মুফতি এহসানুল হক জিলানী
ইমাম:
হাফেজ মাওলানা মুফতি মহিউদ্দীন কাসেমী

প্রধান মুয়াযযিন:
ক্বারী মাওলানা কাজী মাসুদুর রহমান
মুয়াযযিন:
ক্বারী মাওলানা হাবীবুর রহমান মেশকাত
মুয়াযযিন:
ক্বারী মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক


স্থাপত্য তথ্য
নির্মাতা টি আব্দুল হুসেন থারিয়ানি
ধরন ইসলামিক স্থাপত্য
ধারণক্ষমতা ৪০,০০০
আয়তন ২৬৯৪.১৯ বর্গ মিটার
উচ্চতা (সর্বোচ্চ) ৩০.১৮ মিটার

ইতিহাস

আব্দুল লতিফ ইব্রাহিম বাওয়ানি প্রথম ঢাকাতে বিপুল ধারণক্ষমতাসহ একটি বৃহত্তর মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। ১৯৫৯ সালে ‘বায়তুল মুকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠনের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মিলনস্থলে মসজিদটির জন্য ৮.৩০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। স্থানটি নগরীর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র থেকেও ছিল নিকটবর্তী। সেই সময় মসজিদের অবস্থানে একটি বড় পুকুর ছিল। যা 'পল্টন পুকুর' নামে পরিচিত ছিল। পুকুরটি ভরাট করে ২৭ জানুয়ারি ১৯৬০ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান মসজিদের কাজের উদ্ভোধন করেন।

সিন্ধুর বিশিষ্ট স্থপতি আব্দুল হুসেন থারিয়ানিকে মসজিদ কমপ্লেক্সটির নকশার জন্য নিযুক্ত করা হয়। পুরো কমপ্লেক্স নকশার মধ্যে দোকান, অফিস, গ্রন্থাগার ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার পর শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারি ১৯৬৩ সালে প্রথমবারের জন্য এখানে নামাজ পড়া হয়।

১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। বর্তমানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদটি আটতলা। নিচতলায় রয়েছে বিপণিবিতান ও একটি বৃহত্তর অত্যাধুনিক সুসজ্জিত মার্কেট কমপ্লেক্স। দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ পড়া হয়।

২০০৮ সালে সৌদি সরকারের অর্থায়নে মসজিদটি সম্প্রসারিত করা হয়। বর্তমানে এই মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

স্থাপত্যশৈলী

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ 
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের অবকাঠামো মক্কা শরীফের কাবার মত
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ 
মসজিদের ভিতর

এই মসজিদটিতে মুগল স্থাপত্যশৈলীর ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি বেশ কিছু আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনও রয়েছে। মক্কাতে অবস্থিত পবিত্র কাবাঘরের অনুরূপে তৈরিকৃত বায়তুল মোকাররমের বৃহৎ ঘনক্ষেত্রটি একে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছে। যা এই মসজিদটিকে বাংলাদেশের অন্য যেকোন মসজিদ থেকে আলদা করেছে।

বহিঃনকশা

মসজিদটি খুব উঁচু, মসজিদের প্রধান ভবনটি আট তলা এবং মাটি থেকে ৩০.১৮ মিটার বা ৯৯ ফুট উঁচু। প্রধান ভবনটির রং সাদা। মূল নকশা অনুযায়ী, মসজিদের প্রধান প্রবেশপথ পূর্ব দিকে হওয়ার কথা। পূর্ব দিকের সাহানটি ২৬৯৪.১৯ বর্গ মিটারের। এর দক্ষিণ ও উত্তর পার্শ্বে ওযু করার জন্য জায়গা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে, মসজিদে প্রবেশ করার বারান্দার উপর দুটি ছোট গম্বুজ নির্মাণের মাধ্যমে প্রধান ভবনের উপর গম্বুজ না থাকার অভাবকে ঘোচানো হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ নকশা

মসজিদে প্রবেশ করার বারান্দাগুলিতে তিনটি অশ্বখুরাকৃতি খিলানপথ রয়েছে, যার মাঝেরটি পার্শ্ববর্তী দুটি অপেক্ষা বড়। দুটি উন্মুক্ত অঙ্গন (ছাদহীন ভিতরের আঙ্গিনা) প্রধান নামাজ কক্ষে আলো ও বাতাসের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিন দিকে বারান্দা দ্বারা ঘেরা প্রধান নামাজ কক্ষের মিহরাবটির আকৃতি আয়তাকার, যার আয়তন ২৪৬৩.৫১ বর্গ মিটার। সমগ্র মসজিদ জুড়েই অলংকরণের আধিক্যকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

বাগান

মসজিদের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে বাগান। বাগানটি মুঘল শৈলীতে স্থাপন করা।

