ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা অথবা Geographic Co-ordinate System সংক্ষেপে GCS হল তিনটি স্থানাঙ্ক মানের সাহায্যে পৃথিবীর যেকোন স্থানের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করার একটি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার ফলে পৃথিবীর যেকোন স্থানের একটি অনন্য স্থানাঙ্ক থাকে। স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার তিনটি মাত্রা হচ্ছে অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বা গভীরতা।
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা উদ্ভাবনের কৃতিত্ব সাইরিনের অধিবাসী 'ইরাটোসথেনিস' এর, যিনি খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিতে 'জিওগ্রাফী' বইটি রচনা করেন। এক শতাব্দী পরে, নিসিয়ার অধিবাসী 'হিপারকাস' সৌর উচ্চতার পরিবর্তে নাক্ষত্রিক পরিমাপ থেকে অক্ষাংশ নির্ধারণ করেন এবং চন্দ্রগ্রহণের সময় দ্বারা দ্রাঘিমাংশ নির্ধারণ করে এই সিস্টেমে উন্নতি সাধন করেন।
১ম বা ২য় শতাব্দীতে, টায়ারের অধিবাসী 'মারিনাস' একটি বিস্তত গেজেটিয়ার এবং প্রাইম মেরিডিয়ান থেকে পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে ক্যানারি বা কেপ ভার্দে এবং এশিয়া মাইনর এর রোডস দ্বীপের উত্তরে বিস্তৃত বিশ্বের মানচিত্র সংকলন করেছিলেন, যা গাণিতিকভাবে প্লট করা । টলেমি 'গ্রীষ্মের দিনের মাঝামাঝি সময়ে দৈর্ঘ্যের পরিপ্রেক্ষিতে' অক্ষাংশ পরিমাপের পরিবর্তে দ্রাঘিমাংশ এবং অক্ষাংশ উভয় বিবেচনার জন্য মারিনাসকে কৃতিত্ব দেন। টলেমি নিরক্ষরেখা থেকে অক্ষাংশ পরিমাপ করেন ।
৯ম শতাব্দীতে টলেমির কাজটি আরবি ভাষায় অনূদিত হবার পর, আল-খোয়ারিজমি 'বুক অফ দ্য ডেসক্রিপশন অফ দ্য আর্থ' এ ভূমধ্যসাগরের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে মারিনাস এবং টলেমির ভুল সংশোধন করেন, যার ফলে মধ্যযুগীয় আরবি মানচিত্র টলেমির লাইনের ১০° পূর্বে 'প্রধান মেরিডিয়ান' লাইন ব্যবহার করত। । ১৩০০সালে টলেমির লেখা 'ম্যাক্সিমাস প্ল্যানুডস' পুনরুদ্ধারের পর ইউরোপে গাণিতিক কার্টোগ্রাফি পুনরায় শুরু হয়। ১৪০৭ সালের দিকে জ্যাকোপো ডি'অ্যাঞ্জেলো ফ্লোরেন্সে পাঠ্যটি ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেন।
১৮৮৪ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক মেরিডিয়ান সম্মেলনের আয়োজন করে, যেখানে পঁচিশটি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে বাইশ জন ইংল্যান্ডের গ্রিনউইচের রয়্যাল অবজারভেটরির দ্রাঘিমাংশকে শূন্য-রেফারেন্স লাইন হিসেবে গ্রহণ করতে সম্মত হয়। ডোমিনিকান রিপাবলিক, প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়, ফ্রান্স এবং ব্রাজিল বিরত থাকে।
প্রাচীন ব্যাবিলিয়ন তত্ত্ব, যা পরে গ্রিক দার্শনিক ভুগোলবিদ টলেমি পরিবর্ধিত করেছেন, অনুসারে পূর্ণ বৃত্ত ৩৬০ ডিগ্রীতে (৩৬০°) বিভক্ত।
এই দুটি কোণের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের যেকোন স্থানের আনুভূমিক অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব।
উদাহরণস্বরুপ ঢাকার অক্ষাংশ ২৩°৪২′০″ উত্তর এবং দ্রাঘিমাংশ ৯০°২২′৩০″ পূর্ব (২৩°৪২′০″ উত্তর ৯০°২২′৩০″ পূর্ব / ২৩.৭০০০০° উত্তর ৯০.৩৭৫০০° পূর্ব)। সুতরাং পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে বিষুবরেখার ২৩°৪২′০″ উত্তরে ও গ্রীনউইচ থেকে ৯০°২২′৩০″ পূর্বে অঙ্কিত কোন ভেক্টর রেখা ঢাকার মাঝ দিয়ে যাবে।
সাধারণত ডিগ্রীকে মিনিটে (এক ডিগ্রীর ৬০ ভাগের একভাগ, সংকেত ′ অথবা "m") এবং সেকেন্ডে (এক মিনিটের ৬০ ভাগের একভাগ, সংকেত ″ অথবা "s") ভাগ করেও প্রকাশ করা হয়। ডিগ্রী প্রকাশের কয়েকটি রীতি রয়েছে:
DM অথবা DMS থেকে DD তে পরিনত করতে ব্যবহার করতে হয়, দশমিক ডিগ্রী = ডিগ্রীর পূর্ণসংখ্যা + মিনিটকে ৬০ দিয়ে ভাগ করে প্রাপ্ত ভাগফল + সেকেন্ডকে ৩৬০০ দিয়ে ভাগ করে প্রাপ্ত ভাগফল। DMS সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এবং মানচিত্র, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস প্রভৃতিতে এটি দেখা যায়।
অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ বিভিন্ন স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার জন্য বিভিন্ন হতে পারে। এরকম ভিন্ন স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার উদাহরণ হচ্ছে WGS 84 যা সকল জিপিএস যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। সহজ ভাষায়, বিভিন্ন স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার জন্য একই স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের মান আলাদা হতে পারে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.