মসজিদ ভবন

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ 
মূল ভবন

বায়তুল মোকাররম মসজিদটি ৮ তলা। নীচতলায় রয়েছে বিপণী বিতান ও বিশাল মার্কেট। দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ পড়া হয়। বর্তমানে মূল মসজিদ এবং উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব সাহান মিলিয়ে সর্বমোট ৪০ সহস্রাদিক মুসল্লী একত্রে নামায আদায় করতে পারেন। মসজিদের অভ্যন্তরে ওযুর ব্যবস্থাসহ মহিলাদের জন্য পৃথক নামায কক্ষ ও পাঠাগার রয়েছে। ১ম তলার আয়তন ২৬,৫১৭ বর্গফুট, দ্বিতীয় তলার আয়তন ১০,৬৬০ বর্গফুট, তৃতীয় তলার আয়তন ১০,৭২৩ বর্গফুট, চতুর্থ তলার আয়তন ৭৩৭০ বর্গফুট, পঞ্চম তলার আয়তন ৬,৯২৫ বর্গফুট এবং ষষ্ঠ তলার আয়তন ৭৪৩৮ বর্গফুট। জুম্মা ও ঈদের সময় বাড়তি ৩৯,৮৯৯ বর্গফুটে নামাজ পড়া হয়। মহিলাদের ৬,৩৮২ বর্গফুটের নামাজের জায়গা রয়েছে, যা মসজিদের তিনতলার উত্তর পাশে অবস্থিত। পুরুষদের ওজুখানার জন্য ব্যবহৃত হয় ৬,৪২৫ বর্গফুট। মহিলাদের ওজুখানার জন্য ব্যবহৃত হয় ৮৮০ বর্গফুট। মসজিদের প্রবেশ পথটি রাস্তা হতে ৯৯ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ 
সম্প্রসারিত অংশ

পর্যটক

প্রতি শুক্রবারে দূরদুরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে এই মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতে। অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটক বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ দর্শন করতে আসে প্রতিদিন।

খতিব

খতিবদের তালিকা
ক্রমিক নং নাম মন্তব্য
মাওলানা আব্দুর রহমান কাশগরি (জন্ম: ১৯১২ সন - ইন্তেকাল : ১৯৭১ সন)
মাওলানা ক্কারী উসমান মাদানী ( ইন্তেকাল : ১৯৬৪ সন )
মুফতী সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান বারকাতী (জন্ম: ১৯১১ সন - ইন্তেকাল : ১৯৭৪ সন)
মুফতি মাওলানা আব্দুল মুইজ ( জন্ম : ১৯১৯ সন - ইন্তেকাল : ১৯৮৪ সন )
মাওলানা উবায়দুল হক ( জন্ম: ১৯২৮ সন - ইন্তেকাল : ২০০৭ সন)
হাফেজ মুফতি মোহাম্মদ নূরুদ্দীন (জন্ম: ১৯৫৪ সন - ইন্তেকাল : ২০০৯ সন) ভারপ্রাপ্ত
প্রফেসর মাওলানা মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ( জন্ম: ১৯৪৪- ইন্তেকাল: ২০২২ সন )

রুহুল আমিন

সর্বশেষ হালনাগাদকরণ: ৩১ মার্চ ২০২২ (বিষয়শ্রেণী)

চিত্রশালা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ইতিহাসবায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ স্থাপত্যশৈলীবায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মসজিদ ভবনবায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ পর্যটকবায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ খতিববায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ চিত্রশালাবায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ আরও দেখুনবায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ তথ্যসূত্রবায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ বহিঃসংযোগবায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদআরবি ভাষাবাংলাদেশবাংলাদেশ সরকার

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাআলি২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকালীলুয়ান্ডাভাইরাসনিষ্ক্রিয় গ্যাসওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েববিজ্ঞানমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমতাপমাত্রাপৃথিবীউসমানীয় সাম্রাজ্যপীযূষ চাওলাজার্মানিআমার দেখা নয়াচীনক্রিয়াপদবাংলাদেশের অর্থনীতিবাংলাদেশের উপজেলার তালিকাপুণ্য শুক্রবারডিএনএআশারায়ে মুবাশশারাযিনাস্বাধীনতা দিবস (ভারত)মার্চপর্যায় সারণিবাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের তালিকামানব দেহপূরণবাচক সংখ্যা (ভাষাতত্ত্ব)টেলিটকঅরবিন্দ কেজরীওয়ালব্যাকটেরিয়াতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়পিংক ফ্লয়েডতুরস্কষাট গম্বুজ মসজিদশীর্ষে নারী (যৌনাসন)সেন্ট মার্টিন দ্বীপবাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীমাহদীমহাসাগরলোকসভাজাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদইব্রাহিম (নবী)জলাতংকতথ্যভারতের সংবিধানআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলসৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতাজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়দুরুদকানাডাবাংলার ইতিহাসআংকর বাটত্বরণরক্তের গ্রুপফুসফুসরামমোহন রায়ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনবাঙালি সংস্কৃতি২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বঋতুযুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতাব্যাংকপরীমনিঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানব্রাজিলফজরের নামাজভগবদ্গীতাপিনাকী ভট্টাচার্যদৈনিক ইত্তেফাকশিল্প বিপ্লবএশিয়ালালবাগের কেল্লাপানিপথের প্রথম যুদ্ধযুক্তফ্রন্টঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর🡆 More